*শ্রীমৎ ভাগবতম ৩/৪/২৩-২৪*


*বক্তা: শ্রীমদ্ ভক্তি বিজয় ভাগবত স্বামী মহারাজ*

*সময়:৫৩ মিনিট* 


*শ্রীমৎ ভাগবতম তৃতীয় স্কন্ধ চতুর্থ অধ্যায় শ্লোক নম্বর ২৩*


*অনুবাদ:* শ্রী শুকদেব গোস্বামী বললেন - উদ্ধবের কাছ থেকে বিদ্বান বিদুর তার আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধুবান্ধবদের বার্তা শ্রবণ করে দিব্য জ্ঞানের দ্বারা তার অসহ্য শোক প্রশমিত করেছিলেন।


ভাগবতম কয়েকটি পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে: যেমন বিদুর- মৈত্রেয় হরিদ্বারের গঙ্গার ঘাটে, পরবর্তীতে শুকদেব পরীক্ষিত এবং তারপরে শৌণক সুতগোস্বামী।

  কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে দুজন উপস্থিত ছিলেন না, একজন হলেন বিদুর অন্যজন বলরাম। দুর্যোধন বিদুরকে অপমানিত করে রাজসভা থেকে বহিষ্কৃত করেছিলেন। বিদূর সেই অপমানে ব্যাথিত না হয়ে তার সুযোগ নিয়েছিলেন, তিনি কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করে তীর্থ পর্যটনে বেরিয়েছিলেন। অনেক সময় মনে হয় ঘরে ঝগড়া হলে অনেকে ভক্ত হয়ে যায় কিছুটা সে রকম।

(বলরামও কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি তিনি নবদ্বীপের সীমন্ত দ্বীপে এসেছিলেন। সেখানে ময়াসুরকে বধ করেছিলেন। যার নাম ময়ামারি মাঠ, যা এখন অপভ্রংশ হয়ে মারামারি মাঠ হয়েছে। বলরাম দুর্যোধনের পক্ষে ছিলেন। বলরামের সাক্ষাৎ শিষ্য ছিল দুর্যোধন। বলরাম দুর্যোধনের সাথে সুভদ্রার বিবাহ দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ভগবান অর্জুনের সাথে সুভদ্রার বিবাহ দিয়েছিলেন, বলরামের এখানে হার হয়েছিল। তিনি কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে থাকতে চাননি, কারণ তিনি দুর্যোধনের পাশে থাকতেন এবং নিশ্চিত জানতেন ভগবান যেহেতু পান্ডব পক্ষে, তাই তাদের জয় অনিবার্য।)


বিদুর তীর্থ ভ্রমণ করতে করতে অন্তিমে প্রবাসে এসে পৌঁছলেন। তার আগে ভগবান লীলা সংবরণ করবেন এই পরিকল্পনা করে নিজের বন্ধু উদ্ধবকে বদ্রিকা আশ্রমে পাঠিয়েছিলেন। উদ্ধব ভগবানের ভক্ত। ভগবানের বিরহে তিনি থাকতে পারছিলেন না। তিনি কোন রকমে চলতে চলতে দ্বারকা থেকে প্রবাসে এসেছিলেন, আড়াইশো কিলোমিটার পথ ভ্রমণ করে। তার মধ্যে বিদুরও কয়েক বছর ধরে হাঁটতে হাঁটতে প্রবাসে এসেছিলেন। বিদুরের কৌতূহল হয়েছিল কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের ফলাফল সম্বন্ধে। তিনি তাই উদ্ধবকে সরাসরি জিজ্ঞেস না করে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে জেনেছিলেন। প্রথমে বসুদেব, দেবকী এবং আত্মীয়-স্বজনদের কুশল সংবাদ জিজ্ঞাসা করেছিলেন। তেত্রিশ বছর তিনি ছিলেন না। পঞ্চপান্ডব, কুন্তী দেবীর সংবাদ জানতে চেয়েছিলেন। সবার নাম করে তিনি কুশল সংবাদ জানতে চেয়েছিলেন। তিনি আরো জানতে চেয়েছিলেন ভীম কি যুদ্ধের পর শান্ত হয়েছে? উদ্ধব বিদুরকে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সমস্ত সংবাদ দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ভগবান তাকে বদরিকা আশ্রমে পাঠিয়েছিলেন। আবারও কৃষ্ণের সাথে উদ্ধবের দেখা হয়েছিল। তিনি বিদুরকে বললেন যখন বদরিকাশ্রমে ভগবানের সাথে উদ্ধবের দেখা হয় তখন তিনি তাকে এবং মৈত্রেয় ঋষিকে পুরো ভাগবত শুনিয়েছিলেন। ভাগবত শুনিয়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ভাগবতমের মধ্যেই মিলিয়ে গেলেন, যেমন আইসক্রিম গলে তরল হয়ে যায় তেমনি। ভগবান ভাগবতের পৃষ্ঠায় মিশে গেলেন, উদ্ববকে বলে গেলেন তিনি চলে যাওয়ার পর উদ্ধব বিরহ অনুভব করবে না, সে ভাগবতের প্রতিটি পৃষ্ঠায় ভগবানকে দর্শন করবে। আমাদেরও ভাগবত শ্রবণ ও পঠন তখনই সার্থক হবে যখন আমরা ভাগবতের প্রতিটি পৃষ্ঠায় কৃষ্ণকে দর্শন করতে পারব। সেই জন্য সুত গোস্বামী বলেছেন ভাগবত হলো শ্রীকৃষ্ণের বাঙ্ময় বিগ্রহ। ভাগবত পড়লে প্রত্যক্ষ কৃষ্ণ দর্শনের ফল পাওয়া যায়। তাই প্রতিদিন ভাগবতের সেবা করুন, শ্রবণ করুন, পঠন করুন। ভাগবত দর্শনে পাপনাশ হয়। ভগবান ভগবতে মিলিয়ে যাওয়ার সময় উদ্ধবকে বললেন- "আমার একজন শ্রেষ্ঠ ভক্ত আছে বিদুর, তার কথা খুব মনে পড়ছে তাকে তুমি এই ভাগবত শুনিও", যেমন আমাদের গুরুদেব যদি চলে যাওয়ার সময় কাউকে আমার নাম করে কিছু বলে যাওয়ার জন্য বলেন তাহলে আমাদের যত আনন্দ হবে বিদুরেরও ততটাই আনন্দ হয়েছিল, তিনি অভিভূত হয়ে গিয়েছিলেন। তখন বিদুর উদ্ধবকে বলেছেন সে যেন দয়া করে সেই কথাগুলো তাকে বলে যা কৃষ্ণ তার জন্য বলে গেছেন। বিদুর আত্মীয়-স্বজনের বিরহ শোক থেকে মুক্ত হয়েছিলেন ভাগবতের কথা শুনে। 

ভাগবতের কথা শুনলে আত্মীয়-স্বজনের শোক থেকে মুক্ত হওয়া যায়। ভাগবতের একটা শ্লোকে ব্যাসদেব বলেছেন কেউ যদি প্রত্যহ ভাগবত সেবা করে তার কৃষ্ণভক্তি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে। জড়জাগতিক মানুষ হয়তো শুনে বলবেন কৃষ্ণভক্তি বৃদ্ধি হবে ঠিক আছে কিন্তু আনুষাঙ্গিক আর কি ফল পাওয়া যাবে? ভাগবত সেবা করলে তিনটি জিনিস পাওয়া যায়- শোক, মোহ ও ভয় দূর হয়।

 আমাদের জীবনে তিনটি দুঃখ আছে-১) শোক যা অতীতের দুঃখ থেকে হয়। যেমন অতীতে যদি কিছু হারিয়ে যায়, কারো প্রিয়জন যদি তাকে ছেড়ে চলে যায় বা কারো বিষয় সম্পত্তি যদি চুরি হয়ে যায় ইত্যাদি ।

২) মোহ অর্থাৎ বর্তমানের দুঃখ। আসক্তির মোহ অর্থাৎ কিছু করতে গিয়ে, অন্য কিছু কথা চিন্তা করা বিষয় সম্পত্তির কথা ভাবা, এছাড়া 

৩) ভয় বা ভবিষ্যতের দুঃখ। যেমন ভবিষ্যতে সন্তান দেখাশোনা করবে তো, ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করা।

 শোক, মোহ, ভয় থেকে বিদুর মুক্ত হয়েছিলেন ভাগবত শ্রবণ করে।

 সুখ লাভ হয় দেহে, ইন্দ্রিয়ের সাথে ইন্দ্রিয়ের বিষয়ের সংস্পর্শে সুখ লাভ হয়। যেমন রসগোল্লা খেতে মিষ্টি লাগে, শীতে গরম জামা পরলে সুখ হয় ইত্যাদি। শান্তি লাভ হয় মনে, দিব্য জ্ঞান প্রাপ্ত হলে। গীতার শুরুতে অর্জুনের মনে কত অশান্তি ছিল। আমার পরিস্থিতিও তেমনি, আমার পরিস্থিতির কথাই অর্জুন অভিনয় করে দেখিয়েছেন। কত দুঃখ ছিল তার, তারপর ভগবান যখন গীতার জ্ঞান দান করল তখন তার মোহ দূর হলো।

"নষ্টো মোহঃ স্মৃতির্লব্ধা..." ভ.গী ১৮/৭২

আমরাও প্রতিদিন গীতা ভাগবত শুনে শোক থেকে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছি। অর্জুন ১৮ অধ্যায় গীতা শোনার পর যুদ্ধের জন্য তৈরি হয়েছিলেন, কিন্তু অর্জুন তাও ভালো করে যুদ্ধ করছিলেন না। ভগবান ভাবলেন গীতা শোনার পরও অর্জুনের গা গরম হচ্ছে না। তখন ভগবান পাণ্ডবদের দুটো উইকেট ফেলে দিলেন। ভীমের পুত্র এবং অর্জুনের পুত্রকে যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত করলেন। অভিমুন্য মারা যাওয়ার পর অর্জুন যুদ্ধক্ষেত্রে কাঁদছিলেন, ভগবান ভাবলেন গীতার দ্বিতীয় অধ্যায় থেকে শোক না করার জন্য ভগবান বলে এসেছেন তাও অর্জুন কাঁদছেন! তাই ভগবান এবার অর্জুনকে নিয়ে স্বর্গে গেলেন। সেখানে অর্জুন দেখছে অভিমুন্য দূরে কোথাও হেঁটে যাচ্ছে। অর্জুন অভিমন্যুকে ডাকলেন, অভিমন্যু বললেন তুমি নাটকে আমার বাবা ছিলে, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে দরকার পড়েছিল তাই ভাড়া করে নিয়ে গেছে। এখন আর তুমি বাবা নও! ভগবান বোঝালেন অভিমুন্য মরেনি। গীতা বলে কেউ মারা যায় না।

"বাসাংসি জীর্ণানি....."ভ.গী ২/২২

অর্থাৎ বস্ত্র পুরনো হলে আমরা তা ছেড়ে ফেলে দিই । শরীর তেমনি আত্মার বস্ত্র। কারো ভালো, কারো খারাপ, কারো বা পুরুষ কারো স্ত্রী। সুতরাং আমাদের মৃত্যু নেই। এই জ্ঞান প্রাপ্ত হলে শোক থেকে মুক্ত হওয়া যায়।

"আশ্চর্যবৎ পশ্যতি...."ভ.গী ২/২৯।

এত শোনার পরেও কেউ আশ্চর্যভাবে আত্মাকে দর্শন করে। ইসকনে প্রবেশের পরে সবাই শোনে "তুমি দেহ নও তুমি আত্মা" কিন্তু উপলব্ধি করা সহজ নয়। ১৯৯১ সালে যখন মায়াপুরে ভক্তি বিজয় ভাগবত স্বামী প্রথম এসেছিলেন তখন গুরু মহারাজ অফিস থেকে ফিরলে জপ ব্যাগ নিয়ে লোটাস বিল্ডিং এর ছাদে জপ করতেন আর বলতেন "আমি দেহ নই আমি আত্মা" তিনি বলতেন আত্মতত্ত্ব বিদ্যা অত্যন্ত রহস্যজনক, শুনলেও সহজে অনুভব হয় না, বারে বারে বলতে বলতে অনুভব হয়।

 যদিও এটা গুরু মহারাজের জন্য নয়, এটা সত্যি আমাদের জন্য। আত্মতত্ত্ব বিদ্যা বুঝতে পারবো যদি গীতা, ভাগবত বুঝতে পারি। শোক, মোহ,ভয় থেকে মুক্ত হতে পারব যদি গীতা ভাগবত ভালো করে শ্রবণ করি।


*শ্রীমৎ ভাগবত তৃতীয় স্কন্ধ চতুর্থ অধ্যায় লোক নাম্বার ২৪*


*অনুবাদ:* ভগবানের শ্রেষ্ঠ ভক্ত উদ্ধব যখন বদরিকা আশ্রমে চলে যাচ্ছিলেন তখন কুরুশ্রেষ্ঠ বিদুর তার প্রতি স্নেহ এবং বিশ্বাসবশত এই কথাগুলি বলেছিলেন।


বিদুরের সাথে উদ্ধবের সাক্ষাৎ হওয়ার পর আত্মীয়স্বজনের কথা আলোচনা করে বিদুর বললেন -"যে জ্ঞান শ্রীকৃষ্ণ তোমাকে দিয়েছেন সেই জ্ঞান আমাকে শোনাও।" উদ্ধব বললেন, সেই জ্ঞান মৈত্রেয় ঋষি আর উদ্ভব শুনেছিলেন কিন্তু মৈত্রেয় ঋষি বয়ঃজ্যেষ্ঠ তাই তিনি শোনাবেন। তিনি বললেন হরিদ্বারের আনন্দঘাটে গিয়ে সেই জ্ঞান শোনার জন্য।

*তাৎপর্য:* বিদুর ছিলেন উদ্ধবের থেকে বয়সে অনেক বড়। পারিবারিক সম্পর্কে উদ্ধব ছিলেন শ্রীকৃষ্ণের সমবয়স্ক ভ্রাতা। আর বিদুর ছিলেন শ্রীকৃষ্ণের পিতা বসুদেবের সমবয়সী। কিন্তু বয়সে নবীন হলেও উদ্ধব ভগবত ভক্তিতে অত্যন্ত উন্নত ছিলেন এবং তাই এখানে তাকে ভগবানের ভক্তদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বলে বর্ণনা করা হয়েছে এবং তাই তিনি উদ্ধবকে এত সম্মানের সঙ্গে সম্বোধন করেছেন। ভক্তদের মধ্যে বিনীত এবং নম্র আচরণের এইটিই হচ্ছে বিধি।

বিদুর সম্মান দিয়ে কথা বলেছেন যেহেতু তিনি ছিলেন শ্রীকৃষ্ণের সখা এবং ভক্ত। উদ্ধব প্রতি সম্মান দিয়ে বলেছেন, এই জ্ঞান তিনি মৈত্রেয় ঋষির থেকে প্রাপ্ত হবেন। এরপর মৈত্রেয় ঋষির কাছে বিদুর এই জ্ঞান শুনবেন এবং জ্ঞান শুনে প্রচার করবেন। *Charity begins at home* অর্থাৎ তিনি তার দাদা ধৃতরাষ্ট্রকে এই জ্ঞান শোনাবেন। ধৃতরাষ্ট্রের ১০০ জন পুত্র নিহত হয়েছেন, যে মেরেছে সেই ভীমের কাছেই তিনি সেবা নিচ্ছেন। তখন বিদুর আবার সেখানে যাবেন এবং তাকে এই জ্ঞান শোনাবেন। 

ব্যাসদেব সমস্ত পুরাণ লিপিবদ্ধ করেছেন নারদ মুনির নির্দেশে বিশেষ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা তিনি নোটবুকের মত ভাগবতে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। শাস্ত্রের নোটবুক হলে ভগবত। শ্রীল প্রভুপাদ আমাদের কৃপা করে মূলত তিনটি গ্রন্থ উপহার দিয়েছেন- গীতা, ভাগবত এবং চৈতন্যচরিতামৃত ।

গীতা শুরু হয়েছে ধর্মক্ষেত্র কুরুক্ষেত্রে, অর্থাৎ ধর্ম করতে হলে গীতা পড়তে হবে আর গীতার অন্তিমে ভগবান উপদেশ দিয়েছেন "মামেকম্ শরণং.." অর্থাৎ সমস্ত পূজা অর্চনা ছেড়ে ভগবানের পূজা করতে হবে। গীতা পড়ে আমরা জানবো কৃষ্ণ ভগবান।

 ভগবতের প্রথম শ্লোক হল "ওম নমো ভগবতে বাসুদেবায়" অর্থাৎ যে কৃষ্ণ কে গীতা পড়ে জেনেছি সেই ভগবানকে প্রণাম করে ভাগবত শুরু হচ্ছে। ভাগবতে ১৮০০০ শ্লোক রয়েছে। ভাগবত পড়ে কৃষ্ণের বিভিন্ন অবতার তত্ত্ব, কৃষ্ণের তিনটি স্বরূপ, দ্বারকার কৃষ্ণ মথুরার কৃষ্ণ এবং বৃন্দাবনের কৃষ্ণকে আমরা জানতে পারবো। বৃন্দাবনের কৃষ্ণই হলো শ্রেষ্ঠ। আমরা বৃন্দাবনে কৃষ্ণের ভক্ত, যা ভাগবতের প্রতিপাদ্য বিষয়।

 ভাগবতের শেষে শুকদেব গোস্বামী বললেন ১৮০০০ শ্লোকের মূল কথা হলো হরিনাম সংকীর্তন। তাই শুকদেব গোস্বামী এবং সুত গোস্বামীর ভাগবত পাঠের শেষে বিশাল হরিনাম সংকীর্তন হয়েছিল।

আর চৈতন্য চরিতামৃতের প্রথম শ্লোকে কবিরাজ গোস্বামী বললেন- হরিনাম যার কাছে পেয়েছি সেই শিক্ষাগুরুগণ, দীক্ষাগুরু আর আরাধ্য দেবতা পঞ্চতত্ত্বকে প্রণাম করে আমি লেখা শুরু করছি। চৈতন্যচরিতামৃতে আছে ১ লক্ষ পয়ার। বাংলায় এটি লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। আমাদের জন্য চারটি খন্ড এবং ইংরেজি ভাষাভাষীদের জন্য নটি খন্ড।

শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুরের সময় বৈষ্ণব ধর্মকে লোকে খারাপ চোখে দেখতো, অপপ্রচার চলত। বাবাজিরা বিধবা নারীদের সাথে লাল কাপড় পড়ে থাকত, এইরকম অপবাদ দেওয়া হতো। কিন্তু ভক্তিবিনোদ ঠাকুর চৈতন্যচরিতামৃত পড়ে বৈষ্ণব ধর্মের সার বুঝে তার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছিলেন। তার বিভিন্ন গীতের মাধ্যম দিয়ে তিনি বুঝিয়েছিলেন বৈষ্ণব ধর্ম কত শ্রেষ্ঠ। চৈতন্যচরিতামৃত পড়ে আমরা জানবো কৃষ্ণকে পেতে গেলে কি কি করতে হবে। পাঁচ রকম ভাব অর্থাৎ শান্ত, দাস্য, সখ্য, বাৎসল্য এবং মাধুর্য। মধুর ভাবে তাকে জানতে গেলে কি করতে হবে মহাপ্রভু নিজে আচরণ করে তা দেখিয়ে দিয়েছিলেন। চৈতন্যচরিতামৃত পড়ে আমরা পাব -কৃষ্ণতত্ত্ব, ভাবতত্ত্ব, ভক্তি তত্ত্ব সার

 প্রেমতত্ত্ব, লীলাতত্ত্ব আর। এই ছয় তত্ত্ব।

 ভক্তিতে কত রস, কত আনন্দ আছে তা আমরা জানতে পারব। এই আনন্দ পেয়ে পরীক্ষিত মহারাজ সাত দিন খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলেন। শুকদেব গোস্বামী তিন দিন ভাগবত শোনানোর পর বললেন -"তুমি তিনদিন ধরে খাচ্ছ না", তিনি বলেছিলেন তার কিছু হবে না কারণ তিনি ভাগবতের অমৃত পান করছেন। 


সেই রসতত্ত্ব চৈতন্য মহাপ্রভু সাড়ে তিন জন ভক্তের সঙ্গে দিনরাত আলোচনা করতেন। মায়াপুর পুরীতে গিয়ে বিভিন্ন রসতত্ত্ব তিনি আলোচনা করতেন। 

কবিরাজ গোস্বামী বলেছেন- 

*যে বা নাহি জানে কেহ*

 *যে বা নাহি বুঝে কেহ*

 *শুনিতে শুনিতে সেহ*

 *কি অদ্ভুত চৈতন্য চরিত*

 *জানিবে রসের রীতি*

 *কৃষ্ণে উপজীবে প্রীতি*

 *শুনিলে বড় হবে হিত*।।


হরে কৃষ্ণ 🙏

Post a Comment

0 Comments