এই ক্লাসের অনুবাদ
অনুবাদকঃ শ্রীমতি কৃপাবতী রোহিনী দেবী দাসী
নতুন বছরে আমরা আজ কিছু সংকল্প নিয়ে কথা বলব। কি করলে আমরা ভগবানের আরও নিকটে যেতে পারব। কি করলে আমরা ভগবানের অহৈতুকি কৃপা লাভ করতে পারব।
আসলে ভগবান আমাদের থেকে খুব একটা দূর না। তিনি আমাদের হৃদয়েই অবস্থান করছেন, কিন্তু আমরা তাকে উপলব্ধি করতে পারছি না। কারণ আমাদের হৃদয়ে অনেক মল(ময়লা) আছে। তাই ভগবান কে উপলব্ধি করতে হলে আগে আমাদের হৃদয়ের ময়লা পরিষ্কার করতে হবে। ঠিক যেমন একটা গাড়িতে একই সাথে ব্রেক ও এক্সিলেটর চাপলে গাড়িটি সামনে বেশিদূর অগ্রসর হতে পারবে না, ঠিক তেমনি যদি কেউ একইসাথে ভক্তি মূলক ও পাপ কাজ একসাথে চালাতে থাকে তারা বেশিদূর অগ্রসর হতে পারবে না। তাই আমাদের কে একদিকে যেমন ভজন করতে হবে, অন্যদিকে তেমনি ভাবে পাপ কাজ থেকে নিজেদের যতটা সম্ভব বিরত রাখতে হবে।
মন,বুদ্ধি ও অহংকার এর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আমরা অনেক সময় কনফিউড হয়ে যাই, আমরা কি ইন্দ্রিয় ভোগ করব নাকি ভগবানের ভক্তি করব!
তো এক্ষেত্রে ভক্তি জীবনে অগ্রসর হতে আমরা ৬ টি কৌশল বা পন্থা অবলম্বন করতে পারি।
১.বুদ্ধি বৃদ্ধি. ভক্তি জীবনে অগ্রসর হতে হলে আমাদের মন ও অহংকার কে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তার জন্য আমাদের বুদ্ধি বৃদ্ধি করতে হবে। শাস্ত্র অধ্যয়ন এর মাধ্যমে আমরা আমাদের বুদ্ধি বাড়াতে পারি। শাস্ত্রই আমাদের বিপদে বুদ্ধিকে সঠিক মার্গে পরিচালিত করবে। শাস্ত্র থেকেই আমরা উচিত অনুচিত সবকিছু সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাব।
২.ইমোশনাল এটাচমেন্টঃ কৃষ্ণভাবনামৃত আমরা একা একা অনুশীলন করতে পারব না। আমাদের অবশ্যই আশেপাশের মানুষদের ভক্ত বানাতে হবে কিংবা তাদের ভক্তি জগতে আনার চেষ্টা করতে হবে। যদি আমরা একা চলি তাহলে হয়তো দ্রুত চলতে পারব,কিন্তু বেশিদূর যেতে পারব না। অন্যদিকে যখন সবার সাথে দলবদ্ধ ভাবে এগোবো তখন হয়তো ধীরে ধীরে যাওয়া হবে কিন্তু আমরা ঠিক গন্তব্যে পৌছে যাব। আজ আমরা কৃষ্ণভাবনামৃতে যাদের আমাদের সঙ্গী করব, আমাদের যেকোনো প্রয়োজনে ও বিপদে আপদে তাদেরই আমরা পাশে পাব।
৩.আধ্যাত্মিকঃ আমরা আমাদের ভেতর সদগুন গুলো বাড়াতে হবে। কারো সমালোচনা না করা, সবার সাথে সদ্ভাব বজায় রাখা, ক্ষমা করে দেয়া, সহজ চিন্তা করা। কেউ যদি আমাদের সমালোচনা করে উল্টো হাসিমুখে তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। এভাবে আমরা একজন উন্নত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠব।
৪.প্রতিকূল পরিবেশে অভিযোজনঃ ঠিক যেমন প্রতিদিন যুদ্ধ না হলেও প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের প্রতিদিনই বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও এক্সারসাইজ এর মধ্য দিয়ে যেতে হয়। যাতে যেদিন যুদ্ধ হবে তখন তারা সহজে পারফর্ম করতে পারে, যাতে তাদের সেখানে কোন অসুবিধায় পড়তে না হয়। তেমনি আমাদের জীবনেও প্রতিকূলতা আসতে পারে, সে বিরূপ পরিবেশে খাপ খাওয়াতে আমাদের সহ্যশক্তি বাড়াতে হবে। আমাদেরকে আমাদের কমফোর্ট জোন থেকে বের হতে হবে। কারণ আঘাতে আঘাতেই মানুষ খাঁটি সোনা হয়। তাই প্রতিকূল পরিবেশ আমাদের ভাল ভক্ত হতে সাহায্য করবে।
৫.লক্ষ্য নির্ধারণঃ বলা হয় যে সঠিক লক্ষ্য নির্ধারণ ও উত্তম পরিকল্পনা কাজের অর্ধেক সম্পন্ন করার সমান। আমাদের কে আগে লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে যে, আমরা জীবনে কি হতে/পেতে চাই, তারপর সেই লক্ষ্যে অগ্রসর হতে হবে। খুব খুব সচেতনতার সাথে লক্ষ্য নির্ধারণ করে তারপর সমস্ত বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে সে লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ করে যেতে হবে।
৬.কৃতজ্ঞতাঃ কৃতজ্ঞ মানুষ মাত্রই সুখী মানুষ। ভগবান যে আমাদের এত্ত সুন্দর একটা দেহ দিয়ে এত্ত সুন্দর একটা জগতে পাঠিয়েছেন তার জন্য আমাদের ভগবান এর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে, আমাদের খুশি থাকতে হবে।
আমাদের জীবনে মানুষের ছোট ছোট উপকার গুলোর জন্য ও আমাদের কৃতজ্ঞ থাকতে হবে।
তো এই ৬ টা মন্ত্র আমরা নতুন বছর চেষ্টা করব। আমরা শাস্ত্র পড়ব, সবার সাথে ভাল ব্যবহার করব,কেউ সমালোচনা করলেও তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব, আমাদের লক্ষ্য গোলক বৃন্দাবন, লক্ষ্যে অটল অবিচল থাকব, এত্ত সুন্দর একটা জীবনের জন্য সর্বক্ষণ ভগবানের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে যাব।
শ্রীমতি নিতাই সেবিনী দেবী দাসী
১লা জানুয়ারি ২০২৩
ভক্ত সংঘ অনলাইন ক্লাস
0 Comments