ব্রহ্মসংহিতা থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শ্লোক

  • ব্রহ্মসংহিতা থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শ্লোক



  • শ্লোক: 1

  • ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দবিগ্রহঃ ।
    অনাদিরাদির্গোবিন্দঃ সর্ব্বকারণকারণম্।।
    (ব্রহ্মসংহিতা ৫/১)"
  • অনুবাদঃ- শ্রীকৃষ্ণ, যিনি গোবিন্দ নামেও পরিচিত, তিনি হচ্ছেন পরম ঈশ্বর৷ তাঁর রূপ সচ্চিদানন্দময় (নিত্য, জ্ঞানময় ও আনন্দময়)। তিনি হচ্ছেন সব কিছুর পরম উৎস৷ তাঁর কোন উৎস নেই, কেন না তিনি হচ্ছেন সমস্ত কারণের পরম কারণ৷

  • শ্লোক: 2

    রামাদিমূর্তিষু কলানিয়মেন তিষ্ঠন্
    নানাবতারমকরোদ্ভুবনেষু কিন্তু ।
    কৃষ্ণঃ স্বয়ং সমভবৎ পরমঃ পুমান্ যো
    গোবিন্দমাদিপুরুষং তমহং ভজামি ।।
    (ব্রহ্মসংহিতা ৫/৩৯)
  • অনুবাদঃ- কলাবিভাগে রামাদি মূর্তিতে ভগবান জগতে নানা অবতার প্রকাশ করেছিলেন; কিন্তু যে পরম পুরুষ স্বয়ং কৃষ্ণরূপে প্রকট হন, সেই আদি-পুরুষ গোবিন্দকে আমি ভজনা করি।

  • শ্লোক: 3

    দীপার্চিরেব হি দশান্তরমভ্যুপেত্য
    দীপায়তে বিবৃতহেতুসমানধর্মা ।
    যস্তাদৃ্গেব হি চ বিষ্ণুতয়া বিভাতি
    গোবিন্দমাদিপুরুষং তমহং ভজামি ।।
    (ব্রহ্মসংহিতা ৫/৪৬)
  • অনুবাদঃ- এক মূল প্রদীপের জ্যোতি যেরূপ অন্য বর্তি বা বাতিগত হয়ে বিবৃত (বিস্তার) হেতু সমান ধর্মের সঙ্গে পৃথক প্রজ্জ্বলিত হয়, সেরূপ (বিষ্ণুর) চরিষ্ণুভাবে যিনি প্রকাশ পান, সেই আদিপুরুষ গোবিন্দকে আমি ভজন করি।

  • শ্লোক: 4

    চিন্তামণিপ্রকরসদ্মসু কল্পবৃক্ষ-
    লক্ষাবৃতেষু সুরভীরভিপালয়ন্তম্ ।
    লক্ষ্মীসহস্রশতসম্ভ্রমসেব্যমানং
    গোবিন্দমাদিপুরুষং তমহং ভজামি ।।
    (ব্রহ্মসংহিতা ৫/২৯)
  • অনুবাদঃ- আমি সেই আদি পুরুষ গোবিন্দের ভজনা করি, যিনি লক্ষ লক্ষ কল্পবৃক্ষ দ্বারা আবৃত, চিন্তামণির দ্বারা রচিত ধামে, সমস্ত বাসনা পূর্ণকারী সুরভী গাভীদের পালন করছেন। তিনি নিরন্তর শত শত লক্ষ্মীদেবীর দ্বারা সম্ভ্রম সহকারে সেবিত হচ্ছেন ।

  • শ্লোক: 5

    আলোলচন্দ্রক লসদবনমাল্যবংশী-
    রত্নাঙ্গদং প্রণয়কেলিকলাবিলাসম্ ।
    শ্যামং ত্রিভঙ্গললিতং নিয়তপ্রকাশং
    গোবিন্দমাদিপুরুষং তমহং ভজামি ।।
    (ব্রহ্মসংহিতা ৫/৩১)
  • অনুবাদঃ- দোলায়িত চন্দ্রক শোভিতা বনমালা যাঁর গলদেশে, বংশী ও রত্নাঙ্গদ যাঁর করদ্বয়ে, সর্বদা প্রণয়কেলি বিলাসযুক্ত যিনি, ললিত ত্রিভঙ্গ শ্যামসুন্দর রূপই যাঁর নিত্য প্রকাশ, সেই আদিপুরুষ গোবিন্দকে আমি ভজন করি।

  • শ্লোক: 6

    সৃষ্টিস্থিতিপ্রলয়সাধনশক্তিরেকা
    ছায়েব যস্য ভুবনানি বিভর্তি দুর্গা ।
    ইচ্ছানুরূপমপি যস্য চ চেষ্টতে সা
    গোবিন্দমাদিপুরুষং তমহং ভজামি ।।
    (ব্রহ্মসংহিতা ৫/৪৪)
  • অনুবাদঃ- স্বরূপশক্তি বা চিৎ-শক্তির ছায়াস্বরূপা প্রাপঞ্চিক জগতের সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয়-সাধিনী মায়াশক্তিই ভুবন-পূজিতা দুর্গা। তিনি যাঁর ইচ্ছানুরূপ চেষ্টা করেন, সেই আদিপুরুষ গোবিন্দকে আমি ভজনা করি।

  • শ্লোক: 7

    কথা গানং নাট্যং গমনপি বংশী প্রিয়সখী
    চিদানন্দং জ্যোতিঃ পরমপি তদাস্বাদ্যমপি চ ।।
    স যত্র ক্ষীরাব্ধিঃ স্রবতি সুরভীভ্যশ্চ সুমহান্
    নিমেষার্ধ্বখ্যো বা ব্রজতি ন হি যত্রাপি সময়ঃ ।
    ভজে শ্বেতদ্বীপং তমহমিহ গোলোকমিতি যং
    বিদন্তস্তে সন্তঃ ক্ষিতিবিরলচারাঃ কতিপয়ে ।।
    (ব্রহ্মসংহিতা ৫/৫৬)
  • অনুবাদঃ- যে-স্থলে চিন্ময়ী লক্ষ্মীগণ কান্তারূপা, পরম পুরুষ কৃষ্ণই একমাত্র কান্ত, বৃক্ষমাত্রই চিদগত কল্পতরু, ভূমিমাত্রই চিন্তামণি অর্থাৎ চিন্ময় মণিবিশেষ, জলমাত্রই অমৃত, কথামাত্রই গান, গমনমাত্রই নাট্য, বংশী--প্রিয়সখী, জ্যোতি--চিদানন্দময়, পরম চিৎপদার্থ মাত্রই আস্বাদ্য বা ভোগ্য; যে-স্থলে কোটি কোটি সুরভী হইতে চিন্ময় মহা-ক্ষীরসমুদ্র নিরন্তর স্রাবিত হচ্ছে, তথা ভূত ও ভবিষ্যৎরূপ খণ্ডত্ব রহিত চিন্ময়কাল- নিত্য বর্তমান, সুতরাং নিমেষার্ধ্ব ও ভূতধর্ম প্রাপ্ত হয় না, সেই শ্বেতদ্বীপরূপ পরম পীঠকে আমি ভজন করি। সেই ধামকে এই জড় জগতে বিরলচর অতি স্বল্পসংখ্যক সাধুব্যক্তিই গোলোক বলে জানেন।

  • শ্লোক: 8

    পন্থাস্তু কোটিশতবৎসরসংপ্রগম্যো
    বায়োরথাপি মনসো মুনিপুঙ্গবানাম্ ।
    সোহপ্যস্তি যৎ প্রপদসীম্ন্যবিচিন্ত্যতত্ত্বে
    গোবিন্দমাদিপুরুষং তমহং ভজামি ।।
    (ব্রহ্মসংহিতা ৫/৩৪)
  • অনুবাদঃ- সেই প্রাকৃত চিন্তাতীত তত্ত্বে গমনেচ্ছু প্রাণায়ামগত যোগীদিগের বায়ু-নিয়ামনপথ অথবা অতন্নিরসনকারী নির্ভেদ-ব্রহ্মানুসন্ধানকারী মুনিশ্রেষ্ঠদিগের জ্ঞানচর্চারূপ পন্থা শত-কোটি বৎসর চলেও যাঁর চরণারবিন্দের অগ্রসীমা মাত্র প্রাপ্ত হয়, সেই আদিপুরুষ গোবিন্দকে আমি ভজন করি।

  • শ্লোক: 9

    যস্ত্বিন্দ্রগোপমথবেন্দ্রমহো স্বকর্ম-
    বন্ধানুরূপফলভাজনমাতনোতি ।
    কর্মণি নির্দহতি কিন্তু চ ভক্তিভাজাং
    গোবিন্দমাদিপুরুষং তমহং ভজামি ।।
    (ব্রহ্মসংহিতা ৫/৫৪)
  • অনুবাদঃ- যিনি ইন্দ্রগোপ কীট থেকে আরম্ভ করে দেবরাজ ইন্দ্র পর্যন্ত সমস্ত জীবদের কর্ম অনুসারে ফল ভোগ করান, কিন্তু যিনি তাঁর ভক্তদের সমস্ত কর্মই বিনাশ করেন, আহা! সেই আদি পুরুষ গোবিন্দকে আমি ভজনা করি।

  • শ্লোক: 10

    প্রেমাঞ্জনচ্ছুরিতভক্তিবিলোচনেন
    সন্তঃ সদৈব হৃদয়েষু বিলোকয়ন্তি ।
    যং শ্যামসুন্দরমচিন্ত্যগুণস্বরূপং
    গোবিন্দমাদিপুরুষং তমহং ভজামি ।।
    (ব্রহ্মসংহিতা ৫/৩৮)
  • অনুবাদঃ- প্রেমাঞ্জন দ্বারা রঞ্জিত ভক্তিচক্ষু-বিশিষ্ট সাধুগণ যে অচিন্ত্য গুণবিশিষ্ট শ্যামসুন্দর কৃষ্ণকে হৃদয়েও অবলোকন করেন, সেই আদি পুরুষ গোবিন্দকে আমি ভজনা করি।

  • শ্লোক: 11

    যঃ কারণার্ণবজলে ভজতি স্ম যোগ-
    নিদ্রামনন্তজগদণ্ডসরোমকূপঃ ।
    আধারশক্তিমবলম্ব্য পরাং স্বমূর্তিং
    গোবিন্দমাদিপুরুষং তমহং ভজামি ।।
    (ব্রহ্মসংহিতা ৫/৪৭)
  • অনুবাদঃ- আধার-শক্তিময়ী শেষাখ্যা শ্রেষ্ঠ-স্বমূর্তি অবলম্বনপূর্বক যিনি স্বীয় রোমকূপে অনন্ত ব্রহ্মাণ্ডের সঙ্গে কারণার্ণবে শয়ন করে যোগনিদ্রা সম্ভোগ করেন, সেই আদিপুরুষ গোবিন্দকে আমি ভজনা করি।

  • শ্লোক: 12

    অদ্বৈতমচ্যুতমনাদিমনন্তরূপ-
    মাদ্যং পুরাণপুরুষং নবযৌবনঞ্চ ।
    বেদেষু দুর্লভমদুর্লভমাত্মভক্তৌ
    গোবিন্দমাদিপুরুষং তমহং ভজামি ।।
    (ব্রহ্মসংহিতা ৫/৩৩)
  • অনুবাদঃ- বেদেরও অগম্য, কিন্তু শুদ্ধ আত্মভক্তিরই লভ্য, সেই আদিপুরুষ গোবিন্দকে আমি ভজনা করি। তিনি অদ্বৈত, অচ্যুত, অনাদি, অনন্তরূপ, আদ্য, পুরাণ পুরুষ হয়েও নবযৌবন-সম্পন্ন সুন্দর পুরুষ।

  • শ্লোক: 13

    অঙ্গানি যস্য সকলেন্দ্রিয়বৃত্তিমন্তি
    পশ্যন্তি পান্তি কলয়ন্তি চিরং জগন্তি ।
    আনন্দচিন্ময়সদুজ্জ্বলবিগ্রহস্য
    গোবিন্দমাদিপুরুষং তমহং ভজামি ।।
    (ব্রহ্মসংহিতা ৫/৩২)
  • অনুবাদঃ- সেই আদিপুরুষ গোবিন্দকে আমি ভজনা করি; তাহাঁর বিগ্রহ আনন্দময়, চিন্ময় ও সন্ময়, সুতরাং পরমোজ্জ্বল। সেই বিগ্রহগত অঙ্গসকল প্রত্যেকেই সমস্ত ইন্দ্রিয়বৃত্তি-বিশিষ্ট এই চিদচিৎ অনন্ত জগৎসমূহকে নিত্যকাল দর্শন, পালন ও কলন করেন।

  • শ্লোক: 14

    বেণুং ক্বণন্তমরবিন্দদলায়তাক্ষং
    বর্হাবতংসমসিতাম্বুদসুন্দরাঙ্গম্ ।
    কন্দর্পকোটিকমনীয়বিশেষশোভং
    গোবিন্দমাদিপুরুষং তমহং ভজামি ।।
    (ব্রহ্মসংহিতা ৫/৩০)
  • অনুবাদঃ- মুরলীগান-তৎপর, কমলদলের ন্যায় প্রফুল্লচক্ষু, ময়ূরপুচ্ছ শিরোভূষণ, নীল মেঘবর্ণ সুন্দর শরীর, কোটি কন্দর্প মোহন বিশেষ শোভা-বিশিষ্ট সেই আদি-পুরুষ গোবিন্দকে আমি ভজনা করি।

  • শ্লোক: 15

    আনন্দচিন্ময়রসপ্রতিভাবিতাভি-
    স্তাভির্য এব নিজরূপতয়া কলাভিঃ ।
    গোলোক এব নিবসত্যখিলাত্মভূতো
    গোবিন্দমাদিপুরুষং তমহং ভজামি ।।
    (ব্রহ্মসংহিতা ৫/৩৭)
  • অনুবাদঃ- পরম আনন্দবিধায়ক হ্লাদিনী শক্তির মূর্ত প্রকাশ শ্রীমতি রাধারাণীর সঙ্গে যিনি স্বীয় ধাম গোলোকে অবস্থান করেন এবং শ্রীমতি রাধারাণীর অংশ-প্রকাশ, চিন্ময় রসের আনন্দে পরিপূর্ণ ব্রজগোপীরা যাঁর নিত্য লীলাসঙ্গিনী, সেই আদিপুরুষ গোবিন্দকে আমি ভজনা করি।
  • Post a Comment

    0 Comments