***** হরিনাম ই পারে,আমাদের প্রকৃত অভাববোধ দূর করতে....
----আমাদের প্রত্যেকের জীবনে একটি "অভাববোধ"রয়েছে...
প্রত্যেকের কিন্তু কোন না কোন অভাববোধ রয়েছেই..
অনেকের মধ্যে থেকেও আমরা একা..
স্বামী-স্ত্রী,ঘর,পুত্র,বন্ধু-বান্ধব,সবাই আছে কিন্তু অভাববোধ রয়েছেই...
যে গরীব,তারও অভাববোধ রয়েছে আর যে ধনী তারও অভাববোধ রয়েছে..,এইটাই বাস্তব জীবনে...
ভক্তিসিদ্ধান্ত স্বরস্বতী ঠাকুর বলছেন,আমার মধ্যে যে অভাববোধ ছিলো,এবং সেই অভাববোধকে পূরণ করার জন্য, আমি অত্যন্ত ব্যস্ত ছিলাম...
আমরাও তাই করছি,..সেই অভাববোধটাকে পূরন করার জন্য ছোটবেলা থেকে সংগ্রাম করে আসছি...
ছোটবেলায় কারো খেলনা দেখে আমার কাছে না থাকলে তার জন্য কান্নাকাটি,পড়াশোনা যখন শুরু করলাম তখন একই,বিভিন্ন দিক দিয়ে আমরা অভাববোধ করি...
কেনো একজন গৃহস্থ হয়,সে কিছু অভাববোধ করছে,সেইজন্য...
কেনো একজন চাকুরীজীবি হয়,নিরাপত্তার অভাব অনুভব করছে,কেনো একজন পড়াশোনা করছে,তার লাভ-পূজা প্রতিষ্ঠার অভাব অনুভব করছে,ইত্যাদি ইত্যাদি যদি আমরা দেখি দৈনন্দিন জীবনে আমরা যা কিছু করছি,আমরা কিন্তু করছি আমাদের অভাব পূরনের জন্য...
ঠান্ডা পড়লেই খিচুড়ি বা পাকোড়া বা ইত্যাদি ইত্যাদি যা বানাই,যা কিছু আছে,সব ই অভাববোধ থেকে...
আমরা একাকী,আমরা অভাববোধ করি,সেই অভাববোধকে পূরণ করার জন্য কত চেষ্টা...
ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুরের ভাষায়" মনে করতাম,বিষয় পেলেই আমার অভাব পূরন হবে.."
আর আমরা কিন্তু ভাবি,এইটা পেয়ে গেলেই আমি খুশি হয়ে যাবো,এইটা পেয়ে গেলেই আমার সুখ-শান্তি হবে...
এই ডিগ্রি পেলেই আমার সব হয়ে যাবে..
ওইখানে যেতে পারলেই হবে,এইখানে থাকতে পারলেই হবে...
কিন্তু যতই আমরা চেষ্টা করি,যতই আমরা ওই জিনিসগুলো প্রাপ্ত হই,আমাদের অভাব পূরন হয়না,কারন বিষয়ের মধ্যে দিয়ে যখন আমরা অভাব পূরন করতে চাই,আসল অভাবের কারন বুঝতে না পেরে,সেইটা কোনদিন ই পূরন হবে না..,কখনো সম্ভব না...
ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুরের ভাষায়,কিন্তু আমার অভাব দূর হলো না...
উনি আমাদের কথাই তুলে ধরছেন,.বাস্তবিক জীবন তুলে ধরছেন...
জগতে অনেক মহৎ চরিত্রের ব্যক্তি পেলাম,কিন্তু তাদের নানা অভাব দেখে তাদের সম্মান দিতে পারলাম না...
যে আপনাকে বলছে তুমি এই চাকরিটা করো তোমার সমস্ত অভাব দূর হয়ে যাবে,তারও কিন্তু ওই চাকরিটা আছে,কিন্তু সেও দুঃখে নিমজ্জিত..
সেইটাই ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর বলছেন,....
যে বলছে,যে তুমি গৃহস্থ হয়ে যাও,গৃহস্থ হয়ে যাও,তোমার সব কস্ট দূর হয়ে যাবে,সেও গৃহস্থ কিন্তু সেও জ্বলে -পুড়ে মরছে...
যে ধনী লোক,সে গরীব লোককে বলছে,তুমি এত চিন্তা করছো কেনো,তুমি বড়লোক হয়ে যাও,তোমার সব দুঃখ দূর হয়ে যাবে,অথচ ওই ধনী লোকের মেয়েই আত্মহত্যা করেছে....
তাহলে ধনী লোকের ছেলে-মেয়ে কেনো আত্মহত্যা করলো,তার তো সবকিছু রয়েছেই...
যারা বলছে এইটা করো,এইটা করলে সব ঠিক হয়ে যাবে,তারা নিজেই অনেক অভাবে রয়েছে..,তারা নিজেই কস্ট পাচ্ছে..
তাই ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর বলছেন,"তাদের আমি সম্মান দিতে পারলাম না"...যে জন্মমৃত্যুর চক্রে আবদ্ধ,যে বিষয় নিয়ে এই জড় জগত থেকে উদ্ধার পাওয়ার উপায় শিখাচ্ছে,জাগতিক বিষয়ের উপর ভিত্তি করে...
সেইটা পূরণ কি করে হবে,সম্মান কিভাবে দিবো...
যে সিগারেট খেতে খেতে অন্য একজনকে না করছে খেতে,তার উপর কি আপনার সম্মানবোধ হবে?
সম্ভব না...
ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর বলছেন,"এমন দূর দিনে আমার শোচনীয় অবস্থা দেখে,পরম কারুনীক শ্রী গৌর সুন্দর তার প্রিয়তমদয়কে আমার প্রতি প্রসন্ন হওয়ার অনুমতি দিলেন.."
আমাদের সবার কিন্তু এমন দূর দিন চলছে...
এবং শোচনীয় অবস্থা,কিন্তু আমাদের এই দূরদিন দেখে আমাদের শোচনীয় অবস্থা দেখে,শ্রীমান মহাপ্রভু কৃপা করে প্রভুপাদকে পাঠিয়েছেন,আমাদের পরমারাধ্য গুরুদেবকে পাঠিয়েছেন,গুরুবর্গকে পাঠিয়েছেন...
মহাপ্রভু সংকীর্তন আন্দোলন দিয়েছেন...
হরিনাম দিয়েছেন,মহাপ্রসাদ দিয়েছেন,ভক্তসঙ্গ,ধাম দিয়েছেন..সব দিয়েছেন..
গুরুদেবকে দেখার পর আমাদের পার্থিব অহংকার হ্রাস পেতে থাকে,...যখন আমরা গুরুদেবকে দেখি, যখন প্রভুপাদের জীবনী স্মরন করি,কিভাবে একনিষ্ঠ হয়ে গুরুবর্গরা প্রভুপাদের মনোবাসনা পূরন করছেন,
..
উনাদেরকে দেখেই,জড় জগত যে অনিত্য,আমরা যে বিভিন্ন বিষয়ে অহংকার করি,তা সত্যিকারের তুচ্ছ বলে মনে হয়...
গুরুমহারাজের একটি ক্লাস শোনার পর বা উনার পাশে ২ মিনিট বসার পর জড়জাগতিক বিষয় গুলো আমাদের হ্রাস পায়.,অহংকার হ্রাস পায়...
উনাদেরকে দেখে ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর বলেছিলেন,আমি ক্রমশ জানতে পারলাম যে,আদর্শ বৈষ্ণব জড়জগতেও থাকতে পারে...
আমাদের মত বদ্ধজীবদের উদ্ধারের জন্য উনার মত ভাগবত এই জড়জগতেও থাকতে পারেন..,আমাদের জন্য...
একসাথে জপ করা,হরিনাম করা,গুরুবর্গদের ক্লাস শোনা এইটাই আমাদের প্রকৃত আশ্রয় দিতে পারে..,এইটাই প্রকৃত অভাব পূরন করতে পারে...
আমাদের প্রত্যেকের ই এই অভাববোধটি রয়েছে.,এবং যত আমরা আধাত্মিক জীবনে অগ্রগতি লাভ করবো,তত অভাব আমাদের অভাব পূরন হবে...
আর এই জড়জগতের স্বভাব ই হচ্ছে,আমাদেত অস্থির করে তোলা,আর হরিনাম ই আমাদের শান্ত করতে পারে...
প্রকৃত পথ দেখাতে পারে,প্রকৃত আশ্রয় দেখাতে পারে...
হরিনাম ই হচ্ছে "অভিদেয়",হরিনাম ই হচ্ছে "প্রয়োজন"....
সাধ্য এবং সাধন দুটোই হচ্ছে হরিনাম,হরিনাম ই সব..
সত্যিকারের যদি আমরা ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর যা বলেছেন আমাদের এবং এর উপায়ও দেখিয়েছেন...
সদগুরুর আশ্রয়ে হরিনাম করা..
এবং তার ফলেই আমাদের প্রকৃত অভাব পূরন হবে,নচেৎ নয়,আমরা যতই চেষ্টা করি হবে না....
--শ্রীপাদ নাড়ুগোপাল প্রভু(জপক্লাস,০৯-১২-২০২০)
0 Comments