শ্রীল বংশী দাস বাবাজী মহারাজের জীবনী৷

 


শ্রীল বংশী দাস বাবাজী মহারাজের জীবনী৷


বৃন্দাবনের ৩জন বাবাজী দের মধ্যে তিনি ১জন ছিলেন শ্রীল বংশীদাস বাবাজি মহারাজ। গুরুপরম্পরা অনুযায়ী গৌরকিশোর দাস বাবাজী মহারাজের বন্ধু ছিলেন তিনি, বংশীদাস বাবাজী মহারাজের বাড়ী ছিল কিশোরগঞ্জ জেলা মজীতপুর পাকুইন্দিয়া থানা।

তিনি এমন ভজনশালী সিদ্ধপুরুষ ছিলেন যে তিনি এখানে থেকে ধ্যানের ম্যাধমে বৃন্দাবনের কুকুর তাড়িয়ে ছিলেন ও বৃন্দাবনে যখন আগুন লেগেছিল তখন তিনি ধ্যানের ম্যাধমে সেখানে জল দিয়ে আগুন নিভান, তিনি এমন ভজনশালী ছিলেন যে তিনি তার দেহের চিন্তা করতেন না তিনি সিদ্ধ পুরুষ সারাক্ষণ তার মুখে কৃষ্ণ নাম ছিল ও তার প্রিয় ইষ্ট দেবতা ছিল শ্রীশ্রী গৌরনিতাই, একদিন তিনি নৌকায় বসে জপ করছিলেন। এক হাতে কৃষ্ণ নাম আরেক হাতে তিনি কাপড়ের মধ্যে চাল রেখে জলে চুবিয়ে জপ করতে থাকেন। জপ করা শেষ হলে সেই চাল কাঁচামরিচ ও একটু লবণ দিয়ে গৌরনিতাইকে তিনি ভোগ দেন। গৌরনিতাই বললেন "ও বাবা প্রতিদিন এমন খেতে ভাললাগে না একটু ত ভালমন্দ খেতে দাও" তখন বংশীদাস বাবাজী বললেন "আমি পারব না খেলে খাও, না খেলে না খাও আমাকে সারাদিন ভজন করতে হয়।" যখন বংশীদাস বাবাজী মহারাজ বাইরে বের হয়ে গেলেন, অপরদিক থেকে শুনছেন যে, গৌরনিতাই খাচ্ছে না তারা বেশী কথা বলছেন, তখন তিনি তার ভজন কুটির থেকে বাশের কঞ্চি এনে বললেন, "দেখ তোমরা খাবে নাকি খাবে না? এখন বলো?" তখন গৌরনিতাই হাতে লাঠি দেখে বলে "ও বাবা খাচ্ছি খাচ্ছি আমাদেরকে মের না।" একদিন গৌরনিতাই বললেন "ও বাবা আমাদেরকে স্নান করাবে না?" তখন বাবাজী মহারাজ বলে "আমি পারব না, তোমরা নিজে গিয়ে স্নান করে এস।" সেইথেকে গৌরনিতাই বাবাজী মহারাজের ভজন কুটিরের পাশে পুকুর ছিল সেখানে প্রতিদিন স্নান করে আসতেন। একদিন বাবাজী মহারাজ তার গোপালকে পুকুরে নামিয়ে গলায় দড়ি বেঁধে ভাসমান অবস্থায় গোপালকে পুকুরে ছেড়ে দেন আর গোপাল সাঁতার কাটতে কাটতে দূরে চলে গেল তখন বাবাজী মহারাজ রেগে বললেন, "কি রে এখনো আসছিস না ঠাণ্ডা লেগে যাবে তো।" গোপাল মাঝ পুকুরে এসে অভিনয় করতে থাকে "ও বাবা আমি ডুবে যাচ্ছি, তখন বাবাজী মহারাজ একটা কঞ্চি এনে বললেন "তুই আসবি নাকি আসবি না?" তখন গোপাল ভয়ে উঠে আসে। তিনি এমনি সিদ্ধপুরুষ ছিলেন যে ভগবান তার ভক্তিতে বাধা পড়তে বাধ্য হন। ভক্তের হাতে লাটাইয়ের ঘুড়ি আর সেই লাটাইয়ের ঘুড়ি হলো ভগবান তাই ভগবান বলেছেন যে "ভক্ত আমাকে যেবা নাচায় আমি সেইভাবে নাচি।"

একসময় সেখানে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের প্রতিষ্ঠাতা আচার্য শ্রীল প্রভুপাদের গুরুদেব শ্রীশ্রীমৎ শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর প্রভুপাদ তার ভজন কুটিরে যখন যেতেন তখন তার শিষ্যদেরকে তিনি নিয়ে যেতেন না, কারণ বংশীদাস বাবাজি মহারাজকে দেখে তার শিষ্যরা বিচার করতে লাগবে যে, তিনি কেমন ধরনের বৈষ্ণব যে লম্বা চুল-দাড়ি আছে, গলায় মালা নেই, স্নান ও করে না, আচার বিচার নেই, আবার কখনো তার গায়ে কাপড় থাকত না। ভজন করতে করতে তিনি নিজের চিন্তা করত না যে তার গায়ে কাপড় আছে কিনা তা দেখে শিষ্যরা ভাবতে পারে এটা কেমন ধরনের বৈষ্ণব। এমন দৃশ্য দেখে শিষ্যদের মনে চিন্তা জাগতে পারে তখনি শিষ্যরা বৈষ্ণবপরাধ ও ধাম অপরাধ করবে। ধামে এসে ভক্তের আচরণ দেখে বিচার করতে থাকবে, তাই তিনি একা যেতেন কারণ ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর তিনিও ভজনে সিদ্ধপুরুষ ছিলেন, আর যখন তিনি তার ভজনকুটিরে প্রবেশ করতেন, তখন বংশীদাস বাবাজী মহারাজ ঘরের ভিতর থেকে দেখে বলতেন "মঞ্জুরী আসছে মঞ্জুরী আসছে।" মাঝে মাঝে ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর তার আশ্রমে বাজার পাঠাতেন শিষ্যদেরকে দিয়ে, তখন শিষ্যদেরকে বলতেন যে "তোমরা কেউ তার গৃহে প্রবেশ করবে না, মন্দিরে এক কোনায় বাজার রেখে চলে আসবে।" কারণ বাবাজী মহারাজকে দেখে শিষ্যদের মনে আচার বিচার জাগতে পারে তাই সামনে যেতে নিষেধ করতেন।

Post a Comment

0 Comments