"""বেদের মন্ত্রে কোরানের আল্লাহ আছে আর বেদ এ বলা হয়েছে সাকার উপাসনা নিষিদ্ধ, দেব-দেবীর পূজা নিষিদ্ধ """- ভুল যুক্তির উত্তর


হিন্দুদের ধর্মজ্ঞানহীনতার সুযোগ নিয়ে হিন্দুদের বোকা বানিয়ে ধর্মান্তরিত করার জন্য ধর্মীয় ইস্যুতে সেলিব্রিটি হওয়া কিছু জ্ঞানপাপী এবং তাদের মহান জ্ঞানী এবং ইসলামিক স্কলার ড. জাকির নায়েক বেদের মন্ত্রগুলোর ভুল ব্যাখ্যা করে থাকে। 

আসুন সেই সকল মন্ত্রগুলোর সঠিক অর্থসহ দেখে নিই:


প্রথমত ঋগ্বেদের মন্ত্রে "ইলা" এবং "অলা" দেখেই তারা ভুল ব্যাখ্যা করে যে মন্ত্রে তাদের আল্লাহর কথা বলা আছে। তাহলে ঋগ্বেদ এর মন্ত্রগুলো দেখে নিই।

✍️(ঋগ্বেদ ২/১/১১)

ত্বমগ্রে অদিতির্দেব দাশুষে ত্বং হোত্রা ভারতী বর্ধমে গিরা। 

ত্বমিলা শাতহিমা দন্কসে ত্বং বৃত্তহা বসুপতে সরস্বতী।।


✍️পদার্থ: হে(দেব) সব কিছু দানকারী (অগ্নে) অগ্রনী প্রভু! (ত্বম্) তুমি (দাশুষে) দানশীলের জন্য (অদিতি) না খন্ডনকারী হও (ত্বম্) তুমিই (হোত্র) যজ্ঞাদি সিদ্ধকারী (ভারতী)-আদিত্য রশ্নিরূপ বানী (গিরা) এই বানী দ্বারা তুমি (বর্ধমে) বর্ধিত হও (ত্বম্) তুমিই (শতহিমা) শত হিম ঋতু পর্যন্ত বহমান (ইলা)-এই পৃথিবী (অসি)- হও (দক্ষসে) সব প্রকার উন্নতির কারণ হও (বসুপতে)- হে ঐশ্বর্যের স্বামী (ত্বম্) তুমিই (বৃত্তহা)-সব বাসনা নষ্টকারী (সরস্বতী)-জ্ঞানদাত্রী

✍️সরলার্থ: 

হে সব কিছু দানকারী অগ্রনী প্রভূ!তুমি দানশীলের জন্য না খন্ডনকারী হও। তুমিই যজ্ঞাদি সিদ্ধকারী আদিত্য রশ্নিরূপ বানী,এই বানী দ্বারা তুমিই বর্ধিত হও। তুমিই শত হিম ঋতু পর্যন্ত বহমান এই পৃথিবী হও, সব প্রকার উন্নতির কারণ হও,হে ঐশ্বর্যের স্বামী তুমিই সব বাসনা নষ্টকারী জ্ঞানদাত্রী৷


👉বিদ্র: তা হলে এই মন্ত্রে কোথায় ইলা মানে তাদের আল্লাহ খুজে পেল তারা?


চলুন আরও দুটি ঋক্ বা মন্ত্র দেখে নিই যেখানে তারা অলা দেখেই বলে ফেলে পবিত্র বেদে আল্লাহর কথা বলা আছে, তাহলে আমরা(হিন্দুরা) কেন ইসলাম ধর্ম মানি না, তাহলে দেখেই নিই সেই মন্ত্রে কি আছে?


✍️(ঋগ্বেদ ৩/৩০/১০)

অলাতৃণ বল ইন্দ্র ব্রজো গোঃ পুরা হন্তোর্ভয়মানো ব্যার। সুগ্যান পথো অকৃণোত্রিরজে গাঃ প্রাবন্ বানীঃ পুরুহুতং থমন্তীঃ।।


✍️পদার্থঃ 

(অলাতৃণঃ বলঃ) [জল দ্বারা পূর্ণ হওয়ার কারণে] সম্পূর্ণ ছেদনযোগ্য [অলাতৃণোহলমাতর্দনো,নিঃ৬|২] (ব্রজঃ) অন্তরিক্ষ মধ্যে চলমান মেঘ (ব্রজত্যন্তরিক্ষে,নিঃ৬|২)(ইন্দ্র)বিদ্যুৎ (গোঃ) বাক (পুরঃ হন্তোঃ) প্রহারের পূর্বেই (ভয়মানঃ ব্যান)ভয়মান হয়েই ঢেলে পড়ে [আর এই বিদ্যুৎ] (গোঃ নিরজে) জল নিষ্কাশনের জন্য 

(সুগান পথ অকৃণোত্) সুগম পথ তৈরি করে 

(বানীঃ পুরুহুতং ধমন্তীঃ) এবং পুনরায় এই জল নদী আদি মধ্যে যেয়ে [ধমতির্গতিকর্মা,নিঃ ৬,২] 

(প্র অবন)প্রানীদের রক্ষা করেন৷ 

✍️সরলার্থঃ 

[জল দ্বারা পূর্ণ হওয়ার কারণে] সম্পূর্ণ ছেদনযোগ্য অন্তরিক্ষ মধ্যে চলমান মেঘ বিদ্যুৎ বাক প্রহারের পূর্বেই ভয়মান হয়ে ঢেলে পড়ে [আর এই বিদ্যুৎ ] জল নিষ্কাশনের জন্য সুগম পথ তৈরি করে, এবং পুনরায় এই জল নদী আদি মধ্যে যেয়ে প্রানীদের রক্ষা করেন।


👉বিদ্রঃ এখানে মন্ত্রে অলাতৃণ শব্দটি এখানে কখনোই আল্লাহ নয়। নিরুক্তে ৬/২ "অলাতৃণ" অর্থ হচ্ছে 

"অলাতৃণোহলমার্তদানো" অর্থ সম্পূর্ণ ছেদনযোগ্য।


✍️(ঋগ্বেদ ৯/৬৭/৩০)

অলায়স্য পরশুনর্নাশ তমা পবস্য দেব সোম। 

আখুং চিদেব দেব সোম।।


✍️পদার্থঃ 

(সোম)হে পরমাত্মন! (দেব) দিব্যগুণসম্পন্ন (অলায়স্য)সর্বত্র ব্যাপ্ত শত্রুর (পরশুঃ)যে অস্ত্র (তম) সেই 

(আখুংচিত) সর্বঘাতক অস্ত্র কে (ননাশ) নাশ করুন (দেব)হে পরমাত্মন! (অপবস্য) আপনি আমাদের পবিত্র করুন।


✍️সরলার্থঃ 

হে পরমাত্মন! দিব্যগুণসম্পন্ন সর্বত্র ব্যাপ্ত শত্রুর যে অস্ত্র সেই সর্বঘাতক অস্ত্রকে নাশ করুন হে পরমাত্মন! আপনি আমাদের পবিত্র করুন।


👉বিদ্রঃ এখানে মন্ত্র অলায়স্য শব্দ বৈদিক কোষে ক্ষমা, ধন, আদি দেবার অযোগ্য অর্থাৎ শত্রু বিশেষ। এই মন্ত্রে প্রার্থনা করা হচ্ছে যেন সেই শত্রুর অস্ত্র নাশ করেন। এখানে অলায়স্য শব্দের অর্থ "আল্লাহ" ধরলে তাহলে অর্থ কি হয়? 

অর্থ হয়ঃ পরমাত্মা যেন আল্লাহর অস্ত্র কে নষ্ট করেন।


তাহলে বেদে কোথায় থেকে তাদের আল্লাহ র কথা বলা আছে? দেখান একটু। তারা যদি উক্ত মন্ত্রে অলায়্য মানে তাদের আল্লাহ ধরে তাহলে তাদের ধর্ম আর এখানে খাটে না। তাদের ধর্ম ভিত্তিহীন হয়ে পরে। তাই বেদে ঈশ্বর আর কোরানের আল্লাহ এক এটা বলে হিন্দুদের বিভ্রান্তি করে ধর্মান্তরিত করতে এসে তাদের ধর্মকেই তারা প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে। তাই নয় কি?


এবার আসি তারা বেদের আরও কিছু মন্ত্রের ব্যাখ্যা দিয়ে বলে বেদ মন্ত্রে সাকার উপাসনা নিষিদ্ধ। বেদে যেহেতু দেব-দেবীর পূজা নিষিদ্ধ,তাহলে কেন করা হয়? এর জন্য তারা যজুর্বেদের যে মন্ত্রগুলো ভুল ব্যাখ্যা করে থাকে তা দেখে নিই:


✍️(যজুর্বেদ ৩২/৩)

ন তস্য প্রতিমা অস্তি যস্য নাম মহদ্ যশঃ।

হিরণ্যগর্ভ ইত্যেষ মা মা হিংসীদিত্যেষা যস্মান্ন জাত ইত্যেষঃ।।

✍️এখানে যে প্রতিমা শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে তা সংস্কৃত শব্দ প্রতিম এর সাথে 'আ' প্রত্যয় যুক্ত হয়ে। প্রতিম শব্দের অর্থ তুল্য বা সমতুল্য। 

এখানে এর সরলার্থ করলে হবে নিরাকার ব্রহ্মের সমতুল্য কেউ নেই। 

কিন্তু এখানে ও বলা নেই যে দেব-দেবীর পূজা করা যাবে না। কারণ দেব-দেবী ঈশ্বরেরই সাকার রূপ।


👉ভূল ব্যাখ্যাঃ-তারা এর ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে এবং তারা যে লাইন ব্যবহার করে তা নিম্নরুপঃ

"ন তস্য প্রতিমা অস্থি" 

এবং তাদের কথা হচ্ছে যেহেতু প্রতিমা অর্থ ইংরেজিতে sculpture, icon etc. তাই এখানে বলা হয়েছে ঈশ্বরের কোনো প্রতিমা নেই। যা সম্পূর্ণ ভুলভাবে তারা উপস্থাপন করে থাকে। যদি তাদের এই ব্যবহার করা মাত্র দুইলাইন শব্দ নিই সম্পূর্ণ মন্ত্র থেকে 

👉"ন তস্য প্রতিমা অস্থি" 

তদাপি এখানে তাদের ব্যাখ্যা কোনোভাবেই আসে না। এখানে এর সরলার্থ হয় ঈশ্বরের সমতুল্য কেউ নেই। কিন্তু তার সাকার রূপকে দেব-দেবী মেনে পূজা নিষিদ্ধ এটা কোথাও নেই৷


✍️(যজুর্বেদ ৪০/৯)

অন্ধং তমঃ প্রবিশন্তি যেহ সংভূতি মুপাস্তে।

ততো ভুয় ইব তে তমো য অসম্ভুত্যাঃ রতাঃ।।


✍️সরলার্থঃ যারা সকামকর্ম(অর্থাৎ ফলের আশায় কাজ করা,স্বার্থপরতা,লোভ ইত্যাদি) আসক্ত হয় তারা অন্ধকারে প্রবেশ করে এবং যারা "অসম্ভুত্যাং" অর্থাৎ বিধ্বংসী কার্যকলাপে লিপ্ত হয় তারা আরো অন্ধকারে প্রবেশ করেন।

✍️এখানে, 

**প্রবিশ্যন্তি- প্রবেশ করে

**সম্ভুতি- সকাম কর্ম

**মু উপাস্তে- সংযুক্ত হওয়া 

**রত্যাঃ- আসক্ত হওয়া


👉বিকৃত অর্থ - প্রকৃতির পূজা করলে অন্ধকারে নরকে যাবে,আর কার্যব্রহ্মে মানে মাটি দিয়ে কিছু বানানো, একদম স্পষ্ট, একদম স্পষ্ট ভাবে মূর্তিপূজা নিষিদ্ধ!


✍️তাদের আরও কিছু বিকৃত অর্থ ও দেখা দেখা যায়, যা নিচে দেওয়া হলোঃ-


প্রায়ই বানানো একটি মন্ত্র বলা হয়!!

মন্ত্র পড়লেই বুঝতে পারবেন কেমন মিথ্যা নকল হাস্যকর মন্ত্র এটা!!


👉মন্ত্রটি হলো,


"হোতারমিন্দ্র হোতারমিন্দ্র মহাসুরিন্দ্রা

অল্লো জ্যেষ্ঠাং শ্রেষ্ঠাং পরমং পুর্ণ ব্রাক্ষণ অল্লাম

অল্লোরাসুলমহমদকং বরস্যে অল্লো অল্লাম 

আদহাল্লাহবকুমে ককম অল্লাবুক নিখাতকম"


👉এই কথিত মন্ত্রটিতে নাকি বলা হয়েছে আল্লাহ ও নবী রাসুলকে মানার কথা!


👉এই মন্ত্রের রেফারেন্স চাইলে জ্ঞানপাপীরা কেউ বলে অল্লোপনিষদ,কেউ বলে কল্কি অবতার ও হযরত মোহাম্মদ সাঃ আবার কেউ বলে অথর্ববেদ!!

অনেক জ্ঞানপাপী দাবী করছে এটা নাকি,👉অথর্ববেদের শাকল্য উপনিষদের মন্ত্র!!


উত্তরঃ✍️


অথর্ববেদের "শাকল্য উপনিষদ" নামের কোন উপনিষদই নাই।

**অর্থববেদের উপনিষদ তিনটি,

✍️মুন্তক উপনিষদ,

✍️মান্ডুক্য উপনিষদ,

✍️প্রশ্ন উপনিষদ।


👉অল্লোপনিষদ কোন হিন্দু ধর্মীয় গ্রন্থ নয়।সম্রাট আকবর হিন্দুদের ধর্মান্তরিত করতে, বিভ্রান্ত করতে ও তার প্রবর্তিত দীন-ই-এলাহী নামক ধর্মের প্রচার করতে এই বইটি লিখেছিলেন।বইটি কারা লিখেছিলো তা এই বইয়ের সংস্কৃত দেখেই বুঝা যায়।

সম্রাট আকবরের পর হিন্দুদের বিভ্রান্ত করে ধর্মান্তরিত করতে হিন্দু ভুয়া পন্ডিতের নাম করে "কাঁচাপাকা সংস্কৃত শব্দ অং,হোং,চোং, ম্" ব্যবহার করে এই বইটি লিখা হয়।


👉আরেকটি কথিত মন্ত্র তাদের,

“লা ইলহা হরতি পাপম ইল্ল ইলহা পরম পদম। জন্ম বৈকুণ্ঠর অপ ইনুতিত জপি নাম মোহাম্মদম।”


এর রেফারেন্স বলা হয়,👉উত্তরায়ণ বেদ, অন কাহি, পঞ্চম পরিচ্ছেদ


👉এর মানে নাকি, লা ইলহা পাঠ করলে সব পাপ দূর হয়।স্বর্গ লাভ হয়।স্বর্গ পেতে হলে মুহাম্মদকে অনুসরণ করতে হবে।


উত্তর- সংস্কৃত ভাষার নমুনা দেখে বুঝতে বাকি নেই এই ষড়যন্ত্র!

হিন্দুদের ধর্মান্তরিত করার ষড়যন্ত্রের আরেক হাতিয়ার এটি।

✍️ উত্তরায়ণ বেদ নামে কোন বেদই নেই।

✍️✍️হিন্দু ধর্মে বেদ চারটি।

✍️ঋগ্বেদ, ✍️সামবেদ, ✍️যজুর্বেদ, ✍️অথর্ববেদ।


তো এখানে উত্তরায়ণ বেদ আসলো কোথা থেকে? আর এই বিকৃত মন্ত্র এলো কোথা থেকে?


এইভাবে তারা প্রতিক্ষেত্রে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বেদ মন্ত্রগুলোর ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে আর হিন্দুদের মুসলমান হতে বাধ্য করে।


কৃষ্ণ কৃষ্ণ

Post a Comment

0 Comments