শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর মহাশয়ের সংক্ষিপ্ত জীবনী

আজ শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুরের তিরোভাব তিথি মহোৎসব ।



শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর মহাশয়ের সংক্ষিপ্ত জীবনী নিচে বর্ণিত হলো
 
ওঁ বিষ্ণুপাদ শ্রীশ্রীল সচ্চিদানন্দ ভক্তিবিনোদ ঠাকুর ১৮৩৮ খৃস্টাব্দের ২রা‌ সেপ্টেম্বর (১২৪৫ বঙ্গাব্দের ১৮ই ভাদ্র) নদীয়া জেলার বীরনগরে আবির্ভূত হন। তার জন্মকুন্ডলী দেখে জ্যোতিষীগণ বলেছিলেন, এই শিশু ভবিষ্যতে বিদ্যা বুদ্ধিতে সাধনভজনে ও আচারপ্রচারে একজন মহাপুরুষ হবেন। তাঁর পিতৃদত্ত নাম শ্রীকেদারনাথ দত্ত। পাঁচ বৎসর বয়সে মাতামহের আলয় থেকে পাঠশালায় বিদ্যাভ্যাস আরম্ভ করেন। তার অসাধারন মেধাশক্তি ছিল। নয় বৎসর বয়সে জ্যোতিষশাস্ত্র অধ্যয়ন করেন এবং অল্পকালের মধ্যেই মহাভারত ও অন্যান্য শুদ্ধভক্তি গ্রন্থাদি বিশদভাবে অধ্যয়ন করেন। তিনি ওড়িশায় পুরী জেলার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটরূপে নিযুক্ত হন। ১৮৭৪ খ্রীঃ৬ই ফেব্রুয়ারি মাঘী কৃষ্ণাপঞ্চমী তিথিতে শ্রীল বিমলাপ্রসাদ দত্ত (শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী প্রভুপাদ) তার ৬ষ্ঠ সন্তান রূপে পুরীধামে আবির্ভূত হয়েছিলেন। পরবর্তীকালে শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর পুরী থেকে বদলি হয়ে নদীয়ার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট নিযুক্ত হন।এই সময় ঠাকুর মহাশয় কিছুদিনের জন্য তীর্থভ্রমণে বের হয়ে শ্রীবৃন্দাবন ধামে এলেন এবং ব্রজে ভগবানের বিভিন্ন লীলাস্থান দর্শন করলেন, সেই সময় সিদ্ধ মহাত্মা ব্রজমুকুটমণি শ্রীল জগন্নাথ দাস বাবাজী মহারাজের দর্শন পেলেন। বাবাজী মহারাজ তাকে শুদ্ধভক্তিবিষয়ে নানান উপদেশ দান করলেন। তিনি বাবাজী মহারাজের নিকট দীক্ষাপ্রার্থনাকরলে তিনি বলেন --- " তোমার মন্ত্রদাতাগুরু পূর্বনির্ধারিত হয়ে আছে ।তুমি নিশ্চিত হয়ে গৃহে ফিরিয়া যাও ,তোমার মন্ত্রগুরু তথায় আসিবেন । " বৃন্দাবন থেকে শ্রীল ঠাকুর মহাশয় তার কার্য্যস্থানে পুনরায় ফিরে এলেন। সেসময় একদিন তার মন্ত্রগুরু নিত্যানন্দবংশীয় রামাই ঠাকুরের বংশাবতংস শ্রী বিপিনবিহারী গোস্বামীজী শ্রীপাট বাঘনাপাড়া থেকে তার গৃহে পদার্পণ করেন তাকে মন্ত্রদীক্ষা প্রদান করেন। পরবর্তীকালে শ্রীল ঠাকুর মহাশয় তার মাতৃদেবীর পরলোকগমনে, গয়াধামে যান ও তর্পণ পিন্ডদানক্রিয়াদি করেন। প্রেতশিলা পর্ব্বতে উঠতে ৩৯৫ টি সিঁড়ি তারপিতামহ শ্রীযুক্ত মদনমোহন দত্ত নির্মাণ করেছিলেন সেই প্রস্তর ফলক দর্শন করলেন। ঠাকুর মহাশয় ঠিক করেছিলেন চাকরি থেকে অবসরনিয়ে শ্রীবৃন্দাবন ধামে বাস করবেন। এই চিন্তা করে কোন কার্য্যান্তরে হুগলী জেলার তারকেশ্বরে যান সেখানে রাত্রিতে স্বপ্নযোগে শ্রীতারকনাথ মহাদেব তাকে বললেন--- "তোমার গৃহের নিকটবর্তী শ্রীনবদ্বীপধামেযে মহান কার্য্য তোমার জন্য পূর্ব নির্ধারিত হয়ে আছে তার কি করলে? .." এই স্বপ্নাদেশ প্রাপ্ত হয়ে শ্রীবৃন্দাবনধামযাত্রা স্থগিত রেখে শ্রীনবদ্বীপধামেমহাপ্রভুর আবির্ভাবপীঠ পুনঃপ্রকাশে আত্মনিয়োগ করলেন।ভগবান শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু ও তার পার্ষদবর্গের অপ্রকটের পর গৌড়ীয় বৈষ্ণব জগতে একপ্রকার ঘন অন্ধকার নেমে আসে। বাংলারশিক্ষিতসমাজ গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মকে অবজ্ঞাভরে দেখতেন এবং স্ত্রৈণধর্ম ইত্যাদিনানারকম কুরুচিকর মন্তব্য করতেন । ঠাকুর শ্রীভক্তিবিনোদই তৎকালীন গৌড়ীয় বৈষ্ণব সম্প্রদায়কে তার স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠা করতে দৃঢ়সঙ্কল্পবদ্ধহন। তিনি নানাবিধ ভক্তিগ্রন্থ রচনাপূর্বক এবং গৌরপার্ষদগনের রচিত গ্রন্থাবলী মুদ্রনে ও প্রসারে একনিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তার কার্যাবলী সমাজের বিভিন্নস্তরের মানুষের মধ্যে এক আলোড়নের সৃষ্টি করে এবং শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর ধর্মসমন্ধে লোকজন জানতে আগ্রহী হয়েছিলেন। তিনি মহাত্মা শিশিরকুমার ঘোষের দ্বারা 'সপ্তম গোস্বামী ' আখ্যায় জনসমাজে প্রসিদ্ধ হন। তাকে ভক্তিগঙ্গা ভগীরথ বলা হয়। কলিযুগের সকলজাতির মিলনক্ষেত্র সর্বশ্রেষ্ঠ তীর্থ শ্রীমন্মহাপ্রভুর আবির্ভাবস্থল শ্রীমায়াপুর ধামকে বিশ্বের জনসাধারণের কাছে তিনি প্রথম প্রকাশ করেন। নবদ্বীপধামের গোদ্রুমদ্বীপ স্বরূপগন্জের নিজ বসতবাটি স্বানন্দসুখদ কুঞ্জে অবস্থানকালে তিনি মহাপ্রভুর আবির্ভাবস্থলের সন্ধান পান এবং সিদ্ধ জগন্নাথ দাস বাবাজীর দ্বারা মূলস্থান নিরূপন করেন। শুদ্ধভক্তি জগতে ঠাকুর মহাশয়ের অবদান অবিস্মরণীয় ও তাঁর আনীত ভক্তিরসামৃতের ধারা চিরকাল অব্যাহত থাকবে।

Post a Comment

0 Comments