চাণক্য পণ্ডিত এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ শ্লোক

চাণক্য পণ্ডিত এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ শ্লোক




  • শ্লোক: 1

    মাতা যস্য গৃহে নাস্তি ভার্যা চাপ্রিয়বাদিনী।
    অরণ্যং তেন গন্তব্যং যথারণ্যং তথা গৃহম্ ।।
    ( চাণক্য পণ্ডিত)
  • অনুবাদঃ-- কোনও ব্যক্তির গৃহে যদি স্নেহশীলা মা না থাকেন, কিংবা তার স্ত্রী যদি প্রিয়ভাষিণী না হয়, তা হলে বনে গমন করাই (সন্ন্যাস গ্রহণ) তার কর্তব্য, কেন না তার গৃহটিও ইতিমধ্যেই অরণ্যতুল্য একটি স্থান মাত্র।

  • শ্লোক: 2

    ঋণকর্তা পিতা শত্রুর্মাতা চ ব্যভিচারিণী।
    ভার্যা রূপবতী শত্রুঃ পুত্রঃ শত্রুরপণ্ডিতঃ ।।
    ( চাণক্য পণ্ডিত)
  • অনুবাদঃ-পরিবার জীবনে চার রকমের শত্রু রয়েছে- ঋণী পিতা, পতির প্রতি অবিশ্বাসী মাতা, খুব সুন্দরী স্ত্রী এবং অজ্ঞ ও বোকা পুত্র।

  • শ্লোক: 3

    মাতৃবৎ পরদারেষু পরদ্রব্যেষু লোষ্ট্রবৎ।
    আত্মবৎ সর্বভুতেষু যঃ পশ্যতি স পণ্ডিতঃ ।।
    ( চাণক্য পণ্ডিত)
  • অনুবাদঃ--যিনি পরস্ত্রীকে মায়ের মতো দেখেন, পরের দ্রব্যকে মাটির ঢেলার মতো তুচ্ছ বলে মনে করেন এবং সমস্ত জীবকে নিজের মতো দর্শন করেন- তিনিই হচ্ছেন পণ্ডিত।

  • শ্লোক: 4

    একনাপি সুবৃক্ষেণ পুষ্পিতেন সুগন্ধিনা।
    বাস্যতে তদ্বনং সর্বং সুপুত্রেণ কুলং যথা।।
    ( চাণক্য পণ্ডিত)
  • অনুবাদঃ- একটি সুগন্ধিযুক্ত বৃক্ষ যেমন সমগ্র বনকে সুবাসিত করে, ঠিক তেমনই একটি মাত্র সুপুত্র সমস্ত কুলকে মহিমান্বিত করতে পারে।

  • শ্লোক: 5

    একনাপি কুবৃক্ষেণ কোটরস্থেন বহ্নিনা।
    দহ্যতে তদ্বনং সর্বং কুপুত্রেণ কুলং যথা।।
    ( চাণক্য পণ্ডিত)
  • অনুবাদঃ- একটি মাত্র মন্দ বৃক্ষের কোটরস্থ বহ্নি যেমন সমগ্র বনকে ভস্মীভূত করতে পারে, ঠিক তেমনই একটি মাত্র মন্দ পুত্র সমগ্র কুলকে ধ্বংস করতে পারে।

  • শ্লোক: 6

    দুষ্টা ভার্যা শঠং মিত্রং ভৃত্যশ্চোত্তরদায়কঃ ।
    সসর্পে চ গৃহে বাসো মৃত্যুরেব ন সংশয়।।
    ( চাণক্য পণ্ডিত)
  • অনুবাদঃ- যার স্ত্রী দুষ্টা, বন্ধু প্রতারক, যার ভৃত্যরা মুখের উপর উত্তর দেয়, তিনি সর্পময় গৃহে বাস করছেন। তার মৃত্যু অবধারিত ।

  • শ্লোক: 7

    শঠে শাঠ্যমাচরেৎ ( চাণক্য পণ্ডিত)
  • অনুবাদঃ- প্রতারকের সঙ্গে প্রতারণামূলক আচরণ করাই উচিত।

  • শ্লোক: 8

    দুর্জনঃ পরিহর্তব্যো বিদ্যয়ালঙ্কৃতোহপি সন।
    মণিনা ভূষিতঃ সর্পঃ কিমসৌ ন ভয়ঙ্করঃ ।।
    ( চাণক্য পণ্ডিত)
  • অনুবাদঃ- বিদ্যার দ্বারা অলঙ্কৃত হলেও দুর্জন ব্যক্তিকে পরিহার করা কর্তব্য। সে ঠিক একটি মণিভূষিত বিষাক্ত সর্পের মতো। সেই রকম সাপ কি ভয়ঙ্কর নয়?

  • শ্লোক: 9

    শর্বরীভূষণং চন্দ্রো নারীণাং ভূষণং পতিঃ ।
    পৃথিবীভূষণং রাজা বিদ্যা সর্বস্য ভূষণম্ ।।
    (চাণক্য পণ্ডিত)
  • অনুবাদঃ- রাত্রির ভূষণ হচ্ছে চাঁদ। রমনীর ভূষণ হচ্ছে ভাল স্বামী। পৃথিবীর ভূষণ রাজা। আর বিদ্যা সকলেরই ভূষণ ।

  • শ্লোক: 10

    বিশ্বাসো নৈব কর্তব্যঃ স্ত্রীষু রাজকুলেষু চ ।
    (চাণক্য পণ্ডিত)
  • অনুবাদঃ- রাজনীতিবিদ এবং স্ত্রীলোককে কখনও বিশ্বাস করতে নেই।

  • শ্লোক: 11

    কোহর্থঃ পুত্রেণ জাতেন যো ন বিদ্বান্ ন ধার্মিকঃ ।
    কাণেন চক্ষুষা কিংবা চক্ষুঃ পীড়ৈব কেবলম্ ।।
    (চাণক্য পণ্ডিত)
  • অনুবাদঃ- যে পুত্র ধার্মিকও নয়, বিদ্বানও নয়, সে পুত্রের কি মূল্য? সেই রকম পুত্রকে শুধু একটি কাণা চোখের সঙ্গেই তুলনা করা যায়, যা কেবল যন্ত্রণাই দান করে।

  • শ্লোক: 12

    মূর্খাঃ যত্র ন পূজ্যন্তে ধান্যং যত্র সুসঞ্চিতম্ ।
    দম্পত্যোঃ কলহো নাস্তি তত্র শ্রীঃ স্বয়মাগতাঃ ।।
    (চাণক্য পণ্ডিত)
  • অনুবাদঃ- যেখানে মূর্খগণ পূজিত হয় না, ধান্যাদি শস্য যেখানে সুসঞ্চিত থাকে, যেখানে দাম্পত্য কলহ নেই, সেখানে লক্ষ্মীদেবী স্বয়ং সমাগত হন।

  • শ্লোক: 13

    বিষাদপ্যমৃতং গ্রাহ্যং অমেধ্যদপি কাঞ্চনম্ ।
    নীচাদপ্যুত্তমং জ্ঞানং স্ত্রীরত্নং দুষ্কুলাদপি ।।
    (চাণক্য পণ্ডিত)
  • অনুবাদঃ- বিষ থেকেও অমৃত গ্রহণ করা কর্তব্য, অপবিত্র স্থান থেকেও স্বর্ণ গ্রহণ করা কর্তব্য, নীচ কুলোদ্ভূত ব্যক্তির কাছ থেকেও শ্রেষ্ঠ জ্ঞান আহরণ করতে হবে এবং নীচ বংশোদ্ভূত হলেও গুণবতী পত্নী গ্রহণীয় ।

  • শ্লোক: 14

    আত্মমাতা গুরোঃ পত্নী ব্রাহ্মণী রাজপত্নিকা ।
    ধেনুর্ধাত্রী তথা পৃথ্বী সপ্তৈতা মাতরঃ স্মৃতাঃ ।।

    (চাণক্য পণ্ডিত)
  • অনুবাদঃ- নিজের মা, গুরুপত্নী, ব্রাহ্মণী, রানী মা, গাভী, ধাত্রী ও পৃথিবী—এই সাত জন মাতা বলে পরিচিত ।

  • শ্লোক: 15

    ঋষি শ্রাদ্ধে অজা যুদ্ধে প্রভাতে মেঘ গর্জনে ।
    দাম্পত্য কলহে চৈব বহ্বারম্ভে লঘুক্রিয়া ।।
    (চাণক্য পণ্ডিত)
  • অনুবাদঃ- বনে দেহত্যাগকারী ঋষির শ্রাদ্ধে, দুটো ছাগলের যুদ্ধে, প্রভাতে মেঘের গর্জনে, স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়ায় শুরুতে খুবই আড়ম্বর হয়, কিন্তু তার ফল খুবই নগণ্য ।

  • শ্লোক: 16

    অবিদ্যং জীবনং শূন্যং দিক্ শূন্যাশ্চ অবান্ধবাঃ ।
    পুত্রহীনং গৃহং শূন্যং সর্বশূন্যা দরিদ্রতা ।।

    (চাণক্য পণ্ডিত)
  • অনুবাদঃ- জ্ঞানহীন জীবন শূন্য, বন্ধুবান্ধবহীন ব্যক্তির সব দিক শূন্য, পুত্রহীন গৃহ শূন্য, আর দরিদ্র ব্যক্তির সমগ্র জগৎটাই শূন্য।

  • শ্লোক: 17

    ত্যজ দুর্জনসংসর্গং ভজ সাধুসমাগমম্ ।
    কুরু পুণ্যমহোরাত্রং স্মর নিত্যং অনিত্যতাম্ ।।
    (চাণক্য পণ্ডিত)
  • অনুবাদঃ- দুর্জনসঙ্গ ত্যগ কর। সাধুসঙ্গে ভজনা কর। দিন-রাত ধরে শুধু পুণ্য অনুষ্ঠান কর। সব সময় স্মরণে রাখ যে, এই জড় জগৎ ক্ষণস্থায়ী।

  • শ্লোক: 18

    আয়ুষঃ ক্ষণ একোহপি ন লভ্য স্বর্ণকোটিভিঃ ।
    ন চেন্নিরর্থকং নীতিঃ কা চ হানিস্ততোহধিকা ।।
    (চাণক্য পণ্ডিত)
  • অনুবাদঃ- জীবনের একটি মাত্র ক্ষণও যদি বৃথা ব্যয় করা হয়, তা হলে কোটি কোটি স্বর্ণমুদ্রার বিনিময়েও তা আর ফেরৎ পাওয়া যায় না। সুতরাং বৃথা সময় নষ্ট করা থেকে অধিকতর হানি আর কি হতে পারে?

  • শ্লোক: 19

    রূপযৌবনসম্পন্ন বিশালকুলসম্ভবাঃ ।
    বিদ্যাহীনা ন শোভন্তে নির্গন্ধা ইব কিংশুকাঃ ।।
    (চাণক্য পণ্ডিত)
  • অনুবাদঃ- রূপযৌবন-সম্পন্ন ব্যক্তি এবং উচ্চকুলে জাত ব্যক্তিও যদি বিদ্যাহীন হন, তা হলে তার কোন শোভা নেই, ঠিক যেমন কিংশুক ফুল অত্যন্ত সুন্দর দেখালেও গন্ধহীন বলে তার কোন চমৎকারিত্ব বা মূল্য নেই।

  • শ্লোক: 26

    লালয়েৎ পঞ্চবর্ষাণি দশবর্ষাণি তাড়য়েৎ ।
    প্রাপ্তে তু ষোড়শে বর্ষে পুত্রং মিত্রবদাচরেৎ ।।
    (চাণক্য পণ্ডিত)
  • অনুবাদঃ- পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত পুত্রকে লালন করবে। পরবর্তী দশ বছর তাকে শাসন করবে। কিন্তু কারও পুত্র যখন ষোল বছর বয়সে উপনীত হয়, তখন তার সঙ্গে বন্ধুর মতো আচরণ করা উচিত।

  • শ্লোক: 27

    লালনে বহবো দোষাস্তাড়নে বহবো গুণাঃ ।
    তস্মাৎ পুত্রং চ শিষ্যং চ তাড়য়েন্ন তু লালয়েৎ ।।
    (চাণক্য পণ্ডিত)
  • অনুবাদঃ- প্রশ্রয় বা লালন শিষ্য বা পুত্রের আচরণে বহু বদ্ গুণাবলীকে উৎসাহিত করে এবং কঠোরতা সদ্ গুণাবলী অর্জনে সহায়তা করে। অতএব শিক্ষক বা পিতা-মাতার কর্তব্য শিশুকে প্রশ্রয় না দেওয়া, বরং মন্দ আচরণের জন্য তাকে শাস্তি দেওয়া উচিত।

  • শ্লোক: 13

    শর্বরীভূষণং চন্দ্রো নারীণাং ভূষণং পতিঃ ।
    পৃথিবীভূষণং রাজা বিদ্যা সর্বস্য ভূষণম্ ।।
    (চাণক্য পণ্ডিত)
  • অনুবাদঃ- রাত্রির ভূষণ হচ্ছে চাঁদ। রমনীর ভূষণ হচ্ছে ভাল স্বামী। পৃথিবীর ভূষণ রাজা। আর বিদ্যা সকলেরই ভূষণ।

  • শ্লোক: 28

    সর্পঃ ক্রূরঃ খলঃ ক্রূরঃ সর্পাৎ ক্রূরতরঃ খলঃ ।
    মন্ত্রৌষধিবশঃ সর্পঃ খলঃ কেন নিবার্যতে ।।
    (চাণক্য পণ্ডিত)
  • অনুবাদঃ- সাপ ভয়ঙ্কর, দুষ্টলোকও ভয়ঙ্কর, তবে এই দুয়ের মধ্যে খল বা দুষ্ট ব্যক্তি বিষধর সাপের থেকেও ভয়ঙ্কর। মন্ত্র ও ওষুধের দ্বারা সাপকে বশীভূত করা যায়। কিন্তু খল ব্যক্তিকে কিভাবে নিবারণ করা যায়?

  • শ্লোক: 30

    পয়ঃপানং ভুজঙ্গানাং কেবলং বিষবর্ধনম্ ।
    উপদেশো হি মূর্খানাং প্রকোপায় না শান্তয়ে ।।
    (চাণক্য পণ্ডিত)
  • অনুবাদঃ- সাপ যখন দুধ পান করে, সে শুধু তার বিষই বর্ধন করে। তেমনই মূর্খকে সদুপদেশ দান করলে তা শুধু তার ক্রোধই উৎপন্ন করে। উপদেশে তাদের মন শান্ত হয় না।

  • শ্লোক: 31

    ঋণং কৃত্বা ঘৃতং পিবেৎ যাবজ্জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ ।
    ভস্মীভূতস্য দেহস্য কুতঃ পুনরাগমনো ভবেৎ ।।
    (চার্বাক মুনি)
  • অনুবাদঃ- যতদিন বাঁচবে সুখে বাঁচবে, তার জন্য প্রয়োজন হলে ঋণ করেও যত খুশি ঘি খাবে। মৃত্যুর পরে দেহ যখন ভস্মীভূত হয়ে যায়, তখন তার পুনর্জন্ম আর কি করে সম্ভব?

  • শ্লোক: 31

    বরং একো গুণী পুত্রো ন চ মূর্খশতৈরপি ।
    একশ্চন্দ্রস্তমো হন্তি ন চ তারা গণৈরপি ।।
    (চাণক্য পণ্ডিত)
  • অনুবাদঃ- শত শত মূর্খ সন্তান লাভ করার থেকে এক জন গুণী পুত্র লাভ করা ভাল। কারণ অসংখ্য তারা অন্ধকার দূর করতে পারে না, কিন্তু একটি মাত্র চাঁদ ব্রহ্মাণ্ডের অন্ধকার দূর করে।
  • Post a Comment

    0 Comments