অনুবাদঃ- হে মহাজ্ঞানী! এই কলিযুগের মানুষেরা প্রায় সকলেই অল্পায়ু। তারা কলহপ্রিয়, অলস, মন্দ মতি, ভাগ্যহীন এবং সর্বোপরি তারা নিরন্তর রোগাদির দ্বারা উপদ্রুত।
অনুবাদঃ- কলিযুগে শুধুমাত্র বিত্তকেই মানুষদের বংশাভিজাত্য, সদাচার ও সদগুণাবলীর লক্ষণ বলে গণ্য করা হবে। শুধুমাত্র ক্ষমতার ভিত্তিতেই ধর্ম ও ন্যায় প্রযুক্ত হবে।
অনুবাদঃ- নারী ও পুরুষ শুধুমাত্র বাহ্য আকর্ষণে আকৃষ্ট হয়ে একত্রে বসবাস করবে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের সাফল্য নির্ভর করবে প্রতারণার উপর । যৌন দক্ষতার ভিত্তিতেই পুরুষত্ব ও নারীত্বের বিচার হবে এবং শুধুমাত্র পৈতা ধারণের মাধ্যমেই কোন ব্যক্তি ব্রাহ্মণ বলে পরিচিতি লাভ করবেন ।
অনুবাদঃ- বাহ্য প্রতীকের ভিত্তিতে কোন ব্যক্তির আশ্রম নির্ধারিত হবে এবং এই একই ভিত্তিতে এক আশ্রমস্থিত ব্যক্তি পরবর্তী আশ্রমে প্রবেশ করবে। যে মানুষ ভাল রোজগার করতে পারবে না তার ন্যায্য অধিকার সম্পর্কে গুরুতর সন্দেহ প্রকাশ করা হবে। যিনি বাক্চাতুর্যে দক্ষতা প্রদর্শন করতে পারবেন, তিনিই বিজ্ঞ পণ্ডিত বলে পরিচিত হবেন।
অনুবাদঃ- কোন মানুষ যদি দরিদ্র হয়, তা হলে তাকে অসাধু বলে গণ্য করা হবে এবং দম্ভ ও কপটতাকেই গুণ বলে স্বীকার করা হবে। মৌখিক স্বীকৃ্তির ভিত্তিতে বিবাহ অনুষ্ঠিত হবে এবং শুধুমাত্র স্নান করলেই (তিলক, চন্দন আদি ধারণ না করেই) মানুষ নিজেকে জনগণের মধ্যে প্রবেশের যোগ্য বলে মনে করবে।
অনুবাদঃ- দূরে অবস্থিত জলাশয়কে তীর্থ বলে গণ্য করা হবে। কেশ ধারণের ভিত্তিতে সৌন্দর্য নিরূপিত হবে। উদরপূর্তিই হবে জীবনের লক্ষ্য । ধৃষ্ট ব্যক্তিকে সত্যনিষ্ঠ বলে গণ্য করা হবে। কুটুম্বভরণে সমর্থ ব্যক্তিকে দক্ষ বলে গণ্য করা হবে এবং শুধুমাত্র যশ লাভের জন্যই ধর্ম-কর্ম অনুষ্ঠান করা হবে।
অনুবাদঃ- সত্যযুগে বিষ্ণুকে ধ্যান করে, ত্রেতাযুগে যজ্ঞের মাধ্যমে যজন করে এবং দ্বাপরযুগে অর্চন আদি করে যে ফল লাভ হত, কলিকালে 'হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র' কীর্তনে সেই সকল ফল লাভ হয়।
শ্লোক: 12
কলিকালে নামরূপে কৃষ্ণ-অবতার । নাম হৈতে হয় সর্বজগতৎ-নিস্তার ।। (চৈঃ চঃ আদি ১৭/২২)
অনুবাদঃ- এই কলিযুগে ভগবানের দিব্যনাম 'হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র' হচ্ছে শ্রীকৃষ্ণের অবতার। কেবলমাত্র এই দিব্যনাম গ্রহণ করার ফলে, যে কোন মানুষ সরাসরিভাবে ভগবানের সঙ্গ লাভ করতে পারেন। যিনি তা করেন, তিনি অবশ্যই উদ্ধার লাভ করেন। এই নামের প্রভাবেই কেবল সমস্ত জগৎ নিস্তার পেতে পারে।
অনুবাদঃ- দ্বাপরযুগে বৈষ্ণব তথা কৃষ্ণভক্তেরা পাঞ্চরাত্রিক বিধি অনুসারে ভক্তিমূলক সেবা সম্পাদন করতেন। এই কলিযুগে শুধুমাত্র হরিনাম জপকীর্তনের দ্বারাই পরমেশ্বর শ্রীহরি পূজিত হন।
অনুবাদঃ- দুর্ভিক্ষ ও অত্যাধিক করের দ্বারা উৎপীড়িত হয়ে জনসাধারণ শাক, মূল, আমিষ, বনের মধু, ফল, ফুল ও বীজ ভক্ষণ করবে এবং অনাবৃষ্টির ফলে তারা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস-প্রাপ্ত হবে।
অনুবাদঃ- এই কলিযুগে অশ্বমেধ-যজ্ঞ, গোমেধ-যজ্ঞ, সন্ন্যাস-আশ্রম গ্রহণ, পিতৃপুরুষদের শ্রাদ্ধে মাংস নিবেদন এবং দেবরের দ্বারা সন্তানোৎপাদন—এই পাঁচটি কর্ম নিষেধ করা হয়েছে।
0 Comments