>>> গঙ্গা থেকে অভিন্ন পদ্মা নদীর কথা <<<

(Padma River and Ganga River)

[ নিত্য আনন্দের পথ নির্দেশ ]


পরমেশ্বর ভগবানের পাদপদ্ম থেকে উৎপন্ন হয়ে গঙ্গাদেবী সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডে বহমান। গঙ্গাদেবীর মাহাত্ম্য কারো অজানা নয়। আমরা সকলেই গঙ্গা-স্নান করি, গঙ্গা জল মস্তকে ধারণ করি, পূজা-পার্বনে গঙ্গাদেবীকে আহ্বান করি, পূজার উপকরণ পবিত্র করার উদ্দেশ্যে গঙ্গাজল অর্পণ করি। গঙ্গাদেবীর মাহাত্ম্য অপরিসীম- এ কথা আমরা অনেকেই জানলেও পদ্মানদীর মাহাত্ম্য সম্বন্ধে আমরা অনেকেই

জানি না।

পদ্মাও সেই একই গঙ্গার জলধারা হলেও মানুষ কেন গঙ্গার মতো পদ্মায় তর্পন-ক্রিয়া, পিণ্ডদান, স্নানাদি করে না? পদ্মাকে লোকে কেন গঙ্গার মতো পবিত্র মনে করে না? এর শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা কি? পদ্মানদী কেন উপেক্ষিত? এমন প্রশ্নের উদয় হওয়া খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু এসব প্রশ্নের যথার্থ উত্তর কী? তা আমাদের সকলেরই জানা দরকার। নতুবা বঞ্চিত হতে হবে অনেক কিছু থেকে। নিম্নে এ সম্বন্ধে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো:


১. গঙ্গার উৎপত্তি

রামায়ণ অনুসারে গঙ্গার উৎপত্তি : পুরাকালে অযোধ্যায় সগর নামে এক রাজা ছিলেন। কেশিনী ও সুমতি নামে তার দুই রানী ছিল। পুত্রকামনায় তিনি একবার তপস্যার জন্য স্ত্রীদের নিয়ে হিমালয়ে যান। মহর্ষি ভৃগুর বরে তার জ্যেষ্ঠা রানী কেশিনীর গর্ভে অসমঞ্জ ও সুমতির গর্ভে ষাট হাজার পুত্রের জন্ম হয়। পুত্রগণ বয়ঃপ্রাপ্ত হলে, রাজা সগর অশ্বমেধ যজ্ঞ করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। নিয়মানুযায়ী যজ্ঞের অশ্বকে (ঘোড়া) ছেড়ে দেয়া হলে, দেবরাজ ইন্দ্র তা চুরি করে নিয়ে যান। তখন রাজা সগরের পুত্রগণ সমগ্র পৃথিবীজুড়ে তন্ন তন্ন করে অশ্ব খুঁজতে থাকেন। কিন্তু কোথাও অশ্বের দেখা মেলে না। শেষ পর্যন্ত পাতাললোকে কপিল মুনির আশ্রমের সামনে তারা অশ্বটি বাঁধা অবস্থায় দেখতে পান। তখন কপিল মুনিকেই তারা চোর ভেবে তাকে শাস্তি দিতে উদ্যত হন এবং কপিল মুনির মুখোমুখি হলে তাঁর তেজোময় হুঙ্কারে সগরের ষাট হাজার পুত্র সবাই সেখানে ভষ্মীভূত হন। এদিকে দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পরও পুত্রদের আগমন সংবাদ না পেয়ে রাজা সগর তার পৌত্র অংশুমানকে প্রেরণ করেন। তিনিও অনুসন্ধান করতে করতে কপিল মুনির আশ্রমে এসে উপনীত হন। এখানে তিনি পিতৃব্যগণের দুর্গতির বিষয়ে অবগত হন এবং তাদের উদ্ধার করার জন্য গঙ্গামাতাকে ভূতলে অবতরণ করার কথা জানতে পারেন।

তিনিই সে যজ্ঞাশ্ব ফিরিয়ে এনে যজ্ঞ সমাপ্ত করেন। এবার রাজা সগর পুত্রদের উদ্ধার কামনায় গঙ্গামাতাকে ভূতলে অবতরণ করানোর উদ্দেশ্যে তপস্যা শুরু করেন। কিন্তু বিফল হন। তিনি তার জীবদ্দশায় তো বটেই, এমনকি তার পুত্র অসমঞ্জ, পৌত্র অংশুমান, প্রপৌত্র দিলীপ কেউই গঙ্গা দেবীকে ভূতলে অবতরণ করাতে সক্ষম হননি।

অবশেষে বহু বছর কঠোর তপস্যা করে দিলীপের পুত্র ভগীরথ ব্রহ্মাজীকে সন্তুষ্ট করে গঙ্গাকে ভূতলে অবতরণ করতে রাজি করান। মহাদেব শিব স্বয়ং গঙ্গাদেবীকে তাঁর জটায় ধারণ করে অবতরণে সহায়তা করেন। ভগীরথ শঙ্খবাদ্য সহযোগে পুরোভাগে যাচ্ছিলেন, আর তাকে অনুসরণ করে মাতা গঙ্গাদেবী অগ্রসর হচ্ছিলেন। এভাবে গঙ্গাদেবী ভারতবর্ষ ভ্রমণ করে সমুদ্রপথে পাতালে গিয়ে ষাট হাজার সগরপুত্রকে উদ্ধার করেন।


২. পদ্মার উৎপত্তি

কিন্তু এর মাঝে কিছু ঘটনা ঘটে যায়। বৃহদ্ধর্ম পুরাণে এ সম্পর্কে বিস্তৃত বর্ণনা আছে। পথিমধ্যে এক সময় রাজা ভগীরথ পরিশ্রান্ত হওয়ায় এবং অশ্ব ও সারথিকে পরিশ্রান্ত দেখে শঙ্খ বাজানো বন্ধ করেন। কিন্তু ঠিক সে সময় মহামুনি জহ্নু এক শ্রুতিমধুর শঙ্খধ্বনি করতে থাকেন। তা শ্রবণ করে গঙ্গাদেবী জহ্নু মুনির দিকে গমন করতে থাকেন। এদিকে রাজা ভগীরথ বিশ্রামের পর পুনরায় শঙ্খধ্বনি আরম্ভ করলে গঙ্গাদেবী কিছুদূর গমনের পর আরেক শঙ্খধ্বনি শ্রবণ করে বিস্মিত হন। পরে তিনি জহ্নু মুনির শঙ্খধ্বনির কথা বুঝতে পেরে ভগীরথকে বলেন, “হে মহাভাগ, আমাকে যখন নিজ আশ্রমে নেওয়ার জন্য জহ্নুমুনি অন্য শঙ্খধ্বনি করেছেন, তখন আমি তাঁরও সম্পূর্ণ আশ্রম প্লাবিত করবো। তুমি সেদিকে চলো।”


ভগবতী গঙ্গা একথা বললে রাজা অগ্রসর হন এবং দেবীও প্রবল বেগে তাঁর অনুগমণ করতে থাকেন। এদিকে জহ্নুমুনি তা জানতে পেরে ব্রহ্মতেজ স্মরণ করে মাটিতে ডানহাত স্থাপন করেন। মহামুনি জহ্নু তাঁর ডান হাতের তালুতে নিয়ে সমস্ত গঙ্গাজল পান করতে থাকেন। তখন পৃথিবীতেসহ ঊর্ধ্বলোকের চারিদিকে হাহাকার রব ওঠে। গঙ্গাদেবী নিজমূর্তি ধারণ করে মুনিশ্রেষ্ঠের কাছে উপস্থিত হন। দেবী বলেন, “হে ব্রহ্মণ মহাভাগ, আমি আপনাকে ব্রহ্মতেজসম্পন্ন বলে জানি। আমি সকলের হিতাকাক্ষিণী। আমার অপরাধ মার্জনা করুন। আমি আপনার কন্যা হলাম। আমাকে এখন মুক্ত করুন। তাহলে সগর রাজের পুত্রগণ সদ্গতি প্রাপ্ত হবেন। ভগীরথের তপস্যা সার্থক হবে। লোকে আমাকে জহ্নুমনির কন্যা বলে পবিত্র ‘জাহ্নবী’ নামে কীর্তন করবে এবং আপনার পরম পবিত্র কীর্তি জ্বাজ্বল্যমান থাকবে।” তখন মহাতপা জহ্নুমুনি গঙ্গার কাতরোক্তি শুনে নিজ জানুদেশ বিদীর্ণ করে গঙ্গাকে মুক্ত করেন। তখন চতুর্দিক থেকে ‘জয় জাহ্নবী!’, ‘জয় জাহ্নবী!’ পূণ্যরব ধ্বনিত হয়। রাজা আবার কিছুদূর গিয়ে তার রথের ঘোড়াগুলোকে বিশ্রাম দেয়ার জন্য থেমে যান। সে সময় মহাত্মা জহ্নুমুনির কন্যা পদ্মাবতী গঙ্গাদেবীকে নিয়ে অগ্নিকোণের দিকে অনেকটা পথ চলে যান।

রাজা ভগীরথ জেগে উঠে গঙ্গাকে অন্যদিকে যেতে দেখে অতি-উচ্চনাদে শঙ্খ বাজাতে থাকেন। শঙ্খধ্বনি শুনে দেবী বিস্মিত হয়ে রাজাকে দূরে শঙ্খধ্বনি করতে দেখে পদ্মাবতীর ওপর রুষ্ট হন এবং ফিরে এসে রাজার অনুগমন করেন। অন্যদিকে গঙ্গার ক্রোধের ফলে জহ্নুমুনির কন্যা পদ্মাবতী বিস্তীর্ণ নদীমূর্তি ধারণপূর্বক পূর্বদিকে গমন করে সাগরে মিলিত হন।

ফলে গঙ্গার ধারা দু’ভাগে বিভক্ত হয়। একটি ভাগীরথী গঙ্গা নামে ভারতের নদীয়া, কোলকাতা হয়ে সাগরে মিলিত হয়। অন্যটি রাজশাহী জেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে পদ্মা নাম ধারণ করে। গোয়ালন্দে পদ্মানদী যমুনা (ব্রহ্মপুত্র)-র সাথে মিলিত হয়ে অবশেষে মেঘনা নাম ধারণ করে বঙ্গোপসাগরে সাথে মিলিত হন। এ সম্পর্কে আরেকটি প্রাচীন প্রবাদ আছে : পদ্মা নামক এক ঋষি গঙ্গাদেবীকে পূর্বদিকের পথে চালিত করেন বলেই তার নাম পদ্মা হয়েছে। আবার আরেক আখ্যানে বর্ণিত আছে যে, গঙ্গাদেবী ব্রহ্মপুত্র নদের সাথে মিলিত হওয়ার জন্য সেদিকে আকর্ষণ অনুভব করেছিলেন। যেহেতু ভগীরথ সগর বংশ উদ্ধারের জন্য এ ধরাধামে গঙ্গাদেবীকে আহ্বান করেছিলেন, তাই মূল উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত হওয়ায় ভগীরথ তাঁকে অভিশাপ দিয়েছিলেন যে, যে স্থান থেকে গঙ্গাদেবী পূর্বদিকে ধাবিত হয়েছেন, সে অংশে পুণ্যলাভের জন্য কেউ ¯স্নান করবে না এবং তার পাপনাশি শক্তিও থাকবে না।

তাই আমরা দেখতে পাই, শত শত মাইল দূর থেকে মানুষ পাপমোচনের জন্য গঙ্গাদেবীর আশ্রয় নিলেও কেউ পদ্মায় স্নান করে না। এমনকি পদ্মার তীরের লোকজনও গঙ্গায় গিয়ে স্নান করে আসে। কিন্তু অভিশপ্ত সে পদ্মা নদী যে পুনরায় শ্রীমন্মহাপ্রভুর কৃপায় স্বমহিমায় উদ্ভাসিত হয়েছেন, তা আমরা অনেকেই জানি না। কলিযুগের তমসাচ্ছন্ন ঘোর পাপী জীবকে উদ্ধারের জন্য শ্রীশ্রীগৌরহরি আবির্ভূত হয়েছিলেন এ নবদ্বীপে। তিনি চরণ স্পর্শের মাধ্যমে পদ্মাবতীর অভিশাপ মোচন করে নরোত্তম দাস ঠাকুর মহাশয়ের জন্য তার নিকট কৃষ্ণপ্রেম গচ্ছিত রেখেছিলেন।


৩. পদ্মার অভিশাপ মোচন

যৌবনে ধনোপার্জন ছলে মহাপ্রভু শ্রীগৌরসুন্দর পূর্ববঙ্গে আসেন। ভ্রমণ করতে করতে তিনি পদ্মা নদীর তীরে উপস্থিত হন। স্বচ্ছসলিলা পদ্মানদীকে দর্শন করে শ্রীমন্মহাপ্রভুর মনে মহানন্দের তরঙ্গ প্রবাহিত হয়। তখন তিনি ভক্তগণকে সঙ্গে নিয়ে পদ্মাজলে অবগাহন (স্নান) করেন। শ্রীগৌরসুন্দরের চরণস্পর্শে সেদিন থেকে ভাগ্যবতী পদ্মানদী সর্বলোক পবিত্র করার শক্তি প্রাপ্ত হন। শ্রীচৈতন্যভাগবতে এ সম্পর্কে আছে,

দেখি পদ্মাবতী প্রভু মহা-কুতুহলে।

গণসহ ¯স্নান করিলেন তান জলে ॥

ভাগ্যবতী পদ্মানদী সেই দিন হৈতে।

যোগ্য হৈলা সর্বলোক পবিত্র করিতে ॥

(শ্রীচৈতন্যভাগবত আদি ১৪/৬০-৬১)

শ্রীচৈতন্যমঙ্গলে লোচন দাস ঠাকুর লিখেছেন-

পদ্মাবতী -স্নান কৈল যে আছিল বিধি।

চরণ পরশে গঙ্গা-সম ভেল নদী ॥

শ্রীমন্মহাপ্রভু ভক্তগণসহ পদ্মানদীতে স্নান করেন, পদ্মার জন্য সেদিন বড়ই শুভদিন। বহু সৌভাগ্যের ফলে মহাপ্রভুর রাতুল চরণস্পর্শে পদ্মাবতী তীর্থযোগ্যা হন, গঙ্গার ন্যায় পাপনাশকারিণী ও পূজিতা হন। কলি যুগের কলুষিত জীবকে পবিত্র করার অধিকার পেয়ে তিনি ধন্যা হলেন।

এ প্রসঙ্গে শ্রীমুরারীগুপ্তের কড়চায় (১/১১/১২-১৪) দেখা যায়-

গঙ্গাতুল্যা পাবনী সা বভূব সুমহানদী।

পদ্মাবতী মহাবেগা মহাপুলিন সংযুতা ॥

কুম্ভীরৈর্মকরৈর্মীনৈ বিদ্যুদ্ভিরিব চঞ্চলেঃ।

শোভিতা সজ্জনা বাসরি রাজিত মহত্তট ॥

বিশ্বম্ভর -স্নানধৌত জলৌঘাঘহরা শুভা।

মহাতীর্থতমা সাহভূত্তত্তীরে নিবসন্ হরিঃ ॥

অনুবাদ: শ্রীমন্মহাপ্রভুর সময় থেকেই পদ্মাবতী নদী গঙ্গানদীর ন্যায় পাপহরা, মহাপুলিন যুক্ত অতীবসুন্দর মহানদীরূপে পরিগণিত হতে লাগলো। পদ্মাবতীর জলরাশিতে কুমীর, মকর ও মৎস্যকুল বিদ্যুতের ন্যায় চঞ্চল হয়ে শোভিত হতে লাগল। তার উত্তম তটে শ্রীগৌরচন্দ্র নিজজনকে সাথে নিয়ে নিবাস করেন। মহাপ্রভু বিশ্বম্ভর অবগাহন ও অঙ্গধৌত করার কারণেই পদ্মাবতীর জলরাশি পাপনাশক ও কল্যাণকর হয়ে মহাতীর্থে পরিণত হয়েছে। পদ্মাতীরে স্বয়ং শ্রীগৌরহরি কিছুকাল অবস্থানও করেন।


এ প্রসঙ্গে শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর শ্রীচৈতন্যভাগবতের অনুভাষ্যে লিখেছেন::


গৌরসুন্দর স্নান করা মাত্র পদ্মাবতী নদী সৌভাগ্যবতী ও লোকপাবনী হন। বিষ্ণুপাদ হতে উদ্ভূত গঙ্গা লোকপাবন ও পাপনাশত্বের জ্ঞাপক হলেও পদ্মাবতী নদীতে সেরূপ পতিতপাবনত্ব গুণ আরোপিত হতো না; কিন্তু যখন পদ্মায় স্বয়ং মহাপ্রভু সাক্ষাৎ অবগাহন ও স্নান করলেন, তখন মহাপ্রভুর শ্রীচরণ স্পর্শে সেই থেকে তাঁরও কলিকলুষহারিণী গঙ্গার ন্যায় নিখিল-লোক-পাবনত্ব আরোপিত হলো।

তদুপরি শ্রীমন্মহাপ্রভু পদ্মার তীরে অবস্থান করে বঙ্গদেশের ছাত্রদের কিছুকাল শিক্ষাদান করেন। নিমাই পণ্ডিতের নাম শোনামাত্র চারপাশ থেকে ছাত্রগণ সবাই তাঁর কাছে পড়ার জন্য আসতে থাকে। দু’মাসের মধ্যে শ্রীমন্মহাপ্রভুর কৃপায় পরম সৌভাগ্যবান পূর্ববঙ্গবাসী ছাত্রগণ মহাপণ্ডিতে পরিণত হন।

হেন কৃপাদৃষ্ট্যে প্রভু করেন ব্যাখ্যান।

দুই মাসে সভেই হইল বিদ্যাবান ॥

(শ্রীচৈতন্যভাগবত আদি ১৪/৯৫-৯৬)

মহাপ্রভু বর্তমান রাজবাড়ি, ফরিদপুর, মানিকগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জের পদ্মাতীরবর্তী অঞ্চলগুলোতে টোলখুলে পড়াতেন। এসব অঞ্চলের প্রাচীন মন্দির ও বিভিন্ন স্মৃতিনিদর্শন সেকথাই প্রমাণ করে। রাজবাড়ি জেলার বেলগাছিতে শ্রীশ্রীগৌরনিতাইয়ের একটি সুপ্রাচীন মন্দির রয়েছে। প্রচলিত বিশ্বাস এই যে, মহাপ্রভু এখানে কিছুদিন বসবাস করে ছাত্রদের বিদ্যাশিক্ষা করিয়েছিলেন। এছাড়া মুন্সীগঞ্জের পঞ্চসারেও প্রাচীন মন্দির রয়েছে। এখানেও মহাপ্রভুর টোল খোলার কথা শোনা যায়।

সন্ন্যাস গ্রহণের পর মহাপ্রভু একবার নিত্যানন্দসহ পদ্মার তীরে এসে উচ্চকণ্ঠে নাম-সংকীর্তন করেন এবং তারপর তিনি পদ্মার কাছে কৃষ্ণপ্রেম গচ্ছিত রাখেন ভবিষ্যতে তাঁর মহান ভক্ত নরোত্তম দাস ঠাকুরকে তা দেওয়ার জন্য। কালক্রমে রাজশাহীর খেতুরীতে আবির্ভূত হন শ্রীনরোত্তম ঠাকুর। নিত্যানন্দ প্রভুর কৃপায় স্বপ্নযোগে পূর্ববৃত্তান্ত জানতে পেরে নরোত্তম ঠাকুর অচিরেই পদ্মায় অবগাহন করেন। পদ্মাদেবী উচ্ছসিত হয়ে মহাপ্রভুর দেয়া সেই প্রেম-সম্পদ ঠাকুর মহাশয়কে দান করেন।

তখন থেকেই নরোত্তম দাস ঠাকুরের মতো মহান ভক্তগণ অভিন্ন গঙ্গাজ্ঞানে পদ্মানদীতে গঙ্গাস্তুতি পাঠপূর্বক স্নান করেন। সুতরাং পদ্মায় স্নান করা গঙ্গাস্নানের মতোই মহত্ত্বপূর্ণ।

গঙ্গায় স্নান করার জন্য হাজার হাজার মানুষ ছুটে চলেন, কিন্তু পদ্মা তার থেকে অভিন্ন হওয়া সত্ত্বেও সেভাবে মানুষ এখনও তাঁর মাহাত্ম্য অবগত হতে পারছে না। যারা জানেন, তারাই কেবল অভিন্ন গঙ্গাজ্ঞানে পদ্মানদীতে ¯স্নান করেন। মহাপ্রভুর কৃপায় গঙ্গাস্নানের চেয়েও পদ্মাস্নান অধিক মাহাত্ম্যপূর্ণ। তবে কেউ যদি বৈষ্ণবচরণে অপরাধী হন, তবে তিনি পদ্মাদেবীর কৃপা থেকে নিশ্চিত বঞ্চিত হবেন। শ্রীচৈতন্যমঙ্গলগ্রন্থে আছে-

বিশ্বম্ভর-স্নানে পূতাভেল পদ্মাবতী।

সর্বলোক-পাপ হরে স্নান করি তথি ॥

প্রেমভক্তি হয় কৃষ্ণচরণারবিন্দে।

স্নান করে কভু যদি বৈষ্ণব না নিন্দে ॥


🙏🙏 হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।

হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।। 🙏🙏


👏👏 নিত্য-নতুন সনাতন ধর্মীয় পোস্ট

পেতে লাইক - শেয়ার করে সাথে থাকুন 👏👏

Post a Comment

0 Comments