১:ব্যাসদেব কে? তার জন্ম বৃত্তান্ত সকল তথ্য ?


২:কিভাবে ব্যাসদেব বেদগ্রন্থ ও আটারো পুরাণ রচনা করলো কি তার পূর্ণ ইতিহাস ?


৩:সনাতন ধর্মের গ্রন্থ ও পুরাণগুলো গদ্য আকারে না হয়ে কেন শ্লোকে রচিত হলো?


(ব্যাসদেবের জন্ম ও তার জীবন বৃত্তান্ত পর্ব ):-


মহামুনি বশিষ্ঠের পুত্র শক্তি। শক্তি যখন কল্মাষপাদের হাতে মৃত্যু বরণ করলেন, তখন তাঁর একমাত্র পুত্র পরাশর তখন মাতৃগর্ভে। জন্মের পর থেকে মাতা অদৃশ্যন্তী এবং পিতামহ ঋষি বশিষ্ঠ দেবের রক্ষণাবেক্ষেণে পরাশর ক্রমে মহাপন্ডিত হয়ে উঠলেন। একদিন পরাশর মুনি নদীপার হবেন - খেয়া নৌকা চালাচ্ছে মৎস্যগন্ধা নামে এক ধীবর-পালিত কন্যা (ধীবর একজন জেলেদের রাজা, একদিন ধীবর নদীতে মাছ ধরতে যাই আর যে মাছগুলো ধরেছিলেন তার একটি মাছের ভেতরে এক কন্যা শিশু পায় তখন ধীবর সেই মেয়েটির নাম রাখে মৎস্যগন্ধা)। তখন পরাশর মুনি বলেন মাতা আমি যমুনার ওপারে যাব আমাকে কি পার করে দিবেন? মৎস্যগন্ধা বলেন হে মুনিবর আসুন। পরাশর নৌকায় উঠে বসলেন। কিছুটা দূর যাওয়ার পর পরাশর মুনি বললেন মাতা আপনার নৌকায় মাছের গন্ধ আসছে কেন? তখন মৎস্যগন্ধা বললেন মুনিবর মাছের গন্ধ আমার শরীর থেকে আসছে। পরাশর জিজ্ঞাসা করলো, কিভাবে? মৎস্যগন্ধা বললেন , আমার জন্ম হয়েছিল মাছের ভেতরে আর জন্ম লগ্ন থেকে আমার শরীর থেকে মাছের গন্ধ আসছে। পরাশর মুনি বললেন মাতা আপনি নদী পারে আমাকে সহায়তা করেছেন, আপনি যদি চান আপনার এই উপকারের ফলস্বরূপ আমি আপনার জন্ম লগ্ন থেকে অর্জিত করা এই মাছের গন্ধ আমার যোগ তপস্যা শক্তি তেজর্ভূষী (তেজর্ভূষী বলতে ধোঁয়া সংস্কৃত ভাষায় ধোঁয়াকে র্ভূষী বলে) দ্বারা দূর করতে পারি। মৎস্যগন্ধা তখন বললেন, আমি আপনার নিকট কৃতজ্ঞ হবো। পরাশর মুনি বললেন, কিন্তু আপনি আমার তেজর্ভূষী ধারন করতে অক্ষম হইবেন যার ন্যায় আপনার কোলে এক পুত্র সন্তানের আবির্ভাব হবে। তখন মৎস্যগন্ধা বলেন, হে মহর্ষি আমি একজন কুমারী মেয়ে। পরাশর মুনি বললেন, এতে আপনার কুমারীত্বের কোনও ক্ষতি হবে না। মৎস্যগন্ধা তখন আর চিন্তা না করে বললো ঠিক আছে মহর্ষি। অতঃপর পরাশর মুনি বললেন মাতা সামনে একটি দ্বীপ দেখা যাচ্ছে ঐখানে নৌকা স্থির করুন, অতঃপর মৎস্যগন্ধা যমুনার মধ্যেবর্তী সেই তীরে নৌকা স্থির করলেন। নৌকার একপারে মৎস্য গন্ধা অন্য পারে পরাশর অবস্থিত ছিলেন। তত্ক্ষণাত্ মহর্ষি পরাশর নৌকার ওপার থেকে তপস্যা শক্তি দ্বারা তেজর্ভূষী উৎপক্তি করলেন এবং পরাশরের কল্যাণে ঐ কন্যার গায়ের মৎস্যগন্ধ দূর হলো-তখন তাঁর নাম হলো পদ্মগন্ধা। কিন্তু পদ্মগন্ধার কোলে এক পুত্রের আবির্ভাব হয়, তখন পরাশর ঐ পুত্রের নামে রাখে কৃষ্ণ। যমুনার মধ্যেবর্তী এক দ্বীপে জন্ম গ্রহন করেছেন ব'লে তাঁর অপর পরিচয় হলো 'দ্বৈপায়ণ'। মৎস্যগন্ধা ঐ পুত্রসন্তানকে নিয়ে ধীবর রাজ গৃহে চলে যায়। পদ্মগন্ধার কোলে নবজাতক দেখে ধীবর প্রশ্ন করলেন পুত্রী তোমার কোলে এই শিশু কোথায় থেকে এলো? পদ্মগন্ধা তখন বিস্তারিত খুলে বলে, কিন্তু ধীবর রাজ বলেন পুত্রী তুমি কুমারী এই শিশু তোমার কাছে থাকলে তোমার বিবাহ অসম্ভব। তখন পদ্মগন্ধা বলল পিতা আমি আর কি করতে পারতাম? ধীবর রাজ বললো, চলো পুত্রী যার শক্তিতে এই শিশু আবির্ভূত সেই কোনও সমাধান দিবে। অতঃপর ধীবর রাজ ও পদ্মগন্ধা পরাশর মুনির আশ্রমের উদ্দেশ্য প্রস্থান করলেন। আশ্রমে গিয়ে ধীবর রাজ মহর্ষি পরাশর কে বোঝালেন ও পদ্মগন্ধা বললেন, মহর্ষি আমার এই পুত্র সন্তান কে আপনার রক্ষণাবক্ষেণে রাখুন তাকে আপনার মতো একজন মহর্ষি মহাপন্ডিত হিসেবে গড়ে তুলুন। হে মহর্ষি আমি নিরুপায় আমার এই সন্তান আমার কাছে থাকলে আমার সতীত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। তখন মহর্ষি পরাশর বলে দাও মাতা, ঐ পুত্র হস্তান্তর করার পর পদ্মগন্ধার নাম হয় সত্যবতী (পরবত্তী কালে হস্তিনারাজ শান্তনু এই সত্যবতীকেই বিয়ে করেছিলেন)( ব্যাসের জন্ম বৃত্তান্ত কথা সমাপ্ত ) 


(ব্যাসদেবের জীবন বৃত্তান্ত পর্ব) :-


দ্বৈপায়ণ ক্রমে ক্রমে বড় হয়ে উঠেছে কিন্তু তাঁর খেলার মতি বেশি। এ নিয়ে মহর্ষি পরাশর খুব চিন্তিত দ্বৈপায়ণকে কিভাবে পাঠ্যসূচি মনোযোগী করা যায়, এমন কি মহর্ষি বহুবার বোঝাই কিন্তু দ্বৈপায়ণ কিছুতেই বুঝতে রাজি নই। লেখাপড়ায় দ্বৈপায়ণ সম্পূর্ণ অমনোযোগী। দ্বৈপায়ণ যখন আটবছর বয়সী তখন একদিন মহর্ষি পরাশরের পাঠশালায় সব ছাত্ররা যখন জ্ঞান পাঠে মগ্ন তখন মহর্ষি পরাশর দেখলেন দ্বৈপায়ণ ক্রিয়াকর্মে মগ্ন,অতঃপর মহর্ষি দ্বৈপায়ণকে পাঠশালা থেকে তাড়িয়ে দিলেন। মন খারাপ করে দ্বৈপায়ণ আশ্রমের পুকুর ঘাটে গিয়ে বসেন। ঠিক সেই সময় ঐখানে আশ্রমের নারীরা পুকুর থেকে জল মাটির কলসী ভর্তি করে একটা স্থানে শান্ বাধানো(অর্থাৎ পাথরের পাকা ঘাট) ঘাটে রাখে সেখান থেকে আরেক নারী কলসী তুলে নিয়ে যায়। এভাবে (দীর্ঘদিন) দীর্ঘক্ষণ চলতে থাকে। যখন নারীরা পুকুর থেকে চলে যাই তখন প্রায় বেলা শেষ, দ্বৈপায়ণ তখন হাতমুখ দৌত করার জন্য ঘাটে নামে। হঠাৎ দ্বৈপায়ণের দৃষ্টি পরে পুকুর ঘাটের উপর, তিনি দেখলেন শান্ বাধানো ঘাটের ক্ষয় হয়েছে। তখন তিনি ঐ ঘাট স্পর্শ করে দেখলেন, আর গভীর ভাবে চিন্তা করলেন সামান্য মাটির পাত্রের র্ঘষণে যদি শান্ বাধানো ঘাটের ক্ষয় হতে পারে, তাহলে পুনঃ চেষ্টায় আমার জড় বুদ্ধি দূর করে পাঠশালায় অন্য সব শিক্ষাথীর্দের মতো জ্ঞানী হতে পারবো না কেন। দ্বৈপায়ণ তত্ক্ষণাত্ আশ্রমে ফিরে গিয়ে জ্ঞান পাঠে যোগ দেয়। মহর্ষি পরাশর দেখে দ্বৈপায়ণ ফিরে এসে জ্ঞান পাঠে যোগ দিয়েছে। সেদিন থেকে শুরু হয় পাঠ্যক্রম আর ক্রমেশে দ্বৈপায়ণ পাঠশালায় সর্ব শ্রেষ্ঠ শিক্ষাথীর্র গৌরব অর্জন করে। পূর্ণ জ্ঞান অর্জন সমাপন করার পরে দ্বৈপায়ণকে মহর্ষি পরাশর ব্যাস উপাধি প্রদান করে। সেদিন থেকে তাঁর নাম হয় 'কৃষ্ণ দ্বৈপায়ণ ব্যাসদেব'। কিছুদিন পর ব্যাসদেব যোগ তপস্যায় লিপ্ত হয় এবং কঠোর তপস্যা করে। তপস্যায় ব্যাসদেব পূর্ণ রুপে আধ্যাত্মিক শক্তি লাভ করে এবং নিজেকে ত্বত্ত জ্ঞানে জ্ঞানান্নীত করে মহাজ্ঞানী স্বীকৃতি অর্জন করে। 


(দ্বৈপায়ণ থেকে ব্যাসদেব নামে পরিচিতি পর্ব সমাপ্ত)


(সনাতন ধর্মের গ্রন্থ গদ্য আকারে না হয়ে শ্লোকে কেন লিপিবদ্ধ হলো তার পূর্ণ বিবরণ):-


ব্যাসদেব তপস্যা পূর্ণ করে ফেরার প্রায় পনেরো বছর পর, একদিন ব্যাসদেব একটি যজ্ঞানুষ্ঠানে অংশ গ্রহন করেন। তিনি দেখলেন অত্র যজ্ঞানুষ্ঠানে সকল ভক্তরা অজ্ঞের মতো বসে আছে আর ঋষিরা যজ্ঞানুষ্ঠান পরিচালনা করছেন। ব্যাসদেব নিজের ভেতরে এইটা অনুভব করলো যে, সনাতন সমাজের ব্রাহ্মণ,ক্ষত্রিয়,শুদ্র,বৈশ্য সবাই ধর্ম পালনে তৎপর হইলেও প্রকৃত ধর্মের জ্ঞান সম্পর্কে অনবিজ্ঞ তার একমাত্র কারণ হচ্ছে ধর্মের নিয়ম, শৃঙ্খলা, অনুশাসন ও জ্ঞানবাণী ঋষিদের মুখাশ্রীত পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। তখন তিনি চিন্তা করলেন যদি এই জ্ঞানবাণী ঋষি সমাজ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকে, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে সনাতনী সমাজ বিলুপ্তির পথে দাঁড়াবে। ধর্ম নামক শক্তির কোন অস্তিত্ব থাকবে না, মানুষ অমানুষের আঁকার ধারণ করবে ও সৃষ্টির সেরা এই মানবজাতি হিংস্র দানবের ন্যায় অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে। কেননা ধর্মের নিয়ম শৃঙ্খলা ও আদেশ উপদেশ ব্যতীত পৃথিবীর কোনও জাতি সুশৃঙ্খল, আত্মত্যাগী, ন্যায়পরায়ন ও সমাজবাদী শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে পারবে না। তখন তিনি মনস্থির করলেন ঋষি সমাজের মুখাশ্রীত ধর্মের এই জ্ঞানবাণী সনাতনী মানব সমাজ পর্যন্ত ধর্মের সংবাদ তথা আদেশ উপদেশ সরুপ পৌঁছাতে হবে। এরপর তিনি আশ্রমে ফিরে এলেন। সেইদিনের পর থেকে ব্যাসদেব সবসময় সর্বক্ষণ বিচলিত থাকতেন, তিনি শুধু এই চিন্তামগ্নের সমাধান খুঁজতেন। একদিন তিনি ভাবলেন ঋষিদের মুখাশ্রীত এই বাণীই হচ্ছে ধর্মের জ্ঞান কৌশল তথা নিয়মশাসন ও ধর্মের অনুপ্রেরণা। যদি এই অনুপ্রেরণা গ্রন্থ আকারে লিপিবদ্ধ করে মানব সমাজের জন্য উপস্থাপন করা যায়, তাহলে সনাতন ও সনাতনী সমাজ বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পাবে। ব্যাসদেবের আশ্রমে ধর্মের গ্রন্থ লেখার কাজ শুরু করার চিন্তা করলো কিন্তু তিনি ভাবলেন শুধু মুখাশ্রীত বাণী লিপিবদ্ধ করলে কিভাবে হবে, তাহলে মানবজাতি ব্রহ্মাণ্ডের ত্রিদেব তথা মহাশক্তির পরিচিতি তাদের কার্যকলাপ ও তাদের সৃষ্টির সৃজনশীলতার গুণাগুণ উপলব্ধি করবে কিভাবে। ব্যাসদেব তখন আরো চিন্তামগ্ন হয়ে গেলেন, তিনি ভাবলেন যদি ঋষির মুখাশ্রীত বাণী ও মহাশক্তিদের গুণাবলি লিপিবদ্ধ করতে যায় তাহলে তো একার পক্ষে সম্ভব নয়। তার সমাধান খুঁজতে তিনি ব্রহ্মলোকের উদ্দেশ্য গমন করলেন। ব্রহ্মলোক গিয়ে তিনি ব্রহ্মদেবকে বললেন, হে সৃষ্টি গুরু আমি সৃষ্টির ইতিহাস তথা মহাশক্তির পরিচিতি গুণাগুণ ও কার্যকলাপ এবং ধর্মের নিয়ম শৃঙ্খলা ও অনুশাসন, অনুশীলন এবং অনুপ্রেরণা গ্রন্থাকারে লিপিবদ্ধ করতে চাই এতে আপনার সুনির্দিষ্ট সাহায্য চাই। ব্রহ্মদেব বললেন অসাধারণ চিন্তা তোমার ঋষি ব্যাস, কিন্তু আমার খুবই দুর্ভাগ্য তোমার এই মহান কার্যে কোনরুপ সহায়তা করতে পারছি না। ব্যাসদেব বললেন হে পিতা, আমি কিভাবে আমার কার্য সিদ্ধি করব? ব্রহ্মদেব বললো ঋষি ব্যাস তুমি বৈকুণ্ঠপতির কাছে যাও তিনিই তোমাকে পথ দেখাবেন। ব্যাসদেব তখন বৈকুণ্ঠের উদ্দেশ্য গমন করলেন। বৈকুণ্ঠে বিষ্ণুদেবের কাছে গিয়ে সেই বাক্য বললেন। বিষ্ণুদেব বললেন ঋষি ব্যাস, আপনি এক মহান কার্য সম্পাদনা করতে যাচ্ছেন যার ন্যায় সৃষ্টি তথা সৃষ্টির মানব আপনাকে শ্রদ্ধার সহিত স্মরণ করবে। অতঃপর বিষ্ণুদেব বললেন আপনার কার্যসিদ্ধির সমাধান আছে তবে সেটা আমার কাছে নয়। ব্যাসদেব প্রশ্ন করলো তাহলে প্রভু ব্রহ্মদেবের কাছে নেই আপনার কাছে নেই কার কাছে আছে? তখন বিষ্ণুদেব বললেন, কৈলাসপতি আদিদেব মহাদেবের কাছে। আপনি অতিশয় কৈলাস গমন করুন, অন্যতা মহাদেব দক্ষিণ কৈলাসে (দক্ষিন কৈলাস বলতে প্রেত কূল তপস্যা) প্রস্থান করবেন। ব্যাসদেব বিলম্ব না করে কৈলাস গমন করলেন। কৈলাসে গিয়ে ব্যাসদেব মাতা পার্বতী ও মহাদেবের সামনে উপস্থিত হইলেন, তিনি কিছু বলার আগেই মহাদেব বললেন, ঋষি ব্যাস অসাধারণ আপনার চিন্তা ভাবনা যা আজ পর্যন্ত কেউ অনুভব করেনি তা আপনি আঁকার দিতে যাচ্ছেন। ঋষি ব্যাস বললেন হে পরম পুজনীয় প্রভু আপনি অন্তর্লীন, আমার কার্যসিদ্ধির পথ সন্ধান হেতু আপনার শরণাপন্ন হওয়া, আমাকে পথ দেখান প্রভু। মহাদেব বললেন হে ঋষি ব্যাস অবশ্যই, মহাদেব তখন গণেশকে ডাকলেন আর বললেন পুত্র যাও ঋষি ব্যাসের সাথে। গণেশ বললো পিতা ঋষি ব্যাসের সাথে কোথায় যাব? তখন মহাদেব বললেন, ঋষি ব্যাস ধর্ম স্থাপত্যের জন্য কিছু গ্রন্থ রচনা করবেন আর তুমি তা লিপিবদ্ধ করবে। গণেশ বললো এই কাজের জন্য আমাকে কেন প্রয়োজন, এই কাজ উনি নিজেই করতে পারে? মহাদেব বললেন, পুত্র এ এক নতুন ইতিহাস রচিত হতে যাচ্ছে যা ঋষি ব্যাসের পক্ষে একা রচনা করা ও লিপিবদ্ধ করা সম্ভবপর নয়, আর পুত্র এই কার্যে নিজেকে জড়িত করা সৌভাগ্যবান মনে কর কেননা যখনই এই শাস্ত্র গ্রন্থের নাম উল্লেখ হবে তখুনি তোমার নাম মানবজাতি শ্রদ্ধার সহিত স্মরণ করবে। ঋষি ব্যাসের সাথে তুমিও অক্ষয় হয়ে থাকবে। তখন গণেশ বললো চলুন ঋষিবর। ঋষি ব্যাস তখন গণেশকে নিয়ে তার আশ্রমে ফিরে আসিলেন। ঋষি ব্যাস গণেশকে নিয়ে অশ্বত্থ বৃক্ষের নীচে বসলেন। ঋষি ব্যাস প্রথমে ঋষিদের মুখাশ্রীত বাণী রচিত করবেন চিন্তা করলো, তখনই গণেশ বললো, ঋষিবর আমি লেখা শুরু করলে আর বন্ধ করতে পারবো না, যদি বন্ধ হয় তাহলে আর লিখিতে পারবো না। ঋষি ব্যাস তখন চিন্তায় পরে গেলেন, তিনি ভাবলেন পার্বতী নন্দন লেখা বন্ধ করলে আমার গ্রন্থ রচনা হবে কি করে আবার গণেশকে যদি স্থগিত করতে না পারি তাহলে রচনা চিন্তা করবো কিভাবে। এদিকে গণেশ বলছে শুরু করুন ঋষিবর। কিছুক্ষণ চিন্তা করে ঋষি ব্যাস মনস্থির করলেন আমি শ্লোক আকারে কিছু রচনা করবো তখন কি রচিত করলাম তা জানার জন্য গণেশের মনে আগ্রহ জাগবে। তখন রচিত শ্লোকের অর্থ বুঝতে বুঝতে আমি আরেকটি রচনা করতে পারবো। তখন ঋষি ব্যাস বললেন হে সিদ্ধিবিনায়ক শুরু করুন তবে, প্রথমে ঋষি ব্যাস একটি শ্লোক রচিত করলো অতঃপর গণেশ বললো, একটু অপেক্ষা করুন ঋষিবর। ঋষি ব্যাস বললো হে গণপতি? গণেশ বললো আপনি কি রচনা করলেন? ঋষি ব্যাস বললো, আপনি সিদ্ধিনাথ দেবকূলের পরম জ্ঞানী আমি যা রচিত করছি তা আপনার না জানার কথা নয়। আমি তো মনে করেছিলাম আমার কোন ভুল রচনা আপনি ধরবেন কিন্তু আমি কি রচনা করেছি তা আপনি জানতে চাইছেন এইটা আমার জন্য কোন পরীক্ষা নয়তো? তখন গণেশ বললো, ঠিক আছে আপনি যা রচনা করবেন তা আমি বোঝে উঠা পর্যন্ত আরেকটি বলবেন না। মনে মনে ঋষি ব্যাস বললো এটাই তো আমি চেয়েছিলাম। গণেশ বললো আপনি কি চিন্তা করছেন? ঋষি ব্যাস বললো, না কিছু না, ঠিক আছে গণপতি আপনার যা ইচ্ছা। এভাবে ঋষি ব্যাস একটি শ্লোক রচিত করে আর গণেশ তা পূণাঙ্গ রুপে বুঝে উঠবার আগে আরেকটি শ্লোক রচিত করে। ক্রমাগত এভাবে ঋষি ব্যাস প্রথমে চারটি বেদ পরে আটারোটি পুরাণ রচিত করে এবং গণেশ নিজের অজান্তে চারটি বেদ ও আটারোটি পুরাণ লিপিবদ্ধ করে। এই গ্রন্থ রচনার পরে তাঁর নাম হয় কৃষ্ণ দ্বৈপায়ণ বেদব্যাস। 


(যদি গণেশ ছলনা না করত তাহলে আজ আমরা গদ্য আকারে আমাদের সনাতনী শাস্ত্র গ্রন্থ ও পুরাণ পেতাম, আর গদ্য আকারে হলে আজ শাস্ত্র গ্রন্থ কেউ বিকৃতি করার সুযোগ পেতো না। হয়তো এখানে পরমেশ্বরের কোন লীলা ছিল বা আছে।)


পে‌জে লাইক দি‌য়ে সা‌থে থাকার অনু‌রোধ করা হ‌লো

Post a Comment

0 Comments