🌼🌼🌼ব্যাসদেব🌼🌼🌼
✨🌼একসময় ব্যাসদেব সূর্যোদয়ের সময়,ভোরবেলা,সরস্বতী নদীতে স্নান করে নদীর তীরে উপবিষ্ট হয়ে ধ্যানস্থ হলেন।
যারা যারা চারধামে গিয়েছেন-'কেদারনাথ,বদ্রীনাথ,গঙ্গোত্রী,যমুনেত্রী;' এই চারধামের অন্যতম বদরীনাথ...অপুর্বস্থান।
☘আমার সেখানে দুইবার যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল।সরস্বতী নদীর জল এত পরিষ্কার,আমি যখন প্রথমবার যাই আমি একদম চমকে গিয়েছিলাম।মনে হচ্ছে ছবি,নীল জল...এত স্বচ্ছ!!! সেখানে কোনো দূষণ নেই আর বরফ! গরমকালেও বরফ থাকে। সেখানের ৬মাস বন্ধ থাকে।
🌼🌼সেখানে ব্যাসদেবের বাসস্থান।সূর্যোদয়ের পূর্বে উনি সেখানে স্নান করে ধ্যানস্থ হলেন।ধ্যানস্থ হয়ে তিনি কলিযুগের বদ্ধজীবদের কথা চিন্তা করতে লাগলেন।
☘স্বাভাবিকভাবে প্রত্যেকটি যুগে কালের প্রভাবে কিছু কিছু বিষয়,পরিস্থিতি,মানুষের চিন্তাধারা;সবকিছু পরিবর্তন হয়।
🌼🌼ব্যাসদেব যেহেতু মুক্তপুরুষ ছিলেন,তিনি অতীত এবং ভবিষ্যত স্পষ্ট দর্শন করেছিলেন।স্বাভাবিকভাবে যখন মহান ভক্ত অন্য জীবদের দুঃখ দুর্দশা বুঝতে পারেন এবং দেখেন,এতে চিন্তিত হন।কীসের জন্য চিন্তা?
একটা বিষয়ের চিন্তা।--"যে বিষয়ে বদ্ধ জীব এত দুঃখ কষ্ট পাচ্ছে,তা থেকে সে নিস্তার কি করে পাবে।"...অন্য কোনো চিন্তা নেই।যখনই কোনো ভক্ত অপর কোনো ব্যাক্তিকে দুঃখের মধ্যে থাকতে দেখে,সে ভগবানের কাছে প্রার্থনা করে-যাতে,যে ভক্ত বা জীব দুঃখের মধ্যে আছে,তা থেকে যেন বেরিয়ে আসতে পারে।
☘ব্যাসদেব দেখলেন কলিযুগের মানুষের এত দুরবস্থা;কেননা এরা বিশেষভাবে বা গভীরভাবে অনিত্য বিষয়ের উপর আসক্ত। তারা জানা সত্ত্বেও অনেক আসক্ত হয়ে পড়ে।সেজন্য ব্যাসদেব অত্যন্ত চিন্তিত হয়ে পড়েন।শ্রীমদ্ভাগবতের বর্ণনায় বলা হচ্ছে ব্যাসদেব কিভাবে দিব্যদৃষ্টির মাধ্যমে জড় জগতের অধঃপতন দর্শন করলেন।প্রথমেই কি গুন দেখলেন?--"আমরা হচ্ছি অশ্রদ্ধাবান।"
✨শ্রদ্ধা শব্দে বিশ্বাস কহে সুদৃঢ় নিশ্চয়।
কৃষ্ণভক্তি হৈলে সর্বকর্মকৃত হয়।।✨
একে বলে শ্রদ্ধা।মানে?--কৃষ্ণভক্তি করলে আর কোনোকিছু করার দরকার হয় না...কোনো কিছুই না।পুর্ণবিশ্বাস-"অবশ্য রক্ষিবে কৃষ্ণ বিশ্বাস পালন।"এই পুর্ণবিশ্বাসকেই বলে শ্রদ্ধা।
☘ব্যাসদেব দেখলেন এদের মধ্যে কোনো শ্রদ্ধা নেই।
🍁🍁একবার তমালকৃষ্ণ মহারাজ বোম্বেতে ছিলেন এবং তখন উনার জরুরি অপারেশনের দরকার।প্রভুপাদের কাছে গিয়েছে অনুমতির জন্য,অপারেশন নিতে পারবে কি না।প্রভুপাদ অনুমতি দিয়েছিলেন।তমালকৃষ্ণ মহারাজ যখন হসপিটালে ভর্তি হয়ে গিয়েছেন,প্রভুপাদ মন্দিরে ছিলেন এবং ভাবছেন ইন্ডিয়াতে হয়তো অপারেশন করাটা ঠিক হবে না।তমালকৃষ্ণ মহারাজের অপারেশনকে বাধা দিতে প্রভুপাদ যখন গাড়িতে চেপে হসপিটালে গেলেন,দেখলেন তিনি অপারেশন থিয়েটারে চলে গেছেন,প্রায় শুরু হয়ে গেছে।প্রভুপাদ ভাবলেন অপারেশন যখন শুরু হয়ে গেছে আর কিছু করার নেই।
তো প্রভুপাদ তমালকৃষ্ণ মহারাজের জন্য বুক করা নির্দিষ্ট কেবিনে বসে ছিল। অপারেশন শেষে তমালকৃষ্ণ মহারাজ যখন সেই নির্দিষ্ট কেবিনে এসে প্রভুপাদকে দেখেন,তিনি অবাক হয়ে গিয়েছেন।"প্রভুপাদ আপনি!!"প্রভুপাদ বললেন-"হ্যা...আমি ভাবছিলাম তুমার অপারেশনটা আমেরিকায় করলে ভালো হতো।কিন্তু এখানে আসার পর দেখলাম অপারেশন শুরু হয়ে গিয়েছে। তমালকৃষ্ণ মহারাজ বললেন-"প্রভুপাদ,হসপিটালে যখন আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছিল,আমি একটা স্বপ্ন দেখেছি। আমি আপনাকে বলতে পারি আমার স্বপ্নের কথা?
--"হ্যা,বলতে পারো।"
তমালকৃষ্ণ মহারাজ বলছেন-"সমস্ত গুরুপরম্পরা এক জায়গায় ছিল;ষড়গোস্বামীগণ,সমস্ত আচার্যবৃন্দ। তাদের যে সভা-সমস্ত পুর্বতন আচার্য একসাথে,সে সভাতে যখন আপনি প্রবেশ করেছেন,সমস্ত আচার্যবৃন্দ আপনাকে জিজ্ঞাস করছেন-"কলিযুগের মানুষদের মধ্যে তুমি কেমন কৃষ্ণনাম প্রচার করছো?তাদের কি অবস্থা?"
আপনি প্রথমেই উত্তর দিয়েছিলেন-"কলিযুগের মানুষের কোনো শ্রদ্ধা নেই...অধৈর্য্য এরা।শাস্ত্র অধ্যায়ন করতে চায় না,সাধন ভজন করতে চায় না।কিন্তু একটি গুন এদের ভালো,সব গুন ভালো না,তবে একটা গুনই ভালো"...কি?_--"তারা আমার প্রতি আসক্ত।আমি যা বলি ওরা করে।"
☘☘এই একটি গুন যদি আমাদের থাকে-ভগবানের শুদ্ধ ভক্তের প্রতি আসক্ত;যদি থাকে তাহলে আমাদের নিস্তার নিশ্চিত।অনেক গুন আছে,কিন্তু গুরুদেবের প্রতি শ্রদ্ধা নেই,গুরুদেবের প্রতি আসক্তি নেই তাহলে আমরা এগোতে পারবো না।
......তমালকৃষ্ণ মহারাজ প্রভুপাদকে যখন এই স্বপ্নটি বললেন,তিনি জানতে চাচ্ছিলেন,যে স্বপ্নটি উনি দেখেছেন সেটা বাস্তব কি না।
প্রভুপাদ উত্তর দিয়েছিলেন-"হ্যা,এইটা বাস্তব।"
☘☘এটাই বাস্তব।প্রভুপাদ যখন প্রথম ইসকন সৃষ্টি করলেন,তিনি চাইছিলেন ইসকনের ভক্তরা ৬৪ মালা জপ করুক।প্রথম দিন থেকেই।
আমরা কল্পনা করতে পারি?- ইসকনের যদি এরকম নিয়ম হতো-'ইসকনের দীক্ষিত ভক্ত হতে গেলে ৬৪ মালা জপ করতে হবে।'কি হতো আমাদের...পারতাম আমরা?
এই ১৬ মালা জপ করতে আমরা পুরো হাপিয়ে যাচ্ছি,তাই না? যেই ১৬ মালা জপ শেষ...কি আনন্দ!কি শান্তি,যে আজকের মত ছুটি।আনন্দ শুরু হয় ১৪ মালা বা ১৩ মালা থেকে,,,যে আর ৩ মালা আছে বা ২-১ মালা আছে।ব্যাস,শেষ!
প্রভুপাদ বললেন-'আমরা অধৈর্য্য,আমাদের মধ্যে তেমন শ্রদ্ধা নেই,সেরকম শাস্ত্র অধ্যায়ন করতে পারি না আমরা।'প্রভুপাদ চাইছিলেন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে উনার প্রত্যেকটা শিষ্য কমপক্ষে ২ ঘন্টা করে পড়বে।কয়জন আমরা প্রভুপাদের গ্রন্থ ২ ঘন্টা করে পড়ি?এত বদ অভ্যাস আমাদের আমাদের থাকতে পারে।কিন্তু এই গুনটি যদি আমাদের থাকে-"গুরুদেবের প্রতি আসক্তি,গুরুদেবের প্রতি শ্রদ্ধাবান-তাহলে দেখবেন ধীরে ধীরে আমরা শে পর্যায়ে আসতে পারবো।
🌼🌼ব্যাসদেব প্রথম দেখলেন "অশ্রদ্ধা।"তারপর উনি দেখলেন-"আমাদের আয়ু"...
☘☘যেকোনো বিষয়ে একটি স্তরে আসতে গেলে আমাদের সময় লাগে।যিনি রান্না করতে জানে এবং নিপুন হতে চান,একটু সময় তো লাগবে।গান বাজনা করতে গেলে,সঙ্গীত শিখতে গেলে-একদিনে হয়? সময় লাগে।ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার,পিএইচডি,ডক্টরেট,সাইন্টিস্ট হতে গেলে,ড্রাইভিং করতে......সবকিছু করতেই সময় লাগে।এখন সে সময়টাই যদি আমাদের হাতে না থাকে,তাহলে কি করবো আমরা?
🍀কালকে আমরা খট্বাঙ্গ মহারাজ সম্বন্ধে আলোচনা করছিলাম।তিনি জিজ্ঞাসা করলেন দেবতাদের কাছে-"আমার হাতে কত সময়?"
দেবতারা বললেন-"এক মুহুর্ত আছে,আর সময় নেই।"
🍀আমরা ভগবদ্ ভক্তিতে উন্নতি করে একটি স্তরে আসতে চাইছি। কিন্তু আমরা যদি তা অলসতার সহিত গ্রহণ করি তবে,তা সম্ভব হবে না। কারণ-
"প্রায়েণাল্পায়ুষঃ"
আমাদের আয়ু খুব কম। আগেকার দিনের জীবেরা যেভাবে ১০ হাজার বছর, ১ লক্ষ বছর বাঁচতো। আমাদের কেউ যদি এখন ১০০ বছর বাঁচে তার নাম খবরের কাগজে আসে।এখন বেশীর ভাগ মানুষ ৭০ বছর বা তার কম বাঁচে গড়ে।
সময় কোথায়❓
এই যে বলছি আমরা ৭০ বছর বাঁচবো,এর মধ্যে প্রকৃতপক্ষে আমরা কত বছর কৃষ্ণভাবনামৃতকে গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করি❓
🍀ব্যাসদেব দেখলেন-"কলিযুগের মানুষ হচ্ছে ধৈর্যহীন।"
আমরা জপ করি তার সাথে হাতে অনেক কাজ করি। মন্দিরে যাই, ক্লাস শুনি হাতে ফোন নিয়ে। কারণ আমরা ধৈর্যহীন।"আমরা যখন জপ করবো শান্ত মনে জপ করবো; যখন শাস্ত্র অধ্যয়ন করবো,কেবল মাত্র শাস্ত্র অধ্যয়ন করবো।""-খুব বিরল এই গুণটি।
🌼🌼ব্যাসদেব দেখলেন-"কলি যুগের মানুষের শ্রদ্ধা নেইই,আয়ু কম,ধৈর্য্যহীন।ফলে তিনি করছেন এদের জন্য কি করা যায়❓
☘☘একে বলে ভক্ত।
একজন বদ্ধজীব যতই খারাপ পরিস্থিতিতে থাকুক না কেন,তার জন্য ভক্ত প্রার্থনা করেন,তার পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন। তাকে উৎসাহ দেয়...পরদুঃখে-দুঃখী।"জীবের দরদ দুঃখী শ্রীল প্রভুপাদ।"ভক্ত মানে দয়াশীল।
দয়া কাকে করে❓
যে উপযুক্ত ব্যক্তি না,তাকে উপযুক্ত করে তোলা। যার গুণ নেই তার পাশে দাঁড়ানো-যাতে তার মধ্যে সমস্ত সৎ গুনাবলি গুলো আসে।এই হচ্ছে ভক্ত।
🌼🌼ব্যাসদেব যখন আমাদের পরিস্থিতি বিবেচনা করলেন,ভাবছেন-"কিছু একটা করা দরকার তাদের জন্য।"
🍀 প্রভুপাদ বলেছেন-"কলিযুগের প্রারম্ভে কলির প্রভাবে জড়জগতের সবকিছুর শক্তি ক্ষীণ হয়ে যায়।"
যেমনঃ আয়ুর শক্তি, শারীরিক শক্তি, মানসিক শক্তি, বুদ্ধির শক্তি। আগেকার দিনে এখনকার মতো প্রিন্টিং প্রেস ছিলো না। "শ্রুতিধর" বলা হতো। কারণ শিক্ষক যা বলতেন ছাত্ররা তা একবার শুনে মুখস্থ করে ফেলতো।
🍀এটা হচ্ছে সত্য,ত্রেতা, দ্বাপর যুগের বুদ্ধির শক্তি।
কোথায় আমাদের ওই শক্তি❓
🍁🍁এজন্য প্রভুপাদ বলছেন- "কলির প্রভাবে জড়জগতের সবকিছুর শক্তি ক্ষীণ হয়ে যায়।শরীরের স্তিতি ভীষণভাবে হ্রাস পায়,স্মৃতিও অত্যন্ত ক্ষীণ হয়ে যায় এবং জাগতিক কার্যকলাপেও তেমন অনুপ্রেরণা থাকে না।"
🍀যারা চাকরি করতে যায়,ব্যবসা করতে যায় খুব আনন্দে করতে যায়?
হ্যা...যেদিন মাইনেটা পাবে সেদিনকার একটু উৎসাহ থাকে কিন্তু কাজ করার উৎসাহ থাকে না।জাগতিক কাজ করার কোনো অনুপ্রেরণা থাকে না আধ্যাত্মিক ত দুরের কথা।
🍁🍁প্রভুপাদ বলেছেন-"অন্যান্য যুগে যেভাবে খাদ্য শস্য উৎপাদন হতো এখন তেমন হয় না।"
🍀একটা ভালো ফসল পেতে গেলে অনে সার দিতে হয়।কোনো আইডিয়া আছে❓
আর্টিফিসিয়াল,ফার্টিলাইজার দিতে হয়।এগুলো বিষ।কেন বিষ দেয়?কারণ এমনিতে ভালো ফসল হচ্ছে না।সেইজন্য ক্যমিক্যাল দিয়ে টমেটোগুলো বড় করছে।
টমেটোর স্বাদ পেয়েছো❓
দেখতে খুব সুন্দর... লাল টকটকে টমেটো।ধনেপাতা- কত সবুজ দেখতে, খুব বড় বড় পাতা।কিন্তু কোনো smell নেই।......
দেখতে ভালো।কিন্তু না আছে স্বাদ,না আছে সুগন্ধ। শরীরের পুষ্টি হবে কি করে?
জল বিষাক্ত,পরিবেশ বিষাক্ত, খাদ্য বিষাক্ত। আয়ু বাড়বে কি করে?
আমি পড়ছিলাম একজায়গায় যেখানে চায়নাতে কিছু জায়গায় বায়ু এতটাই দূষণ হয়েছে যে-মানুষ স্বাভাবিক হতে গেলে অক্সিজেন রুমে যাচ্ছে।কদিন পরে দেখা যাবে এমনই হচ্ছে-"অক্সিজেন রুম তৈরি হবে।"
এই প্রকৃতিকে অপব্যবহারের যে স্বভাব হয়ে গিয়েছে আমাদের,প্রকৃতিও সেভাবে প্রতিদান দিবে।ফলস্বরুপ-"কোভিড-১৯।"প্রকৃতি আমাদের ছেড়ে কথা বলবে না।
🍁🍁প্রভুপাদ বলছেন-"গাভীরা আগের মতো দুধ দেয় না।"
দ্বাপর যুগের বর্ণনায়-"গাভীরা এত পরিমানে দুধ দিত,যার ফলে মাঠ ভিজে যেতো;যেমনটা বৃষ্টি পড়লে ভিজে যায়।"
"ফল,ফুল,শাক-সবজি উৎপাদন অনেক কমে গেছে।সেজন্য সমস্ত জীবের পুষ্টিকর খাদ্যের অভাব দেখা দেয়।"-এটা একদম বাস্তব।
আসলেই আমরা কীসের উন্নতি করছি?
🍁🍁প্রভুপাদ বলছেন-"খাদ্যের অভাব এবং জীবনধারার উপযোগী এই সমস্ত বস্তুগুলোর অভাব হওয়ার ফলে স্বাভাবিকভাবেই আয়ু হ্রাস পায়,স্মৃতি ক্ষীণ হয়,বুদ্ধি হ্রাস পায়,পরস্পরের প্রতি মিথ্যা ব্যাবহার আর মিথ্যা আচরনে পুর্ণ হয়ে উঠে।"
🍀মিথ্যা ব্যাবহার-আচরণ মানে?-"কপটতা।সামনে ভালো ব্যাবহার মনে অন্য কিছু।"
🍁🍁প্রভুপাদ বলছেন-"ভক্তই হচ্ছে জনসাধারনের যথার্থ বন্ধু।"
🍀তাহলে ভক্ত কি করে সহ্য করবে যদি দেখে-কোনো ভক্ত শারিরীক,মানসিক সবদিক দিয়ে কষ্ট পাচ্ছে।
ভক্তের পক্ষে চুপ করে থাকা সম্ভব না।সেজন্য তিনি জীবনের ঝুকি নিয়ে প্রচারে বেরিয়ে পড়ে।
🍁🍁তারপর প্রভুপাদ বর্ণনা করছেন-"রোগ।"
🍀একটা রোগ যায় তো আরেকটা রোগ আসে।এখন কোভিড চলছে,ভ্যাক্সিন বেরিয়েছে।কিন্তু যখনি এটা মুটামুটি নিয়ন্ত্রনে আসবে,আরেকটা রোগ আসবে।
🍁🍁প্রভুপাদ বলছেন-"এই যুগে বহু মানুষ যক্ষ্মা,ক্যান্সারা আদি দুরারোগ্যে আক্রান্ত।কিন্তু পুর্বে এগুলো ছিল না।"
🍀একজন ভক্ত যথার্থ বন্ধু হিসেবে অন্য বদ্ধ জীবদের পাশে দাড়ায়;কিভাবে তাদের এমনভাবে সাহায্য করা যায় যাতে-- পুর্ন নিরাময় তারা পেতে পারে,এই দুঃখ কষ্টের মধ্যে তারা না পড়ে,এই সংগ্রামের মধ্যে আসতে না হয়।
🍀আমরা দান নিয়ে কথা বলছিলাম।প্রশ্ন আসে-"সামাজিক ক্ষেত্রে,ভিক্ষুককে,অফিসের কাজে দান করতে হয়।আমরা কি করবো?"
🍁🍁তবে প্রভুপাদ বলছেন-"সবচাইতে বড় দাতা হচ্ছেন তিনি,যিনি ব্যাস,নারদ,মধ্ব,রুপগোস্বামী,ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর প্রমুখ ভাগবতগনের প্রতিনিধিরুপে ভাগবত তত্ত্বের প্রদাতা।"
🍀যিনি দিব্যজ্ঞান প্রদানের মাধ্যমে বদ্ধজীবদেরকে ভগবদ্ভক্তি প্রদান করেন,অজ্ঞানব থেকে জ্ঞানের আলোয় নিয়ে যান তারা হচ্ছেন সবচাইতে বড় দাতা।জীবের প্রকৃত বন্ধু।
"তাদের(ভগদ্ভক্তের) উদ্দেশ্য এক এবং অভিন্ন।"কি করে?
তা হচ্ছে-"সমস্ত অধঃপতিত জীবদের উদ্ধার করে
পরমেশ্বর ভগবানের কাছে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া।"আর কোনো উদ্দেশ্য নেইই।তারা কেবলমাত্র নিজেদের আচরনের মাধ্যমে বদ্ধজীবদের আকর্ষন করেন।
🍀প্রত্যেকটি জীব কোনো না কোনোভাবে নিজেকে অবহেলিত মনে করে,হতাশায় ভোগে...বিভিন্ন কারনে।কে এগিয়ে আসবে?বিপদের সময় বুঝা যায় কে প্রকৃত বন্ধু।সুখের সময় তো সবাই আসে।সবকিছু যখন ঠিকঠাক চলে তখন বন্ধুর অভাব থাকে না।যখন প্রতিকুলতার মধ্যে দিয়ে যাই,বোঝা যায় কে বন্ধু।বেশিরভাগ দেখা যাবে পাশ কাটিয়ে চলে যায়।তখন তারা খুব ব্যস্ত।
🍀কিন্তু যারা ভগবদ্ভক্ত,আমাদের এমনভাবে অনুপ্রেরনা দিয়ে তৈরি করার চেষ্টা করেন যাতে কোনোদিন এই ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে না পড়তে হয়।আমাদের কাছে,ইসকন ভক্তদের কাছে তেমনই হচ্ছেন-"শ্রীল প্রভুপাদ এবং তার প্রতিনিধিবৃন্দ।"ভক্তরা কখনো কারো কষ্টে,অর্থনৈতিক সংকটে,বৃদ্ধাবস্থায় এড়িয়ে যায় না।এভাবে তারা বিচার করে না।তাদের ভালোবাসা নিঃস্বার্থ,শুদ্ধ।এজন্যই সবাই প্রভুপাদের প্রতি আকর্ষিত হতেন।
🍁🍁প্রভুপাদের একজন শিষ্য বলছিলেন-"প্রভুপাদের প্রবচন আমি কিছুই বুঝতে পারতাম না।(কারন প্রভুপাদ ভারতীয় হওয়ায় তার ইংরেজি উচ্চারন খুব স্ট্রং)।কিন্তু একটা বিষয় আমি উপলব্ধি করেছি-এই ব্যাক্তি আমাকে কোনোদিন প্রতারনা করবে না।সত্যিকার অর্থে আমাকে ভালোবাসে এবং আমার ভালো চায়।যখনই এটা উপলব্ধি করতে পারলাম,তখনই আমি তার শিষ্যত্ব বরন করলাম।"
🍀🍀আমার গুরুকুলের শিক্ষক-"আত্মতত্ত্ব প্রভু",অনেক ভাষা জানতেন।উনার আগের কর্মী নাম ছিল-আত্মানন্দ স্বামী।তিনি তার উপলব্ধি বলছেন-"প্রভুপাদের নির্দেশে লোকনাথ মহারাজ গ্রামে গঞ্জে পদযাত্রায় গেলেন।তখন আত্মানন্দ প্রভু লোকনাথ মহারাজের তত্ত্বাবধানে ছিলেন।লোকনাথ মহারাজ উনাকে অনেকবার বলেছেন-"তুমি দীক্ষা নাও।"কিন্তু সবসময় আত্মানন্দ স্বামী বলতেন-"মহারাজ এখন না,পরে।"তো হঠাত একদিন আত্মানন্দ স্বামী মহারাজকে বলছেন-"মহারাজ আমি দীক্ষা নিব।"
মহারাজ অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করছেন-"তোমাকে আমি এতদিন ধরে বলছি দীক্ষা নিতে,তুমি রাজি ছিলে না,এখন হঠাত তুমার কি হলো?
তিনি বলছেন-"একটা জিনিস লক্ষ্য করেছি।আমরা যখন প্রভুপাদের গুরুপুজা করছি,পুষ্প নিবেদন করে গাইছি-শ্রীগুরুচরনপদ্ম কেবলভকতিসদ্ম,বন্দে মুই সাবধান মতে;;আমরা তো গাইছি প্রভুপাদের জন্য।কিন্তু প্রভুপাদ কেন এটা গাইছেন?"
এটা আগের দিন তিনি লোকনাথ মহারাজকে প্রশ্ন করছিলেন।তখন লোকনাথ মহারাজ বলছেন-"আমরা গাইছি প্রভুপাদের জন্য,প্রভুপাদ গাইছেন উনার গুরুদেবের জন্য।আমরা যা কিছু প্রভুপাদকে অর্পন করি,তা ই তিনি তার গুরুদেবকে অর্পন করেন।" এটা শুনে,তিনি একদিন চিন্তা করে মহারাজকে বলছেন-আমি দীক্ষা নিবো। প্রভুপাদ যখন সকলের নামগুলো পড়ছেন,দেখছেন আত্মানন্দ স্বামী।প্রভুপাদ জিজ্ঞাসা করলেন-Atmananda swami! Who is this Swami?"তারপর প্রভুপাদ উনার নাম দিলেন আত্মত্তত্ব দাস।"
🌼🌼তার মানে প্রভুপাদের এই ব্যাবহারে আত্মানন্দ প্রভু পুরো পরিবর্তন হয়ে গিয়েছেন।
✨অর্থাৎ ভগবানের শুদ্ধ ভক্তরা হচ্ছেন প্রকৃত বন্ধু।✨
-শ্রীপাদ নাড়ু গোপাল দাস প্রভু (,রাত্রিকালীন ক্লাস,১৭-০৬-২০২১)
0 Comments