শ্রী বা সৌভাগ্য লক্ষ্মী যাঁর কাছে বাস করেন,
তিনিই শ্রীবাসতত্ত্ব। শ্রীবাস ঠাকুর হচ্ছেন
শুদ্ধনাম আশ্রয়ের প্রতিভূ-বিগ্রহ।
শ্রীকৃষ্ণলীলায় যিনি শ্রীনারদমুনি,
তিনিই গৌরলীলায় শ্রীবাস পণ্ডিত।
শ্রীবাস পণ্ডিতের বসন কুন্দফুলের মতো শুভ্র।
‘শুদ্ধভক্ত’ শিরোমণি শ্রীবাস পণ্ডিত দিবালোক শ্রীবাস ঠাকুর ছিলেন শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভুর অন্তরঙ্গ পার্ষদ। তিনি পঞ্চতত্ত্বের একজন। তিনি শ্রীকৃষ্ণের তটস্থা শক্তি (জীব শক্তি) ও ‘শুদ্ধভক্ত’ তত্ত্ব মধ্যে পরিগণিত। তিনি পঞ্চখণ্ডের অনি পণ্ডিতপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম জলধর পণ্ডিত । তাঁরা পাঁচ ভাই। শ্রীবাস, শ্রীরাম, শ্রীপতি, শ্রীনলিন ও শ্রীনিধি। শ্রীনলিন অল্প বয়সে মারা যান। শ্রীবাস পণ্ডিতের বয়স যখন ১২ বৎসর তখন তাঁর পরিবার নবদ্বীপে পাড়ি জমান। সেখানে গিয়ে তিনি শ্রীঅদ্বৈত আচার্যের তত্ত্বাবধানে শ্রীমদ্ভাগবতম অধ্যয়ন করতেন ও শ্রীকৃষ্ণের আরাধনা করতেন। তাদের প্রার্থনায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যরূপে আবির্ভূত হন। শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য সংকীর্তন যজ্ঞের মাধ্যমে অনেক মায়াবাদী, বৌদ্ধ ধর্মের অনুগামী ও অসুরসম পাষণ্ডীদের তাঁর প্রিয় শিষ্যে পরিণত করেন। শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভু নবদ্বীপে শ্রীবাস অঙ্গনে যখন প্রবলভাবে হরিনাম আন্দোলন শুরু করেছেন তখন কিছু গোঁড়া ব্রাহ্মণ তাঁর এবং ভক্তদের বিরুদ্ধে চাঁদ কাজীর কাছে অভিযোগ করেন। নবদ্বীপের মুসলমান কাজী ব্রাহ্মণদের এই অভিযোগটিতে প্রভূত গুরুত্ব আরোপ করেন। প্রথমে তিনি মহাপ্রভুর অনুগামীদের উচ্চস্বরে হরিনাম সংকীর্তন করতে নিষেধ করেন। কিন্তু শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু তাঁর অনুগামীদর কাজীর সেই নির্দেশ অমান্য করতে নির্দেশ দেন, এবং তাঁরা পূর্বের মতোই সংকীর্তন করে যেতে থাকেন। কাজী তখন সেই সংকীর্তন বন্ধ করার জন্য তাঁর পেয়াদা পাঠান এবং তারা সংকীর্তনকারীদের কয়েকটি মৃদঙ্গ ভেঙে দেয়। এই ঘটনার কথা শুনে মহাপ্রভু অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হন। তিনি এক বিরাট আইন-অমান্য আন্দোলন করেন। তিনি সত্যকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য ভারতবর্ষে প্রথম আইন-অমান্য আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন। হাজার হাজার মৃদঙ্গ এবং করতাল সহ লক্ষ লক্ষ মানুষকে নিয়ে এক বিরাট শোভাযাত্রার আয়োজন করেন, এবং কাজীর আইন অমান্য করে এই শোভাযাত্রা নবদ্বীপের পথে পথে হরিনাম কীর্তন করতে করতে কাজীর বাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। অবশেষে যখন শোভাযাত্রাটি কাজীর বাড়িতে এসে পৌঁছায়, তখন ভয়ে কাজী তাঁর বাড়ির উপরতলার একটি ঘরে লুকিয়ে থাকেন। সেই বিশাল জনসমাবেশ কাজীর বাড়ির সামনে সমবেত হয়ে প্রচণ্ড ক্রোধ প্রকাশ করতে থাকে, কিন্তু মহাপ্রভু তাদের শান্ত হতে বলেন। এভাবে মহাপ্রভু শাস্ত্র-যুক্তির মাধ্যমে হরিনাম সংকীর্তনকে জগতে প্রতিষ্ঠা করলেন। তখন কাজী মহাপ্রভুর শরণে এসে ঘোষণা করলেন যে, শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর প্রবর্তিত সংকীর্তন যজ্ঞে কেউ যেন কখনও বাধা না দেয়, এবং তিনি তাঁর উইলে লিখে যান যে, তাঁর বংশের কেউ যদি সংকীর্তনে বাধা দেয়, তাহলে সে তৎক্ষণাৎ বংশচ্যুত হবে। নবদ্বীপে মায়াপুরের সন্নিকটে এখনও চাঁদ কাজীর সমাধি আছে।
🌞শ্রীবাস ঠাকুরের আবির্ভাব তিথি ও কিছু লীলাকাহিনীঃ
🌞শ্রীবাস পন্ডিত বা শ্রীবাস ঠাকুর শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর মুখ্য বিস্তার ও শক্তি – পঞ্চতত্ত্বের অন্যতম একজন এবং তিনি শ্রীনারদ মুনির অবতার ছিলেন।
🌞তিনি শ্রীহট্টে আবির্ভূত হয়েছিলেন এবং শ্ৰীবাস, শ্ৰীরাম, শ্ৰীপতি ও শ্ৰীনিধি এরা চার ভাই। এরা পূৰ্ব্বে শ্ৰীহট জেলায় বসবাস করতেন; পরবর্তী কালে গঙ্গাতটে শ্ৰীনবদ্বীপে এসে বাস করতে লাগলেন। এই চার ভাই মহান বৈষ্ণব শ্ৰীঅদ্বৈত সভায় এসে ভাগবত শ্ৰবণ ও নাম সংকীৰ্ত্তনাদি করতেন। শ্ৰীজগন্নাথ মিশ্রের সঙ্গে তাদের পরম সৌহাৰ্দ্য- ভাব ছিল। সকলেই একসঙ্গে ভাগবত শ্ৰবণ ও নাম- সংকীৰ্ত্তনাদি করতেন।
🌞চার ভায়ের মধ্যে শ্ৰীবাস পন্ডিত সৰ্ব্ব বিষয়ে অগ্রণী ছিলেন। তিনি কৃষ্ণভক্তি বলে বুঝতে পেরেছিলেন যে শ্ৰীজগন্নাথমিশ্ৰ গৃহে শ্ৰীকৃষ্ণ অবতীৰ্ণ হবেন। শ্ৰীবাস পন্ডিতের পত্নীর নাম ছিল শ্ৰীমালিনী দেবী। তিনি নিরন্তর শ্ৰীশচী দেবীর সঙ্গে সখ্য ভাবাপন্ন হয়ে তাদের বাড়ী যাতায়াত করতেন।
🌞শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু কলিযুগে জীবের দুৰ্দশা দেখে এবং তাদের উদ্ধারের জন্য পূৰ্ণিমাতে শ্ৰীমায়াপুরে শ্ৰীজগন্নাথ মিশ্রর গৃহে শ্ৰীহরি অবতীর্ণ হলেন। তার শুভ আবিৰ্ভাবের সঙ্গে সঙ্গেই জগতে সৰ্ব্ববিধ মঙ্গলের উদয় হল। জগৎ হরিনামে পূৰ্ণ হল।
শ্ৰীঅদ্বৈত আচাৰ্য্য যেমন শান্তিপুর থেকে বুঝতে পেরেছিলেন যে শ্ৰীহরি অবতীৰ্ণ হচ্ছেন, তেমনি শ্ৰীবাসাদি ভক্তগণও বুঝতে পেরেছিলেন। শ্ৰীবাস পন্ডিতের পত্নী শ্ৰীমালিনী দেবী আগে থেকে শ্ৰীশচীমাতার পরিচর্য্যায় নিযুক্ত ছিলেন।
🌞কিন্তু শ্ৰীভগবান যতক্ষণ নিজেকে না জানান ততক্ষণ তাকে কেহ জানতে পারেন না। শ্ৰীগৌরসুন্দর শৈশবকালে অনেক অলৌকিক লীলা ভক্তগণকে দেখালেও ভগবদ মায়ায় তা ভক্তগণ বুঝতে পারতেন না। শ্ৰীবাসপণ্ডিতও মালিনী দেবী শচীজগন্নাথকে পুত্রের পালন বিষয়ে অনেক উপদেশ দিতেন । শ্ৰীগৌরসুন্দর শ্ৰীবাস পন্ডিত ও মালিনী দেবীকে জনক জননীর ন্যায় জান
0 Comments