ভগবান শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু এবং শ্রী নিত্যানন্দ প্রভু সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শ্লোক

  • ভগবান শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু এবং শ্রী নিত্যানন্দ প্রভু সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শ্লোক


  • শ্লোক: 1

    অনর্পিতচরীং চিরাৎ করুণয়াবতীর্ণঃ কলৌ
    সমর্পয়িতুমুন্নতোজ্জ্বলরসাং স্বভক্তিশ্রিয়ম্।
    হরিঃ পুরটসুন্দরদ্যুতিকদম্বসন্দীপিতঃ
    সদা হৃদয়কন্দরে স্ফুরতু বঃ শচীনন্দনঃ॥ ৪
    (চৈঃ চঃ আদি ১/৪, শ্রীবিদগ্ধ মাধব থেকে)-

  • অনুবাদ:- যা ছিল চির-অনর্পিত অর্থাৎ কোনোকালে যা কাউকে দেওয়া হয়নি সেই উজ্জল অর্থাৎ মধুর রসে রসাল নিজস্ব প্রেমসম্পদ বিলিয়ে দেবার জন্য করুণাবশতঃই তিনি কলিযুগে অবতীর্ণ হয়েছেন। স্বর্ণপুঞ্জের মতন উজ্জল তার দেহকান্তি। সেই শচীনন্দন হরি তোমাদের হৃদয়কন্দরে সর্ব্বদা দীপ্তি পেতে থাকুন॥ ৪॥

  • শ্লোক: 2

    রাধা কৃষ্ণপ্রণয়বিকৃতির্হ্লাদিনীশক্তিরস্মা-
    দেকাত্মানাবপি ভুবি পুরা দেহভেদং গতৌ তৌ ।
    চৈতন্যাখ্যং প্রকটমধুনা তদ্দ্বয়ং চৈক্যমাপ্তং
    রাধাভাবদ্যুতিসুবলিতং নৌমি কৃষ্ণস্বরূপম্॥ (চৈঃ চঃ আদি ১/৫)

  • অনুবাদ:- শ্রীরাধিকা শ্রীকৃষ্ণের প্রণয়ের বিকার-স্বরূপা; সুতরাং শ্রীমতি রাধারাণী শ্রীকৃষ্ণের হ্লাদিনী শক্তি। এই জন্য তাঁরা (শ্রীমতী রাধারাণী ও শ্রীকৃষ্ণ) একাত্মা। কিন্তু একাত্মা হলেও তাঁরা অনাদিকাল থেকে গোলোকে পৃ্থক দেহ ধারণ করে আছেন। এখন (কলিযুগে) সেই দুই দেহ পুনরায় একত্রে যুক্ত হয়ে শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য নামে প্রকট হয়েছেন। শ্রীমতী রাধারাণীর এই ভাব ও কান্তিযুক্ত শ্রীকৃষ্ণস্বরূপ শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যকে আমি আমার প্রণতি নিবেদন করি।

  • শ্লোক: 3

    পঞ্চতত্ত্বাত্মকং কৃষ্ণং
    ভক্তরূপস্বরূপকম্।
    ভক্তাবতারং ভক্তাখ্যং
    নমামি ভক্তশক্তিকম্॥ ১৪
  • অনুবাদ:- আমি শ্রীকৃষ্ণকে প্রণাম করি। শ্রীচৈতন্য, নিত্যানন্দ, অদ্বৈতাচার্য্য, গদাধরপণ্ডিত ও শ্রীবাসাদি পঞ্চতত্ত্বের স্বরূপভূত ইনি শ্রীচৈতন্যে ভক্তরূপে, নিত্যানন্দে ভক্ত-স্বরূপে, অদ্বৈতাচার্য্যে ভক্তাবতাররূপে, গদাধরে ভক্তশক্তিরূপে এবং শ্রীবাসাদিতে ভক্তনামধারী রূপে বিরাজিত আছেন। ॥ ১৪ ॥

  • শ্লোক: 4

    শ্রীচৈতন্যপ্রভুং বন্দে
    বালোহপি যদনুগ্রহাৎ।
    তরেন্নানামতগ্রাহ-
    ব্যাপ্তং সিদ্ধান্তসাগরম্।। ১
  • অনুবাদ:- শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুকে বন্দনা করি, যাঁর অনুগ্রহে বালকও জলজন্তুসঙ্কুল সমুদ্রের মতন কুতর্কসঙ্কুল শাস্ত্রসিদ্ধান্ত পার হ’তে পারে।। ১ ।।

  • শ্লোক: 5

    তমিমমহমজং শরীরভাজাং
    হৃদি হৃদি ধিষ্ঠিতমাত্মকল্পিতানাম্।
    প্রতিদৃশমিব নৈকধার্কমেকং
    সমধিগতোহস্মি বিধূতভেদমোহঃ।। ৮
  • অনুবাদ:- আমার ভেদমোহ আর নেই, কারণ আমি জেনেছি, বিভিন্ন লোকের দৃষ্টিতে নানাভাবে প্রকাশিত হ’লেও সূর্য্য যেমন এক, তেমনি নিজসৃষ্ট প্রাণীদের হৃদয়ে হৃদয়ে বিভিন্ন ভাবে প্রকাশিত সেই শ্রীকৃষ্ণও প্রকৃতপক্ষে জন্মরহিত অর্থাৎ এক।। ৮ ।।

  • শ্লোক: 6

    শ্রীচৈতন্যপ্রভুং বন্দে যৎপাদাশ্রয়বীর্য্যতঃ। সংগৃহ্ণাত্যাকরব্রাতাদজ্ঞঃ সিদ্ধান্ত-সম্মণীন্।।১
  • অনুবাদ:- শ্রীচৈতন্য প্রভুকে বন্দনা করি। তাঁর চরণ আশ্রয় করলে অজ্ঞজনও শাস্ত্র থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে – খনি থেকে মণি চয়নের মত।।১।।

  • শ্লোক: 7

    বিশ্বম্ভরৌ দ্বিজবরৌ যুগধর্মপালৌ
    বন্দে জগৎপ্রিয়্করৌ করুণাবতারৌ৷৷ - (চৈতন্য ভাগবত-1/1)
  • অনুবাদ:- যাঁদের বাহুদ্বয় হাঁটু পর্যন্ত প্রসারিত, দেহ স্বর্ণাভ উজ্জ্বল জ্যোতি বিকীরণকারী, চক্ষু পদ্মফুলের পাপড়ির মতোই বিস্তৃত, যাঁরা ব্র্রাহ্মণদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ, যুগধর্মের পালক, বিশ্বের মহান ভরণপোষণকারী, ভগবানের মহাবদান্য পরম করুণাময় অবতার ও যাঁরা হরিনাম সংকীর্তন যজ্ঞের প্রবর্তক-- সেই শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু ও শ্রীনিত্যানন্দ প্রভুকে আমি বন্দনা করি৷ - (বৃন্দাবন দাস ঠাকুর)

  • শ্লোক: 8

    বন্দে শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যনিত্যানন্দৌ সহোদিতৌ৷
    গৌড়োদয়ে পুষ্পবন্তৌ চিত্রৌ শন্দৌ তমোনুদৌ৷৷ - (চৈঃ চঃ আদি 1/2)
  • অনুবাদ:- গৌড়দেশের পূর্ব দিগন্তে একই সময়ে অতি বিস্ময়করভাবে সূর্য ও চন্দ্রের মতো যাঁরা উদিত হয়েছেন, সেই পরম মঙ্গল প্রদাতা এবং অজ্ঞান ও অন্ধকারনাশক শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভু এবং শ্রীনিত্যানন্দ প্রভুকে আমি বন্দনা করি৷

  • শ্লোক: 9

    পৃথিবীতে আছে যত নগরাদি-গ্রাম ৷
    সর্বত্র প্রচার হইবে মোর নাম৷৷ - (চৈতন্য-ভাগবত)
  • অনুবাদ:- পৃথিবীতে যত নগর এবং গ্রাম রয়েছে, সর্বত্রই আমার পবিত্র নাম প্রচার হবে৷

  • শ্লোক: 10

    শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য রাধা-কৃষ্ণ নহে অন্য৷ - (চৈতন্য-ভাগবত)
  • অনুবাদ:- শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভু শ্রীশ্রীরাধা-কৃষ্ণের মিলিত তনু ছাড়া অন্য কেউ নন৷

  • শ্লোক: 11

    কৃষ্ণবর্ণং ত্বিষাকৃষ্ণং সাঙ্গোপাঙ্গাস্ত্রপার্ষদম্
    যজ্ঞৈঃ সঙ্কীর্তনপ্রায়ৈর্যজন্তি হি সুমেধসঃ - (ভাগবত 11/5/32)
  • অনুবাদ:- এই কলিযুগে, সুমেধা-সম্পন্ন ব্যক্তিগণ অবিরাম কৃষ্ণ-কীর্তনকারী ভগবানের অবতারকে আরাধনা করার জন্য সংকীর্তন যজ্ঞের অনুষ্ঠান করেন৷ যদিও তাঁর গায়ের বর্ণ অ-কৃষ্ণ, তবুও তিনি স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ৷ তিনি তাঁর সঙ্গী, সেবক, অস্ত্র এবং অন্তরঙ্গ-পার্ষদে পরিবৃত৷

  • শ্লোক: 12

    সুবর্ণবর্ণো হেমাঙ্গো বরাঙ্গশ্চন্দনাঙ্গদী
    সন্ন্যাসকৃচ্ছমঃ শান্তো নিষ্ঠাশান্তিপরায়ণঃ - (মহাভারত, বিষ্ণু-সহস্রনাম-স্তোত্র)
  • অনুবাদ:- মহাপ্রভু গৌরসুন্দরের গায়ের রঙ সোনার মতো৷ প্রকৃতপক্ষে, তাঁর সুললিত সমগ্র দেহটি কাঁচা সোনার মতো৷ তাঁর সমস্ত দেহ চন্দন-চর্চিত৷ তিনি সন্ন্যাস গ্রহণ করবেন এবং খুব আত্ম-সংযমশীল হবেন৷ মায়াবাদী সন্ন্যাসীদের সঙ্গে তাঁর পার্থক্য এই যে, তিনি ভক্তিমূলক সেবায় নিষ্ঠাপরায়্ণ এবং সংকীর্তন-আন্দোলন প্রচার করবেন৷

  • শ্লোক: 13

    ইত্থং নৃতির্যগৃষিদেবঝষাবতারৈ-
    র্লোকান্ বিভাবয়সি হংসি জগৎপ্রতীপান্৷
    ধর্মং মহাপুরুষ পাসি যুগানুবৃত্তং
    ছন্নঃ কলৌ যদভবস্ত্রীযুগোহথ স ত্বম্ ৷৷ - (ভাগবত 7/9/38)
  • অনুবাদ:- এভাবেই, হে ভগবান! আপনি মানুষ রূপে, পশুরূপে, ঋষিরূপে, দেবতারূপে, মৎস অথবা কূর্মরূপে বিভিন্ন অবতার গ্রহণ করেন এবং এভাবেই অসুরদের হত্যা করে সমস্ত সৃষ্টির বিভিন্ন গ্রহলোকসমূহ পালন করেন৷ যুগ অনুসারে, হে ভগবান! আপনি ধর্মকে রক্ষা করেন৷ তবে কলিযুগে আপনি আপনার ভগবত্তা আবৃত করে অবতীর্ণ হোন, আর এই জন্য আপনি ত্রিযুগ (অর্থাৎ, ভগবান যিনি তিন যুগে প্রকাশিত) নামে পরিচিত৷

  • শ্লোক: 14

    নমো মহাবদান্যায় কৃষ্ণপ্রেমপ্রদায় তে৷
    কৃষ্ণায় কৃষ্ণচৈতন্যনাম্নে গৌরত্বিষে নমঃ৷৷ -(চৈঃ চঃ মধ্য 19/53)
  • অনুবাদ:- হে মহাবদান্য অবতার! আপনি স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ, শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুরূপে অবতীর্ণ হয়েছেন৷আপনি শ্রীমতি রাধারাণীর অঙ্গকান্তি গ্রহণ করেছেন৷ আপনি ব্যপকভাবে শুদ্ধ শ্রীকৃষ্ণপ্রেম বিতরণ করছেন৷ আমরা আপনাকে আমাদের সশ্রদ্ধ প্রণাম নিবেদন করছি৷

  • শ্লোক: 15

    ত্যক্ত্বা সুদুস্ত্যজসুরেপ্সিতরাজ্যলক্ষ্মীং
    ধর্মিষ্ঠ আর্যবচসা যদগাদরণ্যম্৷
    মায়ামৃগং দয়িতয়েপ্সিতমন্বধাবদ্-
    বন্দে মহাপুরুষ তে চরণারবিন্দম্ ৷৷ - (ভাগবত 11/5/34)
  • অনুবাদ:- হে মহাপুরুষ ! আমি আপনার চরণকমল বন্দনা করছি৷ আপনি লক্ষ্মীদেবীর সঙ্গ এবং তাঁর সমগ্র ঐশ্বর্য ত্যাগ করেছিলেন৷ এই ঐশ্বর্য ত্যাগ করা সবচেয়ে কঠিন এবং এমন কি মহান দেবতারাও তা আকাঙ্ক্ষা করেন৷ ধর্মের সুবিশ্বস্ত অনুগামী হয়ে এক ব্রাহ্মণের অভিশাপের আনুগত্য স্বীকার করে আপনি এভাবেই অরণ্যে গমন করেছিলেন৷ শুদ্ধ কৃপার ফলে আপনি দেহবদ্ধ পতিত জীবদের পেছনে অনুগমন করেছিলেন, যারা সর্বদাই মায়া সুখের অনুসন্ধানে রত ৷ একই সঙ্গে আপনার কাম্য বস্তু ভগবান শ্যামসুন্দরকে খুঁজে বের করতেও আপনি নিযুক্ত হয়েছিলেন৷
  • Post a Comment

    0 Comments