গল্পে উপদেশ :......গুরুদেবের আনুগত্য ত্যাগ করে বা অবাধ্য হয়ে স্বতন্ত্র জীবন কখনও মঙ্গল হয় না

গল্পে উপদেশ :...........
গুরুদেবের আনুগত্য ত্যাগ করে বা অবাধ্য হয়ে স্বতন্ত্র জীবন কখনও মঙ্গল হয় না




একজন গুরুদেব এক শিষ্যকে নিয়ে দেশ ভ্রমণ করতে করতে এমন এক রাজ্যে এসে পৌছিয়েছেন, যেখানে সমস্ত জিনিসের এক দাম। লবনের যাই দাম সন্দেশেরও এই দাম। দেখে শুনে শিষ্য তো আনন্দে আত্মহারা। গুরুদেব
বললেন-“যে দেশের রাজার ভাল-মন্দ, উচু-নীচু জ্ঞান নেই, সে দেশে থাকতে নেই। চলো! এখনই এদেশ ছেড়ে চলে যাই।” শিষ্য বলল-“না গুরুদেব। আমি যাব না। দুধ, দৈ, মাখন, ছানা, ফল-মূল, মিষ্টি- মিঠাই খাব, আর আনন্দে থাকব। আমি এমন দেশ ছেড়ে কখনই যাব না।”গুরুদেব চলে যাওয়ার সময় বলে গেলেন, যদি কোন দিন বিপদে পড়, তাহলে
আমাকে জানাবে। শিষ্য লোভের বশবর্তী হয়ে খেয়ে খেয়ে মোটা হয়েছে।
এদিকে এক বাড়ী ডাকাতি হয়েছে। অনেক অনুসন্ধান করে তারা এই লোভী শিষ্যটিকে ডাকাত বলে সনাক্ত করল। আসলে এ কিন্তু ডাকাত নয়। তারা মনে করল এই অপরিচিত লোকটি বেশ কিছুদিন যাবৎ এই অঞ্চলে আছে। এই লোকটি ছাড়া আর কারও কাজ নয়। তাকে রাজ দরবারে নিয়ে যাওয়া হল। রাজা বললেন- একে ফাঁসি দিয়ে মৃত্যুদন্ড দাও।” লোভী শিষ্যকে জিজ্ঞাসা করা হল, তার কোন অভিলাষ আছে কিনা। সে বলল-“আমার গুরুদেবের সঙ্গে একবার দেখা করার ইচ্ছা।” রাজার আদেশেলোভী শিষ্যটিকে তার গুরুদেবের কাছে নিয়ে যাওয়া হল। শিষ্যটি গুরুদেবের চরণ জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগল- গুরুদেব! এই বিপদ থেকে আপনি আমাকে উদ্ধার করুন। গুরুদেব তার সমস্ত কথা শুনে বললেন, “এখন তোমাকে বাঁচাবার কোন উপায় দেখছি না। কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললেন- “হ্যাঁ! একটি পথ আছে। তোমাকে যখন ফাঁসি দিতে নিয়ে যাবে, আমিও তখন সেখানে যাব। আমি বলব আমাকে ফাঁসি দিন। তুমিও বলবে আমায় ফাঁসি দিন। রাজা জিজ্ঞাসা করলে বলব, এই মুহুর্তে যদি
কারও রাজদন্ড হয়, সে বৈকুন্ঠে গমণ করবে। তা পঞ্জিকায় দেখে আপনার কাছে আসতে বাধ্য হলাম। তুমি বলবে, আমি মরব। আমি বলব, না, আমি
মরব।” এই কথা শুনে শিষ্য চলে এল। রাজার লোক নির্দিষ্ট দিনে ফাঁসি দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হলেন। এমন সময় গুরুদেব বগলে একটি পঞ্জিকা নিয়ে হন্ হন্ করতে করতে এসে উপস্থিত হলেন। এসেই বলতে শুরু করলেন,-“হে মহারাজ। আমার একটি নিবেদন শুনুন। আমি পঞ্জিকাতে দেখলাম এই শুভ লগ্নে যদি কাহারও রাজদন্ড হয়, সে বৈকুন্ঠ গমন
করবে সুতরাং উহাকে ছেড়ে দিয়ে আমাকে ফাঁসি দিন। শিষ্য বলে উঠল-“মহারাজ! এই শুভ লগ্নে আমায় মৃত্যুদন্ড দিন।” এইভাবে উভয়ে মৃত্যুর জন্য বায়না ধরলে মহারাজ ভেবে চিন্তা করে বললেন-“এমন শুভ লগ্ন ছেড়ে দেওয়া ঠিক হবে না। আমার পিতা বৃদ্ধ হয়েছেন। তিনি অসুস্থ অবস্থায় বহুদিন বিছানায় পড়ে আছেন। তাঁর জন্য রাজবাড়ীর সকলে বিরক্তি
বোধ করছে। এই শুভলগ্নে পিতৃদেবকে ফাঁসি দিয়ে বৈকুন্ঠ পাঠানোই আমার পক্ষে শ্রেয়ঃস্কর।” মহারাজ উভয়কে ছেড়ে দিলেন এবং মহানন্দে তাঁর পিতৃদেবকে ফাঁসি দিয়ে চিরতরে বৈকুন্ঠে পাঠালেন।

 হিতোপদেশ

গুরুদেবের আনুগত্য ত্যাগ করে বা অবাধ্য হয়ে স্বতন্ত্র জীবন কখনও মঙ্গল হয় না। শুধুই বিপদ, দুঃখ ও মৃত্যুই সার করতে হয়। শ্রীগুরুদেব পরম করুনাময়। তিনি কোনও দিন শিষ্যের অমঙ্গল কামনা করেন না। আমরা যদি শ্রীগুরুদেবের শ্রীচরণে নিষ্কপটে শরণ গ্রহণ করি এবং তাহার আদেশ নির্দেশ যথাযথভাবে পালন করি তাহলে অনায়াসে আমাদের ভগবৎ প্রাপ্তি হবে।

Post a Comment

0 Comments