🌿 শ্রীপাদ বিশ্বনাথ চক্রবর্ত্তী ঠাকুর ''কৃষ্ণভাবনামৃত'' গ্রন্থে রাধাকৃষ্ণের আনন্দঘন ঝুলন যাত্রা লীলা লিপিবদ্ব করেন। এই গ্রন্থে অনেক সুন্দরভাবে ঝুলন উৎসবের বর্ননা করা হয়েছে। কৃষ্ণলীলায় রাধাকুন্ডের তীরে যুলন উৎসবটি লীলায়িত হয়েছিল।
🌿 একদা ব্রজের সব গোপীরা একেকজন নিজঘর থেকে সুন্দরভাবে সেঁজে রাধাকুন্ডের পাশে কুঞ্জবনে এল। এখানেই তাদের প্রানের যুগলমুর্ত্তি নবকিশোর রাধা-কৃষ্ণকে যুলনে বসিয়ে দোল দিবে বলে একত্রিত হয়েছিল। কিন্তু রসরাজ শ্রীকৃষ্ণ এই দোলন উৎসবের সুযোগে এক অদ্ভুত লীলা গোপীদের সাথে করেছিলেন।
.
🌿তুলসি মহারানী বৃন্দাদেবী এই লীলাকে আরও সুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ার জন্য ষড়ঋতুকে আহ্বান করে বলেছিলেন যেন তারা তাদের ষড়ঋতুর প্রভাব এখানে বিস্তার করে। ষড়ঋতুগন মুর্ত্তিমান রুপ ধারন করে যেন এখানে তারা একই সময়ে গ্রীষ্মকালের ঝলমল রৌদ্রে বর্ষার পুষ্পম বৃষ্টির কণায় নির্মল শরতের নীল আকাশে কাল মেঘের আনাগোনা গাছে গাছে পাতায় পাতায় শিহরন সঞ্জিবতায় কদম কেয়া শিউলি ফুলের মৃদগন্ধ তীরে তীরে কাশফুলের ছড়াছড়ি বৃষ্টি আলোর মধ্যে মেঘের লুকোচুরি শ্বেতশুভ্র পুঞ্জ মেঘের নীচে হেমন্তের রিক্ততাহীন ধুসরতায় ভেসে আসা চাষীদের ফসল কাটার গানসহ কুয়াশার চাদর মোড়ান শিশির সিক্তকে কাছে ডেকে অশোক পলাশ কৃষ্ণচুড়া আর শিমুলের আগুন লাগা ফাগুনের বসন্তে কোকিলের মত সব গোপীরা গোপীগীত করে যুগলমুর্ত্তি রাধা-কৃষ্ণকে আজ দোলনে দোল দিতে পারে।
.
🌿তুলসি মহারানী বৃন্দাদেবী এই লীলাকে আরও সুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ার জন্য ষড়ঋতুকে আহ্বান করে বলেছিলেন যেন তারা তাদের ষড়ঋতুর প্রভাব এখানে বিস্তার করে। ষড়ঋতুগন মুর্ত্তিমান রুপ ধারন করে যেন এখানে তারা একই সময়ে গ্রীষ্মকালের ঝলমল রৌদ্রে বর্ষার পুষ্পম বৃষ্টির কণায় নির্মল শরতের নীল আকাশে কাল মেঘের আনাগোনা গাছে গাছে পাতায় পাতায় শিহরন সঞ্জিবতায় কদম কেয়া শিউলি ফুলের মৃদগন্ধ তীরে তীরে কাশফুলের ছড়াছড়ি বৃষ্টি আলোর মধ্যে মেঘের লুকোচুরি শ্বেতশুভ্র পুঞ্জ মেঘের নীচে হেমন্তের রিক্ততাহীন ধুসরতায় ভেসে আসা চাষীদের ফসল কাটার গানসহ কুয়াশার চাদর মোড়ান শিশির সিক্তকে কাছে ডেকে অশোক পলাশ কৃষ্ণচুড়া আর শিমুলের আগুন লাগা ফাগুনের বসন্তে কোকিলের মত সব গোপীরা গোপীগীত করে যুগলমুর্ত্তি রাধা-কৃষ্ণকে আজ দোলনে দোল দিতে পারে।
🌿নিকুঞ্জ বনের কুঞ্জে আজ রাধাকৃষ্ণে একত্র হয়ে তারা বিশ্রাম ছেড়ে ললিতা বিশাখার ডাকের অপেক্ষায় আছে কখন তারা দোলনায় দোল খেতে আসবে।
🌿 আজ এক অদ্ভুত মাধুর্য্য লীলা করার জন্য কৃষ্ণের ইচ্ছে হল রাধাকে আজ তার ইচ্ছামত সাঁজাবে বলে রাধাকে রাজী করল। কৃষ্ণ মনের মাধুরী দিয়ে রাধাকে সাঁজাতে লাগল। নানারকম রং দিয়ে কৃষ্ণের পোশাকের মত পোশাক পড়িয়ে চুল কোকড়া করে মাথায় পাগড়ি বেধে মুল্যবান বেশভূষা ও অলংকারে কুমকুম রেনু ছড়িয়ে কৃষ্ণের মত হাতে চুড়ি-বালা পরে মুখে তাম্বুলের রক্তিম অধরে সেঁজে রাধাকে সত্যিকারে কৃষ্ণ সাঁজিয়ে দুই যুগল কিশোরমূর্ত্তি হাতে বংশী ধরে অপেক্ষায় প্রহর গুনছে কখন সখীরা আসে।
🌿 যখন সব সখীরা রাধাকুন্ডে একত্রিত হল তখন ললিতা বিশাখা বলল, চল আমরা নিকুঞ্জ কুঞ্জে গিয়ে রাধাকৃষ্ণকে দর্শন করে তাদেরকেও নিয়ে আসি। তারা কুঞ্জের ভিতরে ঢুকে ত সবাই অবাক।
তারা দেখল সেখানে রাধারানী নেই। সেখানে দুই কৃষ্ণ বাঁশী হাতে বসে আছে। রাধা কোথা গেল সবাই হায় হায় করতে লাগল। সর্বনাশ হল।
তারা দেখল সেখানে রাধারানী নেই। সেখানে দুই কৃষ্ণ বাঁশী হাতে বসে আছে। রাধা কোথা গেল সবাই হায় হায় করতে লাগল। সর্বনাশ হল।
🌿 আর দুই কৃষ্ণ উপড়ে তাকিয়ে মধুর সুরে বাঁশী বাজাচ্ছে।
🌿সখীরা বুজতে পারল এরা দুই কৃষ্ণ নয়। এদের মধ্যে একজন আমাদের রাধা। কিন্তু কোন কৃষ্ণ রাধা তারা বিচার করতে লাগল। কিন্তু কিছুতেই কোনটি রাধা তারা চিনতেই পারছিল না। ললিতা এক কৃষ্ণকে অর্থাৎ সত্যিকারের কৃষ্ণকে ধরে বলতে লাগল, হে রাধে, তোমাকে কে এমন করে কৃষ্ণ সাঁজিয়েছে ?
🌿 কপট কৃষ্ণ আরও বাকপটু করে রাধারানীর গলার স্বর নকল করে বলছে, ''ললিতা এই দুষ্ট কৃষ্ণ আমাকে এমন করে সাঁজিয়েছে''।
আর আসল রাধা উপরে তাকিয়ে সেইমত বাঁশী বাজিয়ে চলছে।
সব সখীরা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আস্বস্ত হল !
আর আসল রাধা উপরে তাকিয়ে সেইমত বাঁশী বাজিয়ে চলছে।
সব সখীরা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আস্বস্ত হল !
সখীরা বলল, হে রাধে বল বল কিভাবে তুমি এমন হলে।
তখন ললিতা কৃষ্ণকে কুঞ্জের বাহিরে নিয়ে এল। সব সখীরা কৃষ্ণকে রাধা মনে করে কাঁধে হাত রেখে গায়ে গায়ে ঘেসে ঐ দোলনার সামনে যেতে লাগল। আবার রাধারানী যেমন সখীদের সাথে আচরন করে কৃষ্ণও ঐরুপ করতে লাগল। যেমন কেউ বুজতে না পারে।
তখন ললিতা কৃষ্ণকে কুঞ্জের বাহিরে নিয়ে এল। সব সখীরা কৃষ্ণকে রাধা মনে করে কাঁধে হাত রেখে গায়ে গায়ে ঘেসে ঐ দোলনার সামনে যেতে লাগল। আবার রাধারানী যেমন সখীদের সাথে আচরন করে কৃষ্ণও ঐরুপ করতে লাগল। যেমন কেউ বুজতে না পারে।
🌿সবাই বলছে, হে রাধে তোমার শরীর কেন পুরুষেরে মত শক্ত শক্ত লাগছে। কৃষ্ণ বলছে, ''সেই কপট কৃষ্ণ তার মন্ত্রপুতঃ জল আমার গায়ে ছিটিয়ে দিয়েছে তাই আমার অঙ্গ কৃষ্ণের অঙ্গের মত হয়ে গেছে''।
তখন বিশাখা বলছে, ''হে সখী, তোমার গলার স্বর কেন পরিবর্ত্তন হয়নি''।
তখন বিশাখা বলছে, ''হে সখী, তোমার গলার স্বর কেন পরিবর্ত্তন হয়নি''।
🌿 কৃষ্ণ বলল, ''যখন জল দিচ্ছিল তখন আমি মুখ বন্ধ করে ছিলাম। তাই কন্ঠ পরিবর্তন হয়নি''।সব সখীরা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আস্বস্ত হল। সব সখীরা বলল, হে রাধে আর সব পরিবর্তন কিভাবে এমন হলে। বল রাধে।
তখন কপট কৃষ্ণ বলছে, হায় হায় সেকথা আমি সবাইকে বলতে পারব না। আমার লজ্জা করছে। তোরা যদি শুনতে চাস তবে একজন একজন করে গোপনে আড়ালে গিয়ে কানে কানে বলতে পারি।
তখন কপট কৃষ্ণ বলছে, হায় হায় সেকথা আমি সবাইকে বলতে পারব না। আমার লজ্জা করছে। তোরা যদি শুনতে চাস তবে একজন একজন করে গোপনে আড়ালে গিয়ে কানে কানে বলতে পারি।
🌿পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অখিলরসামৃত। তিনি চেয়েছেন যে, সকল গোপীকে চিন্ময় জ্ঞান দান করে তাদের গত জন্মের দেওয়া প্রতিশ্রুতির কথা রক্ষা করা। যা তারা অনেক জন্ম জন্ম ধরে তপশ্চর্যা করে লাভ করেছিল। একইভাবে কৃষ্ণ আরও চেয়েছেন শ্রীমতি রাধারানীকে যে ভাবে প্রেম ভালবাসা ও আনন্দবিধান করেন আজকে তাদেরকেও সেই আনন্দ দান করবেন, যা আনন্দ লাভ করলে এই বিশ্বব্রম্মান্ডে আর কিছুর বাকী থাকে না।
🌿যদিও ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সমস্ত স্ত্রীলোকের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়, সকলের আরাধ্য, সমস্ত ঐশ্বর্য্যের অধিকারী, সকলের মাননীয়, পরম নিয়ন্তা ও আত্মারাম, তবুও তিনি গোপসখীদের সাথে নিজের স্বত্ত্বতা প্রকাশ করেন যে, তিনি আর রাধা একই তত্ত্ব।
🌿''রাধা পুর্নশক্তি, কৃষ্ণ পুর্নশক্তিমান,
দুই বস্তু ভেদ নাহি, শাস্ত্র - প্রমান''।। চৈতন্যচরিতামৃত
দুই বস্তু ভেদ নাহি, শাস্ত্র - প্রমান''।। চৈতন্যচরিতামৃত
🌿ললিতা তখন সব সখীদের বলল,'তোরা সবাই এখানে থাক, আমি রাধারানীর কি গুহ্যতম কথা তা শুনে আসি''।
এই বলে ললিতা কপট কৃষ্ণের সাথে ললিতা একটু আড়ালে গেলেন। সেখানে গিয়ে কৃষ্ণ তাকে দেখালেন যে তিনি রাধা নন স্বয়ং কৃষ্ণ। কৃষ্ণ ও রাধারানী যে একই তত্ত্ব তার প্রমান সহ রাসলীলা দেখালেন এবং ফিরে এসে ললিতা চুপ।
এই বলে ললিতা কপট কৃষ্ণের সাথে ললিতা একটু আড়ালে গেলেন। সেখানে গিয়ে কৃষ্ণ তাকে দেখালেন যে তিনি রাধা নন স্বয়ং কৃষ্ণ। কৃষ্ণ ও রাধারানী যে একই তত্ত্ব তার প্রমান সহ রাসলীলা দেখালেন এবং ফিরে এসে ললিতা চুপ।
🌿 তারপর বিশাখা গেলেন। তিনিও ফিরে এসে চুপ। একে একে সব সখীদের কৃষ্ণ রাধারানীর সাথে তার অনন্ত সম্পর্কের কথা প্রকাশ করলেন। কিন্তু কৃষ্ণ আবার যোগমায়া বলে আবার সবাইকে তা ভুলিয়ে দিলেন।
এবার সব সখীরা তবুও কৃষ্ণকে বলছে, হে সখী, অনেক ছলনা হল, হে রাধে, এবার তোমার স্বরুপে আস। দোলনার সময় গড়িয়ে যাচ্ছে।
কৃষ্ণও চুপ করে রইল।
কৃষ্ণও চুপ করে রইল।
তখন কিছু সখীরা কুঞ্জে গিয়ে রাধাকে কৃষ্ণ ভেবে অনুনয় করতে লাগল যে, তাদের সখীকে আবার রাধা করে দিতে। সেই সময় রাধারানীর হুস হল বলল, কেন রে সখীরা আমি ত রাধা, আমি কি করে কৃষ্ণকে রাধা বানাব।
তখন সবাই কৃষ্ণের ছলনা বুঝতে পারল।
সব সখীরা ও কৃষ্ণ হাসি তামাসা করে আনন্দের সীমা রইল না। সব সখীরা রাধাকৃষ্ণকে ঘিরে নৃত্যগীত করতে লাগল।
সব সখীরা ও কৃষ্ণ হাসি তামাসা করে আনন্দের সীমা রইল না। সব সখীরা রাধাকৃষ্ণকে ঘিরে নৃত্যগীত করতে লাগল।
🌿বৃন্দাদেবী আগেই যুলন তৈরী করে রেখেছিল। রাধা-কৃষ্ণসহ সব সখীরা সেই যুলনের কাছে গেলেন। যে যুলনটি ছিল সোনার ও মনিমুক্তা দিয়ে গাঁথা, রুপর দড়ি বিভিন্ন ফুল ফল লতা গুল্ম দিয়ে আচ্ছাদিত আর ষড়ঋতুর কারনে এক আনন্দ মোনহর পরিবেশ ছিল এক গাছ আরেক গাছকে আলিঙ্গন করছে। পাখীরা কুঞ্জন ও ময়ুর সকল নৃত্য করতে ছিল।
🌿সব সখীরা সেই স্বর্নখচিত যুলনটিতে রাধাকৃষ্ণকে বসালেন, কেউ গান গাইতে লাগল, কেউ বাদ্য বাজাতে লাগল, অন্যরা দোল দিতে লাগলেন, রাধা দোলনার অপর প্রান্তে একটু দুরে সরে দড়ি ধরে আছে দেখে কৃষ্ণ সবাইকে আরও জোরে দোল দিতে উৎসাহ দিতে লাগলেন, ঝুলন একপাশে আস্তে আস্তে অনেক উপরে উঠতে লাগলো,
আবার ওপাশেও অনেক উপরে উঠতে লাগলো ,
আবার ওপাশেও অনেক উপরে উঠতে লাগলো ,
🌿 কৃষ্ণ গোপীদের আরও আরও জোরে দোল দিতে উৎসাহ দিতে লাগল। এবার রাধা ভয় পেতে লাগল এবং দড়ি ছেড়ে কৃষ্ণকে জড়িয়ে ধরল, ''এ হল পুর্ন শরনাগতি''। তবুও কৃষ্ণ গোপীদের জোরে দোল দেওয়ার জন্য বলতে লাগল।
🌿সেদিন গীত বাদ্য সখীদের হাস্য তামাশা প্রকৃতি রাধারানীর চিৎকার কৃষ্ণের হাস্য কথা সব মিলিয়ে রাসলীলার আনন্দকেও ম্লান করেছিল। সবশেষে সকল সখীদের অংশগ্রহনে ললিতা ও বিশাখা তাদের প্রিয় যুগল কিশোর রাধাকৃষ্ণকে আনন্দ বিধান করেছিল। ধন্য তারা।
0 Comments