এক মা নিজের পূজা-পাঠ সেরে,বিদেশে থাকা নিজের ছেলেকে "ভিডিও কল" করে,কথার ফাঁকে জিজ্ঞাসা করে বসলেন-

" অর্থ রোজগারের পাশাপাশি পূজাপাঠও করছো তো?


ছেলের দাম্ভিক উত্তর-

মা তুমি জানো,আমি এক জীববৈজ্ঞানিক। আমি এখন আমেরিকায়,মানব বিবর্তনের উপর কাজ করছি। 

এই বিবর্তনের সিদ্ধান্ত কি?

চার্লস ডারউইন...

মা,তুমি জানো তার সম্পর্কে?


তার মা মৃদু হাসলেন,এবং উত্তর দিলেন-

হ্যাঁ,আমি জানি ডারউইন সম্পর্কে। তবে তিনি যা-ই ব্যাখ্যা দিয়েছেন,তা সকলই সনাতন শাস্ত্রগ্রন্থের বহু পুরানো অধ্যায়।

ছেলে ব্যাঙ্গ করে বলল-হতে পারে মা?

তার মা সেই ব্যাঙ্গের প্রতিবাদ করে বললেন- যদি তুমি প্রকৃতই নিজেকে বুদ্ধিমান ভাবো...

আচ্ছা,তুমি কি দশাবতার সম্পর্কে শুনেছ?

বিষ্ণুর দশ অবতার?


হ্যাঁ শুনেছি। কিন্তু আমার পরীক্ষা-নীরিক্ষার সঙ্গে দশাবতারের কি সম্পর্ক?

সম্পর্ক অবশ্যই আছে বেটা। শোনো,আমি তোমাকে বোঝাচ্ছি- তুমি এবং ডারউইন এখনও কোন বিষয়গুলি সম্পর্কে অনভিজ্ঞ আছো।


দশ অবতারের প্রথম অবতার ছিল-মৎস্য অর্থাৎ মাছ।

এটা সকলকে বোঝাতে যে,জীবন জল থেকেই প্রথম শুরু হয়েছে।

ঠিক কি না?

এবার পুত্র মনোযোগ সহকারে শুনতে লাগল।


এরপর দ্বিতীয় অবতার হলো-কুর্ম অর্থাৎ কচ্ছপ।

অর্থাৎ জীবন এবার জল থেকে ভূমির দিকে আসা শুরু করল।

প্রথম অবস্থায় উভচররূপে ( Amphibian) রইল। এই কচ্ছপই-

বিবর্তনকে সমুদ্র থেকে ভূমির দিকে নির্দেশ করছে।


তৃতীয় হলো-বরাহ অবতার। যার দ্বারা জঙ্গলের জন্তুদের বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ জীব তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে জঙ্গলে ধাবিত হলো। তাদের বুদ্ধি তখনও তেমন উন্নত নয়। বিজ্ঞানের ভাষায় তোমরা যাদের "ডাইনোসর" বলো। 

অর্থাৎ সরীসৃপ ও পক্ষীর মধ্যবর্তী অবস্থা।

ছেলে এবার বড় বড় চোখ করে শুনতে লাগল,এবং "হ্যাঁ" বলে সহমতিও জানাল।


চতুর্থ অবতার হলো নৃসিংহ-অর্ধেক মানব,অর্ধেক পশু। 

যা ধীরে ধীরে জংলী জীব থেকে,উন্নত বুদ্ধিমান জীবের বিবর্তনকে নির্দেশ করছে।।


পঞ্চম অবতারে এল-বামন অবতার। "বামন" -

যে লম্বায় অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারত। 

তুমি কি জানো,সেই সময় দুই প্রকারের মানুষ ছিল- হোমোইরেক্টস (নরবানর) ও হোমোসেপিয়েন্স (মানব)। আর এই হোমোসেপিয়েন্সই বিবরতনের লড়াইয়ে জয়লাভ করে।

এই ব্যাখ্যাই তো দিয়েছেন "যোগ্যতমের উদবর্তন" রূপে- তোমার ডারউইন? 

ছেলে তো দশাবতারের ব্যাখ্যার বিস্তার শুনে স্তব্ধ হয়ে গেল।


মা আবার বললেন-

"পরশুরাম" এলেন ষষ্ঠ অবতারে। যার মধ্যে ছিল শস্ত্র (কুড়াল) এর ক্ষমতা। যা নির্দেশ করে জঙ্গল ও গুহাবাসী মানুষকে।


সপ্তম অবতারে এলেন- ভগবান "মর্যাদা পুরুষোত্তম-রাম"।

যা প্রথমবার বিবেকযুক্ত মানুষকে নির্দেশ করে। কিভাবে সেই বিবেক দ্বারা মানুষ প্রতিটি সম্পর্কের মধ্যে মর্যাদা,এবং সমাজের বিভিন্ন নিয়ম তৈরি করে,সমাজবদ্ধ হতে শিখল- তা নির্দেশ করে।


অষ্টম অবতারে-

"স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ"।

একাধারে রাজনেতা,কূটনীতিজ্ঞ এবং প্রেমীও। তিনি শেখালেন- কিভাবে সমাজের নিয়মকানুনের মধ্যেও আনন্দে থাকা যায়,এবং আরও উন্নত বিবেক ও বিচারসম্পন্ন হওয়া যায়।


মায়ের জ্ঞানগঙ্গা বইতেই রইল-

"মহাত্মা বুদ্ধ" হলেন নবম অবতার। যিনি সেই নৃসিংহ থেকে উদ্ভূত মানবজাতির স্বভাব-প্রকৃতির পুনরালোচনা করলেন।

তিনিই মানবজাতিকে জ্ঞানের অন্তিম লক্ষের সন্ধান দিলেন।


আর শেষে?

দশম অবতার "কল্কি" রূপে আসবে।

যেই মানব বিবর্তনের উপর তোমরা কাজ করছ-

মানুষের বিবর্তন,উদবর্তন, এবং উন্নতির অন্তিম নিদর্শণ রূপে তিনি আসবেন।


পুত্র অবাক হয়ে মায়ের দিকে তাকিয়েই রইল।এ তো অদ্ভূত মা! হিন্দু দর্শণ তো বাস্তবেই অতীব অর্থপূর্ণ!

হ্যাঁ,

বেদ,পুরাণ,গ্রন্থ,উপনিষদ বাস্তবেই খুবই অর্থপূর্ণ। তবে এই দর্শণকে গ্রহণ করার মতো,বিবেকযুক্ত দর্শণও তো তোমার থাকা চাই?


তখন দেখবে-

এই দর্শণের মধ্যেও রস খুঁজে পাবে। তাতে তুমি ধার্মিক হও বা 

" বৈজ্ঞানিক "।।


হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে


                        প্রণাম।

Post a Comment

0 Comments