রায়_রামানন্দ_সংবাদ

প্রবচন—শ্রীমৎ ভক্তিচারু স্বামী মহারাজ



শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর লীলা সমুদ্র থেকেও গম্ভীর। তাই তা সাধারণ মানুষের বোধগম্য নয়। মহাপ্রভু যদিও আদর্শ শিক্ষকরূপে নিজের আচরণের মাধ্যমে জীবকে শিক্ষা দিয়েছেন, তবুও তাঁর শিক্ষা আরও সহজ-সরল রূপে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর অন্তরঙ্গ পার্ষদদের মাধ্যম। আর তাঁর সমস্ত পার্ষদদের মধ্যে শ্রীল রামানন্দ রায় ছিলেন তাঁর অতি অন্তরঙ্গ। তাঁর মাধ্যমে, তিনি তাঁর শিক্ষার নিগূঢ়তম তত্ত্ব প্রকাশ করে গেছেন। তাঁর কৃপার প্রভাবে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর প্রকৃত স্বরূপ সকলের কাছে প্রকাশিত হয়েছে।
সন্ন্যাস গ্রহণের পর শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু যখন দক্ষিণ-ভারতে ভ্রমণ করেছিলেন, তখন গোদাবরী নদীর তীরে শ্রীরামানন্দ রায়ের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। দাক্ষিণাত্যের রাজ্যপাল রামানন্দ রায় এসেছিলেন পুণ্যতোয়া গোদাবরীতে স্নান করতে। সঙ্গে তাঁর অনেক লোকজন। বৈদিক বিধি অনুসারে স্নান-তর্পণ করে নদী থেকে উঠে এসে তিনি শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুকে দর্শন করলেন–তিনি দেখলেন এক অপূর্ব সুন্দর সন্ন্যাসী। তাঁর অঙ্গকান্তি শত-সহস্র সূর্যের মতো উজ্জ্বল, পরনে অরুণ-বসন, সুবলিত প্রকাণ্ড দেহ, নয়ন-যুগল পদ্মফুলের মতো আয়ত। এক অপ্রাকৃত আনন্দে তাঁর হৃদয়ে ভরে উঠেছিল। তিনি তাঁকে দণ্ডবৎ প্রণতি নিবেদন করলেন। শ্রীচৈতন্য মহপ্রভুও চিনতে পেরেছিলেন তাঁর নিত্য সহচরকে।
পূর্বলীলায় যাঁরা ছিলেন তৃতীয় পাণ্ডব অর্জুন, ব্রজের সখা অর্জুন, বিশাখা ও ললিতা, তাঁরা এখন একত্রে শ্রীরামানন্দ রায়রূপে আবির্ভূত হয়েছেন। আনন্দে উদ্বেলিত হৃদয়ে মহপ্রভু রামানন্দ রায়কে আলিঙ্গন করলেন। প্রেমাবেশে প্রভু ও ভৃত্য অচেতন হয়ে ভূমিতে পড়লেন। তাঁদের দুজনেরই দেহে রোমাঞ্চ, কম্প, অশ্রু, স্বেদ, পুলক, বিবর্ণ, আদি প্রেম বিকার প্রকাশিত হল, মুখে "কৃষ্ণ" নাম গদ্গদ স্বরে উচ্চারিত হতে লাগল। উপস্থিত সকলে অবাক হয়ে ভাবতে লাগলেন, কেন এই অপূর্ব সন্ন্যাসী এইভাবে একজন রাজপুরুষকে আলিঙ্গন করে প্রেমে অচেতন হয়েছেন, আর এই পণ্ডিত, গম্ভীর রাজপুরুষকে বা কেন এইভাবে একজন সন্ন্যাসীর স্পর্শে প্রেমোন্মত্ত হয়েছেন। বহু লোকের সামনে তাঁরা আর সে দিন তাঁদের অন্তরের নিগূঢ় ভাব ব্যক্ত করলেন না।
সেদিন সন্ধ্যায় গোদাবরীর তীরে নির্জনে আবার তাঁদের সাক্ষাৎ হল। কুরুক্ষেত্রের রণাঙ্গনে শ্রীকৃষ্ণ শিক্ষকরূপে, গুরুরূপে অর্জুনকে বৈদিক তত্ত্বজ্ঞান শিক্ষা দিয়েছিলেন। গোদাবরীর তটে সেই শ্রীকৃষ্ণ শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভুরূপে রামানন্দরায়রূপী অর্জুনকে যেন প্রতীক্ষা করার ছলে প্রশ্ন করতে লাগলেন। মহাপ্রভু জিজ্ঞাসা করলেন–"রামানন্দ সাধ্যতত্ত্ব নির্ণয় করে শাস্ত্র থেকে কোন শ্লোক শোনাও।"
রামানন্দ রায় বললেন–"স্বধর্মাচরণে বিষ্ণুভক্তি হয়।" তিনি বিষ্ণুপুরাণ থেকে উল্লেখ করলেন–
বর্ণাশ্রমাচারবতা পুরুষেণ পরঃ পুমান্।
বিষ্ণুরারাধ্যতে পন্থা নান্যত্ততোষকারণম্॥
অর্থাৎ, পরমেশ্বর বিষ্ণু বর্ণধর্ম ও আশ্রমধর্মের আচার পরায়ণ মানুষদের দ্বারা আরাধিত হন। বর্ণাশ্রম আচার ব্যতীত তাঁকে সন্তুষ্ট করার আর কোন উপায় নেই।
ভগবানকে পরিতুষ্ট করাই সাধ্যতত্ত্ব। মানুষ তার স্বভাব অনুসারে নির্ণিত বর্ণধর্ম এবং অবস্থা অনুসারে নির্মিত আশ্রমধর্ম পালন করলেই ভগবান সন্তুষ্ট হন। মানুষের জন্ম, সংসর্গ ও শিক্ষা থেকে স্বভাবের উদয় হয়। স্বভাব অনুসারে বর্ণ স্বীকার না করলে কেউই যথাযথভাবে জীবনযাত্রা নির্বাহ করতে পারে না। স্বভাব মূলত চার প্রকার–(১) ঈশ্বর ও বিদ্যাই যাঁদের স্বভাবগত বিষয়, তাঁরা–‘ব্রাহ্মণ’; (২) শৌর্য ও রাজ্যশাসনই যাঁদের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি, তারা–‘ক্ষত্রিয়’; (৩) কৃষি, পশুপালন ও বানিজ্য যাঁদের স্বভাবগত কর্ম, তারা ‘বৈশ্য’ (৪) তিনটি বর্ণের সেবা করাই যাঁদের স্বভাব, তারা–‘শূদ্র’। স্ব স্ব বর্ণধর্মে এবং অবস্থাক্রমে আশ্রমধর্মে ভগবানের আরাধনা করতে করতে মানুষের পারমার্থিক উন্নতি হয়। তাই ধর্ম-জীবনই মানুষের সমস্ত উৎকর্ষের মূল।
কিন্তু শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বললেন, "এহো বাহ্য, আগে কহ আর" অর্থাৎ এটি বাহ্য বিচার, আমার প্রশ্নের উত্তর এই বিচার অতিক্রম করে আরও ঊর্ধ্বে যা আছে, তা বল। রামানন্দ রায় তখন বললেন–"কৃষ্ণে কর্মার্পণ" সর্বসাধ্য সার। এবং শ্রীমদ্ভগবদগীতায় সে সম্পর্কে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের উপদেশের উদ্ধৃতি দিলেন–
যৎ করোষি যদশ্নাসি যজ্জুহোসি দদাসি যৎ
যত্তপস্যসি কৌন্তেয় তৎ কুরুষ্ব মদর্পণম্॥
অর্থাৎ, হে কৌন্তেয়, তুমি যা কর, যা খাও, যা হোম কর, যা দান কর এবং যে তপস্যাই কর, সে সবই আমাকে অর্পণ কর।
কিন্তু এবারও শ্রীচৈতন্য মহপ্রভু বললেন–"এহো বাহ্য আগে কহ আর।"
তার উত্তরে রামানন্দ রায় বললেন,–"স্বধর্ম ত্যাগই সাধ্যসার", এবং সে সম্পর্কে শাস্ত্র প্রমাণ প্রদর্শণ করে বললেন–
"সর্ব ধর্মান্ পরিত্যজ্য মামেকং শরণং ব্রজ।
অহং ত্বাং সর্বপাপেভ্যো মোক্ষয়িষ্যামি মা শুচঃ॥"
অর্থাৎ, সমস্ত ধর্ম পরিত্যাগ করে কেবল আমার শরণাগত হও, তা হলে আমি সমস্ত পাপ থেকে তোমাকে মুক্ত করব। তুমি শোক করো না।
কিন্তু এবারও শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বললেন, "এহো বাহ্য, আগে কহ আর।"
রামানন্দ রায় বললেন–"জ্ঞানমিশ্রা ভক্তি–সাধ্যসার" এবং ভগবদ্গীতার শ্লোকের উদ্ধৃতি দিলেন, ব্রহ্মভূতঃ প্রসন্নাত্মা ন শোচতি ন কাঙ্ক্ষতি–অর্থাৎ. অভেদ ব্রহ্মবাদরূপে জ্ঞান-চর্চার দ্বারা আত্মা যখন প্রসন্ন হয়, তখন মানুষ সম্পূর্ণরূপে শোক ও বাসনা রহিত হয়, তারপর সে আমার পরাভক্তি প্রাপ্ত হয়।
এইভাবে রামানন্দ রায় প্রতিপন্ন করলেন যে, কর্মমিশ্রা ভক্তির থেকে জ্ঞান-মিশ্রা ভক্তি শ্রেয়। কিন্তু শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু এই জ্ঞানমিশ্রা ভক্তিকে সাধ্যসার বলে মেনে নিতে পারলেন না। তিনি বললেন, "এহো বাহ্য, আগে কহ আর।"
রামানন্দ রায় এবার বললেন, "জ্ঞানশূন্যা ভক্তি–সাধ্যসার।" এবং তার প্রমাণ স্বরূপ শ্রীমদ্ভাগবত থেকে উদ্ধৃতি দিলেন–
জ্ঞানে প্রয়াসমুদপাস্য নমন্ত এব
জীবন্তি সম্মুখরিতাং ভবদীয়বার্তাম্।
স্থানে স্থিতাঃ শ্রুতিগতাং তনুবাঙ্মনোভির্
যে প্রায়শোহজিত জিতোহপ্যসি তৈস্ত্রিলোক্যাম্॥ ( শ্রীমদ্ভাগবত ১০/১৪/৩ )
মহাপ্রভু এবার বললেন, "এহো হয়, আগে কহ আর।" মহাপ্রভু স্বীকার করলেন,–এখন সাধ্য নির্ণীত হল বটে, কিন্তু আরও ঊর্ধ্বে যা আছে বল।
এর তাৎপর্য এই যে বর্ণাশ্রম ধর্ম পলন থেকে কেবল কর্মার্পণ শ্রেষ্ঠ, কর্মার্পণ থেকে স্বধর্ম শ্রেষ্ঠ ত্যাগ অর্থাৎ স্বীয় বর্ণ পরিত্যাগ করে সন্ন্যাসগ্রহণ শ্রেষ্ঠ। তার থেকে ব্রহ্মানুশীলনরূপ জ্ঞানমিশ্রা ভক্তি শ্রেষ্ঠ হলেও, সে সবই বাহ্য, কেন না সাধ্যবস্তু যে শুদ্ধভক্তি, তা এই চার প্রকার সিদ্ধান্তে নেই। "আরোপসিদ্ধান্ত" ও "সঙ্গসিদ্ধা" ভক্তি কখনই শুদ্ধভক্তি বলে পরিচিত হয় না। "স্বরূপসিদ্ধা ভক্তি" একটি সম্পূর্ণ পৃথক্ তত্ত্ব; তা কর্মার্পণ, কর্মত্যাগরূপ সন্ন্যাস ও জ্ঞান মিশ্রা ভক্তি থেকে নিত্য পৃথক্। সেই শুদ্ধভক্তির লক্ষণ এই যে, তা অন্যাভিলাষিতা শূণ্য, জ্ঞান-কর্মাদির দ্বারা অনাবৃত, এবং অনুকূলভাবে কৃষ্ণানুশীলনীয়। এটিই সাধ্যবস্তু; কেন না সাধ্য-অবস্থায় তা দেখা গেলেও সিদ্ধ অবস্থায় তা সম্পূর্ণ নির্মলভাবে প্রকটিত হয়।
রামানন্দ রায় তখন শান্ত রসাশ্রিত প্রেমভক্তির থেকেও উন্নত স্তরের দাস্যভক্তির কথা বললেন, "দাস্য-প্রেম সর্ব-সাধ্যসার।"
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু সে কথা স্বীকার করলেন কিন্তু তা সত্ত্বেও বললেন, "এহো হয়, কিছু আগে আর।"
রামানন্দ রায় বললেন, "সখ্য-প্রেম–সর্ব-সাধ্যসার।"
মহাপ্রভু বললেন, "এহো উত্তম, আগে কহ আর।"
রামানন্দ রায় বললেন, "বাৎসল্য-প্রেম–সর্ব-সাধ্যসার।"
মহাপ্রভু বললেন, "এহো উত্তম, আগে কহ আর।"
রামানন্দ রায় তখন বললেন, "কান্তভাব প্রেম-সাধ্যসার। কৃষ্ণপ্রাপ্তির বহুবিধ উপায় আছে, এবং কৃষ্ণপ্রাপ্তির তারতম্যও বহু প্রকার রয়েছে, কিন্তু যাঁর যেই রস, তাঁর কাছে সেটিই সর্বোত্তম, কিন্তু তটস্থভাবে বিচার করলে তাদের মধ্যে তারতম্য আছে।"
রসের তারতম্য বোঝাবার জন্য তিনি একটি প্রাকৃত উদাহরণ দিলেন–আকাশ, বায়ু, আগুন, জল ও মাটি এই পঞ্চ মহাভূতে যেমন ক্রমশ গুণের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ, আকাশে কেবল শব্দগুণ, বায়ুতে শব্দ ও স্পর্শ, অগ্নিতে শব্দ, স্পর্শ ও রূপ, জলে শব্দ, স্পর্শ, রূপ ও রস এবং মাটিতে শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস ও গন্ধ। তেমনই শান্ত, দাস্য, সখ্য,বাৎসল্য ও মধুর রসে ক্রমশ গুণ বৃদ্ধি হয়ে মধুর রসে পাঁচটি গুনই পরিপূর্ণরূপে প্রকাশ পায়। অতএব পরিপূর্ণ কৃষ্ণপ্রাপ্তি "মধুর" বা "শৃঙ্গার" রসরূপ প্রেমেই পাওয়া যায়। শ্রীমদ্ভাগবতে বর্ণিত হয়েছে যে মধুর রসোৎফুল্ল-প্রেমে কৃষ্ণ নিতান্ত বশ হন। শান্তরসে কৃষ্ণৈকনিষ্ঠতারূপ গুণটি দাস্যরসে মমতা যুক্ত হয়ে অধিক সমৃদ্ধ, আবার সখ্যরসে কৃষ্ণৈকনিষ্ঠতা ও মমতা বিশ্রম্ভের সঙ্গে যুক্ত হয়ে অধিকতর প্রফুল্ল হয়েছে; বাৎসল রসে শান্ত-দাস-সখ্য রসের গুণ তিনটি স্নেহাধিক্যের সঙ্গে যুক্ত হয়ে প্রতীয়মান হয়। কান্তভাবরূপে মধুর রসে ঐ চারটি গুণ সঙ্কোচশূণ্য হয়ে অত্যন্ত মাধুরী লাভ করে। এইভাবে গুণাধিক্যের ফলে স্বাদাধিক্য বৃদ্ধি হয়। সুতরাং তটস্থ বিচারে মধুর রস সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।
কৃষ্ণ যদিও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, যেভাবে তাঁকে ভজনা করবেন, তিনিও তাঁকে সেইভাবে ভজনা করবেন। কিন্তু এই প্রেমের অনুরূপ ভজনা শ্রীকৃষ্ণ করতে পারেন না। তিনি সেই ভক্তের কাছে তাই ঋণী হয়ে থাকেন।
মহাপ্রভু বললেন, "মধুর রসে এই কৃষ্ণপ্রেম অবশ্যই সাধ্যের চরম সীমা। কিন্তু এরও আগে যদি কিছু থাকে তা হলে কৃপা করে আমাকে বল।"
রামানন্দ রায় বললেন, "এরও আগে আর কিছু আছে কি না সে প্রশ্ন করতে পারে এমন কেউ এই জগতে আছে বলে আমি জানতাম না। মধুর রসামৃত সমস্ত প্রেমিকাদের মধ্যে শ্রীমতী রাধারাণীর প্রেম সর্বশ্রেষ্ঠ। রাসলীলায় শ্রীকৃষ্ণ শতকোটি গোপীদের সঙ্গে নৃত্য করেছিলেন। সেখানে তিনি নিজে অসংখ্য মূর্তিতে প্রকাশ করে দুজন গোপীর মধ্যে এক কৃষ্ণরূপে নৃত্য করছিলেন, কিন্তু মাঝখানে তিনি একা শ্রীমতী রাধারণীর সঙ্গে নাচছিলেন। তারপর যখন অভিমান করে শ্রীমতী রাধারণী রাসমণ্ডলী ছেড়ে চলে গেলেন তখন সেই শতকোটি ব্রজগোপীদের ছেড়ে রাধার অন্বেষণে বিলাপ করতে করতে বনে বনে তাঁকে খুঁজতে লাগলেন। অতএব শ্রীকৃষ্ণের প্রতি শ্রীমতী রাধারাণীর প্রেমই সর্বশ্রেষ্ঠ।
এইভাবে শ্রীল রামানন্দ রায়ের মাধ্যমে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু ভগবদ্ভক্তির পরম উৎকর্ষতা প্রদর্শণ করে শ্রীমতী রাধারাণীকে সর্বশ্রেষ্ঠ ভক্ত বলে প্রমাণ করলেন।

Post a Comment

0 Comments