🌹জয় শ্রী রাম🙏🙏🙏জয় শ্রী রাম🌹
জয় রাধা মাধব
(আগামী ৭ ই বৈশাখ বুধবার(২১শে এপ্রিল ২০২১ইং) শ্রী শ্রী রামনবমী ব্রত। সকল গৌর ভক্তবৃন্দের কাছে বিনীত অনুরোধ উপবাস করবেন)
🪔 ব্রত মাহাত্ম্য কথা আস্বাদন করার প্রয়াস করলাম।
👉কোন সময়ে ব্রহ্মার মানস পুত্র মহাযোগী সনক পিতৃসমীপে উপস্থিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, ভগবন! প্রসিদ্ধ আছে রাজা দশরথের ঔরসে রাণী কৌশল্যার গর্ভে ত্রিলোকনাথ ভগবান শ্রীরাম রূপে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। দশরথ ও কৌশল্যা এমন কি পুণ্য করিয়াছিলেন যে "দুর্ব্বাদলশ্যাম শ্রীরাম তাঁহাদের গৃহে অবতীর্ণ হইলেন?"
ব্রহ্মা কহিলেন, বৎস! তুমি জগতের কল্যাণার্থে অতি পবিত্র প্রশ্ন করিয়াছ, ইহার উত্তর দিতেছি শ্রবণ কর। পুরাকালে রাজা দশরথ ও তাঁহার মহিষী পতিপরায়ণা কৌশল্যা ধ্যানমগ্ন হইয়া শিবদুর্গা মন্ত্র জপ করিয়াছিলেন। তাঁহাদিগের কঠোর তপস্যায় শশীশেখরের হৃদয় প্রসন্ন হইল, তিনি তৎক্ষণাৎ রাজা ও রাণীর পুরোভাগে আবির্ভূত হইলেন।
কৈলাসপতিকে দেখিয়া রাজার আনন্দের অবধি রইল না। তিনি করপুটে সদাশিবকে সম্বোধন করিয়া কহিলেন, ভগবন! আপনাকে প্রত্যক্ষ দেখিয়া আমার জন্ম, কর্ম্ম, চক্ষু ও দেহ সার্থক হইল।
সদাশিব কহিলেন, "রাজন! তোমার অভীষ্ট কি প্রার্থনা কর, আমি তাহা পূরণ করিব।" রাজা কহিলেন, হে কৈলাসনাথ! আমি পুত্রাভাবে নিরন্তর মনোদুঃখে কালাতিপাত করিতেছি, কি কার্য করিলে আমি পুত্ররত্ন লাভ করিতে পারি, আপনি তাহার উপায় বিধান করুন।
সদাশিব কহিলেন, মহারাজ! তুমি ভক্তি সহকারে পুত্রেষ্টি যজ্ঞ সম্পাদন কর তাহা হইলেই কৌশল্যার গর্ভে ব্রহ্মান্ডপতি জনার্দ্দন তোমার পুত্ররূপে অবতীর্ণ হইবেন। দেবাদিদেব চন্দ্রনাথ এই বলিয়া তিরোহিত হইলেন।
অনন্তর রাজা দশরথ কৌশল্যার সহিত একত্র হইয়া যথাবিধান পুত্রেষ্টি যজ্ঞের অনুষ্ঠান করিলেন। যজ্ঞের ফলে অচিরেই কৌশল্যার গর্ভসঞ্চার হইল।
যথাকালে চৈত্র মাসে, শুক্লপক্ষের নবমী তিথিতে পুনর্ব্বসু নক্ষত্রে শুভলগ্নে শুভক্ষণে শুভযোগে স্বয়ং জনার্দ্দন শ্রীরামচন্দ্র রূপে আবির্ভূত হইলেন। এইজন্যই এই তিথি রামনবমী নামে কথিত।
এই মঙ্গলময় দিনে শ্রীরামচন্দ্রের উদ্দেশ্যে যেকোন শুভকর্মের অনুষ্ঠান করেন, কোটিসূর্য গ্রহণ অপেক্ষা তাহাতে অধিক ফললাভ হয় সন্দেহ নাই। যে ব্যক্তি এই দিবসে উপবাসী থাকিয়া রাত্রি জাগরণ ও পিতৃপুরুষ গণের উদ্দেশ্যে তর্পণ করে, অন্তিমে ব্রহ্মধামে তাঁহার চিরবাস লাভ হয়। যদি এই পুণ্যতিথিতে নির্জনে বসিয়া দশমী তিথির আগমন পর্যন্ত ভক্তি সহকারে শ্রীরামচন্দ্রের উদ্দেশ্যে ইষ্টমন্ত্র জপ করা যায়, তাহা হইলে তা'দ্বারাই পুরশ্চরণক্রিয়া সম্পাদিত হয়। এইরূপ জপের পর দশমীতে ব্রাহ্মণ ভোজন করাইয়া দক্ষিণা প্রদান করা কর্ত্তব্য।
এই প্রকারে রামনবমী ব্রত সম্পাদন করিলে রঘু-কুলতিলক রামচন্দ্র প্রসন্ন হইয়া ব্রতীর মনোবাঞ্ছা পূরণ করেন। এই রামনবমী ব্রত সর্বসুখের এবং সর্বপ্রকার মঙ্গলের আকর ও পরম পবিত্র।
ব্রহ্মার মুখে এই কথা শুনিয়া তাপসশ্রেষ্ঠ সনক পুনরায় জিজ্ঞাসা করিলেন, "হে পিতঃ! এই প্রকার ব্রতের বিধান কি প্রকার তাহা কীর্ত্তন করুন।" ব্রহ্মা কহিলেন, ব্রতের পূর্বদিন একাহারী থাকিয়া আমিষভোজীদের নিরামিষ ভোজন করাই বিধি। রাত্রি কালে কুশ বা কম্বলের শয্যায় শয়ন করিবে, কিন্তু স্ত্রীর সহিত শয়ন করিবে না। প্রাতঃকালে গাত্রোত্থান পূর্ব্বক স্নান ও নিত্যক্রিয়া সমাপনান্তে পবিত্র হইয়া যথাবিধি সঙ্কল্প করিবে। তৎপরে ঘটে- পটে, শালগ্রাম শিলায় বা প্রতিমাতে শ্রীরামচন্দ্রের পূজা করিবে। প্রথমত কৌশল্যার ও তৎপরে দশরথের অর্চনা করিতে হয়, তদনন্তর পরিবারবর্গের পূজা করিয়া নবগ্রহ, দিকপাল ও অস্ত্রসমূহ অর্চনা করিবে। মধ্যাহ্নকালে শ্রীরামচন্দ্রের আবির্ভাব স্মরণ করিয়া পাদ্যার্ঘ্যাদি দ্বারা তাঁহার পূজা সম্পাদনপূর্ব্বক তিনটি পুষ্পাঞ্জলি প্রদান করিবে। রাত্রি জাগরণ করিতে হয়, পরদিন প্রভাতে স্নানান্তে যথাবিধি ভক্তি সহকারে শ্রীরামচন্দ্রের পূজা সমাপনান্তে ব্রাহ্মণকে ভোজন করাইবে ও দক্ষিণা দিয়া তাঁহাদিগকে সন্তোষসাধন করিবে। তৎপরে নিজে পারণ করিবে।
যে ব্যক্তি এই রামনবমী ব্রতকথা শ্রবণ করে, সে ইহধামে পুত্রাদিসহ অতুল সুখ সম্ভোগ করিয়া দেহাবসানে ব্রহ্মধামে গমন করিয়া থাকে। ভক্তি সহকারে ইহা শ্রবণ করিলে রোগীর রোগ দূর হয়, বন্ধ্যা নারী দীর্ঘজীবী পুত্রলাভ করে এবং সপত্নীর দর্প চূর্ণ করিতে সক্ষম হয়। ইহার প্রসাদে নির্ধনের ধনলাভ এবং ভয়ার্ত্ত ব্যক্তি ভয় হইতে পরিমুক্ত হইবে সন্দেহ নাই। এই ব্রতের অনুষ্ঠান করিলে যেরূপ পুণ্য সঞ্চয় হইয়া থাকে, নানাবিধ যজ্ঞ কঠোর তপস্যা ও সর্বতীর্থে ভ্রমণ দ্বারাও তাদৃশ পুণ্যলাভের সম্ভাবনা নাই। হে বৎস! তোমার প্রতি স্নেহ হেতু আমি এই গুহ্যমাহাত্ম্য কীর্ত্তন করিলাম। সাধারণের নিকট তুমি কদাচ এই ব্রতের বিষয় প্রকাশ করিও না। যে ব্যক্তির ভক্ত, হরিহরে ভেদজ্ঞান নাই তা'দৃশ শিষ্যের নিকটেই ইহা প্রকাশ করিও।
জয় শ্রীরাম 🙏🙏🙏
জয় শ্রীরাম 🙏🙏🙏
জয় শ্রীরাম 🙏🙏🙏
0 Comments