পরের কথায় কিবা আসে যায়
পিতা, পুত্র দুই জন হাট থেকে একটি ঘোড়া কিনে বাড়ীর দিকে ফিরছিলেন। পুত্র বলল, “বাবা! আপনি ঘোড়ার পিঠে উঠুন।” বৃদ্ধলোকটি তাই করল। কিছুদূর যাওয়ার পর কতকগুলি লোক বলতে লাগল দেখ! বুড়োটার জ্ঞানবুদ্ধি বলতে কিছুই নাই। নিজে ঘোড়ার পিঠে চেপে ছেলেটিকে হাঁটিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।”
এই সমস্ত লোকের কথা শুনে বৃদ্ধ পিতা নেমে গিয়ে পুত্রকে ঘোড়ার পিঠে তুলে দিলেন। কিছুদূর যাওয়ার পর কতগুলি লোক বলতে শুরু করল,-“দেখ! দেখ! অতবড় ছেলেটার কোন কান্ডজ্ঞান নেই। বৃদ্ধ বাবাকে দিয়ে ঘোড়ার লাগাম ধরে টানাচ্ছে আর-ও-ঘোড়ার পিঠে চেপে আরাম করে যাচ্ছে ? এই কথা শুনে লজ্জিত হয়ে পুত্র ঘোড়ার পিঠ থেকে নেমে এল।
এবার পিতাপুত্র স্থির করল, তাদের দুইজনেই ঘোড়ার পিঠে করে যাওয়াটাই ভাল। এই কথাটি স্থির করে দুইজনেই ঘোড়ার পিঠে চেপে বসলেন। তখন আবার কিছুলোক বলতে লাগল- “তোমাদের বিবেকবুদ্ধি বলতে কিছুই নাই ? একটি রোগা ঘোড়ার পিঠে তোমরা দুইজন জওয়ান উঠেছ। ও বেচারার কষ্ট হচ্ছে না ? তোমরা একেবারে বিবেকের মাথা খেয়ে বসেছে ? এই কথা শুনে দুঃখিত হয়ে দুইজনেই ঘোড়ার পিঠ থেকে নেমে চলতে লাগল। আবার কিছু লোক বলতে শুরু করল-“এদের মতো বোকা জগতে আর কেউ আছে ? টাকা দিয়ে ঘোড়া কিনে নিজেরা কষ্ট করে হেঁটে যায় ? তখন দুইজনেই চিন্তা করতে লাগলেন, এবার কি করা যায় ? সামনে একটি সেতু পার হতে হবে। স্থির করলেন, ঘোড়ার চার পায়ে বেঁধে ঘাড়ে করে নিয়ে যাওয়া ছাড়া অন্য কোন উপায় নাই। এবং তাই করা হলো। পথের লোকজন এই কান্ড দেখে হৈ হৈ করে হাততালি দিয়ে হাসতে লাগল। তখন ঘোড়াটি ছটফট করতে করতে দড়ি ছিঁড়ে নদীতে পড়ে গেল এবং সেইসঙ্গে দুইজনই পড়ে গিয়ে ঘোড়া ও পিতাপুত্র তিনজনেই ইহলোক ত্যাগ করলেন।
। হিতোপদেশ।
কেউ যদি হরিভজনের পথ অবলম্বন করেন, তাহলে জগতের কামাসক্ত কৃষ্ণ বহির্মূখ মানুষ তাঁকে কত সমালোচনা করবে। তাঁকে জগতের লোক কত নিন্দা করবে। কিন্তু তাদের কথায় কান না দিয়ে হরিগুরু বৈষ্ণবের নির্দেশানুসারে চললে আমাদের প্রকৃত মঙ্গল হবেই হবে। সাধু-শাস্ত্র-গুরু বাক্য লঙ্ঘন করে জগতের লোকের কথা শুনলে উক্ত গল্পের ন্যায় সর্বনাশ হবে।
0 Comments