হরে কৃষ্ণ
ভগবান রামচন্দ্র হচ্ছেন পরম পুরুষোত্তম ভগবান
তার বিবরণ দিয়েছেন শৈল পূর্ণ মুনি।
উদ্ভব ভগবান কে বলছেন হে ভগবান তোমার লীলা বোধগম্য নয় ।কেন ?রামায়ণ থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে উদ্ভব কৃষ্ণ কে বলছেন দ্বারকা তে। যে রাম লক্ষণ প্রথম হনুমানের সাথে দেখা হয় সেখানে লক্ষণ হনুমান কে বলছেন ইনি হচ্ছেন পরম পুরুষোত্তম ভগবান রামচন্দ্র অখিল বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের মালিক ।সমস্ত বিশ্ববাসীকে উনি রক্ষা করেন। সমস্ত জীব উনার চরণে আত্মসমর্পণ করে উনাকে আশ্রয় নেয় । কিন্তু সেই ভগবান সুগ্রীব এর আশ্রয় চাইছেন। লক্ষণ হনুমান কে বলছেন ইনি হচ্ছেন ভগবান রাম পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে উনি হচ্ছেন ভগবান রাম যিনি অখিল বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের মালিক সবার আশ্রয়দাতা উনি সুগ্রীবের আশ্রয় চেয়েছেন ।রামায়ণের অনেক কাহিনী আছে যার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মনে অনেক প্রশ্ন উঠতে পারে উনি কি ভগবান ?সেই জন্য সেই শৈল পূর্ণ মুনি প্রথমেই বলছেন রামানুচার্য কে প্রথম জিনিস আমাদের শিক্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে ভগবান রামচন্দ্র হচ্ছেন পরম পুরুষোত্তম ভগবান ।
দ্বিতীয় শিক্ষা হচ্ছে রামায়ণ থেকে শরণাগতি কাকে বলে ?এবং দুটি উদাহরণ দিয়েছিলেন শৈল পূর্ণ মুনি ১ হচ্ছেন সীতা ঠাকুরানী আরেক হচ্ছেন লক্ষণ। রামচন্দ্র কতভাবে বুঝিয়েছিলেন সীতাকে বনে প্রবেশ করতে না। কিন্তু সীতা মা রামচন্দ্র কে বুঝিয়েছিলেন জীবনে যা আসুক না কেন"হে প্রভু তোমার চরণ কমল তুমি যখন বন দিয়ে যখন হেটে যাবে কত ধরনের বনে কাটা থাকে। তোমার পায়ে যদি কাঁটা ফুটে সেজন্য হে প্রভু আমি কিন্তু তোমার সামনে হাঁটবো এবং যত কাটা আমার পায়ে ফুটুক। কিন্তু কোনোভাবেই যেন তোমার কোন কষ্ট না হয় আমি তোমার বোঝা হয়ে যাচ্ছি না তুমি ভাববে না আমি তোমার বোঝা একটা স্ত্রী আমাকে দেখাশোনা করতে হবে না প্রভু আমি তোমাকে সেবা করব ।রামচন্দ্র যখন লক্ষণ কে বললেন লক্ষণ সিতা আমার স্ত্রী সে আমার সাথে যেতে চাইছে কিন্তু তুমি কেন যাবে? তোমার স্ত্রী তো এখানে আছে তুমি অযোধ্যায় থাকো ।লক্ষণ সীতা মায়ের দিকে তাকিয়ে রামচন্দ্রের চরণ যুগল ধারণ করে অঝোরে কেঁদে ছিলেন। এবং সীতা মায়ের আশীর্বাদ চেয়েছিলেন যেন উনার মত শরণাগতি যেন আমার হয়।
রামচন্দ্রের মহিমা জেনে সুমিত্রা লক্ষণ এর মাতা লক্ষণ কে বলেছিল সীতা হচ্ছে তোমার মা রামচন্দ্র হচ্ছে তোমার পিতা তুমি যখন বনে যাবে সেই বন হচ্ছে অযোধ্যা। তুমি বন কে বন হিসাবে দেখবে না ।বন কে দেখবে অযোধ্যা ।এইভাবে রাম চন্দ্রের চরণ কমলে পূর্ণ আত্নসমর্পন করবে। শরণাগতির জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত হচ্ছে রামায়ণে হচ্ছে লক্ষণ এবং মা সীতা।
তৃতীয় শিক্ষা শরণাগতি ফল কি? উত্তর হচ্ছে রামায়ণে তার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত হচ্ছে ভরত মহারাজ।
আমরা বলি অনেক সময় প্রভু জপের ফল কি? সেবার ফল কি? তার উত্তর হচ্ছে পূর্ণ শরণাগতি ফল হচ্ছে সেবা।
জপের ফল কি জপের ফল হচ্ছে আরো জপ করা। পূর্ণ শরণাগতির ফল হচ্ছে আরও সেবা। তার উদাহরণ হচ্ছে ভরত মহারাজ ।
ভরত মহারাজ জানতেন না সমস্ত অযোধ্যা বাসী এমনকি তার গুরুদেব বৈশিষ্ট্য মুনিও চিন্তা করছেন হয়তোএই ভরত মহারাজ হচ্ছেন রামচন্দ্রের বনবাস যাওয়ার প্রধান কারণ । সে রাজা হতে চায়।তার মাকে দিয়ে এটা করালো ।সারা অযোধ্যা বাসী ভরত মহারাজ সম্পর্কে কি খারাপ চিন্তা করছেন। কিন্তু ভারত মহারাজ এই কষ্ট সহ্য করে সবাইকে নিয়ে যারা ভারত মহারাজ সম্পর্কে ভালো বলছিল আর যারা ভরত মহারাজ সম্পর্কে খারাপ বলছিল সবাইকে নিয়ে সেবা করেছেন। রামচন্দ্রের কাছে গিয়েছেন। ছোট একটা উদাহরণ দিই বৈশিষ্ট্য মুনি অনেক ভাবে ভরত মহারাজকে পরীক্ষা করেছেন বুঝার জন্য যে ভরত মহারাজ তার আসল মনোবৃত্তি কি? সেকি রাজা হতে চায়? তার অনেক উদাহরণ আছে তার মধ্যে একটি উদাহরণ হল ভরত মহারাজ যখন ফিরে আসে এবং দশরথ মহারাজের যখন শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় তখন বৈশিষ্ট্য মুনি ভরত কে বলছেন প্রথমবার
"হে মহারাজ ভারত তুমি তোমার কর্তব্য পালন করো "
প্রথমবার গুরুদেব ভরতকে মহারাজ বলে সম্বোধন করলেন ক্রোধে লজ্জায় ভরত বৈশিষ্ট্য মুনিকে উচ্চস্বরে বলছেন হে গুরুদেব আপনি একজন চোর। বৈশিষ্ট্য মুনিকে কেউ কোনদিন চোর বলে সম্বোধন করেন নি। এমনকি বিশ্বামিত্র মুনি ও না। বৈশিষ্ট্য মুনি বলছেন আমাকে বিশ্বামিত্র মুনি ও কোনদিন চোর বলেননি ।আর এ আমাকে চোর বলছে? বৈশিষ্ট্য মুনির ভারতকে জিজ্ঞেস করছে তুমি আমায় চোর বলে সম্বোধন করলে। এবার বিনম্র চিত্তে ভরত মহারাজ হাতজোড় করে ক্রন্দন করতে করতে বললেন
"হে গুরুদেব আমার জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের সেবক রূপে থাকা। আমার জীবনের আর কোন উদ্দেশ্য নেই। আমার প্রভু আমার পিতা আমার ভগবান সবকিছু হচ্ছেন রামচন্দ্র "উনি আমার রাজা নিউ অযোধ্যার রাজা আর আপনি আমাকে মহারাজ বলে সম্বোধন করেছেন আমি যে ভগবান রামচন্দ্রের সেবক সেই সেবা থেকে আপনি আমাকে বঞ্চিত করতে চাইছেন বলে আমি আপনাকে চোর বলে সম্মোধন করলাম। ভরতের এই দৃঢ়তা দেখে বৈশিষ্ট্য মুনির মনে আর কোনো সন্দেহ ছিল না।
আমরা বেশীর ভাগই বলি প্রভু আমার জীবনে অনেক প্রতিকূলতা সেই কারণে আমি ভালো ভক্ত হতে পারছি না ।আমাদের সবার কাছে কিভাবে যেকোনো প্রতিকূলতার মধ্যে থেকেও পূর্ণ শরণাগতি তার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত হচ্ছে ভরত মহারাজ । ভরত মহারাজ সরুয় নদীতে স্নান করতে যেতেন রাতের বেলা কারণ দিনের বেলা উনি যখন স্নান করতে যেতেন সরুয় নদীতে। রাতে যে স্নান করতে যেতেন এই কারণে দিনের বেলায় গেলে কিছু অযোধ্যা বাসি ওনাকে উনার শরীরের পাথর ছুড়তে ।এই সেই ব্যক্তি যে রাজা হতে চেয়েছিল রামচন্দ্র কে বনবাসে যেতে হলো তাদেরকে কোন আঘাত দিতে যায়নি বলে তাদের মনে কোন কষ্ট দিতে চাইনি বলে ভরত মহারাজের রাতে যেতেন স্নান করতে তাকে অনেকে অনেক কটু কথা বলতো কিন্তু ভরত মহারাজ কোনদিন কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করেন নি। রামচন্দ্র যখন বনে যান অযোধ্যা ট্রেজারি যত সম্পদ ছিল ভরত মহারাজ 9 গুণ বাড়িয়েছিলেন। 14 বছরে রামচন্দ্র যখন ফিরে আসেন ট্রেজারি 9 গুণ বেড়ে ছিল। উনি সেবক এর মত জীবন যাপন করতেন ভরত ।রামচন্দ্রের পাদুকা আশ্রয় গ্রহণ করেন এটা তিন নম্বর উদাহরণ।
4 নম্বর শিক্ষা শরণাগতি হয় কার মাধ্যমে ?ভক্তের মাধ্যম দিয়ে শরণাগতি হয় এটা চার নম্বর শিক্ষা তার উদাহরণ হচ্ছে হনুমান। যখন রাম এবং লক্ষণ এর সাথে হনুমানের প্রথম দেখা হয় লক্ষণ এর কৃপাতে হনুমান রামচন্দ্র কে পেয়েছিলেন ।রামচন্দ্রের মহিমা শ্রবণ করে হনুমান রামচন্দ্রের চরণ কমলে আত্মসমর্পণ করেছিলেন।
5 নম্বর শিক্ষা শরণাগতি 5 গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ।প্রথম অঙ্গ হচ্ছে ভগবান রাম চন্দ্র হচ্ছে আমাদের প্রত্যেকের আশ্রয়দাতা এবং রক্ষাকর্তা। এটা শরণাগতি প্রথম অঙ্গ আর সেবা করাতে তিনটে ভাব দরকার প্রথম ভাব হচ্ছে সহ্য করার ক্ষমতা ।বিশেষ করে যারা মন্দিরে থাকে বিশেষ করে যারা বাইরের ভক্ত নাম হট্ট গীতা কোর্স ভক্তি বৃক্ষ ছাত্রসমাজ আদি বিভিন্ন প্রচারকার্যে লিপ্ত বিভিন্ন মন্দিরের সেবা কাজে লিপ্ত আমাদের অন্যের সাথে সেবা করতে হয়। অন্যের সাথে সেবা করা মানে অন্যকে সম্মান দেওয়া এবং অন্যকে সহ্য করা সহ্য করার ক্ষমতা হচ্ছে ভরতের। সেই গুন টাকা আধার করে এবং সেবার মনোভাব সেবার মনোভাবের জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত লক্ষণ। সহ্য করার ক্ষমতার উদাহরণ হচ্ছেন ভরত সেবা করার মনোভাব হচ্ছে লক্ষণ এবং বিনম্রতার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত হচ্ছে শত্রুঘ্ন। সহ্য সেবা করার মনোভাব এবং বিনম্রতা ভরত লক্ষণ শত্রুঘ্ন।এই তিনটে ভাব যেন সেবার মধ্যে থাকে। তৃতীয় হচ্ছে শরণাগতি পন্থা ভক্তি ভালোবাসা ।ভালোবাসা মানে সেবা। কিভাবে প্রতিবন্ধকতার মধ্যে থেকেও আমাদের মনটাকে স্থির রাখতে হবে ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের সেবাতে। রাবন কে অনেক সময় অন্য ভাবে দেখানো হয়। কিন্তু শাস্ত্রের বর্ণনা অনুযায়ী রাবণ দেখতে খুব সুন্দর ছিলেন। শাস্ত্রজ্ঞ ছিলেন। বড় পন্ডিত ছিলেন। অনেক ঐশ্বর্য ছিল শক্তিশালী। স্বর্গের দেবতারা সেবা করতো আর উনার স্ত্রী মন্দাধারী যার রূপ এর মহিমা বর্ণনা করা হয়েছে রামায়নে। কোন কিছুর অভাব নেই। কিন্তু একটা জিনিসের জন্য সবকিছু নষ্ট হয়ে গেল এটা হচ্ছে কাম ক্রোধ লোভ।
আমাদের জীবনেও কোন কিছুর অভাব নেই কাম লোভের জন্য আমাদেরও সবকিছু নষ্ট হয়ে যায়।
কৈকয়ী যেভাবে রামকে ভালোবাসতেন তা ভাষায় বর্ণনা করা যাচ্ছে না। ভরতকে যেভাবে ভালোবাসতেন বাল্মিকী মুনি বর্ণনা করছেন কৌশল্যা যেভাবে তার সন্তান রামচন্দ্রকে ভালোবাসতেন কৈকয়ী তদ্রুপ ভালোবাসতেন। সেই ভালোবাসা অন্য কিছুতে রূপান্তরিত করল যেখানে তার স্বামীকে বাধ্য করল যে ভালোবাসার পাত্র ছিল। যে কৈকয়ী সর্বোস ছিল এবং অনেক সময় দেখা যায় রামায়ণে ভগবান রামচন্দ্রের সঙ্গেই কৈকয়ী অনেক সময় বেশি সময় কাটাতেন।
কিন্তু সেই ভালোবাসা হিংসায় রূপান্তরিত হল কি করে? এটা হচ্ছে সঙ্গদোষে। মন্থরা র সঙ্গদোষে। মন্থরা বলছে কৈকয়ী কে রাম যদি রাজা হয়ে যায় তোমার সন্তান রাজা হতে পারবে না ।কৈকয়ী বলছে তাতে কি হয়েছে। রামচন্দ্র রাজা হবে আমার সন্তান ভরত তাকে সেবা করবে। এটা তো খুব ভালো খবর। এবার মন্থরা বলছে তুমি কি বলছ? রাম রামচন্দ্র যখন এই জগৎ থেকে চলে যাবেন তখনো ভরত বা ভরতের সন্তান রাজা হতে পারবে না । রামচন্দ্রের সন্তান রাজা হবে তখনো কৈকয়ী বলছে তো কি হয়েছে? আমি তো খুব খুশি। খুব খুশির খবর। কিন্তু তখন থেকে ভাবতে শুরু করলেন কৈকয়ী যখন শুনলেন রামচন্দ্র রাজা হলে কৌশল্যা হবেন রাজমাতা আর তুমি হচ্ছে রাজমাতার সেবক হবে। তখন থেকে ভাবছেন তাই তো। আমাদের প্রত্যেকের হৃদয়ে বাস করছে রাক্ষস মন্থরা রূপে ।আমরা বলি না চন্দ্র গ্রহণ সূর্য গ্রহণ অর্থাৎ গ্রহণ লেগেছে সঙ্গ দোষ। আমরা সবাই ভগবানকে ভালোবাসতে চাই ভগবানকে ভালোবাসি একটু ভালোবাসতে চাই গুরুদেবকে ও খুব ভালোবাসি। প্রভুপাদ তোমাকে ও ভালোবাসতে চাই ইসকন কে ভালোবাসতে চাই সেবা করতে চাই হরিনাম করতে চাই এখানে কেউ নাই যে বলবে যে আমি চাই না এখানে সবাই চাই এবং কম বেশি সবাই ভালোবাসি ।সবাই হরিনাম করতে চাই সেবা করতে চাই । কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সঙ্গ এর প্রভাবে আমরা কুলুষিত হয়ে যাই ।
24000 যে শ্লোক রচনা করেছেন বাল্মিকী মুনি ও তার থেকে কিছু কিছু শিক্ষা ।যেটা হচ্ছে শৈল পূরণের রামানুচার্য মহান আচার্য যে শিক্ষা দিয়েছেন সেই শিক্ষা থেকে আমরা কিছু শ্রবণ করলাম।
0 Comments