'কৃষ্ণভাবনার মাধুর্য্য' গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃত
একবার রামানুজ এক ভক্তকে দেখেছিলেন সে একটা সাপের মুখের মধ্যে তার আঙুল ঢোকাচ্ছে। সাপটা খুব কুণ্ডলী পাকিয়ে আছাড়-পিছাড় খাচ্ছিল, যেন দারুণ কষ্ট পাচ্ছে। তাই রামানুজ বিস্মিত হয়ে ভাবলেন, কেন ভক্তটি সাপটিকে নির্যাতন করছে। পরে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ঐ গোখরা সাপটার মুখের মধ্যে আঙুল ঢুকিয়ে দিচ্ছেলে তুমি। দেখে মনে হচ্ছিল তুমি সাপটাকে খুব কষ্ট দিচ্ছিলে, কী জন্য বল তো? তিনি সর্বদা একটা প্রশ্নের মাধ্যমে কথা বলতেন। তিনি তিরস্কার না করে কেবলই প্রশ্ন করলেন। ভক্তটি বলল, ‘আহা! সাপ বেচারি কোনও ফল গিলে ফেলেছিল, সেটা গলার মধ্যে আটকে গিয়ে ওর-দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। তাই ওর গলার মধ্যে আমার আঙুলটা গলিয়ে দিয়েছিলাম ফলটা বের করে আনতে, সাপটার গলা পরিষ্কার করে দিতে। বেচারি প্রাণীটার কষ্ট দেখে আমি সইতে পারছিলাম না।' তখন রামানুজ বললেন, ‘তোমার জীবনটা বিপন্ন করছিলে কেন? ওটা তোমাকে কামড় দিতেও পারত।’ ভক্তটি বলল, ‘ওর দুরাবস্থা দেখে সইতে পারিনি।’
এই বেচারি যা কিছু করেছিল, তা নিয়ে সে যা ভাবছিল, অন্যসকলের ভাবনার চেয়ে তা ছিল একেবারেই বিপরীত ধরনের ভাবনা। দু-তিনটি ক্ষেত্রে লোকে তাকে নিন্দাই করছিল, কিন্তু আসলে তার ভাবনার মধ্যে ছিল একটা সম্পূর্ণ বিপরীত ধর্মী উপলদ্ধি। কখনো বা আমরা মনে করতে পারি, ‘ঐ তো প্রবীন ভক্তটিতো এইভাবে করছেন,' কিন্তু সত্যই আমরা তাঁর অভিলাষ ঠিক মতো বুঝতে পারি, তবে আমরা দেখতে পাব যে, তিনি আসলে এক অতি শুদ্ধ স্তরে অধিষ্ঠিত হয়ে একটা কিছু করছেন। তাই অকস্মাৎ একটা সিদ্ধান্ত করে নিয়ে নিন্দামন্দ শুরু না করে, আমাদের যদি কোন দ্বিধা দ্বন্দ্ব থাকে তো, বিনয় নম্রতা সহকারে তাঁকে জিজ্ঞাসা করতে পারি এবং ব্যাপারটা বুঝে নিতে পারি।"
0 Comments