আচার-আচরণ সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শ্লোক :-
শ্লোক: 1
ধর্মস্য হ্যাপবর্গ্যস্য নার্থোহর্থায়োপকল্পতে ।
নার্থস্য ধর্মৈকান্তস্য কামো লাভায় হি স্মৃতঃ ।। (ভাগবত ১/২/৯)
অনুবাদঃ- সমস্ত ধর্মের উদ্দেশ্যই হচ্ছে চরম মুক্তি লাভ করা। তা কখনও জড় বিষয় লাভের আশায় অনুষ্ঠান করা উচিত নয় । অধিকন্তু, তত্ত্বদ্রষ্টা মহর্ষিরা নির্দেশ দিয়ে গেছেন যে, যাঁরা পরম ধর্ম অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়েছেন, তাঁরা যেন কখনই ইন্দ্রিয়সুখ ভোগের উদ্দেশ্যে জড়-জাগতিক লাভের প্রত্যাশী না হন। (সূত গোস্বামী)
শ্লোক: 2
ঈশাবাস্যমিদং সর্বং যৎকিঞ্চ জগত্যাং জগৎ ।
তেন ত্যক্তেন ভুঞ্জীথা মা গৃধঃ কস্য স্বিদ্ ধনম্ ।।
(ঈশোপনিষদ-১)
অনুবাদঃ- এই জগতের স্থাবর ও জঙ্গম সব কিছুরই নিয়ন্তা ও মালিক হলেন ভগবান। তাই, জীবন ধারণের জন্য আবশ্যক সম্পদ, যা ভগবান নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন, শুধু তাই গ্রহণ করতে হবে। অন্যের সম্পদে লোভ করা উচিত নয়।
শ্লোক: 3
মাতা যস্য গৃহে নাস্তি ভার্যা চাপ্রিয়বাদিনী।
অরণ্যং তেন গন্তব্যং যথারণ্যং তথা গৃহম্ ।।
( চাণক্য পণ্ডিত)
অনুবাদঃ- কোনও ব্যক্তির গৃহে যদি স্নেহশীলা মা না থাকেন, কিংবা তার স্ত্রী যদি প্রিয়ভাষিণী না হয়, তা হলে বনে গমন করাই (সন্ন্যাস গ্রহণ) তার কর্তব্য, কেন না তার গৃহটিও ইতিমধ্যেই অরণ্যতুল্য একটি স্থান মাত্র।
শ্লোক: 4
ঋণকর্তা পিতা শত্রুর্মাতা চ ব্যভিচারিণী।
ভার্যা রূপবতী শত্রুঃ পুত্রঃ শত্রুরপণ্ডিতঃ ।।
( চাণক্য পণ্ডিত)
অনুবাদঃ-পরিবার জীবনে চার রকমের শত্রু রয়েছে- ঋণী পিতা, পতির প্রতি অবিশ্বাসী মাতা, খুব সুন্দরী স্ত্রী এবং অজ্ঞ ও বোকা পুত্র।
শ্লোক: 5
মাতৃবৎ পরদারেষু পরদ্রব্যেষু লোষ্ট্রবৎ।
আত্মবৎ সর্বভুতেষু যঃ পশ্যতি স পণ্ডিতঃ ।।
( চাণক্য পণ্ডিত)
অনুবাদঃ-যিনি পরস্ত্রীকে মায়ের মতো দেখেন, পরের দ্রব্যকে মাটির ঢেলার মতো তুচ্ছ বলে মনে করেন এবং সমস্ত জীবকে নিজের মতো দর্শন করেন- তিনিই হচ্ছেন পণ্ডিত।
শ্লোক: 6
একনাপি সুবৃক্ষেণ পুষ্পিতেন সুগন্ধিনা।
বাস্যতে তদ্বনং সর্বং সুপুত্রেণ কুলং যথা।।
( চাণক্য পণ্ডিত)অনুবাদঃ- একটি সুগন্ধিযুক্ত বৃক্ষ যেমন সমগ্র বনকে সুবাসিত করে, ঠিক তেমনই একটি মাত্র সুপুত্র সমস্ত কুলকে মহিমান্বিত করতে পারে।
শ্লোক: 7
একনাপি কুবৃক্ষেণ কোটরস্থেন বহ্নিনা।
দহ্যতে তদ্বনং সর্বং কুপুত্রেণ কুলং যথা।।
( চাণক্য পণ্ডিত)
অনুবাদঃ- একটি মাত্র মন্দ বৃক্ষের কোটরস্থ বহ্নি যেমন সমগ্র বনকে ভস্মীভূত করতে পারে, ঠিক তেমনই একটি মাত্র মন্দ পুত্র সমগ্র কুলকে ধ্বংস করতে পারে।
শ্লোক: 8
দুষ্টা ভার্যা শঠং মিত্রং ভৃত্যশ্চোত্তরদায়কঃ ।
সসর্পে চ গৃহে বাসো মৃত্যুরেব ন সংশয়।।
( চাণক্য পণ্ডিত)
অনুবাদঃ- যার স্ত্রী দুষ্টা, বন্ধু প্রতারক, যার ভৃত্যরা মুখের উপর উত্তর দেয়, তিনি সর্পময় গৃহে বাস করছেন। তার মৃত্যু অবধারিত ।
শ্লোক: 9
যদ্ যদাচরতি শ্রেষ্ঠস্তত্তদেবেতরো জনঃ ।
স যৎ প্রমাণং কুরুতে লোকস্তদনুবর্ততে ॥
অনুবাদ:- শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি যে ভাবে আচরণ করেন, সাধারণ মানুষেরা তার অনুকরণ করে। তিনি যা প্রমাণ বলে স্বীকার করেন, সমগ্র পৃথিবী তারই অনুসরণ করে।
শ্লোক: 10
খাব কি খাব না যদি খাও তো পৌষে ।
যাব কি যাব না যদি যাও তো শৌচে ।। বাংলা প্রবাদ
অনুবাদঃ- খাব কি খাব না -এই রকম দ্বন্দ্ব যদি থাকে, তা হলে না খাওয়াই বাঞ্ছনীয়। আর যদি খেতেই হয় তো পৌষ মাসে খাওয়া যেতে পারে। আর কোথাও যাব কি যাব না- এই রকম সন্দেহ থাকলে, না যাওয়াই ভাল। তবে যদি মল-মূত্র ত্যাগের জন্য যেতে হয়, তবে অবশ্যই যেতে হবে।
শ্লোক: 11
শঠে শাঠ্যমাচরেৎ ( চাণক্য পণ্ডিত)
অনুবাদঃ- প্রতারকের সঙ্গে প্রতারণামূলক আচরণ করাই উচিত।
শ্লোক: 12
গৃহম্ শত্রুনপি প্রাপ্তম্ বিশস্তমকুতোভয়ম্ (সংস্কৃত প্রবাদ)
অনুবাদঃ- এমন কি কোন শত্রুও যদি আপনার ঘরে আসেন, তাঁর সঙ্গে এমনভাবে ব্যবহার করতে হবে যাতে তিনি যে আপনার শত্রু তা তিনি ভুলে যাবেন।
শ্লোক: 13
"বিশ্বাসো নৈব কর্তব্যঃ স্ত্রীষু রাজকুলেষু চ ।
(চাণক্য পণ্ডিত)
অনুবাদঃ- রাজনীতিবিদ এবং স্ত্রীলোককে কখনও বিশ্বাস করতে নেই।
শ্লোক: 14
কোহর্থঃ পুত্রেণ জাতেন যো ন বিদ্বান্ ন ধার্মিকঃ ।
কাণেন চক্ষুষা কিংবা চক্ষুঃ পীড়ৈব কেবলম্ ।।
(চাণক্য পণ্ডিত)
অনুবাদঃ- যে পুত্র ধার্মিকও নয়, বিদ্বানও নয়, সে পুত্রের কি মূল্য? সেই রকম পুত্রকে শুধু একটি কাণা চোখের সঙ্গেই তুলনা করা যায়, যা কেবল যন্ত্রণাই দান করে।
শ্লোক: 15
মূর্খাঃ যত্র ন পূজ্যন্তে ধান্যং যত্র সুসঞ্চিতম্ ।
দম্পত্যোঃ কলহো নাস্তি তত্র শ্রীঃ স্বয়মাগতাঃ ।।
(চাণক্য পণ্ডিত)
অনুবাদঃ- যেখানে মূর্খগণ পূজিত হয় না, ধান্যাদি শস্য যেখানে সুসঞ্চিত থাকে, যেখানে দাম্পত্য কলহ নেই, সেখানে লক্ষ্মীদেবী স্বয়ং সমাগত হন।
শ্লোক: 16
বিষাদপ্যমৃতং গ্রাহ্যং অমেধ্যদপি কাঞ্চনম্ ।
নীচাদপ্যুত্তমং জ্ঞানং স্ত্রীরত্নং দুষ্কুলাদপি ।।
(চাণক্য পণ্ডিত)
অনুবাদঃ- বিষ থেকেও অমৃত গ্রহণ করা কর্তব্য, অপবিত্র স্থান থেকেও স্বর্ণ গ্রহণ করা কর্তব্য, নীচ কুলোদ্ভূত ব্যক্তির কাছ থেকেও শ্রেষ্ঠ জ্ঞান আহরণ করতে হবে এবং নীচ বংশোদ্ভূত হলেও গুণবতী পত্নী গ্রহণীয় ।
শ্লোক: 17
আত্মমাতা গুরোঃ পত্নী ব্রাহ্মণী রাজপত্নিকা ।
ধেনুর্ধাত্রী তথা পৃথ্বী সপ্তৈতা মাতরঃ স্মৃতাঃ ।।
(চাণক্য পণ্ডিত)
অনুবাদঃ- নিজের মা, গুরুপত্নী, ব্রাহ্মণী, রানী মা, গাভী, ধাত্রী ও পৃথিবী—এই সাত জন মাতা বলে পরিচিত ।
শ্লোক: 18
ঋষি শ্রাদ্ধে অজা যুদ্ধে প্রভাতে মেঘ গর্জনে ।
দাম্পত্য কলহে চৈব বহ্বারম্ভে লঘুক্রিয়া ।।
(চাণক্য পণ্ডিত)
অনুবাদঃ- বনে দেহত্যাগকারী ঋষির শ্রাদ্ধে, দুটো ছাগলের যুদ্ধে, প্রভাতে মেঘের গর্জনে, স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়ায় শুরুতে খুবই আড়ম্বর হয়, কিন্তু তার ফল খুবই নগণ্য ।
শ্লোক: 19
অবিদ্যং জীবনং শূন্যং দিক্ শূন্যাশ্চ অবান্ধবাঃ ।
পুত্রহীনং গৃহং শূন্যং সর্বশূন্যা দরিদ্রতা ।।
(চাণক্য পণ্ডিত)
অনুবাদঃ- জ্ঞানহীন জীবন শূন্য, বন্ধুবান্ধবহীন ব্যক্তির সব দিক শূন্য, পুত্রহীন গৃহ শূন্য, আর দরিদ্র ব্যক্তির সমগ্র জগৎটাইশূন্য।
শ্লোক: 20
ত্যজ দুর্জনসংসর্গং ভজ সাধুসমাগমম্ ।
কুরু পুণ্যমহোরাত্রং স্মর নিত্যং অনিত্যতাম্ ।।
(চাণক্য পণ্ডিত)
অনুবাদঃ- দুর্জনসঙ্গ ত্যাগ কর। সাধুসঙ্গে ভজনা কর। দিন-রাত ধরে শুধু পুণ্য অনুষ্ঠান কর। সব সময় স্মরণে রাখ যে, এই জড় জগৎ ক্ষণস্থায়ী।
0 Comments