প্রত্যেহ

শ্রীমদ্ভাগবত 

১ম স্কন্দ ৫ম অধ্যায়ঃ-শ্লোক-১০


ন যদ্বচশ্চিত্ৰপদং হরের্যশো জগৎপবিত্রং প্রগৃণীত কর্হিচিত।

তদ্বায়সং তীর্থমুশন্তি মানসা ন যত্র হংসা নিরমন্ত্যশিকক্ষয়াঃ।।


যে বাণী জগৎ পবিত্রকারী ভগবানের মহিমা বর্ণনা করে না, তাকে সন্ত পুরুষেরা

কাকেদের তীর্থ বলে বিবেচনা করেন। ভগবদ্ধামে নিবাসকারী পরমহংসরা সেখানে কোন রকম আনন্দ অনুভব করেন না।


ভাগবত কথামৃত-

কাক এবং হংসরা সমপর্যায়ভুক্ত পক্ষী নয়। কেন না তাদের মানসিক প্রবৃত্তি ভিন্ন।

সকাম কর্মী অথবা বিষয়াসক্ত মানুষদের কাকের সঙ্গে তুলনা করা হয়, আর

সর্বতােভাবে পারমার্থিক স্তরে অধিষ্ঠিত সন্ত পুরুষদের হংসের সাথে তুলনা করা হয়।


যেখানে আবর্জনা ফেলা হয় কাকেরা সেখানে সুখে সমবেত হয়, ঠিক যেমন

বিষয়াসক্ত সকাম কর্মীদের যেখানে সুরা, স্ত্রীলোেক এবং স্থূল ইন্দ্রিয় সুখ লাভ হয়,

সেই সমস্ত স্থানে আনন্দের অন্বেষণ করে।


কাকেরা যেখানে সুখের অন্বেষণে সমবেত

হয়, হংসেরা সেখানে আনন্দের অন্বেষণ করে না। পক্ষান্তরে, সুন্দর প্রাকৃতিক

পরিবেশে বিভিন্ন বর্ণের পদ্মফুলের দ্বারা শােভিত নির্মল সরােবরে তাদের দেখতে পাওয়া যায়। সেটিই হচ্ছে এই দুটি পক্ষীর মধ্যে পার্থক্য।


বিভিন্ন ধরনের জীবকে প্রকৃতি তাদের মনােবৃত্তি অনুসারে প্রভাবিত করে এবং

তাদের কখনই সমপর্যায়ভুক্ত করা যায় না। তেমনই, বিভিন্ন ধরনের মনােবৃত্তিসম্পন্ন

মানুষদের জন্য বিভিন্ন রকমের সাহিত্য রয়েছে। বাজারের যে সমস্ত সাহিত্য কাক

সদৃশ মানুষদের আকৃষ্ট করে, তার বিষয়বস্তু হচ্ছে পূতিগন্ধময় ইন্দ্রিয়-সুখভােগের

বিষয়।


সেগুলি সাধারণত স্থূল দেহ এবং সূক্ষ্ম মন সম্পর্কিত জাগতিক বিষয়।

সেগুলি নানা রকম আলঙ্কারিক ভাষায় বর্ণিত পার্থিব দৃষ্টান্ত এবং রূপক সমন্বিত

বর্ণনায় পূর্ণ। কিন্তু তা হলেও সেগুলি পরমেশ্বর ভগবানের মহিমা বর্ণনা করে না।


এই ধরনের কবিতা এবং রচনা, তা সে যে বিষয়েই হােক না কেন, মৃতদেহকে সাজানাের

মতাে বলে বর্ণনা করা হয়েছে। আধ্যাত্মিক স্তরে উন্নত মানুষ, যাদের হংসের সাথে

তুলনা করা হয়েছে, কখনই এই ধরনের মৃত সাহিত্যে আনন্দের অন্বেষণ করেন না, যা হচ্ছে আধ্যাত্মিক বিচারে মৃত মানুষদের সুখভােগের উৎস।


এই সমস্ত রাজসিক ও

তামসিক সাহিত্যগুলি বিভিন্ন ধরনের ছাপ মেরে বিতরণ করা হয়, কিন্তু তা মানুষের

আধ্যাত্মিক আকাঙক্ষার সহায়ক হয় না এবং তাই হংস সদৃশ সাধু পুরুষেরা কখনই তা

স্পর্শ করে না। 


পারমার্থিক স্তরে উন্নত এই সব মানুষদের বলা হয় 'মানস’। কেন না তারা সর্বদাই চিন্ময় স্তরে পরমেশ্বর ভগবানের প্রেমময়ী সেবার মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখেন।


তা স্থূল ইন্দ্রিয়সুখ অথবা অহংকারাচ্ছন্ন মনের সূক্ষ্ম জল্পনা-কল্পনা সর্বতােভাবে বর্জন  করে।সামাজিক দিক দিয়ে উচ্চশিক্ষিত মানুষ, বৈজ্ঞানিক, জড় বিষয়ের কবি, দার্শনিক এবং রাজনীতিবিদেরা, যারা কেবল জড় ইন্দ্রিয় সুখভােগের উন্নতি সাধনের

প্রচেষ্টাতেই মগ্ন, তারা হচ্ছে মায়ার হাতের ক্রীড়নক।


যেখানে পরিত্যক্ত বিষয়গুলি

ফেলে দেওয়া হয়, সেখানেই তারা আনন্দের অন্বেষণ করে। শ্রীধর স্বামীর মতে, এটি

হচ্ছে বেশ্যাসক্তদের সুখ।

কিন্তু যে-সমস্ত সাহিত্য পরমেশ্বর ভগবানের মহিমা বর্ণনা করে, মানব জীবনের

মূল উদ্দেশ্য সম্বন্ধে অবগত পরমহংসরা তা আস্বাদন করেন।


হরে কৃষ্ণ

কৃষ্ণময় শুভ সকাল

Post a Comment

0 Comments