ধারাবাহিক শ্রী জগন্নাথ লীলা মহিমা। ♥ পর্ব - ১৯ ♥ আজকের লীলাঃ জগন্নাথদেব, বলভদ্র ও সুভদ্রার জ্বর লীলা

ধারাবাহিক শ্রী জগন্নাথ লীলা মহিমা।
 পর্ব - ১৯
আজকের লীলাঃ জগন্নাথদেব, বলভদ্র ও সুভদ্রার জ্বর লীলা 



জগন্নাথদেব, বলভদ্র ও সুভদ্রার বাৎসরিক স্নান উৎসবের দিন পুরী এক অন্য রকম চেহারা নেয় । ঘড়া ঘড়া জল এনে স্নানবেদীতে তিন বিগ্রহ কে স্নান করানো হয় । তাঁদের দিব্যতনু বেয়ে সেই জল নেমে আসে । তবুও জল ঢালার বিরাম নেই । এবং এই স্নানের পরেই ভক্তের বিশ্বাসে তাঁদের জ্বর আসে । সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের ও জ্বর আসে । আসলে এ হচ্ছে জগন্নাথ দেবের নর লীলার আর এক রূপ । জ্বর আসার পর তিনি পটলের বালিশ ও কল্মি শাকের বিছানায় শয়ন করেন ,জ্বর সারানোর জন্য তিনি যে পাচন খান সেও তো সাধারন মানুষের মতোই একটা ব্যাপার । জ্বরজারি হলে আমরাও যেমন ওষুধপত্র খাই ।



জগন্নাথ দেবের জ্বর হয় কেন ? এরও রহস্য আছে । যশোদানন্দন শ্রীকৃষ্ণ শুনলেন তার রাধারানী কে কলঙ্কিনী বলেছেন ব্রজবাসীরা । এ কথা শুনে মনের দুঃখে তিনি বাড়ী এসে শুয়ে পড়লেন । গায়ে জ্বর । মা যশোদা এসে ছেলের গায়ে হাত দিয়ে দেখলেন জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে । সঙ্গে সঙ্গে ডেকে পাঠালেন নন্দ মহারাজাকে । এর পর একের পর এক বৈদ্য ডেকে আনা হল । কিন্তু জ্বর আর নামে না । এরপর সমস্ত বৈদ্য মিলে নন্দ মহারাজকে বললেন , ‘ আমরা তো অনেক চেষ্টা করলাম । আপনি কোন বড় বৈদ্য কে ডেকে আনুন ।সুযোগ বুঝে শ্রীকৃষ্ণ ছদ্দবেশ ধারন করলেন । এক অতি বৃদ্ধ বৈদ্যের বেশে এসে মা যশোদাকে বললেন , ‘ মা ! এ সাধারন জ্বর নয় । এই জ্বর সারাতে পারে যদি কোনও পুণ্যবতী সতীলক্ষ্মী এয়োস্ত্রী শতছিদ্র কলসে সূর্য ওঠার আগে যমুনার জল চোখ বন্ধ করে এনে সেই জলে তোমার ছেলেকে স্নান করাতে পারেন

মা যশোদা ও বাবা নন্দ মহারাজ সকল ব্রজবাসীকে জানিয়ে দিলেন সে কথা । কিন্তু কেউ আর ভয়ে এগিয়ে আসে না ।

শতছিদ্র কলসে কখনও জল বহন করা সম্ভব ? অবশেষে সমস্ত লোকলাজ ভয় ত্যাগ করে রাধারানী তাঁর প্রানাধিক সখা কৃষ্ণের জন্য শুধু বিশুদ্ধা ভক্তি সম্বল করে শতছিদ্র যুক্ত কলসে যমুনার জল বয়ে নিয়ে এলেন । এবং সেই জলে স্নান করিয়ে দিলেন কৃষ্ণকে। স্নানের পর দেখলেন সত্যিই আর নেই । ব্রজবাসীগণ স্বীকার করলেন শ্রী রাধিকা কলঙ্কিনী নন । নইলে জ্বর ভালো হয় কি করে ?

ভগবৎতত্ত্বে বর্ণিত রাধারানীর প্রেম শ্রী জগন্নাথ মন্দিরের এই স্বর্ণকূপে জল হয়ে আছে । সেই জলে স্নান করে জগন্নাথরূপী শ্রীকৃষ্ণের অঙ্গে পবিত্র প্রেমের প্রবল উত্তাপ আসে । এই জ্বরকে ভগবৎ ঐশ্বর্যতত্ত্বে প্রেমের জ্বর বলা যেতে পারে । শ্রীবৃন্দাবনে শ্রীরাধিকার পবিত্র স্পর্শে যমুনার জলে বিশুদ্ধা ভক্তি মিশ্রিত হয়ে শ্রীকৃষ্ণের শ্রীঅঙ্গে পড়া মাত্রই এই জ্বর প্রকাশ পায় । অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণের রাধাপ্রেমেই স্নানযাত্রায় জগন্নাথদেবের প্রবল জ্বর হয়ে দেখা দেয় ।




Post a Comment

0 Comments