কৃষ্ণ শ্রীল প্রভুপাদের গলায় কদম্বের মাল্য পড়িয়ে দিলেন:


শ্রীল প্রভুপাদের প্রথম ভারতীয় শিষ্য হলেন ঝাসির বিদগ্ধ সংস্কৃত পন্ডিত ড.আচার্য্য প্রভাকর মিশ্র। তিনি শ্রীল প্রভুপাদের অত্যন্ত প্রিয় শিষ্য ছিলেন। শ্রীল প্রভুপাদ একবার ঝাসিতে এসে আচার্য্য প্রভাকর মিশ্রকে বলেছিলেন, "আমি এখানে তোমার সাথে সাক্ষাৎ করতে এসেছি। কারণ, আমি স্বপ্নে তোমাকে দেখেছি আর বুঝতে পেরেছি যে আমার এখানে আসতেই হবে।" শ্রীল প্রভুপাদ ও আচার্য প্রভাকর প্রভু একসাথে ভজন করতেন, রথযাত্রা উৎসব আয়োজন করতেন ও ঝাসির বিভিন্ন পল্লীতে অনুষ্ঠানের আয়োজন করতেন। 


আচার্য্য প্রভু বর্ণনা করেছেন, শ্রীল প্রভুপাদ অত্যন্ত ভজনশীল ছিলেন। বিশেষ করে যখন শ্রীল প্রভুপাদ যখন দিব্যভাবে বিভোর থাকতেন, কখনও কখনও তিনি তিন-চারদিন নিরাহার নির্ঘুম থেকে ভজন করতেন।


১৯৫৪ সাল।জন্মাষ্টমী তিথি। শ্রীল প্রভুপাদ তখন ঝাসিতে এসেছিলেন। আচার্য্য প্রভাকর প্রভুকে সেদিন একটি বিশেষ কাজে দিল্লী যেতে হয়েছিলো। তিনি সেদিনই আবার ঝাসিতে ফিরে এসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। জন্মাষ্টমী অনুষ্ঠানে অনেক ক্লান্ত হয়ে সকলে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। 


রাত্র তখন ১ টা। হঠাৎ মৃদঙ্গের সুমধুর আওয়াজে আচার্য্য প্রভাকর প্রভুর ঘুম ভেঙ্গে যায়। তিনি ভাবলেন এতরাত্রে মৃদঙ্গের শব্দ কোথা থেকে আসছে। শব্দ অনুসরণ করতে করতে তিনি মন্দিরের দিকে ধাবিত হলেন। মন্দিরের দ্বার উদঘাটন করে তিনি একটি চিন্ময় সৌরভ অনুভব করলেন। তিনি দেখলেন, শ্রীল প্রভুপাদ দিব্য ভাবাবেশে মৃদঙ্গ বাদ্যসহকারে হরিনাম কীর্তন করতে করতে অপূর্বভাবে নৃত্য করছেন। শ্রীল প্রভুপাদের গলদেশে একটি কদম্ব ফুলের মাল্য শোভা পাচ্ছে। সেই পুষ্পগুলো ছিলো স্বাভাবিকের চেয়েও অনেক বড়ো। আচার্য্য প্রভাকর প্রভু প্রত্যেহ ভগবানের জন্য পুষ্পচয়ন করেন কখনও পুষ্প কিনেন। কিন্তু এতো বড় কদম্ব পুষ্প ঝাসির কোথাও পাওয়া যাবে না। কদাচিৎ যদিও পাওয়া যায় সেগুলো অত্যন্ত ছোট। তিনি অনুভব করলেন, এই চিন্ময় সৌরভ এই পুষ্পমাল্য থেকেই আসছে। তিনি কৌতুহলী হয়ে শ্রীল প্রভুপাদকে জিজ্ঞাসা করলেন, শ্রীল প্রভুপাদ, "আপনি এই কদম্বমাল্য কোথায় পেলেন?" শ্রীল প্রভুপাদ দিব্য-উন্মাদনায় ছিলেন। তার নয়ন থেকে ক্রমাগত প্রেমাশ্রু নির্গত হচ্ছিলো। তিনি উত্তর দেয়ার মতো অবস্থায় ছিলেন না। গুরুদেবের ভাবের বিঘ্ন ঘটবে এই আশঙ্কায় আচার্য্য প্রভু আর দ্বিতীয়বার প্রশ্ন করার সাহস করেন নি। তিনি অপলকনেত্রে শুধু তার গুরুদেবকেই দর্শন করছিলেন।


এই ঘটনার পর কয়েকদিন অতিবাহিত হয়ে গেলো। একদিন সময়-সুযোগ বুঝে তিনি তার কৌতুহল নিবৃত্ত করার জন্য তার গুরুদেবের নিকট আবার কদম্বমাল্যের রহস্য জানতে চাইলেন। এবারও শ্রীল প্রভুপাদ নিশ্চুপ রইলেন। দ্বিতীয়বার প্রশ্ন করলে তিনি দেখলেন শ্রীল প্রভুপাদের নয়ন জলে ভরে গেছে। গদগদ কন্ঠে শ্রীল প্রভুপাদ বললেন, সেদিন কীর্তন করার এক পর্যায়ে আমি দেখলাম কৃষ্ণ আমার সম্মুখে আবির্ভূত হয়েছেন। তার হাতে একটি কদম্ব ফুলের মালা আমায় পড়িয়ে দিলেন। সেই মাল্য গলায় পরিধান করে আমি কৃষ্ণের চরণ স্পর্শ করতে গেলাম। দেখলাম, কৃষ্ণ অন্তর্হিত হয়ে গেলেন। আমি অত্যন্ত বিরহে দিব্য-উন্মাদনায় নৃত্যকীর্তন করছিলাম।একথা বলতে বলতে শ্রীল প্রভুপাদ প্রেমাশ্রু বিসর্জন করছিলেন।

Post a Comment

0 Comments