🍀একটি ছোট শিশু,২ মাস বয়স, কথা বলতে পারে না,আর তার মা তার সাথে কথা বলছে,আর সেই শিশুটিও সেও তার মায়ের  মতো করে বিভিন্ন শব্দ করছে..বাচ্চা বাচ্চার মত শব্দ করে যাচ্ছে,আর মা মায়ের মত করে কথা বলে যাচ্ছে..

মা যে কি বলছে তা শিশু বুঝতে পারছে না,আর শিশু যে কি বলছে তা মা বুঝতে পারছে না.,কিন্তু একে অপরের সাথে কথা বলে যাচ্ছে..এই দৃশ্যটি আমরা কিন্তু প্রায় দেখি..মনে হয় কত নির্মল সম্পর্ক..তাই না?কত সরল,কত শুদ্ধ..


🍀কেনো?কারন তারা নিশর্ত ভাবে একে অপরকে মেনে নিয়েছে,তারা নিশর্ত ভাবে একে অপরকে ভালোবাসে..শিশুটি যেমন তেমন ই মেনে নিয়েছে মা,আর শিশুর কাছে মা যেমন তেমন ই মেনে নিয়েছে..


🍀কিন্তু শিশুটি যখন বড় হয়,কেজিতে পড়ে,ক্লাস ওয়ানে পড়ে,তখন স্কুল থেকে আসার পর তার মাকে অনেককিছু বলতে থাকে..ক্লাস এমন হয়েছে,বন্ধুরা এমন বলেছে ইত্যাদি ইত্যাদি বলতেই থাকে..এবং ছোট্ট ছেলে বা মেয়ে যখন কোথা থেকে এসে এইসব বলে মা-বাবাও মন দিয়ে শুনে.. এবং তাদের যে সম্পর্কটা নিশর্ত ভালবাসার উপর ভিত্তি করে,সেইটা খুব সুন্দরভাবে ফুটে উঠে..


🍀এরপরে কি হয়?ছেলে-মেয়ে যখন একটু বড় হয়,আস্তে আস্তে ছেলেমেয়েরা বাবা মায়ের কাছ থেকে লুকাতে শুরু করে..

ফোন লক করা,ছেলে-মেয়ে স্কুল থেকে এসে দরজা বন্ধ করে দেয়,যখন মা-বাবা কথা বলতে চায়,ছেলে-মেয়েরা বলে,আমাকে একটু একা একা থাকতে দেও,..কিন্তু কয়েক বছর আগেও তো এমন ছিলো না..ছেলে মেয়ে অপেক্ষা করতো যে কখন বাড়িতে যাবো,আর বাবা-মাকে সব খুলে বলবো..আর এখন বলতে চায় না...কেনো এমন হয়?


🍀অনেক কারন আছে..একটা কথা আছে ইংরেজিতে..hate the sin,not the siner

পাপকে ঘৃনা করো পাপীকে নয়.যদিও ঘৃনা শব্দটি অনেক কড়া শব্দ আমাদের কাছে,কিন্তু যদি সহজ করে বলা যায় যে,পাপকে তুমি অপছন্দ করো,কিন্তু পাপীকে নয়..


🍀সম্পর্কটার ফাটল ধরে,অনেক কারনে..কিন্তু একটা মূখ্য জিনিস সম্পর্কটায় ফাটল ধরতে সাহায্য করে,আর সেইটা মা -বাবা বা সন্তান দুইজনের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য..সেইটা হচ্ছে,যখন সন্তান বা মা,বাবা তাদের কোন অসুবিধার কথা বলে এবং উত্তর আসে,"তুমি ভুল".,তখনি সমস্যাটা হয়..


🍀পার্থক্যটা কি দাড়ালো?তুমি ভুল একটা জিনিস আর তুমি যেইটা করেছো,সেইটা ভুল..দুইটা আলাদা বিষয়.."তুমি ভুল",You are wrong বা What you did  was wrong,মানসিকতাটা পুরো বিপরীত,.আমি তোমাকে মানলাম কিন্তু তুমি যেইটা করেছো তা মানতে পারলাম না.আর আরেকটা হচ্ছে- তুমি ভুল,ব্যক্তি ভুল.


🍀আর যখন একজন ব্যক্তির মনে এই সন্দেহ জাগে যে,যাকে আমি ভালবাসি,সে আমাকে গ্রহন করতে পারছে না,তখন ই দূরত্বটা সৃষ্টি হয়.আমাদের ভক্তসমাজে দূর্ভাগ্যবশত এই সংস্কৃতি চলে এসেছে.,hate the sin,hate the sinner.পাপকে ঘৃনা করো,পাপীকে ঘৃনা করো.এই সংস্কৃতিটা চলে আসার ফলে দূভার্গ্যবশত অনেকসময় আমাদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়,ভুল হয়.


🍀তাই যখন আমরা যার কাছে যাবো,সে যদি আমাকে গ্রহন করে,এবং আমি যে ভুল যেইটা করেছি সেইটাকে,বুঝিয়ে আমাকে সংশোধন করে দেয়,তখন তার কাছে আমি বারবার যাবো.


🍀দেখুন সবাই কিন্তু গ্রহনযোগ্যতা চায়.আমরা সবাই চাই আশ্রয়.যার কাছে বড় হয়েছি,স্বাভাবিক ভাবে আমরা আশা করতে পারি যে,উনার কাছে আমার গ্রহনযোগ্যতা থাকবে.


🍀আধাত্মিক পরিবেশে আমরা যদি বড় হতে চাই,গড়ে উঠতে চাই আমার ভূমিকাও যেন থাকে এতে.সবাই আমার জন্য আধাত্মিক পরিবেশ তৈরী করবে,আমার সেইখানে কোন অবদান থাকবে না,এইটা কোনদিন হবে না.


🍀আমরা প্রত্যেকেই যখন আধাত্মিক পরিবেশ গড়ার জন্য ভূমিকা পালন করবো,সেইখানেই আধাত্মিক পরিবেশ গড়ে উঠবে.নচেৎ নয়..তার মানে কি,এইখানে যারা আছে,তারা প্রত্যেকেই কিন্তু কারো না কারোর অনুপ্রেরণা.প্রত্যেকেই.

কেউ না কেউ আপনাকে ভালবাসে,আপনাকে শ্রদ্ধা করে,আপনার থেকে কিছু শিখার চেষ্টা করে.


🍀প্রত্যেকটি ভক্ত সে কিন্তু অন্য ভক্তের পাশে দাড়াতে পারে,অন্যকে সাহায্য কর‍তে পারে,অন্যকে অনুপ্রেরণা দিতে পারে.এবং তা করছে.


🍀ভগবান এই পৃথিবীকে এমনভাবে সৃষ্টি করেছে যে,কেউ না কেউ আপনার পাশে আছে.এইটা দূর্ভাগ্য যে,যখন আমরা মাঝে মাঝে মনে করি,আমার পাশে কেউ নেই.এইটা ভুল ধারনা..বাস্তবটা হচ্ছে,কেউ না কেউ আপনার অনুপ্রেরণা,তার মানে আপনিও কারো অনুপ্রেরণা.আপনিও কারো আশ্রয়দাতা.আপনিও কাউকে কৃষ্ণভক্তিতে অনুপ্রেরণা দেন.


🍀তার মানে হচ্ছে-যখন কোন ভক্ত,আপনার কাছে আসবে,কেউ যখন তার অসুবিধার কথা বলে,আমাদেরকে এই ভাগটা করতে হবে যে,ও যেইটা ভুল করেছে, সেইটা তুমি অপছন্দ করো,এবং তুমি ওর পাশে দাড়াও.ওকে বুঝাও.ঠিক যেমন আমি আশা করি.


🍀কারন একটা জিনিস রয়েছে যে-আমি যখন ভুল করি,তখন আমি চাই সবাই আমাকে ক্ষমা করুক,এবং সেই ভুল অন্যকেউ করলে আমি বিচার চাই.


🍀hate the sin not the sinner, এই মনোভাব নিয়ে আমরা যখন  ভক্তের পাশে দাড়াবো,তখন পরিবেশটা অন্যরকম হবে.


🍀আধাত্মিক পরিবেশ তখন ই সৃষ্টি  হবে,যখন পরিবারের প্রত্যেকটা সদস্য মনে করে যে,আমি এই পরিবারের সদস্য.আমার গ্রহনযোগ্যতা আছে.আমি যেইরকম আমাকে ঠিক সেইভাবেই গ্রহন করে,পরে ধীরে ধীরে আমার মধ্যে যে খারাপ দিকগুলো আছে,তা পরিশুদ্ধ করে.


🍀কিন্তু আমাদের মধ্যেই যদি এইরকম একটা ভাব থাকে যে,"না আমি উনাকে কিছু বলতে পারবো না,বল্লেই আমাকে আর পছন্দ করবে না,ভালোবাসবে না,আমাকে আর ডাকবে না, আর মানবে না,আমাকে আর গ্রহন করবে না.আর এইরকম পরিবেশে যদি আমরা বড় হই,আমরা যদি ভক্ত হওয়ার চেষ্টা করি,তাহলে তো অসুবিধা.দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার মত.


🍀কিন্তু প্রত্যেকটা ভক্ত এই পরিবেশ পাক,যে সে যখন ভুল করবে,এবং সে যখন আমার কাছে আসবে,আপনি ওইভাবে ওর সাথে ব্যবহার করুন,যেইরকম ব্যবহার আপনি চাইছেন,নিজের জন্য.সেইরকম ব্যবহার করুন.দেখবেন পরিবেশটা অন্যরকম হবে.


🍀একটা হচ্ছে ভগবতভক্তির এগিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের যে নববিধা ভক্তি রয়েছে তা পালন করা,আর আরেকটা হচ্ছে বাস্তব পদক্ষেপ.যা আমাদের নিতে হবে..আধাত্মিক পরিবেশ গড়ার দায়িত্ব আমাদের সবার,যা আমাদের প্রত্যেককেই নিতে হবে.


🍀আর এইরকম যখন আমাদের পরিবেশ আসবে,দেখবেন জপটা কেমন হবে.কত হালকা,কত শান্ত মনে আপনি জপ করতে পারবেন.


🍀আর এই পরিবেশটা আমাদের দরকার.খুব খুব দরকার.


-শ্রীপাদ নাড়ুগোপাল দাস প্রভু (জপক্লাস,৩০-০৩-২০২১)

Post a Comment

0 Comments