জ্ঞান সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শ্লোক :-

 জ্ঞান সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শ্লোক :-





  • শ্লোক: 1

    বিদ্যা দদাতি বিনয়ম্ ।
    (হিতোপদেশ)
  • অনুবাদঃ- বিদ্যা বিনয় দান করে।

  • শ্লোক: 2

    শর্বরীভূষণং চন্দ্রো নারীণাং ভূষণং পতিঃ ।
    পৃথিবীভূষণং রাজা বিদ্যা সর্বস্য ভূষণম্ ।।
    (চাণক্য পণ্ডিত)
  • অনুবাদঃ- রাত্রির ভূষণ হচ্ছে চাঁদ। রমনীর ভূষণ হচ্ছে ভাল স্বামী। পৃথিবীর ভূষণ রাজা। আর বিদ্যা সকলেরই ভূষণ ।

  • শ্লোক: 3

    অচিন্ত্যাঃ খলু যে ভাবা ন তাংস্তর্কেণ যোজয়েৎ ।
    প্রকৃ্তিভ্যঃ পরং যচ্চ তদচিন্ত্যস্য লক্ষণম্।।
    (মহাভারত ভীস্মপর্ব ৫/২২)
  • অনুবাদঃ- যা জড়া-প্রকৃতির অতীত তাকে বলা হয় অচিন্ত্য, কিন্তু সমস্ত যুক্তিতর্ক হচ্ছে জাগতিক। যেহেতু জাগতিক যুক্তিতর্ক জড়াতীত বিষয়কে স্পর্শ করতে পারে না, তাই কারও যুক্তিতর্কের মাধ্যমে চিন্ময় বিষয় হৃদয়ঙ্গম করার চিন্তা করা উচিত নয়।

  • শ্লোক: 4

    বহূনাং জন্মনামন্তে জ্ঞানবান্মাং প্রপদ্যতে।
    বাসুদেবঃ সর্বমিতি স মহাত্মা সুদুর্লভঃ ॥
  • অনুবাদঃ- বহু জন্মের পর তত্ত্বজ্ঞানী ব্যক্তি আমাকে সর্ব কারণের পরম কারণ রূপে জেনে আমার শরণাগত হন৷ সেইরূপ মহাত্মা অত্যন্ত দুর্লভ।

  • শ্লোক: 5

    শ্রেয়ঃসৃ্তিং ভক্তিমুদস্য তে বিভো
    ক্লিশ্যন্তি যে কেবলবোধলব্ধয়ে ।
    তেষামসৌ ক্লেশল এব শিষ্যতে
    নান্যদ্ যথা স্থূলতুষাবঘাতিনাম্ ।।
    (ভাগবত ১০/১৪/৪)
  • অনুবাদঃ- হে ভগবান! তোমাকে ভক্তি করাই সর্বশ্রেষ্ঠ পথ, তা পরিত্যাগ করে যারা কেবল জ্ঞান লাভের জন্য অর্থাৎ 'আমি ব্রহ্ম' এটিই জানবার জন্য নানা প্রকার ক্লেশ স্বীকার করেন, স্থূল তুষকে পেষণ করে যেমন চাল পাওয়া যায় না, তেমনই তাদের পরিশ্রম সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়।

  • শ্লোক: 6

    অথাপি তে দেব পদাম্বুজদ্বয়-
    প্রসাদলেশানুগৃহীত এব হি ।
    জানাতি তত্ত্বং ভগবন্মহিম্নো
    ন চান্য একোহপি চিরং বিচিন্বন ।।
    (ভাগবত ১০/১৪/২৯)
  • অনুবাদঃ- হে ভগবান ! কেউ যদি আপনার শ্রীপাদপদ্ম যুগলের কৃপার লেশমাত্রও লাভ করে থাকেন, তা হলে তিনি আপনার মহিমা হৃদয়ঙ্গম করতে পারেন। কিন্তু যারা আপনার মহিমা সম্বন্ধে জল্পনা-কল্পনা করে, তারা দীর্ঘকাল বেদ অধ্যয়ন করেও আপনাকে জানতে পারে না।

  • শ্লোক: 7

    ইদং হি পুংসস্তপসঃ শ্রুতস্য বা
    স্বিষ্টস্য সূক্তস্য চ বুদ্ধিদত্তয়োঃ ।
    অবিচ্যুতোহর্থঃ কবিভির্নিরূপিতো
    যদুত্তমশ্লোকগুণানুবর্ণনম্ ।।
    (ভাগবত ১/৫/২২)
  • অনুবাদঃ- তত্ত্বদ্রষ্টা মহর্ষিরা যথাযথভাবে সিদ্ধান্ত করেছেন যে, তপশ্চর্যা, বেদপাঠ, যজ্ঞ, মন্ত্রোচ্চারণ ও দান আদির একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে উত্তমশ্লোক ভগবানের অপ্রাকৃত লীলাবিলাসের বর্ণনা করা।

  • শ্লোক: 8

    শব্দব্রহ্মণি নিষ্ণাতো ন নিষ্ণায়াৎ পরে যদি।
    শ্রমস্তস্য শ্রম ফলো হ্যধেনুমিব রক্ষতঃ ।।
    (ভাগবত ১১/১১/১৮)
  • অনুবাদঃ- কেউ হয়তো সমস্ত বৈদিক শাস্ত্রে পারদর্শী হতে পারেন, কিন্তু তিনি যদি পরমেশ্বরকে (শ্রীকৃষ্ণকে) উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হন, তা হলে তাঁর শাস্ত্রজ্ঞান দুগ্ধদানে অক্ষম গাভীর মতোই অর্থহীন। ভারবাহী পশুর মতোই শাস্ত্রের বোঝা বহন করেন তিনি।

  • শ্লোক: 9

    তচ্ছ্রদ্দধানা মুনয়ো জ্ঞানবৈরাগ্যযুক্তয়া ।
    পশ্যন্ত্যাত্মনি চাত্মানং ভক্ত্যা শ্রুতগৃহীতয়া ।।
    (ভাগবত ১/২/১২)
  • অনুবাদঃ- অপ্রাকৃত বস্তুতে সুদৃঢ় ও নিশ্চয় বিশ্বাসযুক্ত মুনিগণ জ্ঞান ও বৈরাগ্যযুক্ত হয়ে শাস্ত্র শ্রবণজনিত উপলব্ধি অনুসারে ভগবানের প্রতি প্রেমময়ী সেবার দ্বারা তাঁদের শুদ্ধ হৃদয়ে পরমাত্মারূপে সেই তত্ত্ববস্তুকে দর্শন করেন।

  • শ্লোক: 10

    সিদ্ধান্ত বলিয়া চিত্তে না কর অলস ।
    ইহা হইতে কৃষ্ণে লাগে সুদৃঢ় মানস ।।
    (চৈঃ চঃ আদি ২/১১৭)
  • অনুবাদঃ- আলস্যবশত পাঠক যেন এই সমস্ত সিদ্ধান্তের আলোচনা শ্রবণ করার ব্যাপারে কখনও অবহেলা না করেন, কেন না এই সমস্ত আলোচনার মাধ্যমে মন সুদৃঢ়ভাবে শ্রীকৃষ্ণের প্রতি অনুরক্ত হয়ে ওঠে।

  • শ্লোক: 11

    বিদ্যা দদাতি বিনয়ম্
    (হিতোপদেশ)
  • অনুবাদঃ- বিদ্যা বিনয় দান করে।

  • শ্লোক: 12

    বুদ্ধিঃ যস্য বলং তস্য
    (অজ্ঞাত উৎস)
  • অনুবাদঃ- বুদ্ধি যার বল তার ।

  • শ্লোক: 13

    শর্বরীভূষণং চন্দ্রো নারীণাং ভূষণং পতিঃ ।
    পৃথিবীভূষণং রাজা বিদ্যা সর্বস্য ভূষণম্ ।।
    (চাণক্য পণ্ডিত)
  • অনুবাদঃ- রাত্রির ভূষণ হচ্ছে চাঁদ। রমনীর ভূষণ হচ্ছে ভাল স্বামী। পৃথিবীর ভূষণ রাজা। আর বিদ্যা সকলেরই ভূষণ।

  • শ্লোক: 14

    শ্রুতিঃ প্রত্যক্ষমৈতিহ্যমনুমানং চতুষ্টয়ম্ ।
    প্রমাণেষ্বনবস্থানাদ্ বিকল্পাৎ স বিরজ্যতে ।।
    (ভাগবত ১১/১৯/১৭)
  • অনুবাদঃ- শ্রুতি, প্রত্যক্ষ, ঐতিহ্য ও অনুমান—এই চার প্রকার প্রমাণের ভিত্তিতে মানুষ এই জড় জগতের অস্থায়ী অসারত্ব উপলব্ধি করতে পারে এবং এর দ্বারা সে এই জড় জগতের প্রতি বিরাগ বোধ করে।
    (উদ্ধবের প্রতি শ্রীকৃষ্ণ)

  • শ্লোক: 15

    শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য-দয়া করহ বিচার ।
    বিচার করিলে চিত্তে পাবে চমৎকার ।।
    (চৈঃ চঃ আদি ৮/১৫)
  • অনুবাদঃ- তুমি যদি সত্যি সত্যি যুক্তিতর্কের প্রতি আসক্ত হও, তা হলে দয়া করে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর দয়ার কথা বিচার কর। তা বিচার করলে দেখবে যে, তা কি অপূর্ব দয়া এবং তার ফলে তোমার চিত্ত চমৎকৃত হবে।

  • শ্লোক: 16

    বরীয়ানেষ তে প্রশ্নঃ কৃতো লোকহিতং নৃপ ।
    আত্মবিৎসম্মতঃ পুংসাং শ্রোতব্যাদিষু যঃ পরঃ ।।
    (ভাগবত ২/১/১)
  • অনুবাদঃ- হে রাজন্ ! আপনার প্রশ্ন যর্থার্থই মহিমান্বিত, কেন না তা সমস্ত মানুষের পরম হিতকর। এই বিষয়টি সমস্ত শ্রবণীয় বিষয়ের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম এবং আত্মতত্ত্বজ্ঞ মুক্তকুল কর্তৃক অনুমোদিত।
    (শ্রীল শুকদেব গোস্বামী)

  • শ্লোক: 17

    মুনয়ঃ সাধু পৃষ্টোহহং ভবদ্ভির্লোকমঙ্গলম্ ।
    যৎকৃতঃ কৃষ্ণসংপ্রশ্নো যেনাত্মা সুপ্রসীদতি ।।
    (ভাগবত ১/২/৫)
  • অনুবাদঃ- হে ঋষিগণ ! আপনারা আমাকে যথার্থ প্রশ্নই জিজ্ঞাসা করেছেন। আপনাদের প্রশ্নগুলি অতি উত্তম, কেন না সেগুলি কৃষ্ণ-বিষয়ক এবং তাই তা জগতের মঙ্গল সাধন করে। এই ধরনের পরিপ্রশ্নের দ্বারাই কেবল আত্মা সম্পূর্ণরূপে প্রসন্ন হয়।
    (সূত গোস্বামী)
  • শ্লোক: 18

    তর্কাপ্রতিষ্ঠানাৎ
    (বেদান্তসূত্র ২/১/১১)
  • অনুবাদঃ- চিন্ময় তত্ত্ব যুক্তি তর্কের দ্বারা উপলব্ধি বা প্রতিষ্ঠা করা যায় না।

  • শ্লোক: 19

    জ্ঞানং পরমগুহ্যং মে যদ্বিজ্ঞানসমন্বিতম্ ।
    সরহস্যং তদঙ্গং চ গৃহাণ গদিতং ময়া ।।
    (ভাগবত ২/৯/৩১)
  • অনুবাদঃ- শাস্ত্রে আমার সম্বন্ধে যে জ্ঞান বর্ণিত হয়েছে তা অত্যন্ত গোপনীয় এবং তা ভক্তি সহকারে উপলব্ধি করতে হয়। সেই পন্থার আনুষঙ্গিক অঙ্গসমূহ আমি বিশ্লেষণ করছি, তুমি তা যত্ন সহকারে গ্রহণ কর।

  • শ্লোক: 20

    এতাবদেব জিজ্ঞাস্যং তত্ত্বজিজ্ঞাসুনাত্মনঃ ।
    অন্বয়ব্যতিরেকাভ্যাং যৎ স্যাৎ সর্বত্র সর্বদা ।।
    (ভাগবত ২/৯/৩৬)
  • অনুবাদঃ- তত্ত্বজ্ঞান লাভে আগ্রহী ব্যক্তিকে সেই জন্য সর্ব্ব্যাপ্ত সত্যকে জানার জন্য সর্বদা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অনুসন্ধান করতে হবে।
    (ব্রহ্মার প্রতি শ্রীকৃষ্ণ)

  • শ্লোক: 21

    স এবায়ং ময়া তেহদ্য যোগঃ প্রোক্তঃ পুরাতনঃ ।
    ভক্তোহসি মে সখা চেতি রহস্যং হ্যেতদুত্তমম্ ।।
    (গীতা ৪/৩)
  • অনুবাদঃ- সেই সনাতন যোগ আজ আমি তোমাকে বললাম, কারণ তুমি আমার ভক্ত ও সখা এবং তাই তুমি এই বিজ্ঞানের অতি গুঢ় রহস্য হৃদয়ঙ্গম করতে পারবে।

  • শ্লোক: 22

    জ্ঞানং তেহহং সবিজ্ঞানমিদং বক্ষ্যাম্যশেষতঃ ।
    যজ্ জ্ঞাত্বা নেহ ভূয়োহন্যজ্ জ্ঞাতব্যমবশিষ্যতে ॥
    (গীতা ৭/২)
  • অনুবাদঃ- আমি এখন তোমাকে বিজ্ঞান সমন্বিত এই জ্ঞানের কথা সম্পূর্ণরূপে বলব, যা জানা হলে এই জগতে আর কিছুই জানবার বাকি থাকে না।

  • শ্লোক: 23

    ইদং তু তে গুহ্যতমং প্রবক্ষ্যাম্যনসূয়বে ।
    জ্ঞানং বিজ্ঞানসহিতং যজ্ জ্ঞাত্বা মোক্ষ্যসেহশুভাৎ ॥
    (গীতা ৯/১)
  • অনুবাদঃ- পরমেশ্বর ভগবান বললেন- হে অর্জুন ! তুমি নির্মৎসর বলে তোমাকে আমি পরম বিজ্ঞান সমন্বিত সবচেয়ে গোপনীয় জ্ঞান উপদেশ করছি ৷ সেই জ্ঞান প্রাপ্ত হয়ে তুমি দুঃখময় সংসার বন্ধন থেকে মুক্ত হও।

  • শ্লোক: 24

    রাজবিদ্যা রাজগুহ্যং পবিত্রমিদমুত্তমম্ ।
    প্রত্যক্ষাবগমং ধর্ম্যং সুসুখং কর্তুমব্যয়ম্ ॥
    (গীতা ৯/২)
  • অনুবাদঃ- এই জ্ঞান সমস্ত বিদ্যার রাজা, সমস্ত গুহ্যতত্ত্ব থেকেও গুহ্যতর, অতি পবিত্র এবং প্রত্যক্ষ অনুভূতির দ্বারা আত্ম-উপলব্ধি প্রদান করে বলে প্রকৃত ধর্ম। এই জ্ঞান অব্যয় এবং সুখসাধ্য।

  • শ্লোক: 25

    ন যদ্বচশ্চিত্রপদং হরের্যশো
    জগৎপবিত্রং প্রগৃণীত কর্হিচিৎ ।
    তদ্বায়সং তীর্থমুশন্তি মানসা
    ন যত্র হংসা নিরমন্ত্ত্যশিক্ক্ষয়াঃ ।।
    (ভাগবত ১/৫/১০)
  • অনুবাদঃ- যে বাণী জগৎ পবিত্রকারী ভগবানের মহিমা বর্ণনা করে না, তাকে সন্ত পুরুষেরা কাকেদের তীর্থ বলে বিবেচনা করেন। ভগবৎ-ধামে নিবাসকারী পরমহংসেরা সেখানে কোন রকম আনন্দ অনুভব করেন না।

  • শ্লোক: 26

    তদ্বাগ্বিসর্গো জনতাঘবিপ্লবো
    যস্মিন্ প্রতিশ্লোকমবদ্ধত্যপি ।
    নামান্যনন্তস্য যশোহঙ্কিতানি যৎ
    শৃন্বন্তি গায়ন্তি গৃণন্তি সাধবঃ ।।
    (ভাগবত ১/৫/১১)
  • অনুবাদঃ- পক্ষান্তরে যে সাহিত্য অন্তহীন পরমেশ্বর ভগবানের নাম, রূপ, যশ, লীলা আদির বর্ণনায় পূর্ণ, তা দিব্য শব্দতরঙ্গে পরিপূর্ণ এক অপূর্ব সৃষ্টি, যা এই জগতের উদ্ভ্রান্ত জনসাধারণের পাপ-পঙ্কিল জীবনে এক বিপ্লবের সূচনা করে। এই অপ্রাকৃত সাহিত্য যদি নির্ভুলভাবে রচিত নাও হয়, তবুও তা সৎ ও নির্মল চিত্ত সাধুরা শ্রবণ করেন, কীর্তন করেন এবং গ্রহণ করেন।

  • শ্লোক: 27

    কর্মকাণ্ড, জ্ঞানকাণ্ড, কেবল বিষের ভাণ্ড,
    ‘অমৃত’ বলিয়া যেবা খায় ।
    নানা যোনি সদা ফিরে, কদর্থ ভক্ষণ করে,
    তা’র জন্ম অধঃপাতে যায় ।।
    (নরোত্তম দাস ঠাকুর, প্রেমভক্তিচন্দ্রিকা)
  • অনুবাদঃ-

  • শ্লোক: 28

    জড়বিদ্যা যত মায়ার বৈভব,
    তোমার ভজনে বাধা।
    (ভক্তিবিনোদ ঠাকুর, বিদ্যার বিলাসে-৩)
  • অনুবাদঃ- সমস্ত জাগতিক জ্ঞান ভগবানের মায়াশক্তির বৈভব এবং তা ভগবৎ-সেবার বিঘ্নস্বরূপ ।
  • Post a Comment

    0 Comments