হরে কৃষ্ণ 

👉#তুলসী_জলদান_জলধারা👈


বৈশাখের প্রচণ্ড গরমে তুলসী-মহারানীকে ১ মাস ব্যাপী জলদান করা হয়, ১লা বৈশাখ, ১৫ এপ্রিল থেকে তুলসী মহারাণীর জল দান শুরু চলবে আগামী ৩১শে বৈশাখ ১৫ মে  পর্যন্ত।


 🌷তুলসী জলধারা/কেশব ব্রত 🌷


আপনার গৃহে একটি ছিদ্রসমেত পাত্র জলভর্তি করে তুলসী এবং শালগ্রাম শিলার উপরে ঝুলিয়ে রাখুন। যেহেতু বছরের এই সময়টিতে উত্তর গোলার্ধ উষ্ণতর হতে থাকে, তাই ফোঁটায় ফোঁটায় ঝরে পড়া শীতল জলধারা শালগ্রামের সন্তুষ্টি বিধান করে।


👉কিভাবে তা করতে হয়?

একটি ছিদ্রসমেত একটি পাত্র বা কলসী জলভর্তি করে শালগ্রাম শিলার ও তুলসী মহারানীর উপরে ঝুলিয়ে রাখুন এবং জলধারা পড়তে দিন। বিভিন্ন জায়গায়, কেউ কেউ এটি সহজতর করার জন্য কাঠামো তৈরি করে নেন, আবার কেউ শিকল বা দড়ি দিয়ে পাত্রটিকে ঝুলিয়ে রাখেন।


বৈশাখে তুলসী দেবী ও ভগবান নারায়ণের অভিন্ন শালগ্রাম শিলায় জলদানের ব্যবস্থা করলে ভগবান শ্রীহরি অত্যন্ত প্রীত হন। এই সময় মাটিতে রস ঘাটতি দেখা দেয়। তাই জলদানের মাধ্যমে তুলসীদেবীর প্রীতিসাধন করলে হরিভক্তি সুলভ হয়। সাত্বত শাস্ত্র গৌতমীয় তন্ত্রে উক্ত হয়েছে-

তুলসীদলমাত্রেণ জলস্য চুলুকেন বা।

বিক্রীণীতে স্বমাত্মানং ভক্তেভ্যো ভক্তবৎসল ॥

-যে ভক্ত নিষ্ঠা সহকারে ভগবানের উদ্দেশ্যে যদি শুধু একটি তুলসীপত্র এবং এক অঞ্জলি জল নিবেদন করেন, ভক্তবৎসল ভগবান সম্পূর্ণরূপে সেই ভক্তের বশীভূত হয়ে পড়েন। তাই কৃষ্ণভক্তগণের উচিত এই মাসে তুলসীবৃক্ষে ও শালগ্রামে জলদানের ব্যবস্থা করা। সমগ্র বৈদিক শাস্ত্র পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অধ্যয়নের ফলে চরম প্রাপ্তি যে কৃষ্ণপ্রেম, বৈশাখ মাসে শ্রীতুলসীকে জলদানের মাধ্যমে তা অতিসহজেই লাভ হয়।


তুলসী জলদান মন্ত্র:

গোবিন্দবল্লভাং দেবীং ভক্তচৈতন্যকারিণীম্।

স্নাপয়ামি জগদ্ধাত্রীং কৃষ্ণভক্তিপ্রদায়িনীম্ ॥

শ্রীগোবিন্দের প্রিয়তমা, জগজ্জননী, সকল ভক্তকে কৃষ্ণচেতনা প্রদায়িনী এবং শ্রীকৃষ্ণে ভক্তিপ্রদাণকারিনী শ্রীমতি তুলসিদেবী, আপনাকে আমি স্নানসেবা নিবেদন করছি। 


শ্রীশ্রী তুলসী জলদান উৎসব.....🌿🌿🌿

সৌর বৈশাখ মাসে যেহেতু সূর্যের তাপ বৃদ্ধি পায়, তাই বিষ্ণুভক্তগণকে জলদান করা হলে শ্রীহরি অতিশয় প্রিয় হন। শ্রীহরির কৃপাপূর্বক তাঁর থেকে অভিন্ন শ্রীতুলসীবৃক্ষে জলদানেরও অপ্রাকৃত এক সুযোগ প্রদান করেন।

কিন্তু কেন তুলসীকে জলদান কর্তব্য?

তুলসী শ্রীকৃষ্ণপ্রেয়সী, তাঁর কৃপার ফলেই আমরা শ্রীকৃষ্ণের সেবার সুযোগ লাভ করতে পারি। তুলসীদেবী সম্বন্ধে বলা হয়েছে, তুলসী দর্শনেই পাপসমূহ নাশ হয়, জলদান করলে যম ভয় দূর হয়, রোপণ করলে তাঁর কৃপায় কৃষ্ণভক্তি বৃদ্ধি পায় এবং শ্রীহরির চরণে অর্পণ করা হলে কৃষ্ণপ্রেম লাভ হয়।

পদ্মপুরাণের সৃষ্টিখন্ডে (৬০.১০৫) বৈষ্ণব শ্রেষ্ঠ শ্রীমহাদেব পুত্র কার্তিককে বলেন,

সর্বেভ্যঃ পত্রপুষ্পেভ্যঃ সত্তমা তুলসী শিবা।

সর্বকামপ্রদা শুদ্ধা বৈষ্ণবী বিষ্ণুসুপ্রিয়া ॥

সমস্ত পত্র ও পুষ্পের মধ্যে তুলসী হচ্ছেন শ্রেষ্ঠা। তুলসী সর্বকামপ্রদা, মঙ্গলময়ী, শুদ্ধা, মুখ্যা, বৈষ্ণবী, বিষ্ণুর প্রেয়সী এবং সর্বলোকে পরম শুভা।

ভগবান শিব বলেন,-

যো মঞ্জরীদলৈরেব তুলস্যা বিষ্ণুমর্চয়েঃ।

তস্য পুণ্যফলং স্কন্দ কথিতুং নৈব শক্যতে ॥

তত্র কেশবসান্নিধ্যং যত্রাস্তি তুলসীবনম্।

তত্র ব্রহ্মা চ কমলা সর্বদেবগণৈঃ সহ

হে কার্তিক! যে ব্যক্তি ভক্তিসহকারে প্রতিদিন তুলসীমঞ্জরি দিয়ে শ্রীহরির আরাধনা করে, এমনকি আমিও তার পুণ্য বর্ণনা করতে অক্ষম। যেখানে শ্রীতুলসীর বন আছে, শ্রীগোবিন্দ সেখানেই বাস করেন। আর গোবিন্দের সেবার উদ্দেশ্যে লক্ষ্মী, ব্রহ্মা প্রভৃতি সমস্ত দেবতা সেখানেই বাস করেন।

মূলত শ্রীকৃষ্ণই জগতে আবদ্ধ জীবগণকে তাঁর সেবা করবার সুযোগ প্রদান করার জন্য শ্রীতুলসীরূপে আবির্ভূত হয়েছেন এবং তুলসী বৃক্ষকে সর্বাপেক্ষা প্রিয় রূপে গ্রহণ করেছেন।

পাতালখন্ডে ঐ বিপ্রের নিকটে শ্রীযম তুলসীর মহিমা কীর্তন করেন।

"বৈশাখে তুলসীপত্র দ্বারা শ্রীহরির সেবা প্রসঙ্গে তিনি বলেন।যে ব্যক্তি সম্পূর্ণ বৈশাখ মাস অনন্য ভক্তি সহকারে তুলসী দ্বারা ত্রিসন্ধ্যা শ্রীকৃষ্ণের অর্চনা করেন, তার আর পুনর্জন্ম হয় না।”

তুলসীদেবীর অনন্তমহিমা অনন্ত শাস্ত্রে বিস্তৃত। কিন্তু এই মহিমা হচ্ছে অশেষ।ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের প্রকৃতিখণ্ডে (২২.৪২-৪৪) বর্ণিত হয়েছে-

শিরোধার্যাঞ্চ সর্বেসামীপ্সিতাং বিশ্বপাবনীম্।

জীবন্মুক্তাং মুক্তিদাঞ্চ ভজে তাং হরিভক্তিদাম্ ॥

যিনি সকলের শিরোধার্যা, উপাস্যা, জীবন্মুক্তা, মুক্তিদায়িনী এবং শ্রীহরিভক্তি প্রদায়িনী, সেই সমগ্র বিশ্বকে পবিত্রকারিণী বিশ্বপাবনী তুলসীদেবীকে সতত প্রণাম করি।

সমগ্র বৈদিক শাস্ত্রের সংকলক তথা সম্পাদক শ্রীব্যাসদেব তুলসীর মহিমা বর্ণনা করতে গিয়ে পদ্মপুরাণের সৃষ্টিখণ্ডে(৬০.১২৭-২৮) বলেছেন,

পূজনে কীর্তনে ধ্যানে রোপণে ধারণে কলৌ।

তুলসী দহতে পাপং স্বর্গং মোক্ষং দদাতি ॥

উপদেশং দিশেদস্যাঃ স্বয়মাচরতে পুনঃ।

স যাতি পরমং স্থানং মাধবস্য নিকেতনম্ ॥

শ্রীতুলসীদেবীর পূজা, কীর্তন, ধ্যান, রোপণ ও ধারণে সমস্ত পাপ নাশ হয় এবং পরমগতি লাভ হয়। যে ব্যক্তি অন্যকে তুলসী দ্বারা শ্রীহরির অর্চনার উপদেশ দেন, এবং নিজেও অর্চনা করেন, তিনি শ্রীমাধবের আলয়ে গমন করেন।

শুধু শ্রীমতী তুলসী দেবীর নাম উচ্চারণ করলেই শ্রীহরি প্রসন্ন হন। ফলে পাপ সমূহ নাশ হয় এবং অক্ষয় পুণ্যার্জিত হয়।

পদ্মপুরাণের ব্রহ্মখণ্ডে বলা হয়েছে,

গঙ্গাদ্যাঃ সরিতঃ শ্রেষ্ঠা বিষ্ণুব্রহ্মামহেশ্বরাঃ।

দেবৈস্তীর্থৈঃ পুষ্করাদ্যৈস্তিষ্ঠান্ত তুলসীদলে ॥ ৬.২২

গঙ্গাদি সমস্ত পবিত্র নদী এবং ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর, পুষ্করাদি সমস্ত তীর্থ সর্বদাই তুলসীদলে বিরাজ করেন।

ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে নির্দেশিত হয়েছে যে, সমগ্র পৃথিবীতে সাড়ে তিন কোটি তীর্থ আছে। তুলসী উদ্ভিদের মূলে সমস্ত তীর্থই অবস্থান করে। তুলসীদেবীর কৃপায় ভক্তবৃন্দ কৃষ্ণভক্তি লাভ করেন এবং বৃন্দাবনে বসবাসের যোগ্যতা অর্জন করেন।

বৃন্দাদেবী তুলসী সমগ্র বিশ্বকে পাবন করতে সক্ষম এবং সর্বত্রই পূজিতা। সমগ্র পুষ্পের মধ্যে তিনি শ্রেষ্ঠ এবং শ্রীহরি, দেবসকল, ব্রাহ্মণ এবং বৈষ্ণবগণের আনন্দ বর্ধনকারিণী। তিনি অতুলনীয়া এবং কৃষ্ণের জীবন স্বরূপিনী।

যিনি নিত্য তুলসী সেবা করেন তিনি সমসত ক্লেশ হতে মুক্ত গয়ে অভীষ্ঠ সিদ্ধি লাভ করেন। অতএব শ্রীহরির অত্যন্ত প্রেয়সী তুলসীকে জলদান অবশ্যই কর্তব্য।

শাস্ত্রে তুলসীদেবীকে জলদান করা হলে তুলসীমূলে যে জল অবশিষ্ট থাকে তারও বিশেষ মাহাত্ম্য কীর্তন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে একটি কাহিনী বলা হয়েছে যে, কোনো এক সময় এক বৈষ্ণব তুলসীদেবীকে জলপ্রদান ও পরিক্রমা করে গৃহে গমন করেন। কিছুক্ষণ পর এক ক্ষুধার্ত কুকুর সেখানে এসে তুলসীদেবীর মূলে অবশিষ্ট জল পান করে।

কিন্তু তখনই এক ব্যাধ এসে তাকে বলতে লাগল, ‘দুষ্ট কুকুর! তুই কেন আমার বাড়িতে খাবার চুরি করেছিস? চুরি করেছিস ভালো, কিন্তু মাটির হাড়িটি কেন ভেঙে রেখে এসেছিস? তোর উচিত শাস্তি কেবল মৃত্যুদ-।” অতপর ব্যাধ ঐ কুকুরটিকে তখন বধ করে। তখন যমদূতগণ ঐ কুকুরকে নিতে আসে। কিন্তু তৎক্ষণাৎ পরমনন্ধ বিষ্ণুদূতগণ সেখানে এসে তাদের বাধা দিলে শ্রীবিষ্ণুদূতগণ বলেন, “এই কুকুর পূর্বজন্মে জঘন্য পাপ করার কারণে নানাবিধ শাস্তি পাওয়ার যোগ্য ছিল। কিন্তু শুধু তুলসী তরুমূলের জল পান করার ফলে এর সমস্ত পাপ নাশ হয়েছে, এমনকি সে বিষ্ণুলোকে গমনের যোগ্যতাও অর্জন করেছে।” অতঃপর সেই কুকুর সুন্দর দেহ লাভ করে বৈকুণ্ঠের দূতগণের সাথে ভগবৎধামে গমন করে।

জগৎজীবকে কৃপা করবার উদ্দেশ্যেই ভগবানের অন্তরঙ্গা শক্তি শ্রীমতি রাধারাণীর প্রকাশ বৃন্দা-তুলসীদেবী এ জগতে প্রকটিত হয়েছেন, তেমনি ভগবান শ্রীহরিও বদ্ধজীবসমূহকে মায়ার বন্ধন থেকে মুক্ত করার জন্য বিচিত্র লীলার মাধ্যমে অভিন্ন-স্বরূপ শালগ্রাম শিলারূপে প্রকাশিত হয়েছেন।

চারিবেদ অধ্যয়নে লোকে যে ফল প্রাপ্ত হয়, কেবল শালগ্রাম শিলার অর্চনাতে সেই ফল প্রাপ্ত হওয়া সম্ভব।

যিনি শালগ্রামশিলা-স্নানজল; চরণামৃত নিত্য পান করেন, তিনি মহাপবিত্র হন এবং জীবনান্তে ভগবৎধামে গমন করেন। ব্রত, দান, প্রতিষ্ঠা, শ্রাদ্ধ, দেবপূজা- যা কিছুই শালগ্রাম শিলা সন্নিধ্যানে অনুষ্ঠিত হয়, তা-ই অতি মঙ্গলময় হয়।

বৈশাখে তুলসী দেবী ও ভগবান নারায়ণের অভিন্ন শালগ্রাম শিলায় জলদানের ব্যবস্থা করলে ভগবান শ্রীহরি অত্যন্ত প্রীত হন। এই সময় মাটিতে রস ঘাটতি দেখা দেয়। তাই জলদানের মাধ্যমে তুলসীদেবীর প্রীতিসাধন করলে হরিভক্তি সুলভ হয়।

সাত্বত শাস্ত্র গৌতমীয় তন্ত্রে উক্ত হয়েছে-


তুলসীদলমাত্রেণ জলস্য চুলুকেন বা।

বিক্রীণীতে স্বমাত্মানং ভক্তেভ্যো ভক্তবৎসল ॥

যে ভক্ত নিষ্ঠা সহকারে ভগবানের উদ্দেশ্যে যদি শুধু একটি তুলসীপত্র এবং এক অঞ্জলি জল নিবেদন করেন, ভক্তবৎসল ভগবান সম্পূর্ণরূপে সেই ভক্তের বশীভূত হয়ে পড়েন। তাই কৃষ্ণভক্তগণের উচিত এই মাসে তুলসীবৃক্ষে ও শালগ্রামে জলদানের ব্যবস্থা করা। সমগ্র বৈদিক শাস্ত্র পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অধ্যয়নের ফলে চরম প্রাপ্তি যে কৃষ্ণপ্রেম, বৈশাখ মাসে শ্রীতুলসীকে জলদানের মাধ্যমে তা অতিসহজেই লাভ হয়।


🙏 হরেকৃষ্ণ 🙏


🙏 জয় তুলসী মহা রাণী 🙏


-হরেকৃষ্ণ।

Post a Comment

0 Comments