একজন সাধু মহাজনের কৃপায় কেউ একজন ভূত শরীর হতেও মুক্ত হতে পারে।

একজন সাধু মহাজনের কৃপায়  কেউ  একজন ভূত শরীর হতেও মুক্ত হতে পারে।

একবার শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর তার পুত্র বিমলা প্রসাদ ওরফে ভক্তিসিদ্ধান্ত স্বরস্বতী ঠাকুরকে সঙ্গে নিয়ে ভ্রমণে বেড়িয়েছিলেন। তারা ছিলেন পুরুষোত্তম ধামের যাত্রী। সন্ধ্যা হয়ে এল তখন রাত্রি অবসানের জন্য শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর নিকটবর্তী একটি গ্রামে উপস্থিত হয়ে গ্রামবাসীকে জিজ্ঞাসা করলে তাদের মধ্যে কয়েকজন বললেন, " ও এখানে একটি মন্দির আছে, আপনারা সেখানে থাকতে পারেন।
শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর তার পুত্র বিমলা প্রসাদকে নিয়ে সেই মন্দিরে বিশ্রাম করতে গেলেন। শয়ন না গিয়ে তারা নাম করতে লাগলেন---
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে। হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।
কয়েক ঘন্টা পর মধ্যরাত্রি প্রায় ১২টার সময় মন্দিরের চারদিকে ঢিল পড়তে লাগল। তা ক্রমাগত এক ঘন্টাকাল চলল। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি নাম করে চললেন। তারপর কপাটে জোরসে ভা! ভা! ভা! আঘাতের শব্দ শুনতে পেলেন। কিন্তু শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর আরও জোরসে উচ্চৈস্বরে নাম করতে লাগলেন---
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে। হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।
তারপর রাত্রির শেষভাগে সবকিছু বন্ধ হয়ে গেল। সূর্যোদয়ের পর গ্রামের লোকেরা তাদের দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, "আপনারা কোথায় রাত্রি কাটালেন?"
শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর উত্তর দিলেন, "ও আমরা রাত্রে সেই মন্দিরে ছিলাম।" সেখানে তো এক ভূত বাস করে। ও, আচ্ছা, আচ্ছা, হ্যাঁ সেখানে এক ভূত বাস করে। --- তিনি বললেন।
গ্রামবাসীরা আরও বললেন, সেখানে এক পূজারী ছিল। সে সেই মন্দিরে পূজা করত। তার গলায় ছিল তুলসীমালা, 'হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র' জপ করত, কখনও উচ্চস্বরে কীর্তন করত। তাহলে তার মৃত্যুর পরে সে কেমন করে একটি ভূত হয়ে সেই মন্দিরে রইল?" এটাই ছিল তাদের প্রশ্ন।
শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর বললেন, " সেই পূজারী দিব্য নাম জপ-কীর্তনাদি করত কিন্তু তার অন্যাভিলাষ ছিল।"
এটাই শ্রীমন্ মহাপ্রভুর শিক্ষা। তিনি আমাদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য এসেছিলেন কিভাবে কৃষ্ণভক্তি ব্যতীত অন্য সমস্ত অভিলাষ অর্থাৎ নিজের ইন্দ্রিয় তৃপ্তি-জনিত জড় অভিলাষ ত্যাগ করে কৃষ্ণ ভক্তি করতে হয়। তাই তুমি যখন তোমার জপমালায় জপ করছ, তখন তুমি শ্রীশ্রীরাধামদনমোহনকে ধ্যান কর। মনেতে অন্য কিছু চিন্তা কর না। কারন তা অপরাধ। সেই পূজারী সেরকম কিছু করত, যার ফলে মৃত্যুর পরে সে এক ভূত দেহ প্রাপ্ত হয়েছিল।
যদিও তার অন্য কামনা, অভিলাষিতা ছিল, তথাপি সে শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুরের মতন একজন সাধু-মহাজনের সঙ্গ লাভের সৌভাগ্য লাভ করেছিল। তার সেই 'হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র' জপ শ্রবণের প্রভাবে সে সেই ভূত দেহ থেকে মুক্ত হয়ে গেল। শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুরের কৃপায় সেই দিন হতে সে মন্দির আর ভূতের মন্দির হয়ে রইল না।
অতএব সিদ্ধান্ত হচ্ছে এই যে, একজন সাধু মহাজনের কৃপা ব্যতীত কখনই কেউ এক ভূত শরীর হতে মুক্ত হতে পারবে না।
- শ্রীশ্রী গৌরগোবিন্দ স্বামী মহারাজ গুরুদেব কতৃক প্রদত্ত প্রবচন।

Post a Comment

0 Comments