"শ্রীমতী রাধারাণীর জয়!


আমি স্মরণ করছি ৫১ বছর পূর্বে এই পবিত্র দিনে শ্রীল প্রভুপাদ আমাকে বলেছিলেন লস এঞ্জেলসে ৯ জন সন্ন্যাসী রয়েছেন এবং ভারতে রয়েছেন ২ জন। তো তিনি বলেছিলেন আমি হচ্ছি ১১ তম। এবং এই পবিত্র দিনে তিনি আমাকে দণ্ড দিয়েছিলেন, সন্ন্যাস গায়ত্রী দিয়েছিলেন এবং এইভাবে তিনি আমাকে সন্ন্যাস ধর্মে দীক্ষিত করেছিলেন। যাইহোক আমি ভাবছিলাম আমাদের অনেক গৃহস্থ ভক্ত রয়েছে, তারাও সন্ন্যাসীদের মতো। তারাও সম্পূর্ণভাবে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সেবায় নিজেদের আত্মোৎসর্গ করেছে। বাস্তবতা হচ্ছে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সেবা করা। এবং গুরুদেবের আদেশ পালন করা। একজন সন্ন্যাসী হিসেবে আমার কর্তব্য ছিল মন্দিরের প্রতি, শিষ্যদের প্রতি এবং গুরুদেবের প্রতি। যদি আমি গৃহস্থ হতাম, আমাকে আমার পরিবার পালনের জন্য অনেক সময় ব্যয় করতে হত। শ্রীল প্রভুপাদ অত্যন্ত কৃপালু ছিলেন, তিনি আমাকে অনেক দিকনির্দেশনা প্রদান করেছিলেন, তিনি আমাকে প্রচুর সঙ্গ প্রদান করতেন এবং আমাকে মায়াপুর ধামের উন্নয়ন করতে বলেছিলেন। আজ আমরা শুনেছি ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে সন্তুষ্ট করতে কীভাবে শ্রীমতী রাধারাণী এই মায়াপুর ধাম, নবদ্বীপ ধাপ সৃষ্টি করেছেন। তো এটি একটি বিশেষ স্থান। আমি খুবই ভাগ্যবান যে এই পবিত্র ধামে আমি আছি। কোভিড-এর বিধিনিষেধের জন্য আমি একবছরেরও বেশি সময় মায়াপুরে আছি। একই সাথে ইন্টারনেট ব্যবহার করে আমি সারা পৃথিবীর অনেক মন্দির পরিদর্শন করতে পারছি। প্রভুপাদ বলেছিলেন আমার বেশি সময় মায়াপুরে থাকা উচিত এবং একই সাথে তিনি বলেছিলেন প্রচার করার জন্য আমার ভ্রমণ করা উচিত। এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমি দুটোই করছি। অবশ্যই আমি সারা পৃথিবীব্যাপী অনেকবার ভ্রমণ করেছি। মাঝেমাঝে একই বছরে ৫ বা ৬ বারও ভ্রমণ করেছি। আমি সচিবদের ক্লান্ত করে দিতাম। সারা পৃথিবী জুড়ে বিভিন্ন ভক্তদের দর্শন করা খুবই উৎসাহজনক ছিল। আমি এখন ভাবছি কীভাবে সকল পুরুষ, সকল মহিলারা কৃষ্ণচেতনাময় হতে পারে। আমরা দেখেছি যে সুনীতি এবং দেবহূতি, তাঁরা নিত্য আলয়ে গমণ করেছিলেন, যারা মা হয়ে তাদের সন্তানদের কৃষ্ণভাবনা শিক্ষা দিয়েছেন। অবশ্যই দেবাহূতি অত্যন্ত ভাগ্যবতী ছিলেন, সর্বশক্তিমান ভগবান কপিলদেবকে তাঁর সন্তান হিসেবে পেয়েছিলেন। আমি ভাবছিলাম যে সমস্ত নারী পুরুষদের কৃষ্ণভাবনায় যুক্ত থাকা দরকার। এইভাবে শ্রীল প্রভুপাদের বাসনা, শ্রী নিত্যানন্দ প্রভুর বাসনা এবং ভগবান শ্রী শ্রী পঞ্চতত্ত্বের বাসনা পূর্ণ হবে। আমি জানি না কতদিন শ্রীকৃষ্ণ আমাকে এই পৃথিবীতে রাখবেন, তো আমি আশা করি আমার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আমি শ্রীল প্রভুপাদের নির্দেশনা অনুসরণ করতে পারি। ব্যক্তিগতভাবে পদযাত্রা উদ্বোধন করার পর অন্যান্য ভক্তদের সাথে বিগ্রহগণকে দ্রুত দর্শন করার একটি সুযোগ আমি পেয়েছিলাম। এরপর আমি আপনাদের সকলের উদ্দেশ্যে প্রবচন দিচ্ছি। আমরা শ্রীল প্রভুপাদ এবং তাঁর দিকনির্দেশনাকে কেন্দ্রে রাখতে চাই। আমরা জানি যে এই জড় জগত খুবই বিপদজনক জায়গা। প্রতি পদক্ষেপে বিপদ রয়েছে। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সেবা করার চেষ্টা করে আমরা শ্রীল প্রভুপাদের কৃপার অসাধারণ ফল দর্শন করতে পারি। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু চেয়েছেন সবাই কৃষ্ণপ্রেম আস্বাদন করুক। তিনি বলেছেন ভক্তিবৃক্ষের অমৃত ফল বিতরণ করতে হবে। তো আমি আশা করছি সকলেই সেই ফলের স্বাদ আস্বাদন করতে পারবে। আর শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু যেমন অনুরোধ করেছেন তেমনভাবে বিতরণ করতে সাহায্য করবে। একবার কেউ একজন শ্রীল প্রভুপাদকে জিজ্ঞেস করেছিল, বিগ্রহের সামনে তিনি কি প্রার্থনা করছেন? অবশ্যই সেটি খুবই ব্যক্তিগত প্রশ্ন, আমি মনে করি না কোনো শিষ্যের এমন প্রশ্ন করার অধিকার আছে। শ্রীল প্রভুপাদ শিষ্যটির দিকে তাকালেন এবং বললেন, আমি প্রার্থনা করছি আমি যেন বিচ্যুত না হয়ে যাই। অবশ্যই আমরা জানি যে এই জড় জগৎ সর্বদা আমাদেরকে পরীক্ষা করছে। আর তাই গুরু এবং গৌরাঙ্গের প্রতি নিজেকে উৎসর্গ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তো আমার একজন সন্ন্যাসী হওয়ার সুযোগ হয়েছে। আমরা ৫১তম সন্ন্যাসবার্ষিকী উদযাপন করছি। আমি আশা করি শ্রী শ্রী রাধামাধবের কৃপায় আমি সর্বদা শ্রীল প্রভুপাদের সেবা করা অব্যাহত রাখব। হরে কৃষ্ণ! 


শ্রীমৎ ভক্তিপুরুষোত্তম স্বামী মহারাজের শ্রীমতী রাধারাণীর মহিমার উপর লিখিত গ্রন্থের দ্বিতীয় অংশটি আমি অধ্যয়ন করার জন্য অপেক্ষা করছি। প্রথমটিতে বিভিন্ন নারীর সতীত্ব সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। তো সেখানে তাদেরকে একসহস্র ছিদ্র সমন্বিত কলসী দেওয়া হয়েছিল। সেই কলসী করে যমুনা থেকে জল নিয়ে আসার কথা ছিল। কিন্তু কোন নারীরাই পারেননি। কেবলমাত্র শ্রীমতী রাধারাণী সক্ষম হয়েছিলেন। অতএব শ্রীমতী রাধারাণী হচ্ছেন সমস্ত শক্তির শিরোমণি। জয় শ্রীমতী রাধারাণী কি! জয়!!"


~ শ্রীল জয়পতাকা স্বামী 

১৪ই সেপ্টেম্বর, ২০২১

৫১তম সন্ন্যাস বার্ষিকী অনুষ্ঠানের সম্ভাষণ

Post a Comment

0 Comments