*নতুন বিবাহিত দম্পতিদের প্রতি উপদেশ- রাধেশ্যাম প্রভু*
বিবাহ এর দিন বর ও কনে উভয়ের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও আনন্দময় একটি দিন যেখানে তাদের আত্মীয় স্বজন উপস্থিত থেকে তাদের নতুন জীবনে প্রবেশ করতে আশীর্বাদ ও নানা উপহার সামগ্রী প্রদান করে,পুরো অনুষ্ঠানে সবার আকর্ষনের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকেন তারা ( বর - কনে) এবং সাথে সাথে দায়িত্ব গ্রহণের সূচনার একটি দিন। এই বিবাহ অনুষ্ঠান যেটিকে বিবাহ যজ্ঞও বলা হয়,যজ্ঞের মানে হল ভগবান বিষ্ণুর সন্তুষ্টির জন্য যে কাজ করা হয় তাকেই বলা হয় যজ্ঞ।
যেমন ভৌতিক জগতে বাচ্চারা খেলা করতে চায় কিন্তু মা-বাবা তাদের পড়ালেখা করতে বাধ্য করে ঠিক তেমন এই জগতে মানুষ খেয়ে, ফুর্তি করে ও আনন্দ করে তাদের জীবন অতিবাহিত করতে চাই। সকলের পিতা পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তিনি আশা করেন আমরা যাতে শাস্ত্র অধ্যায়ন করি, আমাদের জীবন এর লক্ষ্যকে শাস্ত্রের সাথে সামঞ্জস্য রাখি এবং অন্তিম কালে তার নিকট ফিরে যায়। আমরা শাস্ত্র অধ্যয়ন করি না কেনান বাচ্চারা সারাক্ষণ খেলা করতে চাই, এবং সে খেলা করেই আনন্দ লাভ করে, সে ভাবে এর মধ্যেই প্রকৃত সুখ কিন্তু তার মাতা পিতা জানে তার আসল কল্যাণ হলো সে যদি ঠিক মত পড়ালেখা করে তাহলেই।ভগবান এতটাই দয়ালু যে তিনি আমাদের জীবনকে দুই ভাবে ভাগ করেছে একটি হলো খেলাধুলা অর্থাৎ ইন্দ্রিয় তর্পণ অন্যটি হলো দায়িত্ব গ্রহণের । যেমন মানুষ খেতে পছন্দ করে এবং ভগবান প্রকৃতির মধ্যে 6 টি রস প্রদান করেছেন এবং তার থেকে মানুষ খাদ্য গ্রহণ করে তৃপ্ত হচ্ছে. কিন্তু ভগবান সেখানে একটি শর্ত প্রদান করেছেন এবং তা হলো তোমাকে শুধু অনুমোদন প্রাপ্ত খাদ্য আহার করতে হবে।
আমাদের নিরামিষ খাদ্য আহার করতে হবে আমিষ খাদ্য আমাদের জন্য বর্জন।শুধুমাত্র অনুমোদন প্রাপ্ত খাদ্যেই গ্রহন নয় আমাদেরকে তা পবিত্র করে গ্রহণ করতে আদেশ করছেন। আমরা দেখি বানর হাতি এরাও নিরামিষাশী প্রানী তাই কেবল নিরামিষ খাবার গ্রহনই নয় আমাদের ভগবানের প্রতি নিবেদিত প্রসাদই গ্রহনের নির্দেশ আছে এবং তাও আবার নিয়ন্ত্রিত।
শুধুমাত্র অনুমোদনপ্রাপ্ত এবং পবিত্র করে খাদ্য গ্রহণ করার জন্য বলছেন না তা যাতে সব সময় গ্রহণ করতে পারি তার উপরে ভগবান গুরুত্ব প্রদান করছেন। মাঝে মাঝে আমরা প্রসাদ গ্রহণ করতে চাই এবং আমরা অনেক প্রসাদ খেয়ে ফেলি এবং এতে আমাদের পেটের সমস্যা দেখা দেয়। তাই আমাদের খাদ্য আহারে পরিমিত পরিমাণ বজায় রাখতে হবে কারণ প্রসাদ গ্রহণের কারণ শুধুমাত্র ঘুম যাওয়া নয় বরং তার থেকে আমরা যাতে শক্তি পাই ও সেবা করতে পারি এটি হলো প্রসাদ গ্রহণ এর মুখ্য উদ্দেশ্য। তিনটি বিষয় আমি বলেছি তা হল অনুমোদিত,পবিত্র ও নিয়ন্ত্রিত।
অর্থাৎ অনুমোদনযোগ্য খাবার পবিত্র করন এবং নিয়মিতভাবে নিয়ন্ত্রিত প্রসাদ গ্রহণ।
একজন স্ত্রী এবং পুরুষ যখন স্বাভাবিক ভাবে একে অপরের সম্মুখীন হয় তাদের মধ্যে আকর্ষণ জন্ম নেয়। ভগবত গীতায় বলা হয়েছে ধর্মে বিরুদ্ধে যে কাম নয় তা স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ. ছেলে মেয়ে মা-বাবার অনুমতি নিয়ে যে বিবাহ করে তা অনুমোদনযোগ্য এবং ধর্মীয় বিবাহ। আজকালকার যুগে ছেলেমেয়েরা মাতা পিতার আদেশ গ্রহণ না করে পালিয়ে বিবাহ করে। মাতা-পিতার ইচ্ছা অনুসারে তারা বিবাহ করে না এবং অনেকসময় তাদেরকে জোরপূর্বক রাজি করানো হয় বিবাহ মেনে নেয়ার জন্য।
তাই অনুমোদন যোগ্য বিবাহ হল মা বাবা আশীর্বাদ সহকারে স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে যে বিয়ের আয়োজন করে ছেলে মেয়েকে বিবাহ দেয় তা। অনুমোদন প্রাপ্ত বিবাহ হল মাতা-পিতা ইচ্ছা অনুসারে বিবাহ করা আর পবিত্র বিবাহ হল শুধুমাত্র মাতা-পিতার এই অনুমোদন গ্রহণ করাই নয় সেই সাথে তারা উভয়ই ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ভক্ত হবেন এবং ভগবানেরও আনুগত্য গ্রহণ করবেন।
একজনকে ভগবানের কেন অনুগত হতে হবে? আজকালকার মানুষের কোন সময় থাকে না, তারা অর্থোপার্জনের জন্য সারাক্ষণ এদিক থেকে ওদিক দৌড়াদৌড়ি করে। কেন ভগবানের অনুগত হতে হবে? আমরা যদি ভগবানের অনুগত না হয় আমাদের কষ্ট পেতে হবে। যারা সিগারেট খায় তাদের ক্যান্সার হয়, মদ খেলে বেশি করে তাদের কঠিন রোগ হয়,তামা গ্রহণ করলে তাদের অসুখ হয় যারা অবৈধ সঙ্গ করে তাদের বিভিন্ন প্রকার রোগ হয়।এগুলো সব গুলোকে বলা হয় পাপ, পাপ মানে ভগবানের যা অনুগত না।
অনেক ধার্মিক ব্যক্তি রয়েছেন যারা পাপ কাজ করে না তাদের শাস্ত্রীয় জ্ঞান আছে তারা তাদের ধর্মের ফল বা ক্রিয়া দ্বারা তাদের জীবন অতিবাহিত করে। ভাগবতমে আমরা দেখতে পাই অজামিল একজন ধার্মিক ব্রাহ্মণ ছিল কিন্তু ভক্ত ছিলেন না এবং একসময় এসে অধঃপতিত হয়। তাই আমাদের ধার্মিকতার স্তর থেকে আধ্যাত্বিকতার স্তরে নিজেকে নিতে হবে এবং এভাবে আমরা সব সময় পবিত্র থাকবো.
স্বামী ও স্ত্রী কিভাবে ভক্তি জীবন পালন করবে? তারা যদি রাধা কৃষ্ণকে তাদের বেদীতে স্থাপন করে এবং সে বিগ্রহকে কেন্দ্র করে জীবন অতিবাহিত করে তাহলেই তা সম্ভব । স্বাভাবিক ভাবে তাদের জীবন ভক্তিময় হয়ে উঠবে. ভোরে উঠে বেদি পরিষ্কার করে সেখানে ভগবানকে পুষ্প অর্পণ করে তুলসী অর্পণ করে ভগবান কে প্রণাম করা,হরিনাম করা, আরতি করা ইত্যাদির মাধ্যমে ভগবানের কৃপা প্রাপ্ত হওয়া যায়।
কেন পত্র পুষ্প ফল এই গুলোর কথা বলছেন তিনি কেন ডিজিটাল বাতির কথা বলেননি কারণ প্রতিদিন আমরা যখন নতুন পুষ্প এবং পত্র,বাতি ভগবানকে অর্পন করবো এতে ভগবানের সাথে আমাদের সম্পর্ক তৈরি হবে.
উদ্দেশ্য হল ভগবান কে দেখা এবং ভগবানের সাথে সম্পর্ক তৈরী করা. কারণ লক্ষীনারায়ন রাধাকৃষ্ণ সীতারাম হলো সমস্ত ব্রহ্মাণ্ডের জীবকুলের মাতা ও পিতা।
যেহেতু আমরা ভগবানকে ভুলে গিয়েছি তাই আমরা কষ্ট পাচ্ছি। তাই যখন ভোরে উঠে আমরা ভগবানের সেবা করি জপ করি,তাদের নতুন পোশাকে সজ্জিত করি ভগবানের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করি,তখন এটি চিন্ময় দাম্পত্যে রুপ নেবে। আমার গুরুদেব বলেন দম্পতিদের মধ্যে তাদের হওয়া উচিৎ চিন্ময় দম্পতির ন্যায়। কে হলো এই চিন্ময় দম্পতি তারা হল ভগবান - লক্ষীনারায়ন রাধা কৃষ্ণ।
এবং তখনই সেই রাধাকৃষ্ণ তাদের ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যেই রস প্রদান করবেন. স্বামী কখনও স্ত্রীর সঙ্গে খারাপ আচরণ করবে না তিনি চিন্তা করবেন ভগবান আমার গৃহে রয়েছেন. স্ত্রী চিন্তা করবেন ভগবান আমার ঘরে আছেন এবং আমার স্বামী হচ্ছেন ভগবানের প্রতিনিধি এভাবেই স্ত্রী তার স্বামীর প্রতি শ্রদ্ধা পরায়ণ থাকবে।
ঠিক যেমন ভগবান বিষ্ণু কে লক্ষ্মী দেবী সর্বদা পাদ সেবা করে থাকেন যদিও ভগবান বিষ্ণু বলে থাকেন তুমি আমার হৃদয়ের মধ্যে অবস্থান করো তোমার স্থান ওইখানে নয় কিন্তু তারপরও মা লক্ষ্মী তখনও তার সেবা বন্ধ করেন না ঠিক তেমনি স্বামীর প্রতি স্ত্রী সেবা করতে সর্বদা তৎপর থাকবেন অন্যদিকে স্বামী বলবেন তুমি এতো ব্যাস্ত হয়ো না শান্ত হও.শান্ত হও এটি খুব সুন্দর একটা সম্পর্ক।
রামচন্দ্র যখন ১৪ বছরের জন্য বনবাসে যাচ্ছিলেন তখন সীতাদেবী ও তার সঙ্গে যেতে চাচ্ছিলেন কিন্তু রামচন্দ্র বলছিল প্রাসাদে থাকো এখানে তুমি সুরক্ষিত থাকবে, ভালো থাকবে। এ থেকে আমরা বলতে পারি যে স্বামী স্ত্রী সব সময় একে অপরকে সেবা করতে সর্বদা প্রস্তুত থাকবে এবং এই ধরনের মনমানসিকতা নিয়ে আমাদের গৃহস্থ জীবনে প্রবেশ করা উচিত. স্বামী স্ত্রীকে একে অপরের প্রতি করুণাশীল হতে হবে,একে অপরকে সেবা মনোভাব থাকবে, একে অপরের কথা চিন্তা করতে হবে। তাহলেই তাদের প্রজন্ম তাদের পথ অনুসরণ করবে।
আগের কালের স্বামী-স্ত্রী এরূপ ছিল এখনকার যুগে স্বামী স্ত্রী তারা একে অপরের থেকে মেশিনের মত এক্সপেক্টেশন বা ইচ্ছা রাখে. একে অপর থেকে অনেক বেশি কিছু আশা রাখে. এবং অতিরিক্ত পরিমাণে আশা করাই এবং একে অন্যের প্রতি সেবা ভাব না থাকার কারণে তাদের মধ্যে সমস্যা দেখা দেয় ও ভুল বুঝাবুঝি হয়। যদি স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয় কিভাবে সে ভুল বুঝাবুঝি মিটমাট করতে হবে তার কথাও শাস্ত্রের দেয়া হয়েছে।
" মাঝে মাঝে আমরা দেখি প্রচন্ড সকাল বেলার মেঘ গর্জন করে কিন্তু বৃষ্টি হয় না!" সেইভাবে স্বামী স্ত্রীর মাঝে ঝগড়া হলেও এমন যাতে না হয় যাতে তা অন্যের হৃদয়কে গভীরভাবে ক্ষরন করে । চানক্য বলেন, দুইটি ছাগল ভীষণ জোরে লড়াই করতে আসে কিন্তু কাছাকাছি এসে তারা গতি কমিয়ে দেয় এভাবে তারা একে অপরকে আহত করে না ঠিক তেমনি স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া গুলো সে রকম।এটিকে এতটা গুরুতর ভাবে নেয়ার কিছু নেই। যদিও আমরা সচরাচর বলে থাকি স্বামী স্ত্রীর উচিৎ সীতারাম লক্ষ্মী নারায়নের মতন হওয়া কিন্তু এটি হওয়া ততখানি সহজ নয়।
সীতারাম বা রাধা কৃষ্ণ এনারা মধ্যে একটুও ইন্দ্রিয় তর্পনের বা নিজের ইচ্ছা খাটানোর ইচ্ছা নেই তারা সম্পূর্ণভাবে সেবাপরায়ণ মনোভাব নিয়ে থাকেন। অন্যদিকে আমরা যখন অন্য থেকে আশা করব নিজের ইচ্ছায় বাস্তবায়ন করতে চাইবো সেই পরিমাণ আমাদেরকে কষ্ট ভোগ করতে হবে। ছেলে মেয়ের থেকে আশা করে সে আমাকে সুখী করবে আর মেয়ে ছেলের থেকে আশা করে সে আমাকে বিলাসিতভাবে পালন করবে, ভালো অর্থোপার্জন করবে এবং এই আশাগুলো যদি তারা বৃদ্ধি করে আরও তাহলে তারা কষ্ট ভোগ করবে অন্যদিকে তারা যদি এগুলো কমিয়ে সেবা বৃদ্ধি করে তাহলে তাদের ভক্তি জীবন ভালো ভাবে অতিবাহিত হবে যদি তারা রাধা-কৃষ্ণকে তাদের জীবনের মধ্যমণি করে রাখে।
একজন স্বামী এবং স্ত্রীর জীবনে তাদের আচরণ কেমন হওয়া উচিত তা নিয়ে আমি বলব. মেয়ে সব সময় একটি পুরুষের দ্বারা সুরক্ষিত থাকে প্রথমে পিতা এরপর স্বামী এরপর পুত্র. মেয়েদের দুই ধরনের সুরক্ষার দরকার প্রথমটি হল কোন পুরুষ জাতি তাকে অত্যাচার করতে না পারে এবং দ্বিতীয়টি হলো সে যাতে কোনো পুরুষের দ্বারা প্রভাবিত না হয়.
যেদিন কন্যা দান পিতা করে থাকেন ওই দিন সবাই তার পিতাকে সাধুবাদ জানান কেন থেকে বড় দায়িত্ব সম্পাদন করেন এবং যখন স্বামীর হাতে স্ত্রী কে অর্পণ করা হয় তখন স্বামী তাকে সুরক্ষার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন।এটি কে "পানিগ্রহনম " বলা হয়ে থাকে পানি মানে হাত গ্রহনম মানে গ্রহন করা এভাবে দায়িত্ব অর্পন করা হয়। যখন মঙ্গলসূত্র পরানো হয় তখন অনেক উচ্চস্বরে ঢোল বাজানো হয় কারন বাবা একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থেকে অব্যহতি নিচ্ছেন,এবং সকলে তার সাথে অভিনন্দন জানিয়ে করমর্দন করে😀।কারন শৈশব থেকে একজন পিতা তার কন্যাকে এমন ভাবে সুরক্ষা প্রদান করে যেভাবে চোখের পাতা চোখের মনিকে সুরক্ষা দেয়।কন্যাদানের পরে সেই বালকের দায়িত্বপূর্ণ জীবন শুরু হয় স্ত্রীকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করানোর মাধ্যমে।
এখন আমি সুরক্ষা নিয়ে কিছু বলতে চাই। একজন স্ত্রীর সুরক্ষা মানে যে কেবল মাত্র তার দৈহিক সুরক্ষা তা নয়। তার চিন্তাভাবনা , ইচ্ছা এবং তার মনোভাবেরও সুরক্ষার জন্য সে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় এবং তার সাথে সম্মানজনক ব্যবহার করা উচিৎ কারণ একটি মেয়ে যখন বাপের বাড়ি থেকে স্বামীর বাড়িতে যান সেখানে হয়তো সবকিছুই তার বাবার বাসার মত হবেনা কিন্তু স্বামীর বাসায় তাকে যথাযথ সম্মান এবং স্নেহ প্রদান করা উচিৎ যেন সে মনে করে তার নিজের বাসাতেই অবস্থান করছে এই বিষয়ে স্বামীকে তৎপর হতে হবে। মেয়েদের আবেগ এবং সহজে আসক্ত হওয়ার প্রবনতা বেশি।
বিবাহের পর স্বামী মা এবং স্ত্রী দুজনে ছেলেকে একান্ত নিজের করে ধরে রাখতে চায়,মা মনে করে এ কেবল আমার পুত্র স্ত্রী ভাবে উনি কেবলই আমার স্বামী এবং মাঝে মাঝে সে বালকের কষ্ট হয়ে যায় মা ও স্ত্রী উভয়পক্ষকে সামলাতে।তাই ছেলের খুবই বুদ্ধিমান হতে হবে যাতে তাদের দু'জনকেই সে বোঝাতে পারে আমি হলাম "তোমারই"। ছেলের মাকে এটি চিন্তা করা উচিত আমার ছেলে এখন আর ছোট নেই সে এখন বড় হয়েছে সে এখন পুরুষ নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারছে এখন তাঁকে আমার স্বাধীনতা প্রদান করতে হবে অন্যদিকে ছেলের বউকে চিন্তা করতে হবে আমার শ্বাশুড়ি হল আমার থেকে অনেক সিনিয়ার এবং তিনি যথেষ্ট অভিজ্ঞতা প্রাপ্ত তার সন্তানদের তিনি দায়িত্ব নিয়ে বড় করেছেন, তিনি সংসার করছেন অনেক বছর।তাই তার থেকে আমি অনেক কিছু শিখতে পারি এবং তার অভিজ্ঞতাগুলোর থেকে আমি নিজের জীবনে প্রয়োগ করতে পারি এবং এভাবে তার প্রতি আমার অনুগত থাকাটাই উচিত।
মেয়েকে তার শ্বাশুড়ীকে মায়ের সম্মান দিতে হবে এবং সেবা করতে হবে ঠিক যেন নিজের মায়ের মতন। এবং শাশুড়িকে যেহেতু তার বয়স বেড়েছে এ সময় তাকে তার সংসার জীবন থেকে কিছুটা আসক্তিহীন হয়ে কৃষ্ণের প্রতি আসক্তি বৃদ্ধি করতে হবে এবং তার দায়িত্ব গুলো ধীরে ধীরে ছোটদের এবং পুত্রের হাতে দিয়ে দিতে হবে। যখন মেয়ের শ্বশুর শাশুড়ি তাকে যথাযথ স্বাধীনতা প্রদান করে তখন মেয়ের শ্বশুর শাশুড়ির প্রতি ভালোবাসা এবং স্নেহ মমতা আর বেড়ে যায়।একজন বধু তার গৃহকে সবার জন্য একটি সুখী স্থানে পরিনত করে। একজন বউকে ঘরের লক্ষী বলা হয় কেননা সে দেরীতে ঘুমায় কিন্তু সকালে তাড়াতাড়ি উঠে যায়।
ঘরের বউ বড়দের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধা করে থাকবে সে কঠোর পরিশ্রমী হয় এবং সব ধরনের রান্না সে নিখুঁত ভাবে করবে, গৃহ সর্বদা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখবে,সংসারের নানা দায়িত্ব সে নিবে এবং সবসময় শাশুড়ির কাছাকাছি থেকে তাকে সঙ্গ প্রদানের মাধ্যনে নানা কথাবার্তায় ও আনুগত্যতায় তার আনন্দ বিধান করবে। সে খুব ভালো প্রসাদ রান্না করবে. যাতে খাওয়ার পর সবাই জিজ্ঞাসা করবে যে এটি কে রান্না করেছে? সে সবসময় হাসি মুখ করে থাকবে যদিও ঘরের মধ্যে সমস্যা থাকবে. তবুও তার মুখে হাসি থাকবে। যদিও তার ভিতরে কোন অসন্তুষ্টিতে থাকে সে কখনো তা দশজনের সামনে প্রকাশ করবেনা তা ব্যক্তিগতভাবে তার স্বামীর কাছে বলবে। আবার সে তার স্বামীকে পরিবারের সবার সাথে খোলাখুলিভাবে মেলামেশার মধ্যে কখনো বাধা হয়ে দাঁড়াবে না কখনো তার উপর অতিরিক্ত অধিকার খাটাবে না। এভাবে তার শ্বশুর শাশুড়ি প্রতি সেবাপরায়ণ হবে , এতে বউ এবং শ্বশুর-শাশুড়ি সবাই সুখী হয় এবং স্বামী সবার থেকে বেশি খুশি হবে।
এই জগতে আমরা দেখি কেউ কিভাবে কেবল অন্যদেরই শেখাতে চায় তোমাকে এমন করা উচিত, তোমাকে এটা করা উচিৎ,এভাবে করা উচিৎ।এভাবে একে অপরের সাথে তর্ক জুরে দেয়।সবাই নিজের অবস্থান কিংবা নিজের যুক্তিকেই যথাযথ মনে করে এবং অন্যদের মনোভাব কিংবা যুক্তি কে দাম দিতে চায় না। everybody want to prove not improve.
আমাদের অবশ্যই চিন্তা করতে হবে আমি আরো ভালো হতে পারি, আমি আরো ভালো করে কথা বলতে পারি, আমি আরো বেশি সম্মান দিতে পারি অন্যদের। এভাবে আমরা চিন্তা করার দ্বারা নিজের ব্যক্তিত্বকে আরো সুন্দর করতে পারি। বেশিরভাগ সমস্যা তৈরি হয় যখন আমরা অন্যদের উপর দোষারোপ করি এবং এভাবে দোষারোপ করার মাধ্যমে পরিবারের মধ্যে ঝগড়া দেখা যায়। এইসব বুঝার ম্যাচিউরিটি আসবে যখন একজন মেয়ে ভক্ত হবে যদি একটি মেয়ে শাস্ত্র অধ্যয়ন করবে সে তখন জানবে সীতাদেবী সম্পর্কে, লক্ষ্মী দেবী সম্পর্কে, কর্দম মুনি ও দেবহুতী, সুকন্যা - চর্বন মুনি ইত্যাদি চরিত্রের কথা যখন সে পড়বে তাহলে সে বুঝতে পারবে কিভাবে আচরন করার মাধ্যমে সে সবাইকে সুখী করতে পারবে।
যেহেতু আজকালকার জগতে ছেলেমেয়েদেরকে শাস্ত্রীয় শিক্ষা দেয়া হয় না তাই তারা যৌথ ফ্যামিলি থেকে একক পরিবার হয়ে যাচ্ছে. পরিবার এবং শাস্ত্র দিয়ে যখন বিবাহ হয় তখন এর একটি সফল বিবাহ হয়। বিয়ের দিন থেকে শুরু করে শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত একে-অপরের সাথে থাকা এবং কৃষ্ণভাবনামৃত জীবন যাপনের জন্য স্বামী স্ত্রী উভয়ের প্রয়োজন মানবিকতা, বিনম্রতা, ধৈর্য সহনশীলতা এবং এইরূপ কিছু গুণাবলী।একে অপরের প্রতি সম্মান খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ছেলে হলো রক্ষক যে সুন্দর ভাবে স্ত্রী কে পালন করবেন এবং অন্যদিকে মেয়ে হল সতী সেবাপরায়ণ এবং স্বামীর মন বোঝার মত দক্ষতা তার থাকতে হবে এবং সেভাবে স্বামীর সাথে আচরন করবে। এবং স্বামীর পরিবারের সাথে সুন্দর ভাবে আচরণ করবে এভাবে সুখী পরিবার গড়ে উঠবে।😍
0 Comments