রামায়ণ : প্রবক্তা শ্রী অনঙ্গ মোহন দাস

 



ভগবান স্হান,কাল, পাত্র অনুসারে বিশেষ রূপ ধরে এই ধরাধামে অবতীর্ণ হন। শাস্ত্রে বলা আছে মানুষের  উদগ্রীব হয়ে ভগবানের অবতার, তত্ত্বকথা ,লীলা সম্পর্কে শ্রবণ করা উচিত। একাগ্রচিত্তে উদগ্রীবতার সাথে শ্রবণ করাই প্রকৃত মানুষের ধর্ম ।আহার ,নিদ্রা ,ভয় ,মৈথুন শুধু এগুলোই যদি থাকে তাহলে মানুষ পশুর তুল্য হয়। ধর্মই একমাত্র মানুষকে পশুর থেকে আলাদা করেছে ।তাই মানুষের প্রকৃত উদ্দেশ্য হওয়া উচিত ভগবদ্ভক্ত হয়ে ভগবত ধামে ফিরে যাওয়া।ধর্ম মানে ভগবান কে ভালোবাসা।
পরীক্ষিৎ মহারাজ যখন জেনেছিলেন তার আয়ু মাত্র ৭ দিন তখন তিনি গঙ্গাতীরে সমস্ত মুনি ঋষিদের সামনে শুকদেব গোস্বামী কে প্রশ্ন করেছিলেন মরণাপন্ন ব্যক্তির কি করা উচিত? এবং তিনি সম্পূর্ণ ভাগবত শ্রবণ করেছিলেন। শুকদেব গোস্বামী বলেছিলেন এই সময় মানুষের উচিত ভগবানের লীলা, কীর্তন শ্রবণ করা আত্মনিবেদন করা ।স্বয়ং ভগবান ভগবত গীতায় বলেছেন যিনি আমার ভক্তদের মধ্যে এই পরম গোপনীয় গীতা বাক্য উপদেশ করেন তিনি অবশ্যই পরা ভক্তি লাভ করে আমার কাছে ফিরে আসবেন।তেমনি আমরা ভগবানের লীলা কথা শ্রবণ করলে সেই জগতে চলে যাই,আমাদের প্রাণের মাধ্যমে তাই হৃদয়ের সঞ্চারিত হয় এবং আমাদের হৃদয়ের সঞ্চিত দুঃখ-দুর্দশা ,অশান্তি এবং এবং ষড়রিপু অর্থাৎ কাম-ক্রোধ-লোভ-মোহ-মদ মাৎসর্য মাত্র এই ছয়টি গ্রন্থি শিথিল হয় যায় এবং আমরা পবিত্র হয়ে ভগবত ধামে ফিরে যেতে পারি। ভগবানের লীলা ,নাম আমাদের মনুষ্য জীবনের আধার।শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বলেছেন যে ভগবানের সেবা চিন্তায় আমাদের অগ্রগতি বা আধ্যাত্মিক জীবনে আমরা কতটা অগ্রসর হয়েছি তা জানা যায় আমাদের শ্রবণে আগ্রহ দেখে অর্থাৎ কতক্ষণ ধৈর্য ধরে  ভগবানের লীলা শ্রবণ করছি। যতক্ষণ ধরে শ্রবণ করব আমাদের হৃদয় ততটাই পরিষ্কার হবে। সাধারণত চার প্রকারের শ্রবণ দেখা যায়-
১) কাকের মত- যারা কোন শ্রবণ থেকে শুধুই খারাপ জিনিস গ্রহণ করে।
২) শেয়ালের মতো -যারা শুধু চিৎকার করে ওঠে কিছুটা শুনে ,যে আমি জানি, আমি জানি ।
৩)ব্যাঙের মতো- কোন কিছু গ্রহণ করলেন না শুধু শুনে গেলেন
 ৪) রাজহংসের মতো- দুধে জল মিশিয়ে দিলে তিনি শুধু দুধটুকু গ্রহণ করেন জল টুকু ছেড়ে দেন।
 আজকে আমরা রামলীলা শ্রবণ করব যেটি রামায়ণ কাব্যগ্রন্থ রূপে খ্যাত। রামায়ণ অর্থাৎ রামের যাত্রাপথ ।যেমন উত্তরায়ন ও দক্ষিনায়ন সূর্যের যাত্রাপথ তেমনই রামায়ণ কথাটির অর্থ হল যেখানে রামের যাত্রাপথ বর্ণিত হয়েছে ।রামায়ণ বাল্মীকীর রচনা ছাড়া ও বিভিন্ন ভাষায়  রচিত হয়েছে ।এছাড়া  বিভিন্ন পুরাণ, ভাগবত, চৈতন্য চরিতামৃত গ্রন্থে রামায়ণের কাহিনী বর্ণিত আছে। রামায়ণ করুণ রসে লেখা আদর্শ পুত্র,আদর্শ স্বামী,আদর্শ রাজা,আদর্শভ্রাতা, আদর্শপিতা, আদর্শ শিক্ষক, শ্রীকৃষ্ণের অবতার ,শ্রী মর্যাদা পুরুষোত্তম রামের কাহিনী। শ্রীল ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ আমাদের বলেছেন বাল্মিকী রামায়ণ থেকে আমরা যেন রামায়ণের জ্ঞান গ্রহণ করি ।বাল্মিকীর রামায়ণ সপ্তকাণ্ড, যেখানে ২৪০০০ শ্লোক রয়েছে এবং এটি ৫০০০টি খন্ডে বিভক্ত ভারতবর্ষের ইতিহাস সূর্য এবং চন্দ্র বংশে ভগবান অবতার রুপে জন্মগ্রহণ করেন। রামায়ণে ভগবান ইক্ষাকু বংশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। রামায়ণের প্রথম পাঠ বাল্মিকী দেন লব কুশ কে। যখন লব কুশ বাল্মীকির তপোবনে ছিলেন। রামায়ণ প্রথম কথিত হয় যখন হনুমান রামের ভ্রাতা ভরতকে রামায়ণ পাঠ করে শোনান। অর্থাৎ  পুষ্পক রথে চড়ে যখন ফিরে আসছিলেন রামচন্দ্র অযোধ্যায় তখন ১৪ বছরের বনবাস এর কাহিনী বলা হয়েছিল। আর জনসমক্ষে রামায়ণ প্রথম পাঠ করা হয়  শ্রীরামচন্দ্রের উপস্থিতিতে এবং কৌশল্যা,কৈকেয়ী, সুমিত্রা , রামের ভ্রাতা ভরত লক্ষণ ,শত্রুঘ্ন  এবং আপামর অযোধ্যার জনগণের সামনে ,তখন লব কুশ রামায়ণ পাঠ করেছিলেন। ভগবান তখনই এই ধরাধামে লীলা করতে আসেন যখন দানবীয় শক্তি প্রকট হয় এবং মানুষেরা হাহাকার বেড়ে যায় ও মানুষ ভগবানের কাছে  প্রার্থনা করে ।তখনই বিপদভঞ্জন শ্রী হরি অবতার রূপে লীলাবিলাস করেন। শ্রীকৃষ্ণের দশ অবতার অর্থাৎ মৎস্য ,কূর্ম,বরাহ, নৃসিংহ বামন পরশুরাম, রাম ,বলরাম বুদ্ধ ,কল্কি এরমধ্যে সপ্তম অবতার হলেন শ্রীরাম ।দেবাসুর সংগ্রামের যখন  রাক্ষসেরা পরাজিত হচ্ছিল তখন সুমালি চিন্তা করলেন যে এমন কোন মনীষীর ঔরসে যদি কোনো  প্রভাবশালী পুত্রের জন্ম হয় তবেই রাক্ষসগণ দেবতাদের পরাজিত করতে পারবে। তাই সুমালি তার পৌত্রী নিকষা বা কেকসিকে বিশ্বশ্রবা মুনির কাছে পাঠালেন ।বিশ্বশ্রবা মনি তাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করলেনএবং তার গর্ভে চারজন পুত্র-কন্যার জন্ম হলো ।কিন্তু বিশ্বশ্রবা মুনি বলেছিলেন যে তুমি আমার কাছে এমন সময়ে সন্তান চেয়েছ যে সময় ভালো নয় এবং তার জন্য সব পুত্র পুত্রীরা রাক্ষস হবে এবং তারা মানুষ ও জনতার ত্রাসের কারন হবে। শুধু অন্তিম পুত্র হবে ধার্মিক, বংশের মুখে উজ্জ্বল করবে ।বিশ্বশ্রবার প্রথম পুত্র যখন জন্ম নিল তখন তার ছিল দশটি মাথা ,দশটি হাত এবং জন্মেই হাহাকার করে উঠেছিল সে ।তার দশ মাথা দেখে তাকে দশগ্রীব, দশানন নামকরণ করা হয়েছিল এবং সে প্রত্যেকের  ভয়ের কারণ হওয়ার জন্য তার অপর নাম হল রাবণ ।অন্যান্য ভাইরা হলেন কুম্ভকর্ণ,বিভীষণ এবং তার এক বোন শুর্পনখা। বিশ্বস্রবা মুনির আরেকজন স্ত্রীর গর্ভে জন্ম নেয়  কুবের ।যে অতি ঐশ্বর্যশালী ।যাকে দেখে তার বিমাতা ঈর্ষান্বিত হয়ে রাবন কে বলেছিলেন তার পুষ্পক রথ নেওয়ার জন্য ।সতীন পুত্রদের ঐশ্বর্য দেখে ঈর্ষান্বিত হয়ে নিকষা বা কেকসি তার পুত্রদের বলেছিলেন শক্তি অর্জনের জন্য তপস্যা করতে। তখন তারা হিমালয়ে গিয়ে যোগ সাধনা করেছিল অর্থাৎ ধ্যান-ধারণা আদি অষ্টাঙ্গ যোগ পালন করেছিল এক হাজার বছর ধরে এক পা তুলে ভীষণ তপস্যা করেছিল। এই ভীষণ তপস্যার পর রাবণ ব্রহ্মার  থেকে অমরত্বের  বর চেয়েছিল কিন্তু ব্রহ্মা বলেছিলেন আমি নিজেই অমর নই তোমাকে  কি করে এই বর দেব?তখন রাবণ বলেছিল যে রাক্ষস, খেচর কেউ যেন তাকে বধ না করতে পারে কিন্তু নিজের অহংকারবশত সে মানুষের নাম করেনি। মানব কে সে অত্যন্ত নগণ্য বলে মনে করেছিল কারণ নিজেকে শক্তিশালী ভাবত। রাবণের দ্বিতীয় ভ্রাতা কুম্ভকর্ণ যে প্রথম থেকেই ভয়ঙ্কর ছিল সে যখন বর চাইতে গেল তখন দেবতাদের মধ্যে হাহাকার পড়ে গেল, তখন কুম্ভকর্ণের জিহ্বায় সরস্বতী দেবী ভর করলেন এবং কুম্ভকর্ণ বর চাওয়ার সময় শুধু শোয়ার বর চাইলেন। তিনি বললেন "আমি শুতে চাই ",পরে তার মনে হলো আমি সমস্ত নিয়ম পালন করে এই বর চাইলাম !কিন্তু ততক্ষণে ব্রহ্মা  রথে চড়ে সেখান থেকে প্রস্থান করেছেন।  বিভীষণ বললেন জন্মে জন্মে আমি যেন শ্রী হরি ভক্তি ছাড়া আর কিছুই কামনা না করি ।
এরপরে রাবণ অনেক শক্তিশালী হয় সবার ত্রাসের কারণ হয়ে দাঁড়ায় ।সে ঊর্ধ্বলোক এ গিয়ে দেখল একজন সুন্দরী যুবতী তপস্যা করছে এবং তাকে কামনা করে ও তার কেশ স্পর্শ করে।তখন সেই সুন্দরী রমণী বললেন যে তিনি কুশধ্বজ মুনির কন্যা এবং  তিনি বিষ্ণুকে পাওয়ার জন্য তপস্যা করছিলেন। তিনি তখন রেগে গিয়ে তার হাত খড়্গে পরিণত করেন এবং রাবণ যে কেশ স্পর্শ করেছিল তা তিনি ছিন্ন করেন এবং নিজেও রাবন কে অভিশাপ দেন যে পরবর্তী জন্মে তোমার বিনাশের কারণ হব।এই বলে তিনি দেহত্যাগ করেছিলেন। 
রাবণ যখনই যেটা ইচ্ছে করছে জোর করে অন্যের কাছ থেকে নিয়ে নিয়েছে।এরপরে রাবণ কৈলাসের দিকে যাত্রা করেছিল। সেখানে নন্দীকে দেখে তার হাসি পেয়েছিল।নন্দীর মুখ বাঁদরের মতো তাই। তখন নন্দী তাকে অভিশাপ দিয়েছিলো যে "এই বাঁদর মুখ দেখে তোমার হাসি পাচ্ছে এই বাঁদর ই তোমার বিনাশের কারন হবে।" কৈলাসে মহাদেব কে সন্তুষ্ট করতে রাবণ সেখানে যায় এবং সে কৈলাস পর্বত কে তুলে ধরেছিল প্রচন্ড অহংকারবশে ,পার্বতী এতে ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন এবং তিনি রাবণকে অভিশাপ দিয়েছিলেন যে তুমি যেহেতু নারীর ভয়ের, উদ্বেগের কারণ হয়েছ সেইজন্য এই নারীই তোমার ভয়ের উদ্বেগের কারণ হবে এবং তোমার বিনাশের কারন হবে। অহংকারবশে  এত জনের অভিশাপের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল  রাবণ।
 রাবণ অহংকার বশে জোর করে স্বর্গে অপ্সরী
 রম্ভা কে ধর্ষণ করেন তখন রম্ভার পতি  নলকুবের রাবন কে অভিশাপ দেন যে নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে স্পর্শ করলেই তার মৃত্যু হবে। এজন্যই রাবণ সীতা দেবী কে কখনও স্পর্শ করতে পারেননি। এরপর রাবণ লঙ্কায় প্রাসাদ বানিয়ে অত্যাচার চালিয়ে যেতে লাগলেন ।রাবণ দশরথের পূর্বপুরুষ বা পিতামহের পিতাকে অর্থাৎ আরন্যককে হত্যা করেছিলেন তখন আরণ্যক তাকে অভিশাপ দিয়েছিলেন যে আমার বংশের ব্যক্তি তোমাকে ধ্বংস করবে। অহংকার ধ্বংসের কারণ হয়েছিল তাই শাস্ত্রে বলা হয় অহংকার করা উচিত নয়। অযোধ্যার রাজা দশরথের ১০০ জন স্ত্রী ছিলেন এর মধ্যে মুখ্য তিনজন। দশরথের ১০০জন স্ত্রী হওয়ার একটি কাহিনী আছে। পরশুরাম যখন একুশবার ক্ষত্রিয় নিধন করতে চেয়ে ছিলেন পৃথিবীতে,তখন পরশুরাম বলেছিলেন যে ক্ষত্রিয় যদি বিয়ে করতে যায় তবে তাকে তিনি তাকে হত্যা করবেন না এজন্য যতবার তিনি দশরথ কে হত্যা করতে গিয়েছিলেন ততোবারই তিনি একটি করে বিয়ে করে ফেলেছেন।
  দশরথের এক কন্যা ছিলেন শান্তা। তিনি তার বন্ধু রমপাদকে  সেই কন্যা দত্তক হিসেবে দিয়েছিলেন ।  তার মন্ত্রী ছিলেন সুমন্ত্র। তিনি চতুষ্কুমারের কাছে শুনেছিলেন যে ভগবান আসবেন দশরথের বংশে,তাই তিনি দশরথের উদ্বিগ্ন হতে নিষেধ করেছেন। দশরথের রাজত্ব ছিল অযোধ্যায়। তার রাজ্যে কখনো চুরি-ডাকাতি এসব ছিলনা, শান্তি-শৃঙ্খলা চারিদিকে বিরাজ করতো, পথে-পথে চারণ কবি গান গেয়ে যায় যেত ,ধুপ ধুনো জ্বালানো থাকতো পথে পথে। দশরথ নিজেও ছিলেন প্রজাবৎসল এবং এই গুণ সমন্বিত  রাজা ও রাজ্যের জন্য তার বংশে ভগবানের আগমন হয়েছিল ।আমরাও যদি দশরথের মতোই হইএবং আমাদের হৃদয় যদি পবিত্র হয় অযোধ্যার মত তবে ভগবানের সেই হৃদয়ে অধিষ্ঠান করবেন।সুমন্ত্র মহারাজকে রমপাদ মহারাজের ইতিহাস বলেছিলেন। রমপাদ মহারাজ একসময় যজ্ঞ করেছিলেন এবং যজ্ঞেরদান হিসেবে তার একটি গরু দুবার দুজনকে দান করা হয়ে যায় অর্থাৎ মিশে যাওয়া তে একটি গরু দান করা হয় দুবার। এবার ব্রাহ্মণরা তাতে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে, একটি গরু কি করে দুজনকে দেওয়া হয় এবং তারা বললেন যে কোনো ব্রাহ্মণ আর এখানে যজ্ঞ করতে আসবে না ।কিন্তু ত্রেতা যুগের ধর্ম ছিল যজ্ঞ। যজ্ঞ না হলে রাজ্যে দুর্ভিক্ষ আসবে এবং তা এসেও ছিল ।ফলে পশুরা মানুষদের আক্রমণ করেছিল ।মানুষদের তখন ঋষি এবং ব্রাহমণ বলেছিলেন যে, কোন  পরম বৈষ্ণবের পদরজ যদি এই রাজ্যে পড়ে তবে এই রাজ্যে দুর্ভিক্ষ দূর হয়ে বৃষ্টি শুরু হবে ।এবং সেই পরম বৈষ্ণব হলেন ঋষিশৃঙ্গ মুনি। কিন্তু এই কিভাবে তাকে আনা যাবে এই রাজ্যে অর্থাৎ অঙ্গদেশে? তারও একটি কাহিনী বর্ণিত হয়েছে।
 কাশ্যপ মুনির পুত্র ছিলেন সূর্য দেব বা আদিত্য , তিনি এই সূর্য বাআদিত্যের  মত আরেকটি পুত্রের আশায় মানস পুত্রের জন্ম দিলেন,যিনি ভীষণ তপস্যা করবেন। বিবন্ডক হলেন সেই পুত্র। সেই  তপস্যায় ভীত হয়ে ইন্দ্র হর্ষাকেকে পাঠালেন তার তপস্যা ভঙ্গ করার জন্য ।কিন্তু হর্ষা আসার উদ্দেশ্য বিবন্ডক  আগেই বুঝতে পেরেছিলেন ।তিনি তার হস্তে বীর্য ত্যাগ করে তার মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করলেন অর্থাৎ তাকে গর্ভবতী করেন। অতিরিক্ত বীর্য  হরিণের গর্ভে স্থাপন করেন এবং হরিণের  একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয় ,যার মাথায় হরিণের মতো শৃঙ্গ ছিল ।এরপর বিবন্ডক মুনি তার পুত্রকে নিয়ে তার ভাইয়ের কাছে যান কিন্তু সেখানে ভাইয়ের স্ত্রীর অত্যাচারে সেখান থেকে তিনি ফিরে এসে হিমালয়ের কোলে তপবন আশ্রম করেন।তার মনে হয়েছিলো যে এসমস্তর জন্য দায়ী স্ত্রী জাতি তাই তিনি ভেবেছিলেন কখনোই তিনি ঋষিশৃঙ্গ মুনি কে স্ত্রীলোকের এর সংস্পর্শে আসতে দেবেন না তার তপোবনে স্ত্রীলিঙ্গের প্রবেশের অনুমতি ছিল না। তাই তাকে যখন রমপাদ রাজার রাজ্যে আনার কথা ভাবা হল তখন স্ত্রীলোকের সংস্পর্শে যাতে তিনি উনি না আসেন তা রাজাকে জানিয়ে দেওয়া হল। সুন্দরী রমণীদের যেন মুনি দেখতে না পান তাই সুন্দরী রমণীদের ঋষিদের বেশ পরিয়ে  তাদেরকে নৌকোতে বসিয়ে অনেক খাদ্য দিয়ে ঋষিশৃঙ্গ মুনির আশ্রম এ পাঠিয়ে দেওয়া হল এবং গাছের মধ্যে সেই ভালো ভালো খাবার তারা লাগিয়ে রাখত। খুব প্রীত হয়েছিলেন সেইসব খাদ্যগ্রহণ করে মুনি এবং তিনি এতদিন যোগীদের সাথে কাটিয়ে ছিলেন তাই এইরকম সুবেশী ঋষিদের আগে কখনো দেখেননি এবং তাদের এত সুললিত কন্ঠে কীর্তন, গীত আগে প্রত্যক্ষ করেন নি তাই যখন তাকে এই যোগীবেশী নারীরা অঙ্গ দেশে যাওয়ার প্রস্তাব দেয় তিনি রাজি হয়ে গিয়েছিলেন। অঙ্গ দেশে তার পদরেণূ পড়ার সাথে সাথেই সেখানে অঝোর ধারায় বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। কারণ শুদ্ধভক্তের চরণ ভজনের অনুকূল। অপরদিকে যাতে বিবন্ডক মুনি রেগে না যান তার জন্য শান্তার সাথে ঋষিশৃঙ্গ মুনির বিবাহ দিয়েছিলেন। সুমন্ত্র দশরথ কে বলেছিলেন যে যদি ঋষিশৃঙ্গ  মুনির দ্বারা যজ্ঞ করা হয় তবে দশরথ পুত্র সন্তানের অধিকারী হতে পারবেন ।তখন দশরথ দূত প্রেরণ করে মেয়ে জামাইকে অযোধ্যা নিয়ে আসলেন ।যজ্ঞ থেকে একটি সুন্দর ব্যক্তি পায়েসের  পাত্র নিয়ে উঠে এসে বললেন তিনি বৈকুণ্ঠ থেকে এসেছেন এবং এই যজ্ঞের প্রসাদ যদি তিন রানী কে খাইয়ে দেওয়া হয় তবে তারা পুত্র সন্তানের জন্ম দেবেন। ভগবানের চারটি অংশপ্রকাশ অর্থাৎ বাসুদেব ,সংকর্ষণ, অনিরুদ্ধ ,প্রদ্যুম্ন । রানীদের গর্ভে এদের জন্ম হলো । কৌশল্যার গর্ভে শ্রী রাম কৈকেয়ীর গর্ভে ভরত  এবং সুমিত্রার গর্ভে লক্ষণ ও শত্রুঘ্ন জন্মগ্রহণ করেন। রাম লক্ষণ ছোটবেলা থেকেই ছায়ার মত তেমনই ভরত শত্রুঘ্ন তাই ছিলেন। ভক্তদের ও এইরকমই ছায়ার মত হওয়া উচিত ।
দশরথের পুত্ররা তার কাছে অস্ত্রশিক্ষা করেছিলেন ।এরপরে রামের যখন ১২ বছর বয়স তখন বিশ্বামিত্র মুনি এসে দশরথের কাছে প্রার্থনা করলেন যে জীবধর্ম যজ্ঞ, সিদ্ধাশ্রমে আর শান্তিপূর্ণভাবে হচ্ছে না কারণ মারীচ আর সুবাহু রাক্ষসের অত্যাচারে তা বিঘ্নিত হচ্ছে ।তিনি যদিও তার ক্রোধ বা অভিশাপে তাদের ক্ষতি করতে পারেন কিন্তু তাতে তার যজ্ঞদ্ভুত তেজ ফল থেকে তিনি বঞ্চিত হবেন। তাই তিনি দশরথের কাছে তার পুত্রদের চাইলেন। দশরথ প্রথমে রাজি না হলে বিশ্বামিত্র মুনি রেগে গেলেন কিন্তু পরে তাদের কুলগুরু বশিষ্ঠ মুনির অনুরোধে তিনি বিশ্বামিত্র মুনির সাথে রাম লক্ষণ কে যাওয়ার অনুমতি দিলেন রাক্ষস বধ করার জন্য। রামচন্দ্র কে  গঙ্গাতীরে নিয়ে এসে বিশ্বামিত্র মুনি গঙ্গার ইতিহাস বললেন। নিজের  সমস্ত অস্ত্রশস্ত্র রাম লক্ষণ এর হাতে তুলে দিলেন এবং তারা তারকাকে বোধ করলেন। এরপরে রামচন্দ্র অহল্যা, গৌতম মুনির স্ত্রীকে পাষাণ থেকে উদ্ধার করলেন ।তাই শাস্ত্রে বলা হচ্ছে গোবিন্দের কৃপায় পাষাণ হৃদয় গলে যায়। এরপরে বিশ্বামিত্র মুনি রাম লক্ষণ কে নিয়ে  অযোধ্যায় এলেন সেখানে জনক রাজার অযোনিসম্ভবা কন্যা সীতাদেবীর বিবাহের আয়োজন করা হচ্ছিল। হরধনু যে ভঙ্গ করতে পারবে তার সঙ্গে জনক রাজা কন্যার বিবাহ দেবেন। রামচন্দ্র বিশ্বমিত্রের আদেশে হরধনু ভঙ্গ করেছিলেন কিন্তু তখনও সীতা দেবীকে বিবাহ করেনি কারণ তার গুরুর আদেশ পাননি ,তার পিতৃদেবের আদেশ পাননি ।রাজা দশরথ  সুখবর পেয়ে তার বাকি দুই পুত্রকে নিয়ে মিথিলা এলেন এবং রামের সাথে সীতার ,লক্ষ্মণের সাথে উর্মিলার এবং জনক রাজার ভাই কুশধ্বজ এর অপর দুই কন্যা মাণ্ডবী ও শ্রুতকীর্তির সঙ্গে যথাক্রমে ভরত ও শত্রুঘ্নের বিবাহ হল ।
এরপর রাজা দশরথ মনস্থির করলেন যে তিনি আর রাজা থাকবেন না রামচন্দ্রের রাজ্যভিষেক করবেন।  শ্রীরামের রাজা হওয়ার কথা শুনে অযোধ্যায় সকলে খুশি হলো। বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, যুবতী মেয়ে নির্বিশেষে তারা  রাম রাজা হবে শুনে অত্যন্ত খুশি হয়েছিল। এর একটি কারণ ছিল  রামচন্দ্র এই জীবনে এক পত্নী ব্রত নিয়েছিলেন অর্থাৎ তিনি একজন পত্নী গ্রহণ করবেন। এতে যুবতী মেয়েরা খুশি হয়েছিল,কারণ দশরথের যেহেতু ১০০ জন পত্নী ছিল,তার মত তার প্রজারা ও অনেক পত্নী গ্রহণ করতেন এবং তার ফলে অনেকেরই সতীন থাকতো। কিন্তু রাম রাজা হলে সেরকম আর হবে না। উপরন্তু রাম যেমন তার পিতা ,ভাইদের দেখা শোনা করে তেমনি বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা আশা করেছিলেন যে রামের মতো তাদের পুত্ররা ও তাদের দেখবে ।এর পরে অযোধ্যা সাজানো শুরু হল রামের অভিষেক এর জন্য।
 রামায়ণ ::প্রবক্তা শ্রী অনঙ্গ মোহন দাস 


Post a Comment

0 Comments