মা গঙ্গার মহিমা বেশি না যমুনার মহিমা বেশি। একদিন সম্রাট আকবর সমস্ত মন্ত্রী মহোদয় কে ডেকে বললেন। আমার মনে বড় সন্দেহ বিভিন্ন প্রকার নদী আছেন সর্বশ্রেষ্ঠ কোন নদী আমাকে এক্ষুনি সঠিক উত্তর কে দিতে পারবে আমাকে এক্ষুনি জানাও। আমার মন বড় চঞ্চল হচ্ছে কেন। এই রাজ্যের অনেক সাধু শান্ত কে আহবান করলেন সবার কাছে জিজ্ঞাসা করলেন আপনারা কৃপা করে বলুন। এই সপ্ত নদীর ভিতরে কোন নদী সর্বশ্রেষ্ঠ। এক এক জন এক এক প্রকার বললেন। কেউ বললেন গঙ্গা শ্রেষ্ঠ সিন্ধু নদী শ্রেষ্ঠ। ইত্যাদি বিভিন্ন প্রকার বললেন। কিন্তু বাদশাহ আকবরের মনে তৃপ্তি পাচ্ছেন না। এমন কি ঘোষণা করলেন এর সঠিক উত্তর দিতে পারলে সে যা চাইবে আমি তাই দিব। এমন সময় একজন সাধু বললেন বৃন্দাবনে সনাতন গোস্বামী একজন বিশিষ্ট সাধু আছেন অবশ্যই তিনি এই সমাধান করতে পারবেন।সাধু যে কত দয়ালু হন দেখুন। সনাতন গোস্বামীকে আহ্বান করলেন। এত বড় রাজসভার মাঝে জিজ্ঞাসা করলেন বাদশা আকবর। কৃপা করে বলুন এই সপ্ত নদীর ভিতরে কোন নদী শ্রেষ্ঠ এবং কেন। সনাতন গোস্বামী হাত জোড় করে বললেন। যমুনা নদী সর্বশ্রেষ্ঠ। কেন জানেন। যে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কে পাবার জন্য কত মুনি কত তপসী সাধন করছেন তার চরণ পাবার জন্য। কিনা জানি সৌভাগ্যবান যমুনা মাইয়া। নন্দ মহারাজ যখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কে মস্তকে ধারণ করে যমুনা নদী পার হচ্ছিলেন। তখনই যমুনা মা এই ভগবানের চরণ ধরে বলছিলেন প্রভু তোমাকে পেয়েছি আর ছাড়বো না। এমনকি যমুনা আনন্দে তরঙ্গ উতাল পাতাল করছিলেন। বাধ্য হয়ে ভগবান কথা দিয়েছিলেন আমাকে ছেড়ে দাও আমি কথা দিলাম তোমার বক্ষ স্থলে আমি আমার শ্রীমতি রাধারানী সহ নৌকা বিহার করব। তা না হলে আমার নরলীলা ব্যর্থ হবে আমাকে ছেড়ে দাও ।এই কথা শোনা মাত্র আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে বললেন গোসাইজী তুমি আমার কাছে কিছু চেয়ে নাও ।আমি তোমার প্রতি প্রসন্ন হয়েছি। তখন সনাতন গোস্বামী বললেন। আমার যে প্রাপ্য আপনার কাছে রাখলাম সময় হলে অবশ্যই নেব। তবে এই কথা যেন ভুলে যাবেন না। কালক্রমে বাদশা আকবরের একটি মাত্র পুত্র সন্তান। তার নাম নাসির মাহমুদ। রাজ্যে এমন অপরাধ করেছে যে তার একমাত্র দন্ড ফাঁসি। সমস্ত রাজ্যে বলা হলো বাদশা নিজের হাতে করে তার সন্তানকে সাজা ফাঁসি দিবেন। সমস্ত রাজ্যের প্রজাগন দুঃখিত হয়েছে। এমন সময় এই খবর সনাতন গোস্বামী শোনা মাত্রই রাজ দরবারে ফাঁসির মঞ্চে এসে বললেন। রাজা মশাই আমার সেই দিনের রাখা সেই সম্পত্তি আমাকে দান করুন। বাদশা বললেন বল কি চাও। তখন সনাতন গোস্বামী তিনবার অঙ্গীকার করে নিয়ে বললেন। আপনার একমাত্র সন্তানকে আমি প্রাণভিক্ষা চাই। সবাই অবাক হলেন সাধু এত দয়ালু। বাদশায়ের মুখ অবরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন চোখে জল ভরা। সনাতন গোস্বামী নাসির মাহমুদকে আলিঙ্গন করে বললেন আজ থেকে তুমি কার। নাসির মাহমুদ বললেন আপনি আমার নতুন জীবন দান দিলেন ।আমি আজ থেকে আপনার। এই নসির মাহমুদের মাধ্যমে যত পথ পদাবলী সবই রচনা করেছিলেন। এই হলো আমাদের সনাতন গোস্বামীর অবদান। সাধু কত দয়ালু হতে পারে তার প্রমাণ।

Post a Comment

0 Comments