আত্মবিশ্বাসী হওয়ার কার্যকরী ৫টি উপায়
অন্যের সমালোচনায় নিজে দুঃচিন্তাগ্রস্থ হলে এর দায়ভার একান্তই আপনার।
কবি কামিনী রায়ের “পাছে লোকে কিছু বলে” কবিতার লাইনগুলো মনে আছে কি?
“করিতে পারিনা কোন কাজ/ সদা ভয় সদা লাজ/ সংশয়ে সংকল্প সদা টলে/ পাছে লোকে
কিছু বলে?’’
আমাদের স্বভাব নিজের আত্মবিশ্বাসকে গুরুত্ব না দিয়ে অন্যরা কী ভাবছে তা
নিয়ে ভাবা। তাইতো জীবনে ভালো কিছু চর্চা এবং সফলতার পথে হাঁটা প্রায় অসম্ভব
হয়ে পড়ে। মনে রাখবেন, সফলতার সর্বোচ্চ শিখরে পৌছার জন্য আত্মবিশ্বাস
অত্যন্ত জরুরী। ধরুন, আপনি কোন নতুন ব্যবসা শুরু করেছেন। হোক তা ছোট কিংবা
বড়। ব্যবসা শুরু করার পর আপনি ব্যবসা ধরে রাখতে পারবেন কিনা, উক্ত পরিবেশ ও
যোগাযোগ ব্যবস্থার সাথে ব্যবসাটি কতটুকু সামঞ্জস্যপূর্ণ, আপনার ব্যবসা
নিয়ে অন্যেরা কী ভাবছে, মন্দ কিছু ভাবছে কিনা ইত্যাদি নানান অহেতুক প্রশ্ন
মাথায় প্রশ্রয় দিলে ব্যবসায়ের উন্নতির দিকে মনোযোগ দেয়ার সময় কোথায়? অন্যরা
আপনাকে নিয়ে, আপনার কাজ নিয়ে কী ভাবছে তা ভুলে যান। অন্যরা আপনার জীবনে
খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়। অযথা দুশ্চিন্তা আপনার মাথার চুল পাকাতে যথেষ্ঠ।
ধরুন, আপনি আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে চাচ্ছেন। ঠিকঠাক
প্রস্তুতি নিয়ে এসেছেন কিন্তু মঞ্চে উঠার আগে আপনার ভেতর নানা ভয়, সংশয় কাজ
করছে এবং অন্যরা কী ভাবছে, দর্শক সারিতে যারা বসে আছে তারা আদৌ মন্দ কিছু
ভাববে কিনা ইত্যাদি হাজারটা অহেতুক প্রশ্ন আপনার মাথায় বাসা বেধেছে।
নিশ্চিত ধরে রাখুন আপনার পারফরমেন্স সবচেয়ে খারাপ হবে। এমতাবস্থায় আপনার
নিজস্ব আত্মবিশ্বাসই পারে সব ভয়কে জয় করতে।
২) নিজের শক্তি ও দুর্বলতার জায়গাগুলো খুঁজে বের করুন
মানুষ নিজেই নিজের খবরাখবর, ত্রুটি-বিচ্যুতি সবচেয়ে ভালো করে জানে।
আপনার নিজের দুর্বলতার জায়গাগুলো খুঁজে বের করুন এবং শক্তির জায়গাগুলো
খুঁজে বের করুন। অন্তত নিজের কাছে নিজের বিবেকের কাছে সর্বদা সৎ থাকুন।
আপনার যেসব দুর্বল দিক আছে তা ধীরে ধীরে কাটিয়ে উঠুন এবং শক্তির দিকগুলোকে
যথাযথ ব্যবহার করুন। নিজের দুর্বল দিকগুলোকে অন্যের সামনে প্রকাশ করবেন না
কারণ মানুষ কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিতেই পছন্দ করে।
৩) আত্মবিশ্বাস চর্চা করুন
নিশ্চয় ভাবছেন, আত্মবিশ্বাসের আবার চর্চা হয় নাকি? হ্যাঁ, আত্মবিশ্বাস
চর্চার মাধ্যমে অর্জন করা যায়। জন্মগতভাবে কেউ আত্মবিশ্বাসী থাকে না।
আত্মবিশ্বাস সময়ের সাথে সাথে আপনাকেও চর্চা করে নিতে হবে। আপনার পোশাক,
যোগাযোগের দক্ষতা, প্রযুক্তি জ্ঞান আপনাকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে সাহায্য
করবে। এছাড়াও যে বিষয়গুলো আপনাকে আত্মবিশ্বাসী হতে সাহায্য করবে তা হলোঃ
- মেরুদন্ড সোজা ও মাথা উঁচু রেখে হাঁটা।
- অন্যের নেতিবাচক কথা মনে না রেখে ইতিবাচক কথাগুলো মনে রাখুন।
- নিজেকে সর্বদা প্রফুল্ল রাখুন।
- কথা বলার সময় চোখে চোখ রেখে কথা বলুন।
- বলার চেয়ে অন্যের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। এতে তার কাছে আপনার গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে।
- মানুষের সাথে মিশুন এবং নিজের নেটওয়ার্ক বাড়ান।
- অন্যকে সাহায্য করুন। এতে আপনার নিজের প্রতি নিজের শ্রদ্ধা বেড়ে যাবে।
- ভুল থেকে শিক্ষা নিন।
- কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন।
- ভালো কাজের প্রশংসা করুন।
৪) নেতিবাচক লোকদের কাছ থেকে দূরে থাকুন
আপনার বন্ধু, আত্মীয় কিংবা প্রতিবেশী যারা আপনার সম্পর্কে নেতিবাচক কথা
বলে এবং সর্বদা আপনার দোষগুলো খুঁজে তাদের থেকে দূরে থাকুন সর্বদা। মনে
রাখবেন এ ধরনের মানুষ আপনার সফল জীবনের পরিপন্থী।
৫) প্রচুর জ্ঞান অর্জন করুন
প্রচুর জ্ঞান অর্জনের মধ্যে দিয়ে আত্মবিশ্বাসী হওয়া যায়। অজ্ঞতা
অন্ধকারের শামিল। তাই আত্মশক্তি অর্জনের জন্য জ্ঞানার্জনের প্রয়োজন
অনস্বীকার্য। পৃথিবীতে যে যতো সফলতার স্বর্ণশিখরে পৌছেছেন সে ততো
জ্ঞানার্জনের দিকে ঝুঁকেছেন। নতুন কিছু শেখা, প্রতিনিয়ত বই পড়া, সফল
মানুষের জীবনী পড়ার মাধ্যমে আপনি আত্মবিশ্বাস অর্জন করতে পারবেন। আপনার
জ্ঞানার্জনই আপনার চলার পথের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় হাতিয়ার হয়ে কাজ করবে।
0 Comments