~ শাস্ত্রীয় নিয়মে আরতিতে কোন উপকরণ কতবার দেখাতে হয় || আরতি কি || আরতি কেন করা হয় || শুদ্ধ ও সহজনিয়মে কিভাবে আরতি দেখাবেন ||আরতির  সমস্ত বিধিনিয়ম|| সকাল(ভোর) /সন্ধ্যা আরতির নিয়ম  || সকালের আরতি ||সন্ধ্যা আরতি || তুলসী আরতি || নৃসিংহ আরতি 🌼🙏


★ধাপ অনুযায়ী আরতি উপকরণ এবং নিবেদনের নিয়ম (কতবার ঘুরাবেন) দেওয়া হলোঃ

 (ঘরির কাটা যেদিকে ঘুরে সেইভাবে হাত ঘুরাবেন)


প্রথমে,    #ধুপ           ~  শুধু সর্বাঙ্গে  (৭বার) 


এরপর,  #প্রদীপ        ~  পাদপদ্ম (৪বার) ||  নাভি (২বার) ||  মুখমন্ডল (৩বার) ||  সর্বাঙ্গে (৭বার)


এরপর,  #জলশঙ্খ    ~ শিরোদেশে (৩বার) || সর্বাঙ্গে  (৭ বার)


এরপর,  #বস্ত্র/রুমাল ~ শুধু সর্বাঙ্গে  (৭বার) 


এরপর,  #পুষ্প           ~ শুধু সর্বাঙ্গে  (৭বার) 


এরপর,  #চামর          ~ সময়ানুযায়ী সুন্দরভাবে দুলিয়ে দেখাবেন (যতবার ইচ্ছা) 


এরপর,  #ময়ূর পাখা  ~ সময়ানুযায়ী সুন্দরভাবে দুলিয়ে দেখাবেন (যতবার ইচ্ছা)  [শীতকাল ব্যাতিত]


★লক্ষণীয়ঃ ধুপকাঠি ব্যাবহার করলে ভালো বা সুবিধা হয় আরতিতে।  প্রদীপের শলিতা কাপর দিয়ে না বানিয়ে রুই দিয়ে বানাবেন।রুই দিয়ে সুন্দর করে কিভাবে প্রদীপ বানাতে হয় -ভিডিও লিংক লাগলে বলবেন)।  সামর্থ অনুযায়ী তৈল -(ঘী,  সূর্যমূখী তৈল, তিলের তৈল, সরিষার তৈল, সয়াবিন তৈল যে কোনোটা) ব্যাবহার করতে পারবেন। বাজার থেকে নতুন তৈল নিয়ে আসার পর ভগবানের জন্য আলাদা করে রাখবেন। (উচ্ছিষ্ট তৈল ব্যাবহারে অপরাধ হতে পারে)। পুষ্প স্নান করে(পবিত্র হয়ে)  গাছ থেকে তুলবেন স্নানের আগে তুললে সেটা ভগবানকে দেওয়া যাবে না। আরতি দেওয়ার সময় যখন যে আরতি দেখাচ্ছেন সেই আরতি গাইবেন, না পারলে মোবাইলে অডিও করে বাজাবেন।(কখন কোন আরতি গাইতে হবে তার অডিও লাগলে লিংক লাগলে কমেন্টস এ জানাবেন)   আর সমস্ত উপকরণ  আরতিতে  কতবার দেখাচ্ছেন তা ঠিকভাবে হচ্ছে কিনা খেয়াল রাখবেন। 

পুষ্প দেখানোর পর ভগবানের চরণে দিবেন। আর ১টা পুষ্প রেখে দিবেন ভক্তদের জন্য।  ভগবান/তার যত অবতার আছে অর্থাৎ বিষ্ণুতত্ত্ব যারা,  তাদেরকে একই নিয়মে আরতি দেখাবেন (রাধামাধবকে যতবার দেখাবেন অন্য সকল বিষ্ণুতত্ত্বকে ততবার) ।  গৌরভপার্ষদের ডান দিকের দুইজন, সমস্ত দেবদেবীগন, ষড়গোস্বামী, গুরুদেবগণ সকলেই জীবতত্ত্ব। তাই যে কোনো উপকরন ভগবানকে দেখানোর পর তাদেরকে(জীবতত্ত্বকে) নিজ ইচ্ছানুসারে ৩বার /৫বার দেখাবেন, তুলসী মহারাণীকেও এই নিয়মে দেখাতে পারেন । আর এটা অবশ্যই লক্ষ্য রাখবেন আগে সমস্ত বিষ্ণুতত্ত্বকে দেখাবেন এরপর জীবতত্ত্বকে ঐ বিষ্ণুতত্ত্বের প্রসাদী জিনিস ই অফার করবেন।  অনেকে জীবতত্ত্বকে দেখানোর পর আবার বিষ্ণুতত্ত্বকে দেখায়। এটা কিন্তু অপরাধ।  খেয়াল রাখবেন বিষয়গুলি।


★ভোরের(সকালের) মঙ্গল আরতি এবং সন্ধ্যা(রাতের) গৌর আরতি এইভাবেই এই উপকরণ দিয়ে দেখাবেন।  


★ভক্তরা পাশাপাশি তুলশি ও নৃসিংহ আরতিও করে থাকেন এর জন্য যা যা লাগেঃ- 


★নৃসিংহ আরতি নিয়মঃ 

উপকরণঃ কর্পুরের প্রদীপ,  অগুরা বা সুগন্ধী (রুই এর মধ্যে), চামরপাখা,  ময়ূরপাখা 


কতবার দেখাবেন/ঘুরাবেনঃ- 


কর্পূরের প্রদীপ ~  পাদপদ্ম (৪বার) ||  নাভি (২বার) ||  মুখমন্ডল (৩বার) ||  সর্বাঙ্গে (৭বার)

অগুরা/সুগন্ধি  ~ সর্বাঙ্গে ৭বার (তারপর ভগবানের হাতে এবং নাসাতে স্পর্শ করবেন)

          চামর     ~ সময়ানুযায়ী সুন্দরভাবে দুলিয়ে দেখাবেন (যতবার ইচ্ছা) 

     ময়ূর পাখা  ~ সময়ানুযায়ী সুন্দরভাবে দুলিয়ে দেখাবেন (যতবার ইচ্ছা)  [শীতকাল ব্যাতিত]


★তুলশী আরতি নিয়মঃ 


উপকরণঃ ধুপকাঠি, প্রদীপ, পুষ্প 


কতবার দেখাবেন বা ঘুরাবেনঃ-


সবগুলি উপকরণই সর্বাঙ্গে ৭ বার করে।  


★লক্ষণীয় ২ঃ- 


ভগবানের আরতির প্রদীপ, নৃসিংহ আরতি প্রদীপ, তুলসী আরতি প্রদীপ আলাদা থাকা উচিৎ। (সামর্থ অনুযায়ী) 

আচমন পাত্র ভগবান এবং  তুলশীর জন্য আলাদা আলাদা রাখবেন।  


প্রত্যেক উপকরণ দেখানোর আগে এবং পরে আচমন করিয়ে নিবেন (যাস্ট পাত্র থেকে জল ছিটা দিয়ে) 


কোন আরতিতে কোনটা গাইবেন ঃ- 

মঙ্গল আরতি/সকালের আরতিঃ- গুর্বাষ্টকম (সংসার  দাবানল লীঢ় লোক, ত্রানায় কারোণ্য ঘনাঘনত্যম) 

নৃসিংহ আরতিঃ নমস্তে নরসিংহায়... 

তুলসি আরতিঃ তুলসী কৃষ্ণ প্রেয়সী... 

সন্ধ্যা আরতি /গৌর আরতিঃ জয় জয় গৌরাচাদের আরতিকো শোভা... 


★🍀🌿 🌼 আরতি কি / কেন আরতি করা হয় ?


“আ” অর্থে ব্যাপ্তি; “রতি” অর্থে প্রেম,

ভালাবাসা ও অনুরাগ। যে মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শ্রীভগবানের নিজের প্রীতি বর্ধিত হয় অর্থাৎ তিনি ভক্তের প্রতি প্রসন্ন বা সন্তুষ্ট হন এবং ভগবানের প্রতিও ভক্তের প্রেম, প্রীতি, ভালবাসা, ভক্তি ও অনুরাগ বৃদ্ধি পায় তাকে আরতি বলে।


আরতিকে নীরাজন বলা হয়। একান্ত মনো নিবেশ করিয়া ভগবান কে ধূপ, দীপ, পুষ্প, প্রদীপ, চামর, অর্ঘ্যপাত্র, ব্যজন ইত্যাদি দ্বারা ভগবান কে আরতি করতে হয় ।।

.

- শ্রী বিগ্রহের পদতলে ৪ বার, নাভিদেশে ২ বার, মুখমন্ডোলে ৩ বার, সর্বএ গাত্রকে ৭ বার করিয়া এক এক প্রকারের আরতি করা হয় ।।

স্বয়ং দেবাদিদেব মহাদেব পার্বতী দেবী কে বলেছেন যে, ভগবানের পূজা যদি মন্ত্রহীন বা ক্রীয়া হীন হয়, তবে তা আরতির দ্বারা

সর্বপ্রকারে সম্পূর্ণতা প্রাপ্ত হয় ।।

.

- স্কন্দ-পুরানে বনর্না আছে যে কেউ যদি আরতি দর্শন করেন বা আরতিতে অংশ গ্রহণ করেন,নৃত্য করেন তাহলে ঐ ব্যক্তি কোটি কোটি বছরের সন্চিত সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হন। তিনি যদি এমনকি ব্রক্ষহত্যার মতো জগন্যতম পাপ থেকে মুক্ত হন।।

.

- তন্ত্রশাস্রে বলা হয়েছে,ভগবানের আরতির পরে কেউ পুষ্প ও প্রদীপ, ধূপ নাসারন্ধ্রে প্রবেশ বা গাত্রকে আভা গ্রহন করলে তাঁর সমস্থ পাপের বন্ধন থেকে মুক্ত হন।।


- বরাহ পুরানে বলা হয়েছে যে,কেউ যদি আরতির সময় শ্রী ভগবানের শ্রী বিগ্রহ বা মুখমন্ডল আনন্দ ভাবে দর্শন করেন, শ্রী যমরাজ তাকে দেখে ভয় পায় এবং মৃত্যুর পর তার বৈকুণ্ঠধাম প্রাপ্ত হয়।।

.

- তাই আমাদের সকলের কর্তব্য বা উচিত শ্রীভগবানের আরতিতে অংশগ্রহণ, কীর্তন, দর্শন,ও নৃত্য করন। তাতে ভগবান সন্তুষ্ট ও আনন্দ হন ।।

যখন ভগবানের আরতি করা হয়, সকল দেব ও দেবী সেখানে উপস্থিত হইয়া ভগবানের আরতি দর্শন করেন। তবে আরতি চলাকালীন ভগবান কে প্রনাম করতে নেই ।।

🌿🍀


★ সমগ্র আরতি বিস্তারিত বলা হলোঃ- 


শাস্ত্রীয় বিধি অনুসারে আরতি দেখানোর নিয়মঃ- 


(১)নীচের দ্রব্যগুলি একটি থালায় সাজিয়ে পূজাবেদীর বামদিকে রাখতে হয়ঃ

ক) তিনটি ধূপকাঠি

খ) ঘৃত প্রদীপ ( একটি বা সম্ভব হলে পাঁচটি পলিতা সহ )

গ) বিগ্রহগনের অভিষেকের জন্য একটি জল-শঙ্খ

ঘ) একটি সুন্দর বস্ত্র বা রুমাল

চ) এক রেকাবি সুরভিত ফুল


(২)পূজাবেদীর কাছাকাছি আরও যে দ্রব্যগুলি রাখতে হবে, তা হলঃ

ক) চামর

খ) ময়ূর পালকের পাখা

গ) ঘন্টা

ঘ) পঞ্চপাত্র

ঙ) বাজানোর শঙ্খ

চ) আসন ( আরতির জন্য )


(৩)আচমনঃ

(ক) পূজা শুরু করার পূর্বে নিজের শুদ্ধি করণের জন্য ও তিলক দেওয়ার পর্বে আচমন করতে হয় কিভাবে আচমন করবেন তা জানুনঃ

ক) তিনফোটা জল পঞ্চপাত্র (বিশেষ তামার চামচ) থেকে নিয়ে ডান হাতের তালুতে রাখতে হয়।এবং “ওঁ কেশবায় নমঃ” মন্ত্রে সেটা চুমুক দিতে হয়। এবার ঐ হাতের তালুতে আরেক ফোঁটা জল দিয়ে তা একদিকে ফেলে দিতে হয়।

খ) আরও দু’বার ঠিক এরকম করতে হয়, তবে দ্বিতীয় বারের জন্য মন্ত্র “ওঁ নারায়ণায় নমঃ।এবং তৃতীয় বারের জন্য মন্ত্র “ওঁ মাধবায় নমঃ”।

গ) সবশেষে আগের মতো তিন ফোঁটা জল নিয়ে তা একদিকে ফেলে দিতে হয় এবং সেই সাথে এই মন্ত্রটি জপ করতে হয়, “ওঁ গোবিন্দায় নমঃ”।

ঘ) এরপর প্রণাম নিবেদন করতে হয় এবং পূজা শুরু করার অনুমতিদানের জন্য গুরুদেবকে অনুরোধ করতে হয়।


(৪) আরতির পর্যায়গুলি নিম্নরূপঃ

ক) তিনবার শঙ্খধ্বনির মাধ্যমে আরতির আরম্ভের সংকেত জ্ঞাপন করতে হয়। পঞ্চপাত্র থেকে জল নিয়ে শঙ্খটি তখনই ধুয়ে রাখতে হয়।

খ) প্রতিটি দ্রব্য আরতিতে ব্যবহারের পূর্বে ডান হাত শুদ্ধ করে নিতে হয়। পন্থা হল ডান হাতে পঞ্চপাত্র থেকে তিন ফোটা জল দিতে হয়। প্রতিটি দ্রব্য একই প্রক্রিয়ায় শুদ্ধ করতে হয়।

গ) আরতির সময় ধূপ নিবেদন করতে হয় প্রতি বিগ্রহের সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গে সাতবার ( বিগ্রহ-অঙ্গের চতুর্দিকে বৃত্ত রচনার মাধ্যমে)

ঘ) ঘৃত প্রদীপও প্রতি বিগ্রহের পাদপদ্মে চারবার, নাভিপদ্মে দু’বার, মুখপদ্মে প্রদীপ তিনবার এবং বিগ্রহের সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গে সাতবার (বৃত্ত রচনার মাধ্যমে ) নিবেদন করতে হয়।

ঙ) অভিষেকের উদ্দেশ্যে রাখা জল জলশঙ্খের মধ্যে ঢালতে হয়। তারপর জলশঙ্খ বিগ্রহগণের মস্তকের উপরিভাগে সাতবার আবর্তিত করার মাধ্যমে নিবেদন করতে হয়।

চ) বস্ত্রখণ্ড  

ঘৃত প্রদীপের নিয়মে নিবেদন করতে হয়।

ছ) পুষ্প চারবার পাদপদ্মে নিবেদন করতে হয়।

জ) তারপর যত্ন সহকারে দোলানের মাধ্যমে চামর নিবেদন করতে হয়।

ঝ) একইভাবে ময়ূর-পাথার ব্যাজন করতে হয়, তবে শীতের মাসগুলোতে নয়( অর্থাৎ সাধারনত কার্ত্তিক থেকে শিবরাত্রি পর্যন্ত ময়ূর পাখা নিবেদন করা হয় না)।

ঞ) সমস্ত দ্রব্যগুলি সর্বপ্রথম গুরুদেবকে নিবেদন করতে হয়। তারপর পরমগুরুকে এবং বাঁদিকে থেকে শুরু করে পরপর বিগ্রহগণকে নিবেদন করতে হয়। যেখানে তুলসীদেবী বিরাজিত থাকবেন, সেখানেও অবশ্যই এই সমস্ত দ্রব্যদি তাকে নিবেদন করতে হবে, প্রতিটি তিনবার করে বৃত্ত করে। যেখানে ব্যাসাসন থাকবে সেখানেও এরকম করতে হবে। অবশ্যষে প্রত্যেক দ্রব্য চারটি বৃত্তের মাধ্যমে সমবেত ভক্তগণকে নিবেদন করতে হয়।

ট) প্রতিটি দ্রব্য নিবেদনের সময় বাম হাতে সর্বক্ষণ ঘন্টা বাজানের কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে।

ঠ) তারপর (ক) এ প্রদর্শিত নিয়মে পুনরায় শঙ্খধ্বনি করতে হবে।

ড)তারপর প্রেমধ্বনি করতে হবে।

ঢ) পরিশেষে পূজাবেদী ও মেঝে মুছে দিতে হয়।

(৫)যেখানে পূর্ণ আরতি করা সম্ভব নয়, সেখানে নিম্মোক্ত দ্রব্যগুলি দিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত আরতি নিবেদন করা যেতে পারে।

* ধূপ * ঘৃত প্রদীপ * পুষ্প

((৬))বিগ্রহ পূজার আরও অনেক বিস্তৃত বিধি নিয়মাদি রয়েছে। যে সব ভক্ত বিশদভাবে সেগুলি জানতে আগ্রহী, তারা মন্দিরের প্রধান পূজারীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।


(৭)স্মরণ রাখা উচিত যে, বিগ্রহ পূজার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আন্তরিক শ্রদ্ধাভাব ও ভক্তির সঙ্গে সমস্ত দ্রব্যগুলি নিবেদন করা।


হরে কৃষ্ণ, কারও কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্টস এ করতে পারেন।  


আপনাদের সেবক ভক্তি বেদান্ত মধুসূদন মহারজ 


#আরতি #আরতি_নিয়ম 

(শেয়ার করে টাইমলাইনে রেখে দিতে পারেন, উপকার হতে পারে)

Post a Comment

0 Comments