অনুবাদঃ- শ্রীকৃষ্ণ, যিনি গোবিন্দ নামেও পরিচিত, তিনি হচ্ছেন পরম ঈশ্বর৷ তাঁর রূপ সচ্চিদানন্দময় (নিত্য, জ্ঞানময় ও আনন্দময়)। তিনি হচ্ছেন সব কিছুর পরম উৎস৷ তাঁর কোন উৎস নেই, কেন না তিনি হচ্ছেন সমস্ত কারণের পরম কারণ৷
অনুবাদঃ- কলাবিভাগে রামাদি মূর্তিতে ভগবান জগতে নানা অবতার প্রকাশ করেছিলেন; কিন্তু যে পরম পুরুষ স্বয়ং কৃষ্ণরূপে প্রকট হন, সেই আদি-পুরুষ গোবিন্দকে আমি ভজনা করি।
অনুবাদঃ- এক মূল প্রদীপের জ্যোতি যেরূপ অন্য বর্তি বা বাতিগত হয়ে বিবৃত (বিস্তার) হেতু সমান ধর্মের সঙ্গে পৃথক প্রজ্জ্বলিত হয়, সেরূপ (বিষ্ণুর) চরিষ্ণুভাবে যিনি প্রকাশ পান, সেই আদিপুরুষ গোবিন্দকে আমি ভজন করি।
অনুবাদঃ- আমি সেই আদি পুরুষ গোবিন্দের ভজনা করি, যিনি লক্ষ লক্ষ কল্পবৃক্ষ দ্বারা আবৃত, চিন্তামণির দ্বারা রচিত ধামে, সমস্ত বাসনা পূর্ণকারী সুরভী গাভীদের পালন করছেন। তিনি নিরন্তর শত শত লক্ষ্মীদেবীর দ্বারা সম্ভ্রম সহকারে সেবিত হচ্ছেন ।
অনুবাদঃ- স্বরূপশক্তি বা চিৎ-শক্তির ছায়াস্বরূপা প্রাপঞ্চিক জগতের সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয়-সাধিনী মায়াশক্তিই ভুবন-পূজিতা দুর্গা। তিনি যাঁর ইচ্ছানুরূপ চেষ্টা করেন, সেই আদিপুরুষ গোবিন্দকে আমি ভজনা করি।
অনুবাদঃ- যে-স্থলে চিন্ময়ী লক্ষ্মীগণ কান্তারূপা, পরম পুরুষ কৃষ্ণই একমাত্র কান্ত, বৃক্ষমাত্রই চিদগত কল্পতরু, ভূমিমাত্রই চিন্তামণি অর্থাৎ চিন্ময় মণিবিশেষ, জলমাত্রই অমৃত, কথামাত্রই গান, গমনমাত্রই নাট্য, বংশী--প্রিয়সখী, জ্যোতি--চিদানন্দময়, পরম চিৎপদার্থ মাত্রই আস্বাদ্য বা ভোগ্য; যে-স্থলে কোটি কোটি সুরভী হইতে চিন্ময় মহা-ক্ষীরসমুদ্র নিরন্তর স্রাবিত হচ্ছে, তথা ভূত ও ভবিষ্যৎরূপ খণ্ডত্ব রহিত চিন্ময়কাল- নিত্য বর্তমান, সুতরাং নিমেষার্ধ্ব ও ভূতধর্ম প্রাপ্ত হয় না, সেই শ্বেতদ্বীপরূপ পরম পীঠকে আমি ভজন করি। সেই ধামকে এই জড় জগতে বিরলচর অতি স্বল্পসংখ্যক সাধুব্যক্তিই গোলোক বলে জানেন।
অনুবাদঃ- সেই প্রাকৃত চিন্তাতীত তত্ত্বে গমনেচ্ছু প্রাণায়ামগত যোগীদিগের বায়ু-নিয়ামনপথ অথবা অতন্নিরসনকারী নির্ভেদ-ব্রহ্মানুসন্ধানকারী মুনিশ্রেষ্ঠদিগের জ্ঞানচর্চারূপ পন্থা শত-কোটি বৎসর চলেও যাঁর চরণারবিন্দের অগ্রসীমা মাত্র প্রাপ্ত হয়, সেই আদিপুরুষ গোবিন্দকে আমি ভজন করি।
অনুবাদঃ- যিনি ইন্দ্রগোপ কীট থেকে আরম্ভ করে দেবরাজ ইন্দ্র পর্যন্ত সমস্ত জীবদের কর্ম অনুসারে ফল ভোগ করান, কিন্তু যিনি তাঁর ভক্তদের সমস্ত কর্মই বিনাশ করেন, আহা! সেই আদি পুরুষ গোবিন্দকে আমি ভজনা করি।
অনুবাদঃ- প্রেমাঞ্জন দ্বারা রঞ্জিত ভক্তিচক্ষু-বিশিষ্ট সাধুগণ যে অচিন্ত্য গুণবিশিষ্ট শ্যামসুন্দর কৃষ্ণকে হৃদয়েও অবলোকন করেন, সেই আদি পুরুষ গোবিন্দকে আমি ভজনা করি।
অনুবাদঃ- আধার-শক্তিময়ী শেষাখ্যা শ্রেষ্ঠ-স্বমূর্তি অবলম্বনপূর্বক যিনি স্বীয় রোমকূপে অনন্ত ব্রহ্মাণ্ডের সঙ্গে কারণার্ণবে শয়ন করে যোগনিদ্রা সম্ভোগ করেন, সেই আদিপুরুষ গোবিন্দকে আমি ভজনা করি।
অনুবাদঃ- বেদেরও অগম্য, কিন্তু শুদ্ধ আত্মভক্তিরই লভ্য, সেই আদিপুরুষ গোবিন্দকে আমি ভজনা করি। তিনি অদ্বৈত, অচ্যুত, অনাদি, অনন্তরূপ, আদ্য, পুরাণ পুরুষ হয়েও নবযৌবন-সম্পন্ন সুন্দর পুরুষ।
অনুবাদঃ- সেই আদিপুরুষ গোবিন্দকে আমি ভজনা করি; তাহাঁর বিগ্রহ আনন্দময়, চিন্ময় ও সন্ময়, সুতরাং পরমোজ্জ্বল। সেই বিগ্রহগত অঙ্গসকল প্রত্যেকেই সমস্ত ইন্দ্রিয়বৃত্তি-বিশিষ্ট এই চিদচিৎ অনন্ত জগৎসমূহকে নিত্যকাল দর্শন, পালন ও কলন করেন।
অনুবাদঃ- পরম আনন্দবিধায়ক হ্লাদিনী শক্তির মূর্ত প্রকাশ শ্রীমতি রাধারাণীর সঙ্গে যিনি স্বীয় ধাম গোলোকে অবস্থান করেন এবং শ্রীমতি রাধারাণীর অংশ-প্রকাশ, চিন্ময় রসের আনন্দে পরিপূর্ণ ব্রজগোপীরা যাঁর নিত্য লীলাসঙ্গিনী, সেই আদিপুরুষ গোবিন্দকে আমি ভজনা করি।
0 Comments