কলিযুগ সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শ্লোক :-

 কলিযুগ সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শ্লোক :-



  • শ্লোক: 1

    কলৌ শূদ্রাসম্ভবাঃ
    (স্কন্দ পূরাণ)
  • অনুবাদঃ- কলিযুগে সকলেই শূদ্ররূপে জন্মগ্রহণ করে।

  • শ্লোক: 2

    প্রায়েণাল্পায়ুষঃ সভ্য কলাবস্মিন্ যুগে জনাঃ ।
    মন্দাঃ সুমন্দমতয়ো মন্দভাগ্যা হ্যুপদ্রুতাঃ ।।
    (ভাগবত ১/১/১০)
  • অনুবাদঃ- হে মহাজ্ঞানী! এই কলিযুগের মানুষেরা প্রায় সকলেই অল্পায়ু। তারা কলহপ্রিয়, অলস, মন্দ মতি, ভাগ্যহীন এবং সর্বোপরি তারা নিরন্তর রোগাদির দ্বারা উপদ্রুত।

  • শ্লোক: 3

    রাক্ষসাঃ কলিমাশ্রিত্য জায়ন্তে ব্রহ্মযোনিষু
    (বরাহ পুরাণ)
  • অনুবাদঃ- রাক্ষসগণ কলিযুগের সুযোগ নিয়ে ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করে।

  • শ্লোক: 4

    ততশ্চানুদিনং ধর্মং সত্যং শৌচ্যং ক্ষমা দয়া।
    কালেন বলিনা রাজন্নঙ্ক্ষ্যত্যায়ুর্বলং স্মৃতিঃ ।।
    (ভাগবত ১২/২/১)
  • অনুবাদঃ- হে রাজন্ ! তারপর কলির প্রবল প্রভাবে দিনে দিনে ধর্ম, সত্য, শুচিতা, সহিষ্ণুতা, দয়া, আয়ু, দৈহিক বল ও স্মৃতি ক্রমে ক্রমে হ্রাস পাবে।

  • শ্লোক: 5

    বিত্তমেব কলৌ নৃণাং জন্মাচারগুণোদয়ঃ ।
    ধর্মন্যায়ব্যবস্থায়াং কারণং বলমেব হি।।
    (ভাগবত ১২/২/২)
  • অনুবাদঃ- কলিযুগে শুধুমাত্র বিত্তকেই মানুষদের বংশাভিজাত্য, সদাচার ও সদগুণাবলীর লক্ষণ বলে গণ্য করা হবে। শুধুমাত্র ক্ষমতার ভিত্তিতেই ধর্ম ও ন্যায় প্রযুক্ত হবে।

  • শ্লোক: 6

    দাম্পত্যেহভিরুচির্হেতুর্মায়ৈব ব্যাবহারিকে।
    স্ত্রীত্বে পুংস্ত্বে চ হি রতির্বিপ্রত্বে সূত্রমেব হি।।
    (ভাগবত ১২/২/৩)
  • অনুবাদঃ- নারী ও পুরুষ শুধুমাত্র বাহ্য আকর্ষণে আকৃষ্ট হয়ে একত্রে বসবাস করবে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের সাফল্য নির্ভর করবে প্রতারণার উপর । যৌন দক্ষতার ভিত্তিতেই পুরুষত্ব ও নারীত্বের বিচার হবে এবং শুধুমাত্র পৈতা ধারণের মাধ্যমেই কোন ব্যক্তি ব্রাহ্মণ বলে পরিচিতি লাভ করবেন ।

  • শ্লোক: 7

    লিংমেবাশ্রমখ্যাতাবন্যোন্যাপত্তিকারণম্ ।
    অবৃত্ত্যা ন্যায়দৌর্বল্যং পাণ্ডিত্যে চাপলং বচঃ ।।
    (ভাগবত ১২/২/৪)
  • অনুবাদঃ- বাহ্য প্রতীকের ভিত্তিতে কোন ব্যক্তির আশ্রম নির্ধারিত হবে এবং এই একই ভিত্তিতে এক আশ্রমস্থিত ব্যক্তি পরবর্তী আশ্রমে প্রবেশ করবে। যে মানুষ ভাল রোজগার করতে পারবে না তার ন্যায্য অধিকার সম্পর্কে গুরুতর সন্দেহ প্রকাশ করা হবে। যিনি বাক্চাতুর্যে দক্ষতা প্রদর্শন করতে পারবেন, তিনিই বিজ্ঞ পণ্ডিত বলে পরিচিত হবেন।

  • শ্লোক: 8

    অনাঢ়্যতৈবাসাধুত্বে সাধুত্বে দম্ভ এব তু ।
    স্বীকার এব চোদ্বাহে স্নানমেব প্রসাধনম্ ।।
    (ভাগবত ১২/২/৫)
  • অনুবাদঃ- কোন মানুষ যদি দরিদ্র হয়, তা হলে তাকে অসাধু বলে গণ্য করা হবে এবং দম্ভ ও কপটতাকেই গুণ বলে স্বীকার করা হবে। মৌখিক স্বীকৃ্তির ভিত্তিতে বিবাহ অনুষ্ঠিত হবে এবং শুধুমাত্র স্নান করলেই (তিলক, চন্দন আদি ধারণ না করেই) মানুষ নিজেকে জনগণের মধ্যে প্রবেশের যোগ্য বলে মনে করবে।

  • শ্লোক: 9

    দূরে বার্যয়নং তীর্থং লাবণ্যং কেশধারণম্ ।
    উদরম্ভরতা স্বার্থঃ সত্যত্বে ধার্ষ্ট্যমেব হি ।
    দাক্ষ্যং কুটুম্বভরণং যশোহর্থে ধর্মসেবনম্ ।।
    (ভাগবত ১২/২/৬)
  • অনুবাদঃ- দূরে অবস্থিত জলাশয়কে তীর্থ বলে গণ্য করা হবে। কেশ ধারণের ভিত্তিতে সৌন্দর্য নিরূপিত হবে। উদরপূর্তিই হবে জীবনের লক্ষ্য । ধৃষ্ট ব্যক্তিকে সত্যনিষ্ঠ বলে গণ্য করা হবে। কুটুম্বভরণে সমর্থ ব্যক্তিকে দক্ষ বলে গণ্য করা হবে এবং শুধুমাত্র যশ লাভের জন্যই ধর্ম-কর্ম অনুষ্ঠান করা হবে।

  • শ্লোক: 10

    কলের্দোষনিধে রাজন্নস্তি হ্যেকো মহান্ গুণঃ ।
    কীর্তনাদেব কৃষ্ণস্য মুক্তসঙ্গঃ পরং ব্রজেৎ ।।
    (ভাগবত ১২/৩/৫১)
  • অনুবাদঃ- হে রাজন! দোষের নিধি এই কলিযুগে একটি মহৎ গুণ আছে। কলিযুগে ভগবানের নাম কীর্তনের প্রভাবেই জীব জড় জগতের বন্ধন থেকে মুক্তি লাভ করেন।

  • শ্লোক: 11

    কৃ্তে যদ্ধ্যায়তো বিষ্ণুং ত্রেতায়াং যজতো মখৈঃ ।
    দ্বাপরে পরিচর্যায়াং কলৌ তদ্ধরিকীর্তনাৎ ।।
    (ভাগবত ১২/৩/৫২)
  • অনুবাদঃ- সত্যযুগে বিষ্ণুকে ধ্যান করে, ত্রেতাযুগে যজ্ঞের মাধ্যমে যজন করে এবং দ্বাপরযুগে অর্চন আদি করে যে ফল লাভ হত, কলিকালে 'হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র' কীর্তনে সেই সকল ফল লাভ হয়।

  • শ্লোক: 12

    কলিকালে নামরূপে কৃষ্ণ-অবতার ।
    নাম হৈতে হয় সর্বজগতৎ-নিস্তার ।।
    (চৈঃ চঃ আদি ১৭/২২)
  • অনুবাদঃ- এই কলিযুগে ভগবানের দিব্যনাম 'হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র' হচ্ছে শ্রীকৃষ্ণের অবতার। কেবলমাত্র এই দিব্যনাম গ্রহণ করার ফলে, যে কোন মানুষ সরাসরিভাবে ভগবানের সঙ্গ লাভ করতে পারেন। যিনি তা করেন, তিনি অবশ্যই উদ্ধার লাভ করেন। এই নামের প্রভাবেই কেবল সমস্ত জগৎ নিস্তার পেতে পারে।

  • শ্লোক: 13

    কলিং সভাজয়ন্ত্যার্যা গুণজ্ঞাঃ সারভাগিণঃ ।
    যত্র সঙ্কীর্তনেনৈব সর্বস্বার্থোহভিলভ্যতে ।।
    (ভাগবত ১১/৫/৩৬)
  • অনুবাদঃ- গুণজ্ঞ সারগ্রাহী মহাত্মারা কলিযুগকে এই জন্য ধন্য বলেন, কেন না কলিযুগে কেবল হরিনাম সংকীর্তনের ফলেই সর্ব স্বার্থ লাভ হয়।

  • শ্লোক: 14

    দ্বাপরীয়ৈর্জনৈর্বিষ্ণুঃ পঞ্চরাত্রৈস্ত্ত কেবলৈঃ ।
    কলৌ তু নামমাত্রেণ পূজ্যতে ভগবান্ হরিঃ ।।
    (নারায়ণ-সংহিতা)
  • অনুবাদঃ- দ্বাপরযুগে বৈষ্ণব তথা কৃষ্ণভক্তেরা পাঞ্চরাত্রিক বিধি অনুসারে ভক্তিমূলক সেবা সম্পাদন করতেন। এই কলিযুগে শুধুমাত্র হরিনাম জপকীর্তনের দ্বারাই পরমেশ্বর শ্রীহরি পূজিত হন।


  • শ্লোক: 15

    এবং প্রজাভির্দুষ্টাভিরাকীর্ণে ক্ষিতিমণ্ডলে ।
    ব্রহ্মবিটক্ষত্রশূদ্রাণাং যো বলী ভবিতা নৃপঃ ।।
    (ভাগবত ১২/২/৭)
  • অনুবাদঃ- এভাবেই ভূমণ্ডল যখন দুষ্ট জনগণে পূর্ণ হবে, তখন ব্রাহ্মণ, বৈশ্য, ক্ষত্রিয় ও শূদ্রদের মধ্যে যাদের জোর বেশি, তারাই রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভ করবে।


  • শ্লোক: 16

    দস্যুপ্রায়েষু রাজসু
    (ভাগবত ১২/২/১৩)
  • অনুবাদঃ- রাজাগণ প্রায় দস্যুর মতো হয়ে যাবেন।
    (শুকদেব গোস্বামী)


  • শ্লোক: 17

    প্রজা হি লুব্ধৈরাজন্যৈর্নিঘৃণৈর্দস্যুধর্মভিঃ ।
    আচ্ছিন্নদারদ্রবিণা যাস্যন্তি গিরিকাননম্ ।।
    (ভাগবত ১২/২/৮)
  • অনুবাদঃ- ঐ সকল দস্যুপ্রায় লোভী ও নির্মম রাজাদের হাতে তাদের সম্পত্তি, স্ত্রী প্রভৃতি হারিয়ে প্রজাগণ গিরিকাননে চলে যাবে।


  • শ্লোক: 18

    শাকমূলামিষক্ষৌদ্রফলপুষ্পার্ষ্টিভোজনাঃ ।
    অনাবৃষ্ট্যা বিনঙ্ক্ষ্যন্তি দুর্ভিক্ষকরপীড়িতাঃ ।।
    (ভাগবত ১২/২/৯)
  • অনুবাদঃ- দুর্ভিক্ষ ও অত্যাধিক করের দ্বারা উৎপীড়িত হয়ে জনসাধারণ শাক, মূল, আমিষ, বনের মধু, ফল, ফুল ও বীজ ভক্ষণ করবে এবং অনাবৃষ্টির ফলে তারা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস-প্রাপ্ত হবে।


  • শ্লোক: 19

    অশ্বমেধং গবালম্ভং সন্ন্যাসং পলপৈতৃকম্ ।
    দেবরেণ সুতোৎপত্তিং কলৌ পঞ্চ বিবর্জয়েৎ ।।
    (ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ, কৃষ্ণ-জন্ম-খণ্ড ১৮৫/১৮০)
  • অনুবাদঃ- এই কলিযুগে অশ্বমেধ-যজ্ঞ, গোমেধ-যজ্ঞ, সন্ন্যাস-আশ্রম গ্রহণ, পিতৃপুরুষদের শ্রাদ্ধে মাংস নিবেদন এবং দেবরের দ্বারা সন্তানোৎপাদন—এই পাঁচটি কর্ম নিষেধ করা হয়েছে।
  • Post a Comment

    0 Comments