ইসকনে অর্ধদিবস উপবাস ও কিছু কথা!
কোনো উপবাসই অর্ধবেলা হয়না, অর্ধবেলা বলতে মূলত গোধূলী পর্যন্ত বোঝায়। সমর্থ ব্যক্তি চাইলে ২৪ ঘণ্টাও করতে পারে। এক্ষেত্রে, লক্ষণীয় যে, দুধ, জল, ফল গ্রহণে উপবাস ভঙ্গ হয় না। শ্রীল প্রভুপাদই ইসকনে ব্রতগুলো ১২ টা পর্যন্ত উপবাসের বিধান দিয়েছেন। এজন্য আবার অনেকেই সমালোচনা করেন। কেননা শাস্ত্রে ওমন কথা নেই।
তাহলে শ্রীল প্রভুপাদ শাস্ত্রবিশারদ হয়েও এরকম নিয়ম দিলেন, কিন্তু কেন?
১. পাশ্চাত্যদেশে কেউই উপবাস সহজে করতে যোগ্য নয়, শুধু পাশ্চাত্যে নয়, এমনকি, এই দারিদ্র-দুঃখ-জর্জরিত ভারতবর্ষেও।
২. প্রচারক ভক্ত, যিনি কোনো দিনই প্রচার বাদ দেন না, তার পক্ষে বহুক্ষণ উপবাস কষ্টকর। কারণ, ভারতবর্ষে কম হলেও পাশ্চাত্যের সকল মন্দিরে প্রতিটি ব্রহ্মচারী প্রতিদিন বাইরে প্রচার ও সংকীর্তনে যায়। মন্দির ম্যানেজমেন্ট ও ব্যয়ভার গ্রহণ করে গৃহস্থগণ।
৩. প্রভুপাদ কখনোই বলেন নি অর্ধবেলাই করতে হবে, তিনি অনেক স্থানেই রামনবমী, রাধাষ্টমী সন্ধ্যা পর্যন্ত করিয়েছেন বলে রেকর্ড আছে। এর কারণ হলো, যারা প্রচার করছে না, অথবা সমর্থ, তারা যেন জিহ্বাকে সংযত করে উপবাস করে!
৪. সমর্থ বলতে অবশ্যই শারিরীক ও পারিপার্শ্বিক দুটোই দেখতে হবে। হয়তো আমার জ্যেষ্ঠ কোনো মহিমান্বিত ভক্ত দুপুরে প্রসাদ পাচ্ছেন, তখন সদাচার হলো তার অনুগত আচরণ করা, এই বৈষ্ণবীয়তা কৃত্রিম উপবাসের থেকে অনেক উত্তম।
৫. কে কখন উপবাস ভঙ্গ করে, সেটা দেখার চেয়ে আমি কতটুকু করছি, সেটিই দেখা আবশ্যক! উপবাস থাকাই বৈষ্ণবত্ব নয়। হয়তো কারো ঐকান্তিক অর্ধবেলা উপবাস কারো কারো কৃত্রিম ও ভক্তিবর্জিত (কখনও কখনও অহংকার যুক্ত) পূর্ণ উপবাসের থেকে শতগুণ শ্রেষ্ঠ!
৬. যদি আমি সমর্থ হই, তবে উপবাস যতটুকু পারবো করবো।
৭. ইসকনে ১নং পয়েন্ট অনুসারে, যে বা যারা নবাগত, তারা যদি এত উপবাস কৃচ্ছ্রতা দেখেন, তবে হয়তো ভক্তিতে আকৃষ্ট হবেনা, এর চেয়ে উত্তম হলো অর্ধবেলা করার আচার্য-অনুমোদন গ্রহণ করা। শাস্ত্রবাণীর চেয়ে শুদ্ধভক্তের বাণী অধিক শ্রেষ্ঠ, কারণ শুদ্ধভক্তের কথা কৃষ্ণেরই কথা।
তবে লক্ষণীয় যে, অর্ধবেলা উপবাস যেন ইন্দ্রিয়তৃপ্তির উপায় না হয়ে ওঠে!
৮. শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর অনুগত শ্রীল স্বরূপদামোদর গোস্বামী ঠাকুরের শিক্ষা হলো,
সিংহ বহু তামসিক আহার করেও বছরে নির্দিষ্ট সময়ে সহবাস করে, আর কপোত সামান্য খুদ-কুড়া খেয়ে যখন তখন লিপ্ত হয়। আবার ভগবানের মহাপ্রসাদ এত শক্তি ধরে, আমরা কেবল, যোগী যোগে পায়না যাহা, তা প্রেমসহকারে প্রসাদ সেবনেই পেতৈ পারি।
৯. পরিশেষে, যারা সমালোচক, তারা সমালোচনাই করতে পারে, সেবা নয়। আবার সহজ হতে গিয়ে সহজিয়া হওয়াও উচিত নয়। শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর বলেছেন, অন্যের দোষ বিচার করা অপেক্ষা নিজের দোষ বিচার করতে, অন্যদের আমরা কোনো সহায়তাই করতে পারবো না, তাদের জন্য গুরু ও কৃষ্ণকে ভাবতে দিয়ে আমরা নিজেদের জন্য যেন ভাবি। আচার্যগণের পন্থাই অনুসরণ করি।
হরেকৃষ্ণ॥
0 Comments