ভক্ত ভগবানের কথা।।

আশা করি সবাই পোষ্ট মনযোগ দিয়ে পড়বেন ।

অমূল্যর সংসার মোহ।।

একদিন এক আশ্রমে একটি দশ বৎসরের বালক

ভিক্ষা করতে এল।

নাম তার অমূল্য। আশ্রমের মহারাজ তাকে

জিজ্ঞেস করে জানতে পারলেন, তার মাতা পিতা

কেহ জীবিত নেই।

সে ভিক্ষা করেই খায়। সাধুজী তখন তাকে

বললেন, তুমি আশ্রমে থাক।

এখানে থাকবে, খাবে, পুজোর ফুল তুলবে, ঘর-

দোর পরিষ্কার করবে।

তোমাকে কিছু কিছু বেতন দেওয়া হবে।

তোমাকে লেখাপড়াও শেখানো হবে।

এই ভাবে বুঝাতেই অমূল্য আশ্রমে থেকে

গেল। অমূল্য মন দিয়ে আশ্রমের কাজ করতে

থাকে। সে এখন পঁচিশ বৎসরের যুবক।

সাধুজি অমূল্যকে দীক্ষা দিলেন। কিছুদিন

পরে সাধুজি অমূল্যর মনের ভাবান্তর লক্ষ করলেন

এবং বুঝলেন অমূল্যর বিবাহ করে সংসারী হবার

প্রবল ইচ্ছা জন্মেছে।

এবার তিনি অমূল্যকে ভিক্ষায় পাঠালেন।

প্রথম প্রথম দুচার দিন অমূল্য কিছু কিছু চাল আনল।

পরে দেখা গেল তার ভিক্ষার চাল একেবারেই

কমে গেছে। একদিন সাধুজি অমূল্যকে জিজ্ঞাসা

করিলেন, অমূল্য, অমুক জায়গায় বিষ্ণুমন্দিরটি

দেখেছ? উত্তরে অমূল্য বলল না দেখি নাই।

অমুক জায়গায় ধর্ম্ম শালাটি দেখেছ? না।

অমুক জায়গায় আশ্রমটি দেখেছ? উত্তরে

অমূল্য বলল না। আচ্ছা অমুক ভদ্রলোকের

মেয়ে দুটি দেখতে কেমন জান? অমূল্য

আনন্দিত মনে উউত্তর দিল,

আজ্ঞে হ্যাঁ জানি, দেখতে বড়ই সুন্দরী।

এবার সাধুজি অমূল্যর মনের ভাবান্তর লক্ষ করে

আশ্রম থেকে কিছুদুরে একটি বাড়ী, একটি

ছোট পুকুর ও কিছু জমি ক্রয় করে অমূল্যর বিয়ে

দিয়ে তাকে সংসারী করে দিলেন।

কিছুদিন পরে সাধুজি একদিন অমূল্যর বাড়ী বেড়াতে

এলেন। বললেন অমূল্য কেমন আছ?

গুরুদেবকে প্রণাম করে অমূল্য বলল-আজ্ঞে

ভালই আছি। মনের সুখেই আছি।

অমূল্যর দুটি সন্তান হয়েছে। জমি জায়গায়, ধন,

সম্পত্তি আরো কিছু বাড়িয়েছে। মোটের উপর

অমূল্যর এখন বেশ সুখের সংসার। কিছুদিন পরে

সাধুজি আবার একদিন অমূল্যর বাড়ী বেড়াতে

এলেন। এখন অমূল্যর আরো দুটি সন্তান

হয়েছে। অমূল্য এখন ঘোর সংসারী। জমি জায়গায়,

গরু, বাছুর , লোকজন, টাকা পয়সা কোন কিছুরই তার

অভাব নাই।

গুরুদেব অমূল্যকে বললেন অমূল্য এতোদিন

তো সংসার করলে, এবার ছেলেদের হাতে সংসার

ছেড়ে দিয়ে, আশ্রমে চল সাধন ভজন করবে।

উত্তরে অমূল্য বলল, ছোট ছেলেটা এখন

নাবালক, আর ছেলেরা সংসারে আর একটু পাকা-

পোক্ত হোক, সংসারটা আর একটু ভাল করে

গুছিয়ে নিই। এর পর আপনি যখন আসবেন তখন ঠিক

আপনার সঙ্গে চলে যাব।

কিছুদিন পর গুরুদেব আবার এসেছেন, কিরে

অমূল্য এবার যাবিতো? উত্তরে অমূল্য বলল

গুরুদেব! এখন ধান চাষের সময়, এখন আমি চলে

গেলে সারা বছরের ধান চাষটা মাটি হয়ে যাবে।

এরপর যখন আপনি আসবেন, তখন ঠিক আপনার

সঙ্গে চলে যাব। গুরুদেব চলে গেলেন।

অমূল্যর এখন বয়স হয়েছে। হঠাৎ মৃত্যু এসে

অমূল্যকে গ্রাস কলল। অমূল্য দেহত্যাগ করল।

পরজন্মে অমূল্য গোজন্ম নিয়ে তারই

গোয়ালে এসে পৌঁছল! গুরুদেব আবার

এসেছেন। তিনি সব জানতে পারছেন।

ছেলেরা বলল গুরুদেব! বাবা হঠাৎ মারা গেলেন।

ডাক্তার দেখিয়ে, ঔষধপত্র খাইয়েও আমরা কিছু

করতে পারলাম না।

গুরুদেব বললেন, কি আর করবি বাপ?

কালের নিয়মই এই। গুরুদেব গোয়ালের দিকে

বেড়াতে গিয়ে সেই গরুটিকে বললেন, কিরে

অমূল্য এবার যাবিতো?

গরুটি বলল গুরুদেব! এখন আলু চাষ শুরু হয়ে

গেছে, এখন গেলে ছেলেদের আলু চাষটাই

নষ্ট হয়ে যাবে। এরপর যখন আসবেন, তখন ঠিক

আপনার সঙ্গে চলে যাব। গুরুদেব চলে

গেলেন।

এবার গুরুটি মরে কুকুর হয়ে তাদেরই বাড়ীর

সামনে পড়ে আছে। গুরুদেব এসে কুকুরটিকে

দেখেই চিনতে পারলেন। ছেলেদের গুরুদেব

জিজ্ঞেস করলেন, কিরে

তোদের সেই লাল বড় গরুটা কিহল?

আর কেন বলেন গুরুদেব গরুটা অত্যন্ত ভাল কাজ

করত। একদিন বেলা তিনটে প্রর্য্যন্ত নাঙ্গল

করে এসে গোয়ালে ধড়ফড় করে মরে

গেল।

এবার গুরুদেব কুকুরটিকে বলছেন কি রে অমূল্য,

এবার যাবি? তখন কুকুরটি বলল,

গুরুদেব ছেলেদের বেশ টাকা পয়সা জমেছে।

ওরা কলকাতায় একটা বাড়ী কিনবে কিনবে করছে।

এখন গেলে যে কোনদিন টাকাগুলো ডাকাতি

হয়ে যেতে পারে। আর আমি থাকলে কোন

ব্যাটাকে এখানে ঘেঁসতে দেবনা। এক এক

কামড়ে সব কটাকে শেষ করে দেব। এরপর

যখন আপনি আসবেন, ঠিক আপনার সঙ্গে চলে

যাব। গুরুদেব চলে গেলেন।

এবার কুকুরটি মরে সাপ হয়ে তাদেরই একটা ঘরে

আশ্রয় নিয়েছে। অনেকদিন পরে গুরুদেব

বাড়ীতে এসে বুঝতে পারলেন ।রাত্রে খাওয়া

দাওয়া পর যে ঘরটিতে সাপ আছে, গুরুদেব সেই

ঘরেই শুতে চাইলেন। ছেলেরা বলছে না

গুরুদেব ওঘরে শোয়া চলবে না ওঘরে একটা বড়

সাপ আছে। আমরা কেউ ওঘরে ঢুকতেই পারছি না।

এমন কি ঐ ঘরে বাক্সে আমাদের টাকা পয়সা আছে

প্রয়োজনে আমরা তাও নিতে পারছি না। ঘরে

ঢুকতে গেলেই সাপটা গর্জন করে।

গুরুদেব বললেন তোদের কোন ভয় নেই।

ও সাপ আমায় কিছু বলবে না। এই বলে তিনি সেই

ঘরেই শুয়ে পড়লেন। সাপটা অমনি গর্জন করতে

শুরু করল।

গুরুদেব বললেন এই অমূল্য চুপ কর। সাপটা অমনি

ভয়ে থেমে গেল।

পরদিন ভোরে উঠে বড় ছেলে ভাবল গুরুদেব

বেঁচে আছেন না সাপের কামড়ে মারা গেলেন

দেখি?

দেখলেন গুরুদেব স্নানদি সের জপে বসে

গেছেন। কিছুক্ষণ পরে গুরুদেব বাইরে

আসতেই, ছেলেরা সকলে মিলে বলল, গুরুদেব

আপনাকে সাপটিল ব্যাবস্থা করতে হবে। গুরুদেব

তখন দুয়ারে ববে বলছেন এই অমূল্য ঘর

থেকে বেরিয়ে যায়। অমূল্য আর আসে না। তখন

গুরুদেব আরও জোরে ডাকলেন, এই অমূল্য

তাড়াতাড়ি ঘর থেকে বেরিয়ে আয় বলছি। সাপটি

বাহিরে এসেই বিরাট ফণা তোলল। অমনি দুই

ছেলে দুই দিক হইতে গুলি করে সাপটিকে

মেরে ফেলল।

তখন গুরুদেব বলছেন, কেমন হল বল দেখি?

অমূল্য এবার কি তোর সংসার মোহ কাটল? তুই

যাদের জন্য জন্ম জন্ম কঠোর পরিশ্রম করে

এলি, শেষ তারাই তোকঃ গুলি করে মারল।

হে ভক্ত গন একেই বলে সংসার মোহ।

আমদের অনেকের জীবনেই এরুপ ঘটতে

পারে। সৎ কর্ম্মের দ্বারাই মানুষ ঊদ্ধ মুখী হয়।

উচ্চ কুলে জন্ম হয়। সাধু ভক্ত হয়, পরোপকারী

হয়, সমাজ সংস্কারক হয়, ধার্মিক ও দাতা হয়। আবার

অসৎ কর্ম্মের ফলে মানুষ নিম্নগামী হয়। চোর,

ডাকাত, বদমায়েস, গুণ্ডা, মিথ্যাবাদী প্রভৃতিও হতে

পারে। অতএব সাধু সাবধান নিজ সৎকর্ম দ্বারায়

মানুষকে বড় হতে চেষ্টা করতে হবে । সবসময়

মনে রাখতে হবে আমাদের মাথার উপরে ভগবান

আছেন, তিনি সব দেখছেন। অতএব আমরা

কোন অন্যায় বা খারাপ কাজ করব না।

আর যদি সদগুরুর কৃপ

Post a Comment

0 Comments