জঙ্গলে এক সাধুবাবা নিজেই কুটির বানিয়ে থাকতেন, এক শিকারী ঐ জঙ্গলে থাকতেন, জন্তু শিকার করতে কুটির সামনে দিয়েই রোজ যেতেন এবং সে রোজ সাধুবাবাকে প্রণাম নিবেদন করতেন। একদিন শিকারী সাধুকে বলল ,,বাবাজী !! আমি তো রোজ মৃগা শিকার করতে যাই ,, আপনি এখানে কার শিকার করতে বসে আছেন ??
সাধুজী বললেন ,,আমি শ্রীকৃষ্ণ মৃগ শিকার করতে বসে আছি !!এই বলেই সাধুজী কাঁদতে লাগলেন !! শিকারী বলল ,,বাবাজী আপনি কাঁদছেন কেন ?? আমাকে বলুন এই কৃষ্ণ দেখতে কেমন ?? আমি তো কোনদিন এমন শিকারের কথা শুনিনি !! আমি অবশ্যই আপনার শিকার শ্রীকৃষ্ণকে নিয়ে আসব!!
সাধু তখন ভগবানের স্বরূপ বর্ণনা করলেন ,, তার গায়ের রং কালো বর্ণের ,,ময়ুরের পালক মুকুটে লাগায় ,, ত্রিভঙ্গ হয়ে বাঁশি বাজায়।শিকারী বলল ,,আপনার শিকার আমি নিয়ে আসবই ধরে !!আমি যতক্ষন না শিকার এনে দেব ততক্ষন কিছুই খাবনা এমনকি এক বিন্দু জলও খাবনা !!একথা বলেই শিকারী চলে গেলেন।
শিকারী এক জায়গায় জাল বিছিয়ে তিনদিন ধরে বসে রইলেন।মনে শুধু ঐ সাধু বর্ননা দেয়া শ্রীকৃষ্ণের ছবির কথা চিন্তা করতে লাগলেন, শিকারীর উপর ভগবানের দয়া হল ,,তখন ছোট্ট গোপাল শ্রীকৃষ্ণ বাঁশী বাজাতে বাজাতে নিজেই জালের মধ্যে বন্দি হল!!
শিকারী দেখল সাধুর বর্ননা দেয়া সেই ছবির মতো ,,যেমন সাধু বলছেন ঠিক তেমন চোখের সামনে দেখে চিৎকার দিয়ে বললো ধরেছি ,, ধরেছি ,, ধরেছি !! আচ্ছা ,,তিনদিন ধরে কিছু না খেয়ে বসে আছি আর আজ আমার হাতে তুই ধরা পরলি !! সে জালের মধ্যে গোপালকে অন্যান্য শিকারের মতো করে বেঁধে সাধুর কাছে নিয়ে আসল।
শিকারী কুটিরের বাহিরের থেকে চিৎকার করে বলল ,, বাবাজী তাড়াতাড়ি আসনু ,,আপনার শিকার যে নিয়ে আসলাম !! সাধুজী তাড়াহুড়ো করে ঘরের বহিরে এসে দেখলেন শিকারীর কাঁধে জালে বন্ধি হয়ে বসে আছেন জগতের পালনহার এবং মনমোহন মুগ্ধকর মুখে হাসছেন!!
সাধু ভগবানের চরনে এসে পড়লেন !! বললেন ,,প্রভু !!আমি ছোট্টবেলা থেক ঘরবাড়ি ছেড়ে এই বনে তোমার দর্শনের আশা নিয়ে বসে আছি।কিন্তু আপনাকে পেলাম না ,,এই শিকারী তিনদিনে তোমাকে পেল কি করে ??এমন কেন হল ?? শ্রীকৃষ্ণ বললেন ,, হে সাধু !! এই শিকারী তোমার আশ্রয় নিয়েছে ,, তাই তিনদিনেই কৃপা করলাম।
এতে বুঝা যায় ,,ভগবান তাদেরকেই কৃপা করেন যারা প্রভুর দাসের চরণ ধরেছে !! শিকারী তো জানেই না ভগবান কেমন হয় !! কিন্তু সাধুকে রোজ প্রণাম ও দর্শনে করার ফলে ভগবানকে তিনদিনে পেল।।
0 Comments