শ্রীল ভক্তিবিনোদ গীতিতে একটি গানে বলা হয়েছে-ওহে! বৈষ্ণব ঠাকুর.....




শ্রীল ভক্তিবিনোদ গীতিতে একটি গানে বলা হয়েছে-ওহে! বৈষ্ণব ঠাকুর.....

ছয় বেগ দমি' ছয় দোষ শোধি' ছয় গুণ দেহ দাসে। ছয় সৎসঙ্গ দেহ হে আমারে, বসেছি সঙ্গের আশে।।

ছয় বেগ, ছয় দোষ, ছয় গুণ এবং ছয় সৎসঙ্গ কি?

উত্তরঃ ছয় বেগ বাচো বেগং মনসঃ ক্রোধবেগং জিহ্বাবেগমুদরোপন্থবেগম্।
এতান্ বেগান্ যো বিষহিত ধীর সর্ব্বমপীমাং পৃথিবীং স শিষ্যাৎ।।
(শ্রী উপদেশামৃতম্)

১) বাক্য বেগ- কৃষ্ণসম্বন্ধীয় কথা ছাড়া জড়জাগতিক কথা, বৃথা গালগল্প, প্রজল্প, অপরের উদ্বেগ ও দুঃখকর বচন প্রয়োগ।

২) মনোবেগ- নানা রকমের মনগড়া কার্যকলাপ, সংযমহীন মন যা চায় তাই করা।

৩) ক্রোধবেগ- ইন্দ্রিয় ভোগে ব্যাঘাত হেতু রূঢ় আচরণ ও বিক্ষুদ্ধ হ ওয়া।

৪) জিহ্বাবেগ- নানা স্বাদের খাদ্য লালসা।

৫) উদরবেগ- অতিরিক্ত ভোজন।

৬) উপস্থবেগ- স্ত্রী পুরুষ সঙ্গ লালসা।
শাস্ত্রে বলা হয়েছে, এই ছয় প্রকার বেগ যিনি দমন করতে সমর্থ, তিনি সমগ্র পৃথিবীকে শাসন করতে পারেন।

ছয় দোষ-
অত্যাহারঃ প্রয়াসশ্চ প্রজল্পো নিয়মাগ্রহঃ। জনসঙ্গশ্চ লৌল্যঞ্চ ষড়ভির্ভক্তির্বিনশ্যতি।। (শ্রীউপদেশামৃতম্)

১) অত্যাহার- প্রয়োজনের অতিরিক্ত দ্রব্যর সংগ্রহ ও সঞ্চয় ।

২) প্রয়াস- পার্থিব সম্পদ লাভের জন্য অত্যধিক প্রচেষ্টা।

৩) প্রজল্প- বৃথা বাক্যলাপ, অনাবশ্রক গ্রাম্য কথা।

৪) নিয়মাগ্রহ- নিয়মের প্রতি অত্যধি আগ্রহ, কিংবা নিয়মকে অবহেলা।

৫) জনসঙ্গ- কৃষ্ণভাবনাবিমুখ জড়বিষয়ী লোকের সঙ্গ।

৬) লৌল্য- চিত্তের চঞ্চলতা; পার্থিব সুখলাভের বাসনায় ব্যাকুলতা।

কোন ব্যক্তি যখন উপরোক্ত ছয়টি দোষের দ্বারা আবদ্ধ হয়ে পড়ে তখন তার পারমার্থিক জীবন বিনাশ প্রাপ্ত হয়।

ছয় গুন-
উৎসাহান্নিশ্চয়াদ্ধৈর্য্যাত্তত্তৎকর্মপ্রর্বর্তনাৎ।
সঙ্গত্যাগাৎ সতোবৃত্তেঃ ষড়র্ভিভক্তিঃ প্রসিধ্যতি।। (উপদেশামৃতম্)

১) উৎসাহ- ভজন সাধন অর্থাৎ ভগবৎ সেবা অনুশীলনে উৎসাহ।

২) নিশ্চয়তা- পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ আমাকে অবশ্যই রক্ষা করবেন এই দৃঢ় বিশ্বাসে কৃষ্ণানুশীলন।

৩) ধৈর্য- ভগবৎ প্রেম লাভের জন্য ধৌর্য। বিধিনিষেধ পালনে শৈথিল্য না করা।

৪) তত্তৎকর্ম প্রবর্তন- শ্রবণ-কীর্তন ইত্যাদি ভক্তি অনুকূল কর্ম সম্পাদন।

৫) সঙ্গত্যাগ- ভন্ড, নাস্তিক, মায়াবাদী, স্ত্রৈণ, অভক্ত, বিষয়ীর সঙ্গত্যাগ।

৬) সতোবৃত্তি- পূর্বতন মহান বৈষ্ণব আচার্যগণের পদাঙ্ক অনুসরণ।

এই ছয়টি বিধি অনুসারে পারমাথির্ক জীবন-যাপন করলে ভক্তিযোগে অবশ্যই সিদ্ধিলাভ করা যাবে।

ছয় সৎসঙ্গ-
প্রীতির সহিত কৃষ্ণভক্তসঙ্গ ছয় প্রকারে সাধিত হয়। তাই এই সঙ্গকে প্রীতি লক্ষণ বা ভক্তিপোষক সঙ্গ বলা হয়।

দদাতি প্রতিগৃহ্নাতি গুহ্যমাখ্যাতি পৃচ্ছতি।
ভুঙক্তে ভোজয়তে চৈব ষড়বিধং প্রীতিলক্ষণম্।। (উপদেশামৃতম্)

১) ভগবদ্ভক্তকে প্রয়োজনীয় দ্রব্য প্রীতিপূর্বক দান।

২) ভক্তের প্রতিদান সাদরে গ্রহন।

৩) নিজের মনের কথা ভক্তের নিকট প্রকাশ।

৪) ভজন বিষয়ক কথা ভক্তকেই জিজ্ঞাসা।

৫) ভক্তের দেওয়া ভগবৎ প্রসাদ গ্রহণ।

৬) ভক্তকে ভগবৎ প্রসাদ নিবেদন।

                                               ....হরিবোল....

Post a Comment

0 Comments